বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সূচনা
আপনি যা দেখেন তা বিশ্লেষণ করার জন্য যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি না থাকে তবে আপনার কাছে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নেই। বিজ্ঞানের প্রারম্ভিক দিনগুলিতে মানুষ দুটি ধাপে সীমাবদ্ধ ছিল: এক পর্যবেক্ষণ করুন এবং দ্বিতীয় পর্যবেক্ষন জিনিস নিয়ে সম্পর্কে চিন্তা করুন।
পর্যবেক্ষণ করুন
মানুষ সবসময় তাদের চারপাশের জিনিস পর্যবেক্ষণ করে। এটি প্রাথমিকভাবে তার আ শে পাশের গাছপালা,প্রাণী,আশ্রয় এবং জলের সন্ধান করা।মানুষ যখন আরও বেশি অবসর সময় পাবে, তখন তারা তাদের চারপাশে যা দেখছে তা নিয়ে ভাবার জন্য তাদের আরও বেশি সময় থাকবে। মানুষ যখন ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে, তখন তারা যে বিষয়গুলো দেখে তা অন্যদের সাথে আলোচনা করতে সক্ষম হয়।এবং মানুষ যখন লেখার ব্যবহার শুরু করে, তখন তাদের চিন্তাভাবনা এবং পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখার একটি উপায় তৈরী হয়েছিল।
চিন্তা করুন
আপনি যা পর্যবেক্ষণ করেন সে সম্পর্কে আপনি যখন চিন্তা করেন, তখন আপনাকে অবশ্যই বিশ্ব সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে যা দেখছেন তা মানানসই করার চেষ্টা করতে হবে।আপনি যদি এমন জিনিসগুলি দেখেন যা আপনি আগে কখনও দেখেননি, তবে আপনি যা দেখছেন তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু, আপনি যা দেখেন তা বিশ্লেষণ করার জন্য যদি আপনার কাছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি না থাকে, তবে আপনি যা জানেন তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা আপনার আছে। এটি প্রাথমিক বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে ছিল।২৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রথম দিকে চিন্তাবিদরা দর্শনের নীতিগুলি প্রয়োগ করতে শুরু করেছিলেন। প্রায় ৪০০খ্রিস্টপূর্বাব্দের দর্শন সেই জায়গায় বিকশিত হয়েছিল যেখানে অ্যারিস্টটলের মতো চিন্তাবিদরা তাদের চারপাশের বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছিলেন যার মধ্যে বিজ্ঞান যা জ্যোতির্বিদ্যায় পরিণত হয়।
প্রারম্ভিক বিজ্ঞানী
ইউডক্সাস Cnidus এর Eudoxus (408-355 BC)।
ইউডক্সাস ছিলেন একজন গ্রীক জ্যোতির্বিদ, গণিতবিদ এবং পণ্ডিত।তিনি মহাবিশ্বের মডেল তৈরি করেছেন। পৃথিবী কেন্দ্রে একটি গোলক ছিল। চাঁদের গতি ব্যাখ্যা করার জন্য তার তিনটি গোলকের প্রয়োজন ছিল: দৈনিক গতির জন্য সবচেয়ে বাইরেরটি, দ্বিতীয়টি মাসিক গতির জন্য এবং তৃতীয়টি গ্রহের উপরে এবং নীচের পরিবর্তনগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য। তিনটি গোলক সহ সূর্যের গতি ব্যাখ্যা করার জন্য তার কাছে একটি অনুরূপ মডেল ছিল: দৈনিক গতির জন্য সবচেয়ে বাইরের, তারপরে বার্ষিক গতি এবং তৃতীয়টি অবনমনের পরিবর্তনের জন্য। পাঁচটি দৃশ্যমান গ্রহের (বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি) প্রতিটিতে চারটি গোলকের সমন্বয়ে মডেল ছিল: দৈনিক গতির জন্য সবচেয়ে বাইরের, রাশিচক্রের চিহ্নের মাধ্যমে গতি এবং রেট্রোগ্রেড মোশন ব্যাখ্যা করার জন্য দুটি অভ্যন্তরীণ গোলক। শেষ পর্যন্ত দূরের নক্ষত্রের জন্য
একটি গোলক ছিল। তিনি পর্যবেক্ষণ গতিতে গাণিতিক সমাধান প্রয়োগ করার চেষ্টা করার প্রথম ব্যক্তি হিসাবে কৃতিত্ব পান। অ্যারিস্টটল এবং ক্যালিপাস ছিলেন তাঁর ছাত্র।
ক্যালিপাস (370-300 BC)।
ক্যালিপাস ছিলেন একজন গ্রীক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ।তিনি চিত্র ৪৭-এ আরও ৭ টি গোলক যোগ করেছেন: ইউডক্সাসের অ্যারিস্টটল মডেল; সূর্যের জন্য ২, চাঁদের জন্য ২ এবং একটি প্রতিটি অভ্যন্তরীণ গ্রহের জন্য: বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল।সূর্য সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণগুলি নির্দেশ করে যে ঋতুগুলি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের ছিল যা বোঝায় যে সূর্য গ্রহন বরাবর একটি ধ্রুবক গতিতে চলে না। তিনি একে সোলার অ্যানোমালি বলেছেন।তিনি একটি সঠিক লুনিসোলার ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলেন।
অ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রিস্টপূর্ব)। অ্যারিস্টটল ছিলেন একজন গ্রীক দার্শনিক যিনি পদার্থবিদ্যা সম্পর্কিত ৮টি
বই লিখেছেন।জ্যোতির্বিদ্যার সাথে সম্পর্কিত তার কিছু সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে:
• একটি শূন্যতা শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয় নয় বরং দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যায়।
• সময় হল গতিবিধির একটি ধ্রুবক বৈশিষ্ট্য এবং এটি নিজে থেকে অস্তিত্বশীল নয় তবে জিনিসের গতির সাথে আপেক্ষিক। সময়কে "আগে এবং পরে চলার সংখ্যা" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তাই এটি উত্তরাধিকার ছাড়া থাকতে পারে
• তিনি স্বর্গীয় বস্তুগুলিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন: সর্বপ্রথম যে জিনিসগুলিকে স্থানান্তরিত করতে হবে তাদের
অবশ্যই একটি অসীম, একক এবং অবিচ্ছিন্ন নড়াচড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, অর্থাৎ বৃত্তাকার।
• গ্রহ এবং নক্ষত্র, যেগুলোর গতির উৎস নিজেদের মধ্যেই রয়েছে (ইথারের কারণে), তারা তাদের নির্দিষ্ট
মুভারের অভিন্ন বৃত্তাকার গতি অনুকরণ করতে চায়। এইভাবে মোহিত, তাদের অক্লান্ত কর্মক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে
তাদের নিজস্ব ইচ্ছার ফলাফল। এটি এমন এক উপায় যেখানে মুভার্সকে অচল বলা হয়।
• তিনি ইথারকে পঞ্চম উপাদান হিসেবে দেখেছিলেন। এটা ঐশ্বরিক এবং নিখুঁত ছিল.
এই উপসংহারগুলি এমন অনেকগুলি বিষয়কে বোঝায় যা শতাব্দী ধরে মানুষ কীভাবে মহাবিশ্বকে দেখবে তার উপর প্রভাব ফেলবে। কিছু উদাহরণ হল:
• আকাশ চাঁদের বাইরে নিখুঁত।
• মহাবিশ্ব একটি ইথারে পূর্ণ। কোনো শূন্যতা নেই।
• সময় অপরিবর্তিত থাকে যখন এটি এগিয়ে যায়।
• সবকিছু বৃত্ত এবং গোলকের মধ্যে ভ্রমণ করে।
• পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। (ভূকেন্দ্রিক, টলামি দ্বারা)
Figure 48: Ptolemy’s Model of the Universe- Geocentric
Drawing by Pearson Scott Foresman
পৃথিবী, আদি মানুষের কাছে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এটি জিওকেন্দ্রিক মডেল। এটি ভুল.একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্ম হয় ২০০০ বছর ধরে অ্যারিস্টটলের দর্শন জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞানের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। কিছু সাহসী বিজ্ঞানী নতুন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই দর্শনকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত জ্যোতির্বিদ্যার বিজ্ঞান এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল।
যারা মাঠ পরিষ্কার করেছেন এবং বীজ রোপণ করেছেন
নিকোলাস কোপার্নিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩)।
কোপার্নিকাস সৌরজগতের সূর্যকেন্দ্রিক মডেল তৈরি করেননি, তবে তাকে জনপ্রিয় করার জন্য অনেক কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তিনি একজন জার্মান গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ ছিলেন।তার মডেল সূর্যকে কেন্দ্রে রেখেছিল গ্রহগুলি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। তার মডেলের সমস্যা হল তিনি বৃত্তের কক্ষপথ অতিক্রম করতে অক্ষম ছিলেন। তার মডেল গ্রহের ভবিষ্যত অবস্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করতে খুব খারাপ ছিল। এই ঘাটতি সূর্যকেন্দ্রিক মডেলের গ্রহণযোগ্যতার বিলম্বে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল
Figure 49: Nicolaus Copernicus
টাইকো ব্রাহে (১৫৪৬-১৬০১)।
টাইকো ব্রাহে সর্বকালের সেরা পর্যবেক্ষক ছিলেন যিনি টেলিস্কোপ ব্যবহার করেননি। তিনি একজন ডেনিশ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তার পর্যবেক্ষণ একটি চতুর্ভুজ ব্যবহার করে করা হয়েছিল এবং তিনি অনেক তারা এবং গ্রহের জন্য অত্যন্ত সঠিক অবস্থানগত তথ্য প্রদান করেছিলেন। তার নির্ভুলতা সাধারণত ১ আর্ক-মিনিটের মধ্যে ছিল। তিনি ১৫৭২ সালে ক্যাসিওপিয়াতে সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
Tycho Brahe
জোহানেস কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)।
কেপলার একজন দুর্দান্ত গণিতবিদ ছিলেন, তার দৃষ্টিশক্তি এতটাই ক্ষীণ ছিল যে তিনি খুব একটা ভালো জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন না।যাইহোক, টাইকো ব্রাহের একজন শিক্ষানবিশ হিসাবে, তিনি অবশেষে উপলব্ধ সেরা পর্যবেক্ষণমূলক ডেটাতে অ্যাক্সেস পেয়েছিলেন। তার গাণিতিক দক্ষতা ব্যবহার করে, কেপলার সেই নিয়মগুলি নির্ধারণ করতে সক্ষম হন যেগুলির দ্বারা গ্রহগুলি আচরণ করতে দেখা যায়।
Figure 53: Johannes Kepler
কেপলার গ্রহের গতির সূত্র নির্ধারণের জন্য টাইকো ব্রাহের ডেটা ব্যবহার করেছিলেন
Figure 52: Kepler’s Model of the Solar System - Heliocentric
কেপলারের আইন হল:
1. গ্রহগুলি উপবৃত্তে চলে, বৃত্ত নয়, এবং সূর্য এক ফোকাসে থাকে।
2. সূর্যের সাথে গ্রহের সংযোগকারী একটি রেখা সমান সময়ের মধ্যে সমান পরিমাণ স্থান ঝাড়বে।
3. একটি গ্রহের কক্ষপথের বর্গ তার আধা-প্রধান অক্ষের ঘনক্ষেত্রের সমানুপাতিক কক্ষপথ.
কেপলারের আইনগুলি এখন সৌরজগতের একটি সূর্যকেন্দ্রিক মডেলের জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করেছে যা ভূকেন্দ্রিক মডেলগুলির নির্ভুলতাকে হারানোর জন্য যথেষ্ট সঠিক ছিল এবং এটি ছিল সহজ এবং মার্জিত।
Figure 55: Kepler’s 1st Law
সূর্যকেন্দ্রিক মডেল সূর্যকে সৌরজগতের কেন্দ্রে রাখে
গ্যালিলিও গ্যালিলি (১৫৬৪-১৬৪২)।
১৬০৮ সালে হ্যান্স লিপারশে (১৫৭০-১৬১৯) দ্বারা উদ্ভাবিত টেলিস্কোপের উপর ভিত্তি করে নেদারল্যান্ডস, গ্যালিলিও তার নিজস্ব টেলিস্কোপ তৈরি করতে সক্ষম হন। লিপারশির টেলিস্কোপ তৈরির পৌরাণিক কাহিনী হল যে তার বাচ্চারা তার চশমার দোকানে ছিল এবং দুটি লেন্স দিয়ে খেলার সময় তারা রাস্তার ওপারের জিনিসগুলি আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সক্ষম হয়েছিল। গ্যালিলিও, আবিষ্কারের কথা শুনে একটি তৈরি. গ্যালিলিও প্রথম ব্যক্তি হিসাবে মহাকাশের দিকে নতুন টেলিস্কোপ নির্দেশ করার এবং তিনি যা দেখেছিলেন তা রেকর্ড করার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন:
• সূর্যের পৃষ্ঠে সূর্যের দাগ।
• চাঁদ বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করছে।
• চাঁদে পাহাড়।
• শুক্রের পর্যায়গুলি।
এই পর্যবেক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ দিয়েছে যে মহাবিশ্বের ভূকেন্দ্রিক মডেলে যা বিশ্বাস করা হয়েছিল এবং অ্যারিস্টটলের উপসংহারের ভিত্তিতে যা বিশ্বাস করা হয়েছিল তার বেশিরভাগই ভুল ছিল।চাঁদের প্রদক্ষিণকারী
বৃহস্পতি প্রমাণ করেছে যে সমস্ত বস্তু পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে না। সূর্যের উপর সূর্যের দাগ প্রমাণ করেছে যে চাঁদের বাইরে সবকিছু নিখুঁত নয় এবং সবশেষে, শুক্রের পর্যায়গুলি সূর্যকেন্দ্রিক মডেলের শুক্রের অবস্থানের বিরোধিতা করেছে। সূর্যকেন্দ্রিক মডেল শুক্রকে পৃথিবীর কাছাকাছি দেখায়।এর পর্যায়গুলি গ্যালিলিও পর্যবেক্ষণ করা প্রায় ১৮ মাস হতে পারে না। এটি শুক্রকে অনেক দূরে সরিয়ে দেবে পৃথিবী.
গ্যালিলিও হলেন রেকর্ডে প্রথম ব্যক্তি যিনি একজন পরিণত হয়েছেন রাতের আকাশে টেলিস্কোপ
Figure 59: Galileo’s Moon Sketch by Galileo
Figure 58: Galileo Galilei
আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৬)।
নিউটন ছিলেন একজন ইংরেজ পদার্থবিদ। তিনি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রদান করতে
সক্ষম হন যা ব্যাখ্যা করে যে কেন কেপলারের সৌরজগতের মডেল কাজ করে: মাধ্যাকর্ষণ কীভাবে কাজ করে।
আইনস্টাইন আপেক্ষিকতা বিকাশ না করা পর্যন্ত নিউটনের গতির সূত্র একটি উত্তর প্রদান করে।
নিউটনের সূত্র হল:
1. একটি বস্তু হয় বিশ্রামে থাকে বা একটি ধ্রুবক বেগে চলতে থাকে, যদি না কোন দ্বারা কাজ করা হয় বাহ্যিক শক্তি
2. একটি বল হল একটি বস্তুর ভর তার ত্বরণ দ্বারা গুণিত: F = m * a।
3. প্রতিটি ক্রিয়ার জন্য, একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে
প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা
ভারতে প্রাচীনযুগে চন্দ্র এবং সূর্যের গতিবিধি লক্ষ করা হতো বলে জানা যায়।বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার উপর ভিত্তি করে ঋতু পরিবর্তন ও বছরের হিসাব বের করা হতো। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা দ্বারা বছরকে মাসে ভাগ করা হতো। হিন্দু ধর্মের প্রায় প্রতিটা রীতি নীতিতে গ্রহ-উপগ্রহ এবং নক্ষত্রের কথা জড়িয়ে থাকতো।তাই প্রাচীন ভারতে Astronomy কে Astrology বা জোতিষ বিদ্যা হিসেবে চালু, যাদেরকে জোতিষী বলা হত।তারা গ্রহ-নক্ষত্র ব্যবহার করে মানুষের ভবিষ্যৎ বাণী করতো।তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে প্রাচীন ভারতে পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব হিসাব করা হয় এবং মোটামুটি বাস্তব মানের কাছাকাছি মান পাওয়া যায় সেখান থেকে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান
বর্তমানে ইসলামিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাহিত্যের এক বিশাল সংকলন বিদ্যমান রয়েছে।সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
আছে প্রায় ১০,০০০ সংখ্যার পাণ্ডুলিপি।যাদের বেশির ভাগই পঠিত বা তালিকা ভুক্ত হয়নি।তারপরও, জ্যোতির্বিজ্ঞানে ইসলামি সক্রিয়তার এক ন্যায্য নির্ভুল চিত্র পুনর্নির্মিত করা যায় ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমানদের আবিষ্কার এবং অর্জন এত ব্যাপক এবং এত বেশী সময় ধরে বিস্তৃত যে,স্বল্প পরিসরে
তার বর্ণনা দিতে গেলে অনেক তথ্যই হয়তো বাদ পড়ে যাবে।তারপরে ও স্থানাভাবে এখানে কেবল মাত্র একেবারেই বর্ণনা না করলেই নয়,এমন আবিষ্কার নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো।
সন্দেহ নেই,পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের মত আরবেও জ্যোতিষ শাস্ত্র চর্চা সুপ্রাচীন কাল হতেই চলে আসছিল।এছাড়া পেশাগত জীবনে ব্যবসায়ী এমন আরববাসীর সংখ্যা নিতান্তই কম ছিল না। ফলে স্থল ও জলপথে বানিজ্য পরিচালনা কালে আকাশের তারকা দেখে পথ নির্দেশনা লাভের বিদ্যা নিশ্চয়ই অল্প পরিমানে ছিল না?কিন্তু এই জ্ঞান ও এর চর্চা দিয়ে আর যাই হোক,জ্যোতির্বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব ছিল না।
প্রথম যাত্রা শুরু হয় অত্যন্ত স্বল্প সময়ে একটি বিশাল ভূখন্ড (প্রায় ১৩,০০০,০০০ বর্গকিলোমিটার) মুসলমানদের
অধিকারে এসে যাওয়ার পর।এই বিশাল অঞ্চলব্যাপী বিস্তৃত মুসলমানদের ইসলামী সব বিষয়ই সরাসরি চন্দ্র-সূর্য এবং দিকের সাথে সম্পর্কিত ছিল।এ সমস্যা সমাধান করতে গিয়েই জ্যোতির্বিদ্যার বৈজ্ঞানিক চর্চার সূত্রপাত এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রায় সকল মুসলমান বিজ্ঞানী আর যে ক্ষেত্রেই অবদান রাখুন না কেন,চেষ্টা করেছেন এ বিষয়ে অবদান রাখতে।উনারা একের পর এক অনুবাদ করেছেন,গবেষনা চালিয়েছেন, জিজ্ (Zīj- زيج) লিখেছেন।
উল্লেখ্য যে, জ্যোতির্বিদ্যার উপর মুসলমানদের লিখিত বইগুলো জিজ্ নামেই বেশী পরিচিত ,স্পষ্টতইঃ নানান অঞ্চলের নানান ভাষার জ্যোতির্বিদ্যার গ্রন্থের আরবী অনুবাদ দিয়ে শুরু পথ চলা।
এক্ষেত্রে প্রথমেই যে নামটি আসে, তিনি হচ্ছেন
১। ইয়াকুব ইবন্ তারিক -(৭৯৬) তিনি এবং আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন্ ইব্রাহিম আল-ফাজারী -(৮০৬) মিলিতভাবে তথ্য সংগ্রহ করে ‘আজ্ জিজ্ আল-মাহ্লুল মিন আস্-সিনহিন্দ্ লি-দারাজাত্ দারাজা’ রচনা করেন।
অবশ্য,কাজের শুরুটা করেন পূর্বোক্ত মুহম্মদ আল ফাজারীরই পিতা ইব্রাহিম আল ফাজারী (৭৭৭)।
এর সাথে সাথে গ্রীক ‘আল-ম্যাজেস্ট’(ল্যাটিন- Almagest; আরবী-الكتابالمجسطي,al-kitabu-l-mijisti) এবং এলিমেন্টস্
(Elements) সহ অন্যান্য গ্রন্থ একের পর এক আরবীতে অনূদিত হতে থাকায় প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ঘুমিয়ে থাকা
জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞানভান্ডার একসাথে যেন মুসলমানদের সামনে খুলে যায়।
২। এর পরেই এক্ষেত্রে আবির্ভূত হন বিজ্ঞানের জগতের সর্বকালের এক মহান দিকদ্রষ্টা আবু আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবন্ মুসা আল-খোয়ারিজ্মি (৭৮০-৮৫০),গণিতে যাঁর অবদানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই জ্যোতির্বিজ্ঞানে ও এই গণিতবিদের মৌলিক আবিষ্কার রয়েছে।উনার রচিত ‘জিজ্ আল-সিন্দ্হিন্দ্’ (Zīj al-Sindhind- Astronomical tables of Sind and Hind) এক্ষেত্রে এক অনন্য সাধারন গ্রন্থ,যাতে তিনি প্রায় ৩৭ টি
অধ্যায় এবং ১১৬ টি ছক সুশৃংখল্ভাবে উপস্থাপন করেছেন।উনার রচনায় ভারতীয় উৎস হতে অবাধে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং ব্যবহার করেছেন।চন্দ্র, সূর্য ও সে আমলে জানা পাঁচটি গ্রহের গতিবিধি,চন্দ্র ও সূর্যগ্রহন,ঋতু পরিবর্তন নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
৩। একই সময়ে আহ্মদ ইবন্ আব্দুল্লাহ হাবাশ আল-হাসিব আল মারওয়াজি (৮৬৪) উনার The Book of
Bodies and Distances গ্রন্থে পৃথিবী,চন্দ্র ও সূর্যের পরিধি, ব্যাস ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হিসেব করেন।
৪। আবু আল-আব্বাস্ আহ্মদ ইবন্ মুহম্মদ ইবন্ কাসীর আল-ফারগানী হচ্ছেন সেসময়ের পৃথিবীর অন্যতম
শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ।তিনি ৮৩৩ খৃষ্টাব্দে আল-ম্যাজেস্টের সংক্ষিপ্ত ভাষ্য লিখেন যা দ্বাদশ শতকে Elements of astronomy on the celestial motions শিরোনামে ল্যাটিনে অনূদিত হয় এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সমসাময়িক কালে আরো যাঁরা জ্যোতির্বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন তাঁদের মধ্যে সাবিত ইবন্ ক্বুরাহ্ (৮৩৬-৯০১),জাফর ইবন্ মুহম্মদ আবু মাশার আল-বল্খী (৭৮৭-৮৮৬) এবং বনু মুসা ভ্রাতৃত্রয়ের অগ্রজ আবুজাফর মুহম্মদ ইবন্ মুসা আল-শাকির ( ৮০৩-৮৭৩) নাম নিতেই হয়।
এতক্ষন পর্যন্ত যে সব তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা প্রধানত টীকা-ভাষ্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল।কিন্তু এর পরে যা হলো তা এক কথায় অভূতপূর্ব।সময়ের অতি স্বল্প পরিসরে মুসলমানদের মাঝে জ্যোতির্বিজ্ঞানে মৌলিক অবদান রাখা ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা এত বেশী যে,মাঝে মাঝে রূপকথা কিংবা অতিকথন মনে হয় অনেকের! এক্ষেত্রে প্রথমেই যিনি আসেন তিনি
৫। আবু আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবন্ জাবির ইবন্ সিনান আল-বাত্তানী (৮৫৮-৯২৯)। মুসলমানদের বিজ্ঞানের
ইতিহাসে উনাকে সর্বশ্রষ্ঠ জ্যোতির্বিদও বলেন কেউ কেউ।কোন প্রকার টেলিস্কোপের সাহায্য ছাড়াই কেবল খালি চোখের পর্যবেক্ষন এবং গণিতের প্রয়োগে তিনি সে সময়েই এক সৌর বছরের (One Solar Year) মান হিসেব করেন যার সাথে আজকের দিনের আধুনিকতম হিসেবের (৩৬৫দিন ৫ঘন্টা ৪৯মিনিট ৩০সেকেন্ড) সাথে মাত্র তিন মিনিটের গরমিল পাওয়া গিয়েছে।তিনিই আপন অক্ষে পৃথিবীর ঝুঁকে থাকার পরিমান হিসেব করেন যা আধুনিক হিসেবের সাথে মাত্র অর্ধডিগ্রি বেশী ! ৫৭ টি অধ্যায় সম্বলিত উনার ‘আল-জিজ্ আল-সাবী’ একটি অসাধারণ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সংকলন যা ষোড়শ’ শতকে De Motu Stellarum নামে ল্যাটিনে অনূদিত হয় এবং পাশ্চাত্য জ্যোতির্বিদ্যার উত্তরনে সরাসরি অবদান রাখে। তারপরে ও তিনি সেই দূর্ভাগা বিজ্ঞানীত্রয়ের একজন যাকে কোপার্নিকাসের সৌর মডেলে তার অবদানকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
৬। মুসলিম দর্শনের অন্যতম পুরোধা আবু নাসর্ আল-ফারাবী (৮৭২-৯৫০) জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিকেও হাত
বাড়িয়ে ছিলেন।তবে, গ্রীকবিজ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত উনার দার্শনিক পরিচয়ের নীচে সে সব অবদান খুব বেশী মাথা তুলে দাড়াতে পারে নি।
৭। আব্দুর রহমান আল-সুফী ৯০৩-৯৮৬) ছিলেন সে সময়ের আরেক প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ। Book of Fixed
Stars উনার অমর গ্রন্থ। আমাদের আকাশগঙ্গা (Milky Way) ছায়াপথের সবচেয়ে নিকটবর্তী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda) আবিষ্কারের কৃতিত্ব অনেকে উনাকেই দিয়ে থাকেন।জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র অ্যাস্ট্রোল্যাবের (Astrolabe) অন্তত ১০০০ টি ভিন্নধর্মী ব্যবহার তিনি বর্ণনা করেন।
৮। আবু মাহ্মুদ খুজান্দী (৯৪০-১০০০) নিজের মত করে পৃথিবীর ঝুঁকে থাকার পরিমান (Axial Tilt) হিসেব করেন যা ফারাবীর কাছাকাছিই আসে।উনার বিস্তৃত কাজের বিবরন পাওয়া যায় পরবর্তী সময়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ নাসিরউদ্দীন তুসীর লেখায়।তবে ৯৯৪ খৃষ্টাব্দে উনার যে আবিষ্কারটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়, তা হচ্ছে সেক্সট্যান্ট (Sextant) যন্ত্র।
৯। জ্যোতির্বিজ্ঞানে আব্দুর রহমান ইবন্ আহ্মদ ইবন্ ইউনুস ( ৯৫০-১০০৯) আরেকটি অবিস্মরণীয় নাম।
উনার ‘আল-জিজ্ আল-কবির আল-হাকিমী একটি মৌলিক গ্রন্থ যার অর্ধেকই বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে বা চুরি হয়ে গেছে।
এ গ্রন্থে তিনি ৪০টি গ্রহ সমাপতন (Planetary Conjunction) এবং ৩০টি চন্দ্রগ্রহণ (Lunar Eclipse) সম্পর্কিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
খৃষ্টীয় একাদশ শতক মুসলমানদের বিজ্ঞানের জগতে এক রত্নগর্ভা শতাব্দী। ইবনুল হাইছাম, আল-বিরুনী এবং ইবন্
সীনার মত তিন তিনজন শাহানশাহী বিজ্ঞানীর আবির্ভাবে ধন্য এ শতক।
১০। আলোক বিজ্ঞানে অসামান্য সংযোজন ‘কিতাবুল মানাজির’-এর (১৫-১৬) অধ্যায়ে ইবনুল হাইছাম
(৯৬৫-১০৩৯) জ্যোতির্বিদ্যার আলোচনা রেখেছেন।এছাড়া উনার মিযান আল-হিক্মাহ্ (Balance of Wisdom) এবং
মাক্বাল ফি দ্য আল-ক্বামার (On the Light of the Moon) গ্রন্থদ্বয়ে তিনি সর্বপ্রথম গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যার সমন্ব্য সাধনের চেষ্টা চালান।
১১। আবু রায়হান মুহাম্মাদ ইবন্ আহ্মাদ আল-বিরুনী (৯৭৩-১০৪৮) অন্যান্য বিষয়ের সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান রাখতেও ভোলেন নি।সকল বস্তুই ‘পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয়’- এ বাক্যের মাধ্যমে তিনি মাধ্যাকর্ষন শক্তির (Gravity) ধারনা দেন (কিস্তু পরে এক্ষেত্রে এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব পায় হিংসা বশত: বিজ্ঞানী নিউটন)।তিনি বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের উপর ‘কানুন মাস্উদী’ নামে একটি বিশাল গ্রন্থ রচনা করেন যার চতুর্থ খন্ডটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোচনায় পূর্ণ।এতে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ত্রিকোনমিতিকে তিনি একইসঙ্গে ব্যবহার করে উভয়েরই উন্নতি সাধন করেন। দ্রাঘিমা, অক্ষরেখা, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, দিক নির্ণয় ও গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান জ্ঞাপক সংজ্ঞা নির্ণয়ে এ খন্ডের অধিকাংশ পৃষ্ঠা ব্যয় হয়েছে। স্থানাংক নির্ণয়ে অক্ষাংশ (Latitude) এবং দ্রাঘিমাংশের (Longtitude) ব্যবহারের শুরুটা উনার হাত দিয়েই হয়। তিনি সে যুগেই প্রায় নিঁখুতভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করেন যা আজকের দিনের পরিমাপের চেয়ে মাত্র ৩২ কিলোমিটার কম। অ্যারিস্টটলের পৃথিবী কেন্দ্রিক (Geo-centric) বিশ্ব ধারনার তিনি একজন কড়া সমালোচক তথা ভূল প্রমান করেন।
এভাবে আল-বিরুনীর হাত দিয়েই সুস্পষ্টভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের পথ আলাদা হয়ে যায়।অবশ্য আল-বিরুনী এখানেই থেমে যাননি,বরং চান্দ্র-সৌর দিনলিপি (Lunisolar Calendar),তারকাদের অবস্থান মাপক যন্ত্র
(Planisphere) এবং প্রাথমিক গতি মাপক যন্ত্র (Odometer) উনার হাতেই আবিষ্কৃত হয়।এছাড়া তিনি অ্যাস্ট্রোল্যাব এবং সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের উন্নতিসাধন করেন।
১১। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অমর সাধক ইবন্ সীনা (৯৮০-১০৩৭) শুক্র (Venus) গ্রহের উপর প্রচুর কাজ করেছেন।সুর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে কাছে- এটি উনার আবিষ্কার।তিনিও জ্যোতির্বিদ্যাকে জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে আলাদা করে দেখতেন।তিনিও আল-ম্যাজেস্টের একটি ভাষ্য রচনা করেন।গ্রহসমূহের আবর্তনকালে টলেমী প্রস্তাবিত মডেলে যে সমস্যাটি অ্যাকোয়েন্ট সমস্যা (equant problem) নামে পরিচিত, ইবন্ সীনা তার একটি সমাধান বের করেন বলে জানা যায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমানরা কতদুর আবদান রেখেছেন তা উপরের লেখা থেকে সহজেই আন্দাজ করা যায়।
কিন্তু, এগুলো পুরো অবদানের প্রথম অংশ মাত্র ! ইবন্ সীনার পরেও আরো চার শতক ধরে এক্ষেত্রে মুসলমানরা
অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে ছিলেন।
১২। জাবের ইবনে সিনান মান নির্ণয়ের এমন যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে কোণের হিসাব মিনিট পর্যন্ত করা
যেত।এ যন্ত্রকে (Spherical Astrolabe) নাম দেওয়া হয়।
১৩। আলী ইবনে ঈসা আলউস্তুরলাবী আরেকটি Sextant—সেকসট্যান্ট উদ্ভাবন করেন,যার দ্বারা সর্বনিম্ন
দূরত্বের পরিমাপ করা যেত।এছাড়াও মুসলমানরা Triquetrum যন্ত্র, প্রতিবিম্ব যন্ত্র Quardrant,Dioptra তৈরি
করে।সময় গণনার জন্য মুসলমানরা কয়েক ধরনের ঘড়ি আবিষ্কার করে।ঘড়িতে প্যান্ডুলাম ও দোলকের ব্যবহার মুসলমানরাই প্রথম করে।
১৪। ১০৮১ খ্রিস্টাব্দে ইবরাহীম আসসাহদী (সাদী) বেলেনসী তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সবচেয়ে প্রাচীন গ্লোব তৈরি
করেন।পিতলের তৈরি এ গ্লোবের ব্যস ছিল ২০৯ মিলি মিটার (৮১.৫ ইঞ্চি) গায়ে ৪৭ টি তারকাপুঞ্জ খোদাই করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১০১৫ টি তারকা সঠিক আয়তনে দেখা যেত।
১৫। বুআইহী মানমন্দিরে আব্দুর রহমান আসসূফীর একজন সহকর্মী ছিলেন আবুল ওয়াফা বুযজানী, যিনি মহান মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে গণ্য ছিলেন।১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে L.A. Sadilot আবিষ্কার করেন,চাঁদের তৃতীয়
পরিবর্তন অথবা চান্দ্র প্রকরণ (Lunar variation) সবার আগে আবুল ওয়াফা বোযজানী আবিষ্কার করেন।দুটি পরিবর্তন গ্রিকদের পূর্ব থেকেই জানা ছিল, Sadilot -এর এ তথ্য আবিষ্কারের পূর্বে ইউরোপে তৃতীয় ‘চান্দ্র প্রকরণ’-কে ডেনমার্কের জ্যোতির্বিদ ট্যুকো ব্রাহের আবিষ্কার বলা হত,যিনি আবুল ওয়াফার ৫৪৮ বছর পর জন্মগ্রহণ করেন।
আকাশসংক্রান্ত বিশ্ব এবং আরমিলেয়ারি গোলকসমূহ :
সাধারণত আকাশ সংক্রান্ত গোলক সমূহ জ্যোতির্বিজ্ঞানে সমস্যা সমূহ সমাধানে ব্যবহৃত হত।বর্তমানে, এমন ১২৬ টি যন্ত্র পুরো পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে,সবচেয়ে পুরনো টি ১১দশ শতাব্দীর।সূর্যের উচ্চতা অথবা তারকারাজির সঠিক উদয় বা বিনতি এসব দ্বারা হিসেব করা যায়।
একটি আরমিলেয়ারি গোলকের প্রয়োগও একই রকম।প্রাচীন কোন ইসলামি আরমিলেয়ারি গোলক বিদ্যমান নেই,কিন্তু
“বলয়যুক্ত যন্ত্রের” উপরে বেশ কিছু গ্রন্থ লেখা হয়েছিল।এই প্রসঙ্গেও একটি ইসলামি উন্নয়ন আছে,গোলাকার এস্ট্রোলোব, যার মাত্র একটি সম্পূর্ণ যন্ত্র, ১৪দশ শতাব্দীর বিদ্যমান আছে।
এস্ট্রোলোবসমূহ :
তামার এস্ট্রোলোব সমূহ ছিল একটি গ্রীক আবিষ্কার।এস্ট্রোলোব প্রস্তুতকারী প্রথম ইসলামি জ্যোতির্বিজ্ঞানী হচ্ছেন
মুহগামাদ আল-ফাজারি (৮ম শতাব্দীর শেষে)।স্বর্ণ যুগে ইসলামি বিশ্বে এস্ট্রোলোব জনপ্রিয় ছিল, প্রধানত কিবলা খোঁজার সহায়ক হিসেবে।
যন্ত্রগুলো ব্যবহৃত হত সূর্য এবং স্থায়ী তারা গুলোর উদয়ের সময় জানার জন্য। আন্দালুসিয়ার আল-জারকালি এ ধরনের এক যন্ত্র তৈরি করেন যা,তার পূর্বসূরিদের বিসদৃশ,পর্যবেক্ষকের অক্ষাংশের উপর নির্ভর করত না এবং যে কোন স্থানে ব্যবহার করা যেত।ইউরোপে যন্ত্রটি সাফিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।
সূর্যঘড়ি সমূহ
মুসলমানরা সূর্যঘড়ির তত্ত্ব এবং গঠনে বেশ কিছু গুরুত্মপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করে,যা তারা তাদের ভারতীয় এবং গ্রীক পূর্ব সূরিদের কাছ থেকে পায়। এইসব যন্ত্রের জন্যে খোয়ারিজমি সারণী তৈরি করেন যা নির্দিষ্ট হিসেবের জন্য প্রয়োজনীয়
সময় যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনে। সূর্যঘড়ি প্রায়ই মসজিদে স্থাপন করা হত নামাজের সময় নির্ধারণের জন্যে।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় উদাহরণ গুলোর একটি প্রস্তুত হয় ১৪দশ শতাব্দীতে দামেস্কের উমাইয়াদ মসজিদের মুয়াক্কিত (সময়
নির্ধারণকারী),ইবনে আল-শাতির।
কোয়ারডেন্ট সমূহ :
কয়েক প্রকার কোয়ারডেন্ট মুসলিম কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়।তাদের মধ্যে ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনায় ব্যবহৃত সাইন
কোয়াড্রেন্ট এবং প্রতি ঘণ্টার কোয়াড্রেন্টের বিভিন্ন প্রকার সময় নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত (বিশেষ করে নামাজের সময়
) সূর্য বা তারা পর্যবেক্ষণ করে।নবম শতাব্দীর বাগদাদ ছিল কোয়াড্রেন্টের উন্নয়নের এক কেন্দ্র।
ইকুয়েটরিয়াম সমূহ :
ইকুয়েটরিয়াম হচ্ছে আল-আন্দালুসের এক ইসলামি উদ্ভাবন। সবচেয়ে প্রাচীন জ্ঞাতটি সম্ভবত প্রস্তুত হয় ১০১৫ সালের দিকে।এটি চাঁদ,সূর্য, এবং গ্রহ সমূহ খোঁজার একটি যান্ত্রিক কল।গণনা ছাড়া আকাশের গড়নের গড় এবং রীতিবিরুদ্ধ অবস্থানের প্রতিরুপ একটি জ্যামিতিক আদর্শ ব্যবহার করে।
মানমন্দিরসমূহ :
ইসলামে প্রথম শৃঙ্খলাবদ্ধ পর্যবেক্ষণ আল-মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় হয় বলে বিবরণ পাওয়া যায়।দামাস্ক থেকে বাগদাদ পর্যন্ত আরও অনেক ব্যক্তিগত মানমন্দিরের কথা জানা যায়।সেগুলোতে মাধ্যাহ্নিক মাত্রা পরিমাপ করা হয়,সৌর স্থিতি মাপস্থাপন করা হয় এবং সূর্য, চাঁদ আর গ্রহ সমূহের বিশদ পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করা হয়।
প্রথম মালিক শাহ যিনি সর্ব প্রথম বিশাল মানমন্দির স্থাপন করেন,সম্ভবত ইসফাহান এ।সেটা এখানেই ছিল যেখানে
ওমর খৈয়াম আরও অনেক সহকর্মীর সাথে একটি জিজ নির্মাণ করেন এবং ফার্সি সৌর ওরফে জালালি বর্ষপঞ্জি প্রস্তুত
করেন। এই বর্ষপঞ্জির আধুনিক এক রুপ এখনও বর্তমানে ইরানে দাপ্তরিক ভাবে ব্যবহার হয়।
যন্ত্রপাতি সমূহ :
মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্বারা ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সমূহ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের উৎস দুটিঃ প্রথমত বর্তমানের
ব্যক্তিগত এবং জাদুঘরে অবশিষ্ট সংগ্রহ থেকে এবং দ্বিতীয়ত মধ্যযুগের সংরক্ষিত গ্রন্থ এবং পাণ্ডুলিপি।“স্বর্ণযুগের” মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের সময়ের আগে থেকে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সমূহের প্রচুর উন্নতি সাধন করেন,যেমন নতুন পাল্লা বা বিবরণ যোগ করা ।
পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব
চীনা প্রভাব সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ হয় সং রাজবংশের সময়ে যখন মা ইজ নামের একজন হুই মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী এক
সপ্তাহে সাত দিনের ধারণা প্রবর্তন করেন এবং অন্যান্য অবদান রাখেন।মঙ্গোল সাম্রাজ্য এবং পরবর্তী ইউয়ান রাজবংশের সময় চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নিয়ে আসা হয়েছিল বর্ষপঞ্জিকা তৈরিতে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে।১২১০ সালে চৈনিক পণ্ডিত ইয়েহ-লু চু’সাই চেঙ্গিস খানের সঙ্গী হন পারস্য গমনে এবং মঙ্গোল সাম্রাজ্যে ব্যবহারের জন্যে তাদের দিনপঞ্জিকা নিয়ে অধ্যয়ন করেন।
কুবলা খান বেইজিংয়ে ইরানিদের নিয়ে আসেন একটি মানমন্দির এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত বিদ্যার্জনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্যে।
মারাগেহ মানমন্দিরে বেশ কয়েকজন চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী কাজ করেছিলেন।১২৫৯ সালে পারস্যে রহুলাগু খানের পৃষ্ঠ পোষকতায় নাসির আল-দিন আল-তুসিদ্বারা প্রতিষ্ঠিত।এসব চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন ফু মেংচি অথবা ফু মেজহাই।১২৬৭ তে ফার্সি জ্যোতির্বিজ্ঞানী জামাল আদ-দিন যিনি আগে মারাগা মানন্দিরে কাজ করতেন, কুবলাই খানকে সাতটি ফার্সি জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত যন্ত্র হ উপহার দেন, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল একটি ভূগোলক এবং একটি আরমিলেয়ারি গোলক,সেই সাথে একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত পঞ্জিকা, যা পরবর্তীতে চীনেওয়ানিয়ান লি নামে পরিচিত হয় (“দশ হাজার বছরের বর্ষপঞ্জি” অথবা “চিরকালের বর্ষপঞ্জি)। চায়নায় তিনি “ঝামালুদিং” নামে পরিচিত ছিলেন । যেখানে ১২৭১ সালে তিনি খান দ্বারা,বেইজিং-এ ইসলামিক মান মন্দিরের প্রথম পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান যা ইসলামিক জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত বিভাগ নামে পরিচিত।যা চার শতাব্দী ধরে চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত বিভাগের পাশাপাশি কাজ করেছিল।
ইসলামিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চীনে ভাল সুখ্যাতি অর্জন করে তার গ্রহ সংক্রান্ত অক্ষাংশের তত্ত্বের কারণে,সেই সময়ে চৈনিক জ্যোতির্বিদ্যায় যার অস্তিত্ব ছিল না এবং গ্রহণ সম্পর্কে তার নির্ভুল গণনার কারণে।
তার কিছুদিন পরেই বিখ্যাত চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী গুয়ো শাউজিং কর্তৃক গঠিত কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি
মারাগেহ’তে তৈরি যন্ত্রপাতির ধরনের অনুরূপ।বিশেষত,“সহজতর যন্ত্র”(জিয়ানি) এবং গাওচেং জ্যোতির্বিজ্ঞান মান
মন্দিরের বিশাল গমন ইসলামিক প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে।১৮২১ সালে শাউশি বর্ষপঞ্জি তৈরি করার সময় গোলকাকার ত্রিকোণমিতি রচনায় সম্ভবত কিছুটা প্রভাবিত হয়েছিল ইসলামিক গণিতদ্বারা, যা কুবলার দরবারে সমাদরে গৃহীত হয়েছিল।
মিং রাজবংশের (১৩২৮-১৩৯৮) সম্রাট হংয়ু (রাজত্ব ১৩৬৮-১৩৯৮) তার শাসনের প্রথম বছরে (১৩৬৮) সাবেক
মঙ্গোলীয় ইয়ুয়ানদের বেইজিং-এর জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান সমূহের হান এবং ও-হান জ্যোতির্বিদ্যা বিশেষজ্ঞদের
বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগ করেন নানজিং সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় মানমন্দিরের কর্মকর্তা হতে।
সেই বছর,মিং সরকার প্রথমবারের মত জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মকর্তাদের ঊর্ধ্ব রাজধানী ইয়ুয়ান থেকে দক্ষিণে আসার
নির্দেশ জারি করে।তাদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দ।পর্যবেক্ষণ এবং হিসেব পদ্ধতিতে নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে,হংয়ু সম্রাট
সমান্তরাল বর্ষপঞ্জি ব্যবস্থা হান এবং হুই অবলম্বন জোরদার করলেন।পরবর্তী বছর গুলোতে,মিং দরবার সাম্রাজ্যিক
মানমন্দিরে বেশ কয়েকজন হুই জ্যোতির্বিদদের উঁচু পদে নিয়োগ দিলেন।তারা ইসলামিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর
প্রচুর বই লিখলেন এবং ইসলামি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতিও প্রস্তুত করলেন।
দুটো গুরুত্মপূর্ণ রচনা চাইনিজ ভাষায় অনুবাদের কাজ সম্পন্ন হয় ১৩৮৩ সালেঃ জিজ (১৩৬৬) এবং আল-মাদখাল
ফি সিন’আত আহকাম আল-নুজুম,জ্যোতিষবিদ্যার পরিচিতি (১০০৪)।
১৩৮৪ সালে বহু উদ্দেশ্যপূর্ণ ইসলামি যন্ত্র প্রস্তুতির নির্দেশাবলীর উপর ভিত্তি করে একটি চাইনিজ এস্টোলোব প্রস্তুত
করা হল নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের জন্য । ১৩৮৫ সালে উত্তর দিকের নানজিং এ এক পাহাড়ে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়।
১৩৮৪ সালের দিকে মিং রাজবংশের সময় সম্রাট হংয়ু আদেশ করলেন চাইনিজ অনুবাদ এবং ইসলামি জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত সারণী সমূহের সংকলন করার, একটি কাজ যা পণ্ডিতগণ মাশায়িহেই, একজন মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এবং য়ু বোজং, একজন চাইনিজ বিদ্বান-কর্মকর্তা দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল। এইসব সারণী হুইহুই লিফা (বর্ষপঞ্জি-সংক্রান্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের মুসলিম ব্যবস্থা) নাম্মে পরিচিতি লাভ করল, যা চীনে ১৮শ শতক পর্যন্ত বেশ কয়েকবার প্রকাশিত হয়। যদিও কিং রাজবংশ ১৬৫৯ সালে চৈনিক-মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করে। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইয়্যাং গুয়াং জিয়ান খ্রিস্টান ধর্মসঙ্ঘের সদস্যদের জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত বিজ্ঞানের প্রতি তার আক্রমণের জন্য পরিচিত ছিলেন।
কোরিয়া :
জোসিওন যুগের গোড়ার দিকে,ইসলামি বর্ষ পঞ্জি বিদ্যমান চৈনিক-নির্ভর বর্ষ পঞ্জি সমূহের উপর তার উচ্চতর নির্ভুলতার কারণে বর্ষপঞ্জি সংস্কারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।হুইহুই লিফার কোরিয়ান অনুবাদ,জামাল আদ-দীন (জ্যোতির্বিজ্ঞানী) এর ইসলামি জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত রচনার সাথে চৈনিক জ্যোতি র্বিজ্ঞানের সংমিশ্রনের এক পাঠ্য,১৫ শতকে সেজোং-এর সময়ে জোসিওন রাজ বংশে কোরিয়ায় পঠিত হয়। ১৯ শতকের গোড়ার আগ পর্যন্ত কোরিয়ায় চৈনিক-ইসলামি জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রথা টিকে থাকে।
প্রাচীন চীনদেশের জ্যোতির্বিদ্যা
চীন দেশে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর থেকে জ্যোতির্বিদ্যা বা Astronomy নিয়ে গবেষণা শুরু করে।তখন আকাশের তারা গুলোর গতিবিধি লক্ষ করে তা লিপিবদ্ধ করে রাখা হতো।এছাড়া আকাশের জন্য তাদের রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে বৃত্তাকার নক্ষত্র ব্যবহার করতো।খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ বছর আগে সেখানে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হতো।
তখনকার সময় চীনা জ্যোতির্বিদদের কাজ ছিলো প্রতিটা মাসের প্রথম দিন ঘোষণা করা,দিনপঞ্জির সময় তালিকা
তৈরি করা।যদিও তারা এসব কাজে ভুল করতো তবে তাদের শাস্তি দেয়া হতো।একটা কাহিনী প্রচলিত আছে যে তখনকার সময় “হি” এবং “হো” নামক দুজন জ্যোতির্বিদ সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ নির্ণয়ের তারিখ ভুল করায়
তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় একজন শাসক।
সময় বের করার জন্য তখনকার জ্যোতির্বিদরা পুরো আকাশকে ১২টা ভাগে ভাগ করেন।প্রায় ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বে চীন
দেশের এক বিজ্ঞানী সি সেন (Shi-Shen) ৮০০ টির মত নক্ষত্র নিয়ে বিশাল লিস্ট তৈরি করেন।তার তৈরি এই
তালিকাটি ছিলো প্রাচীনতম বৃহৎ নক্ষত্রপঞ্জি।তিনিই বৃত্তকে ৩৬৫ টি ভাগে ভাগ করেন কারন একটা বছরে ৩৬৫ টি
দিন থাকে।চীনদেশে বছরের ছোট দিনে সূর্যের অবস্থান নির্ণয় করা হয়, সূর্যগ্রহণের সঠিক সময় নির্ণয় করা হয়,খালি চোখে সূর্যের উপরিভাগের কালো দাগ বা Sun Spot কে সনাক্ত করা হয়। এছাড়া ৭০০ খ্রিস্টপূর্বে চীনে ধূমকেতু এবং উল্কা পতনের একটা তালিকা তৈরি করা হয়।চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যবেক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি ছিল ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে আকাশে সুপারনোভা দেখা।
প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়ার জ্যোতির্বিদ
মিশরের একটা ছোট্ট শহরের নাম আলেকজান্দ্রিয়া।৩৩২ খ্রিস্টপূর্ব সময় সম্রাট আলেকজান্ডার মিশর দখল করে নিয়েছিলো।মিশরের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো না বলে মিশরবাসী তাকে নেতা হিসেবে মেনে
নেয়।মিশরের শহরগুলো তখন অনেক সুন্দর ছিলো।শহরের সুন্দর রূপ দেখে আলেকজান্ডার অনেক আনন্দিত হয়ে
ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে একটা শহর তৈরি করেন যার নাম তিনি দিয়েছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া।
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর আলেকজান্দ্রিয়া শহরের শাসক হয় সেনাপতি টলেমি।টলেমির শাসনামল ছিলো প্রায় ৩০০ বছরের মত।এই সময়টায় আলেকজান্দ্রিয়া শহর ছিলো বিশ্বের অন্যতম স্বর্গীয় এবং জ্ঞানের শহর।তখনকার সময়ের বিখ্যাত লাইব্রেরি এই শহরটায় তৈরি করা হয় যেটা আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি নামে পরিচিত।এই লাইব্রেরিতে প্রায় ১০ লাখের মত হাতে লেখা বই ছিলো।বইগুলো তখন লেখা হতো প্যাপিয়াসের পাতায়।আলেকজান্দ্রিয়া শহরে অনেক জ্যোতির্বিদদের বসবাস ছিলো। তাদের বইও এই লাইব্রেরিতে পাওয়া যেতো।
এমনি কিছু বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ হচ্ছেন-
এরিস্টার্কাস (Aristarchus)
এরিস্টার্কাস তার লেখা বইতে লিখেছিলেন সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক বড়,সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি এটা বুঝতে পারেন।তিনি বিশ্বাস করতেন সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘোরে।এছাড়া তিনি বের করেন আকাশের তারা গুলো আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক অনেক দূরে।
এরাটোস্থেনিস (Eratosthenes)
এরাটোস্থেনিস ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইব্রেরির গ্রন্থাগার।অবসর সময় লাইব্রেরিতে বসে তিনি বিভিন্ন
ধরনের বই পড়তেন।একটা বইতে তিনি বিষ্ময়কর তথ্য পান,সেটি হলো মিশরের সিরিন নামক শহরে ঠিক দুপুর ১২
টায় সূর্যের আলোয় কোনো বস্তুর ছায়া পড়ে না,কিন্তু একই সময় আলেকজান্দ্রিয়া শহরে যেকোনো বস্তুর ছায়া পড়ে
,তখন এই ধারনা থেকে তিনি জ্যামিতি ব্যবহার করে স্টেডিয়া পরিমাপের পদ্ধতি প্রয়োগ করে পুরো পৃথিবীর পরিধি
নির্ভুলভাবে নির্ণয় করার চেষ্টা করেন।এছাড়া তিনি সূর্য থেকে পৃথিবীর দুরত্ব বের করার চেষ্টা করেন।এছাড়া তিনিই
প্রথম দ্রাঘিমারেখা ও অক্ষরেখা বিশিষ্ট তৎকালীন বিশ্বের মানচিত্র অঙ্কন করেন।এরাটোস্থেনিস প্রথম “Geography”
শব্দটি ব্যবহার করেন, তাই তাকে ভূগোল বা Geography-র জনক বলা হয়।
এপোলনিয়াস (Apollonius)
তিনি সর্বপ্রথম উপবৃত্ত, পরাবৃত্ত এবং অধিবৃত্তের ধারনা দেন।
হিপ্পার্কাস (Hipparchus)
পাশাপাশি অনেকে গবেষণার কাজও করতো তখনকার সময় হিপ্পার্কাস লাইব্রেরিতে দিনরাত বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতেন। তাকে প্রাচীন যুগের সেরা জ্যোতির্বিদ বল হয়।আকাশের তারা গুলোকে আপাত উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে বিভিন্ন মান দিয়েছিলেন তিনি।সূর্যগ্রহণের নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যৎবাণী তিনিই প্রথম করেছিলেন।
ইউরোপে প্রথম তারাদের লিস্ট তৈরি করেন তিনি।হিপ্পার্কাসের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারটি হলো তিনি পৃথিবী যে অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘোরে সেই অক্ষের ঘোরার পথ নির্ণয় করেন।সেই অক্ষটি এই পুরো পথকে ঘুরে আসতে মোট ২৬ হাজার বছর সময় নেয়।হিপ্পার্কাসের পরে মিশরে আর ভালো কোনো জ্যোতির্বিদ আসেনি।
৪৮ খ্রিস্টপূর্ব সময় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিশরকে দখল করতে আসার সময় পুরো মিশররে আগুন লাগিয়ে দেয়।এই আগুনে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির বড় অংশ পুড়ে যায়।তবে যেসব বই পুড়ে যায়নি সেগুলো দিয়ে অন্য একটা ছোট লাইব্রেরি বানানো হয়েছিলো তখন।এসব ঘটনার অনেকদিন পর খ্রিস্টের জন্মের ৯০ বছর পরে আলেকজান্দ্রিয়াতে জন্ম নেন আরেক বিজ্ঞানী টলেমি।
টলেমি (Ptolemy)
টলেমি ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ।কিন্তু তার কিছু গবেষণা অত্যন্ত ভুল ছিলো যার কারনে
কয়েকশ বছর বিজ্ঞান ছিলো অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে।তিনি একটা বিখ্যাত বই লিখেছিলন,সেটার নাম ছিলো আলমাজেস্ট। বইতে তিনি এরিস্টটলের পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের কথা তুলে ধরেন।অর্থাৎ পুরো মহাবিশ্বের কেন্দ্রহিসেবে পৃথিবীকে ধরেন তিনি।তখন থেকে কয়েকশ বছর পর্যন্ত তার এই মতবাদকে সবাই নির্বিশেষে গ্রহণ করে।তিনি চাঁদ-সূর্য-তারা এদের অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে জানার চেষ্টা করেন।
তিনি এই মহাবিশ্বের বিশাল মডেল তৈরি করেন।তিনি ধারনা করেন পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব পৃথিবীর ব্যাসের ১২১০ গুন এবং পৃথিবী থেকে অন্যান্য তারকাদের দুরত্ব পৃথিবীর ব্যাসের ২০০০০ গুন।
হাইপেশিয়া
হাইপেশিয়া ছিলেন বিশ্বের প্রথম নারী জ্যোতির্বিদ বা Astronomer. তিনি ৩৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন আলেকজান্দ্রিয়াতে।তিনি ছিলেন তখনকার সময়ের বিখ্যাত গনিতবিদ।তিনি এপোলনিয়াসের গনিত নিয়ে গবেষণার উপর বই লিখেন।
টলেমির Astronomy নিয়ে করা কাজগুলোর উপর তিনি রিসার্চ করেন। তিনি তখন প্রতি সপ্তাহে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বক্তৃতা দিতেন।তার এসব লেকচার শোনার জন্য রোম,এথেন্স বিভিন্ন শহর থেকে মানুষ আলেকজান্দ্রিয়াতে আসতো।
তিনি প্রথম হাইড্রোমিটার তৈরি করেন যা দিয়ে তরল পদার্থের আপেক্ষিক গুরুত্ত মাপা যেতো।এছাড়া তিনি আকাশে সূর্য এবং নক্ষত্রের অবস্থান জানার জন্য Astrolabe নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
হাইপেশিয়ার বিজ্ঞান চর্চাকে তখনকার সময়ের কিছু মানুষ ভালো মনে করতো না।কারন তথাকথিত কিছু খ্রিস্টান
যাজক এবং শাসকেরা মনে করতো তার বিজ্ঞান চর্চা তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।তাই তাকে আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপের আদেশে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।৪১৫ সালের এক সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রাচীন ব্যাবিলনের জ্যোতির্বিদ্যা
বর্তমান সময় ইরাক দেশ যে জায়গাটায় অবস্থিত সেখানে একসময় ব্যাবিলন নামক এক সভ্যতা ছিলো। ২০০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সময় পর্যন্ত ব্যাবিলনীয় সভ্যতা অনেক উন্নত একটা সভ্যতা ছিলো।তারা প্রথম পৃথিবীর একটা ম্যাপ তৈরি করেছিলো।সেই ম্যাপ অনুযায়ী পৃথিবী ছিলো পাহাড়ের মত উঁচু।পৃথিবীর চারপাশে ছিলো সমুদ্রের পানি।পানির চারপাশে ছিলো পাহাড়ের বলয় যেটা স্বর্গকে ধরে রেখেছে।স্বর্গ ছিলো পৃথিবীর উপরে,আকাশের দিকে।
আকাশের মধ্যে স্বর্গের স্তর ছিলো তিনটি।তিন স্তরের স্বর্গেরশেষে ছিলো স্বর্গীয় সমুদ্র।এই সমুদ্রের শেষে কি ছিলো সেটা নিয়ে কিছু বলেনি তারা।তাদের ম্যাপ অনুসারে পৃথিবীর নিচের দিকে ছিলো নরক।এই নরক সাতটা দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিলো বলে তারা মনে করতো।ব্যাবিলনরা চন্দ্র এবং সূর্যের গতিবিধি গুলো খুব সুন্দরভাবে বুঝতে পারতো এবং সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ নিয়ে সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করতে পারতো।
তারা জ্যামিতি এবং মাপজোকের ব্যাপারগুলো অনেক ভালো বুঝতো।তারা নিখুঁতভাবে চন্দ্রগ্রহণের আবর্তনকাল আবিষ্কার করে।তারা বের করে ১৮ বছর পর পর চন্দ্রগ্রহণ একই সময় ঘটে।এই ঘটনাকে Saros অথবা Chaldean Saros বলা হয়।
ব্যাবিলনরা ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে গণনা করতো,যেমন আমরা আজকের যুগে ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে
গণনা করি।তাদের এই ভিত্তি থেকে ৬০ মিনিটে এক ঘন্টা,৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট এই ধারনা গুলো আসে।
ব্যাবিলনরা তখনকার সময়ে একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করে যেটাতে বছর ছিলো ৩৬০ দিনের এবং বছরে মাস ছিলো ১২টি।তারা কয়েক বছর পর পর একটা মাস যোগ করে ১৩ মাসের বছর বানাতো।এভাবে তারা বছরের হিসাবকে সংশোধন করতো।
প্রাচীন মিশরের জ্যোতির্বিদ্যা
প্রাচীনকালে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ বছর আগে মিশরের সভ্যতা গড়ে উঠে।মিশরের কৃষকেরা নীল নদের পানি দিয়ে
কৃষি কাজ করতো।প্রতি বছর তাদের এলাকা গুলোতে বন্যা হতো এবং বন্যার পানিতে ফসল নষ্ট হবার সম্ভাবনা
থাকতো।
তাই বন্যা চলাকালীন তারা কোনো চাষাবাদ করতো না।বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তারা চাষাবাস করতো।তারা লক্ষ করতো সকালের পূর্ব আকাশে যখন Sirius নামক নক্ষত্রটি অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠে তার কিছুদিন পরেই বন্যা শুরু হয়।
মিশরের এসব লোক গুলোই প্রথম আকাশের তারা নিয়ে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে।মিশরীয়রা পিরামিড বানানের জন্য বিখ্যাত এবং এসব পিরামিডগুলো ছিলো জ্যোতির্বিদ্যার নিদর্শন।
পৃথিবী একটা নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে।এই অক্ষকে উত্তর দিকে বাড়ালে সেটা আকাশের তলকে স্পর্শ করে। এই বিন্দুকে সুমেরু বলে।পিরামিডের সুচালো মাথাগুলো এই সুমেরু বরাবর থাকে।
এছাড়া তারা প্রতিদিনের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত,ঝড়বৃষ্টি,চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ লক্ষ করতো।আকাশের তারা দেখে পরীক্ষা করতো কোন তারা কোন দিকে সবসময় উঠে।তাই এসব লোকেরা আকাশের তারাকে নির্ভরতার প্রতীক বানিয়েছিলো।
আকাশের গ্রহ-উপগ্রহকে স্বর্গের দেবতা বানিয়েছিলো।তাদের বিশ্বাস ছিলো আমাদের জীবন-মরণ,ভাগ্য-নিয়তি এসব নিয়ন্ত্রণ করছে এসব গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র।
তবে দুঃখের কথা হচ্ছে মিশরীয়দের এসব Astronomy চর্চা আমাদের বর্তমান যুগের Astronomy চর্চার ক্ষেত্রে
তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি।
প্রাচীন গ্রিক জ্যোতির্বিদ
খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে ৩০০ বছর পর্যন্ত গ্রীক সভ্যতা জ্যোতির্বিদ্যায় অনেক উন্নতি করে।এই সময়টাতে জ্যোতির্বিদ
ছাড়াও আরো অনেক ধরনের বিজ্ঞানীরা ছিলেন যারা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা নিয়েও গবেষণা করেন।
তাদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছে-
মিলেতুসের থেলিস (Thales)
Image
থেলিস সবার প্রথম মহাকাশের ঘটনাগুলোকে গানিতিক এবং বিজ্ঞানের রূপ দেন।আকাশের তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি সমুদ্রে জাহাজের দুরত্ব মাপতে পারতেন।
সামোসের পিথাগোরাস (Pythagoras)
পিথাগোরাস ছিলেন গণিতের অন্ধভক্ত এবং গণিতের ধর্মগুরু।তিনি বলতেন মহাকাশের গ্রহ-উপগ্রহ গুলো বৃত্তাকার পথে চলে।
ফিলোলাউস (Philolaus)
ফিলোলাউস ছিলেন পিথাগোরাসের শিষ্য।তিনিই প্রথম বলেন পৃথিবী বা সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্র না।তার ধারনা ছিলো মহাবিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে বিশাল একটা অগ্নিকুণ্ড।সূর্য সেই অগ্নিকুণ্ড থেকে আলো নেয় এবং আমাদেরকে সেটা দান করে।
প্লেটো (Plato)
প্লেটো পিথাগোরাসের মতই মনে করতেন ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বিজ্ঞানের সব রহস্য ভেদ হয়ে যাবে।তিনি পর্যবেক্ষণ নির্ভর ছিলেন না।
এরিস্টটল (Aristotle)
এরিস্টটলের শিক্ষক ছিলো প্লেটো।তবে এরিস্টটল প্লেটোর বিরোধী ছিলেন।এরিস্টটল বিজ্ঞানকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।তিনি খেয়াল করতেন সমুদ্রে কোনো জাহাজ যদি অনেক দূরে চলে যায় তবে জাহাজের উঁচু অংশ সবার পরে অদৃশ্য হয়ে যায়।তিনি প্রথম পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে চিন্তা করেছিলেন।কিন্তু তার এই চিন্তা এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
প্রারম্ভিক মানুষের বিজ্ঞান
কেন তারা?
রাতের আকাশ পর্যবেক্ষন কত আগে শুরু হয়েছিল তার কোন সঠিক রেকর্ড নেই।প্রাচীন মানুষের কোন আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না,কিন্তু তারা নতুন নতুন দক্ষতা শিখতে শুরু করেছিল যেমন : কৃষিকাজ এবং পালতোলা।
আপনি যদি নীল নদের উপত্যকার মতো কোথাও বাস করতেন,তাহলে প্রতি বছর বন্যায় আপনি ভেসে যাবেন।বন্যার ঋতু ছিল,কিন্তু আপনার কাছে কোনো ক্যালেন্ডার ছিল না,তাই কখন ঘটতে চলেছে তা জানার কোনো উপায় ছিল না। আপনি যদি বন্যার আগে আপনার ফসল রোপণ করেন তবে বীজগুলি ধুয়ে যাবে। আবার আপনি যদি খুব বেশি সময় অপেক্ষা করেন,তাহলে আপনার বীজের বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য আপনার কাছে পর্যাপ্ত সময় নাও থাকতে পারে। পঙ্গপালও ছিল,তারা কখন পৌঁছানোর সম্ভাবনা ছিল তা আপনার জানা দরকার যাতে তারা আসার আগে আপনি আপনার ফসল কাটাতে পারেন।এ ক্ষেত্রে তারার জ্ঞান কৃষিকাজে কাজে লেগেছিল।
আপনি যদি পাল তোলার সময় উপকূলের কাছাকাছি থাকেন তবে আপনি সম্ভবত ঠিক আছেন,কিন্তু আপনি যদি উপকূল থেকে অনেক দূরে যান তবে আপনি কোথায় আছেন তা জানতে হবে।তা নাহলে আপনি জমিতে পৌঁছানোর আগেই আপনার খাবার এবং জল শেষ হয়ে যেতে পারে বা বাতাস আপনাকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে এবং আপনি কোন জনমানবহীন কোন দ্বীপে অবতরণ করতে পারেন।নক্ষত্রের জ্ঞান দিক নির্নয়ে দরকারী ছিল।
সমাধান আছে তারায়!
প্রথম দিকের মানুষেরা,ক্যাম্প ফায়ারের চারপাশে বসে তারার নড়াচড়ার ছন্দ লক্ষ্য করতেন।কিছু জিনিস আলাদাভাবে সরে যায় (চাঁদ, গ্রহ),কিন্তু বেশিরভাগ তারা ঘড়ির কাঁটার মতো আচরণ করে এবং সরে যায়।এ ক্ষেত্রে তারা একটি ক্যালেন্ডার বা একটি মানচিত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে.
আকাশে ট্র্যাকিং আন্দোলনের প্রাথমিক রেকর্ড
প্রাচীনতম রেকর্ডগুলি খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালের দিকে এবং তা ছিল ব্যাবিলনীয়দের (বর্তমান ইরাকে)।প্রাথমিকভাবে,
পর্যবেক্ষণগুলি সূর্য, চাঁদ এবং শুক্রকে কেন্দ্র করে; কিন্তু পরে বুধ,বৃহস্পতি এবং শনিও অন্তর্ভুক্ত হয়।ব্যাবিলনীরা তারা
গতির পূর্বাভাস তৈরি করতে এই ডেটা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল।এই গবেষণার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ধর্মীয় কারণে ছিল বলে মনে হয়।এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রথম দিকের লোকেরা বৃহত্তর মহাবিশ্বের সাথে নিজেদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করার জন্য এই প্রাথমিক সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করেছিল।
আকাশ পড়ার জন্য প্রাথমিক কাঠামো !
প্রারম্ভিক লোকেরা কাঠামো তৈরি করার উপায় খুঁজে পেয়েছিল যা তারা ঋতুর পূর্বাভাস দিতে ব্যবহার করতে পারে।তারা তাদের কাছে থাকা সরঞ্জামগুলি এবং হাতে থাকা উপকরণগুলি নিয়ে কাজ করেছিল এবং জ্যোতির্বিদ্যার সরঞ্জাম তৈরি করেছিল।এই প্রাথমিক কাঠামোর অধ্যয়নকে বলা হয় আর্চে জ্যোতির্বিদ্যা।
পাথর চেনাশোনা !
প্রাথমিকভাবে,তারা একটি বৃত্তে বিন্দু চিহ্নিত করে যা তাদের আকাশের ঘটনাগুলি দেখতে সক্ষম করবে।এই ঘটনাগুলো ঘটলে তারা জানত ঋতু পরিবর্তন হতে চলেছে।তাদের পক্ষে এটি করার সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল একটি বড় বৃত্তে মাটিতে পাথর স্থাপন করা।
একটি ভাল উদাহরণ হল মেডিসিন মাউন্টেনের উপরে অবস্থিত বিগহর্ন মেডিসিন হুইল লাভল, ওয়াইমিং এর কাছে।
Figure 37: Bighorn Medicine Wheel
বিন্যাস পাঠোদ্ধার করা !
প্রথম দিকের লোকেরা তাদের হাতিয়ারের জন্য কোন নির্দেশনা রেখে যায়নি।জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং ইতিহাসবিদরা
বহু বছর ধরে বোঝার চেষ্টা করেছেন যে তারা কীভাবে ব্যবহার করা হত।বড় পাথরের বৃত্তে একটি কেন্দ্রীয় বৃত্ত এবং বাইরের চারপাশে ছয়টি ছোট বৃত্ত বা কেয়ারন রয়েছে।এইগুলি ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে পরিবেশন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট।
Figure 38: Bighorn Medicine Wheel –the Astronomical Connection
এছাড়াও ইউরোপে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনেক পাথরের বৃত্ত রয়েছে।
স্টোনহেঞ্জ!
ইংল্যান্ডে,প্রথম দিকের লোকেরা বিশাল বিশাল পাথর বহু মাইল টেনে এনে একটি বিশাল বৃত্তের আকারে মাটিতে স্থাপন করেছিল।স্টোনহেঞ্জ ৩০০০ BC থেকে ২০০০ BC এর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।এটি কবরের ঢিবি এবং অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক কাঠামোর একটি বড় সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে।
Figure 39: Stone Circle in Ireland
এল কারাকল!
এল কারাকোল হল মেক্সিকোতে প্রাক-কলম্বিয়ান মায়া সভ্যতার দ্বারা চিচেন ইটজাতে নির্মিত একটি জ্যোতির্বিদ্যা
পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।এটি ৯০৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে নির্মিত হয়েছিল।টাওয়ারটি খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,তবে ২৯টি
মহাকাশীয় ঘটনা যা মায়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল,যা ২০টি টাওয়ার থেকে লক্ষ্য করা যায়।
Figure 41: El Caracol
একটি জ্যোতির্বিদ্যা মোড় সহ অন্যান্য সাইট!
বিশ্বজুড়ে আরও অনেক সাইট রয়েছে যদিও সেগুলি মানমন্দির ছিল না,তবে তাদের নির্মাণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনাগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছিল।যা প্রায়ই সংস্কৃতির পুরাণ বা ধর্মের সাথে সম্পর্কিত ছিল।
গিজায় মিশরের গ্রেট পিরামিড!
এগুলো ফারাওদের কবরখানা।তাদের ঘাঁটি এবং কিছু গিরিপথ উত্তরে এবং মহাকাশীয় বস্তুর সাথে সারিবদ্ধ।
Figure 42: The Great Pyramids of Giza, Egypt
মিশরে আবু সিম্বেলের মন্দির!
মন্দিরটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ২২ অক্টোবর এবং ২২ ফেব্রুয়ারি সকালের সূর্যের প্রথম রশ্মিগুলি অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে এবং পাতার সাথে যুক্ত দেবতা পতাহের মূর্তি ব্যতীত পিছনের দেয়ালে ভাস্কর্যগুলিকে আলোকিত করে যা অন্যান্য সময় অন্ধকারে থাকে।অন্যান্য মূর্তিগুলি হল (বাম থেকে ডানে) আমুন রা,রামেসিস এবং রা-হোরাখটি।
Figure 45: Temple of Abu Simbel
Figure 46: Sanctuary at Abu Simbel
প্রথম দিকের লোকেরা রোপণ,ফসল কাটা এবং কখন বার্ষিক বন্যার আশা করতে হবে তা বলার জন্য
পাথরের কাঠামো তৈরি করেছিল।নক্ষত্রের ধরণ এবং সময় জানা দিক নির্নয়ে সাহায্য করেছিল
প্রাচীন মিশরের জ্যোতির্বিদ্যা
প্রারম্ভিক মানুষের বিজ্ঞান
মহাকাশ সত্যিই বড়! Space is Really Big!
আমরা জানিপৃথিবীর গড় ব্যাস প্রায় 7,917.5 মাইল ।আমরা দূরত্ত পরিমাপের ক্ষেত্রে মাইল এবং কিলোমিটারে পরিমাপ করে থাকি এবং স্থানীয়ভাবে আমরা ফুট এবং ইঞ্চি বা মিটার এবং মিলিমিটারে পরিমাপ করি।
কিন্তু আমরা যখন মহাকাশে দূরত্ত পরিমাপ করি তখন আমাদের কাজ করার জন্য আরও বড় স্কেল থাকতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ,আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা হল প্রায় 6 ট্রিলিয়ন মাইল (6,000,000,000,000) বা 10 ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।তাই জ্যোতির্বিদ্যায় আমরা এই দূরত্বকে এক আলোকবর্ষ বলে থাকি।
জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত দূরত্ব স্কেল (Astronomical Distance Scales)
• জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট (Astronomical Unit)
এটি হচ্ছে সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব। এটি প্রায় 92,955,807.3 মাইল বা 149,597,871 কিলোমিটারের সমান।
• আলোকবর্ষ (Light-Year)
আলোকবর্ষ হল সেই দূরত্ব যা আলো এক বছরে শূন্যে অতিক্রম করে।এটি প্রায় 5,878,499,810,000 মাইল বা 9,460,528,400,000 কিলোমিটারের সমান।
দ্রষ্টব্য:
যদিও আলোকবর্ষ শব্দটিতে বছর শব্দটি রয়েছে,যা সময়ের সাথে সম্পর্কিত,আলোকবর্ষ আসলে দূরত্বের একক।
যদিও আলোর গতি একটি উচ্চ গতির সীমা, আলো বিভিন্ন পদার্থের মাধ্যমে বিভিন্ন গতিতে ভ্রমণ করে।
• পারসেক Parsec
এক পার্সেক প্রায় 3.26163344 আলোকবর্ষ বা প্রায় 3.3 আলোকবর্ষের সমান।
দ্রষ্টব্য:
সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথটি 1 আর্ক-সেকেন্ড,সেই হিসাবে করতে আপনার পৃথিবী থেকে এই দূরত্বটি হবে কৌণিক দূরত্ব ।
মহাকাশে সবকিছুই চলমান
আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব নির্দেশ করে যে মহাবিশ্বে রেফারেন্সের কোনো পরম ফ্রেম নেই।আপনি আপনার ব্যক্তিগত রেফারেন্স ফ্রেম থেকে বস্তুর সাথে সম্পর্কিত করতে পারেন,তবে এটি অন্য যেকোন রেফারেন্স ফ্রেম থেকে আলাদা নয়।এই উপাদানটি সরাসরি পৃথিবীতে আমাদের গতিতে নিয়ে যায়।শুরুর দিকে লোকেরা মনে করত যে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র,এমন মনে হওয়ার কারন যে আমরা নড়ছি না এবং অন্য সবকিছু আমাদের চারপাশে ঘুরছে।
পৃথিবীর গতি
ধরুন একটি বিমান 35,000 ফুট উচ্চতায় বাতাসে ঘন্টায় 550 মাইল বেগে ভ্রমণ করে,যদি কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে এবং যদি জানালার ছায়া বন্ধ থাকে তবে আমরা মাটিতে বসে যে গতি অনুভব করি বিমানে বসে আমরা একই গতি অনুভব করব।কিন্তু টেক-অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের সময় আমরা বেগের পরিবর্তন (ত্বরণ এবং হ্রাস) অনুভব করি।
এমন অনেক গতি আছে যা পৃথিবীর মানুষ কোন ত্বরণ বা হ্রাস অনুভব করে না,যার মধ্যে রয়েছে নিম্নলিখিত:
• পৃথিবীর আবর্তন (Earth’s Rotation)
প্রতি 24 ঘন্টায় পৃথিবীর মানুষ পৃথিবীর অক্ষের চারপাশে ঘোরে।
• পৃথিবীর বিপ্লব (Earth’s Revolution)
বছরে একবার পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে সূর্যের চারদিকে ঘোরে।
• অগ্রগতি (Precession)
প্রতি 26,000 বছরে পৃথিবীর মেরু তার প্রিসেশন কেন্দ্রের চারপাশে ঘোরে।এই Precession এর কৌণিক ব্যাসার্ধ প্রায় 23.5 ডিগ্রী। এটি একই ধরণের গতি যা আপনি উপরের দিকে দেখতে পান এবং এটির গতি ধীর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে টলমল করে।
Figure: Precession
• নিউটেশন ( Nutation)
বছরের পর বছর পৃথিবীর অক্ষীয় কাতেও একটি ছোট পরিবর্তন হয়,একে বলে নিউটেশন।নিউটেশন প্রধান উৎস হল সূর্য এবং চাঁদ।সবচেয়ে বড় প্রভাব থাকা শব্দটির সময়কাল 6798 দিন এবং এটি চাঁদের কারণে ঘটে।
• গ্যালাকটিক ঘূর্ণন
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে সূর্য প্রদক্ষিণ করছে। এটি একটি অরবিটাল বিপ্লব, এ টি প্রদক্ষিন করতে প্রায় 250 মিলিয়ন বছর লাগে পৃথিবীর।
• সূর্যের অরবিটাল দোলন
সূর্য যেমন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রদক্ষিণ করে সেখানেও উপরে এবং নিচের গতি রয়েছে।এই দোলনের একটি সময়কাল আছে প্রায় 35 মিলিয়ন বছর।
• গ্যালাকটিক আকর্ষণ (Galactic Attraction)
এমনকি গ্যালাক্সিগুলোও একে অপরের সাপেক্ষে গতিশীল।অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি প্রায় 250,000 মাইল প্রতি ঘন্টা গতিতে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কাছে আসছে।যেহেতু রেফারেন্সের কোনো নিখুঁত ফ্রেম নেই, এর মানে হল যে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির প্রাণীদের কাছে, আমরা তাদের কাছে 250,000 মাইল প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছি।
• পৃথিবীতে অবস্থান (Location on Earth)
একজন পর্যবেক্ষকের অক্ষাংশ, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময়কে প্রভাবিত করে।পৃথিবীর বিষুবরেখায় সারা বছর দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সামান্য পরিবর্তিত হয়,কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে,পৃথিবীর কাত হয়ে থাকা এবং সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথের কারণে দিন-রাত্রির চক্র বেশ চরম হয়ে ওঠে।এমন অনেক দিন আছে যেখানে সূর্য অস্ত যায় না।
এবং আরও অনেক কিছু আছে...And there are many more…এই অনেক গতির মধ্যে কিছু যা আমরা পৃথিবীতে বাস করে অনুভব করছি।
মহাবিশ্বের স্কেলে পৃথিবী
আমাদের গ্রহ পৃথিবী,যা আমরা সবাই জানি এবং ভালোবাসি।পৃথিবীতে শ্বাস নেয়ার জন্য বাতাস,খাওয়ার জন্য খাবার,পানীয় জল এবং বসবাসের জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশ রয়েছে।যদিও আপনি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে থাকেন তখন পৃথিবীকে বেশ বড় বলে মনে হয়।মহাবিশ্ব একটি খুব বিস্তীর্ণ স্থান এবং মহাবিশ্বের স্কেলে পৃথিবী একটি মাইক্রোস্কোপিক স্পেক মাত্র।আসুন কীভাবে মহাকাশীয় জিনিস গুলি পরিমাপ করা যায় তা দেখে নেওয়া যাক।
পৃথিবী (Earth)
পৃথিবী একটি মোটামুটি গোলাকার বল,যার গড় ব্যাস 7,917.5 মাইল এবং পৃথিবী সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার পৃষ্ঠে তরল জল,বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন এবং জীবন রয়েছে।
সূর্য (The Sun)
যদিও পৃথিবী আমাদের জীবনের কেন্দ্র তবে সূর্য হল সৌর জগৎতের (Solar System) কেন্দ্র।সূর্য পৃথিবীর তুলনায় যথেষ্ট বড়।এতটা বড় যে,আপনি সূর্যের ব্যাস জুড়ে প্রায় 110 পৃথিবীর ফিট করতে পারেন।সূর্যের ব্যাস প্রায় 870,000 মাইল ।সূর্যের গায়ে সূর্যের দাগ এবং সৌর শিখা রয়েছে যা পৃথিবীর চেয়ে বড়।পৃথিবী সূর্য থেকে গড়ে 93,000,000 মাইল দূরে ।একে এইউ AU (জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট) বলা হয়।পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাস 186,000,000 মাইল ।
সৌরজগৎ (The Solar System)
সূর্য দ্বারা প্রভাবিত সবকিছুই সৌর জগতের অংশ।এর মধ্যে রয়েছে সমস্ত গ্রহ,চাঁদ,গ্রহাণু,ধূমকেতু,উল্কা, ধূলিকণা এবং গ্যাস যা সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার জন্য সূর্যের যথেষ্ট কাছাকাছি।এই অঞ্চলটি সূর্য থেকে প্রায় 2 আলোকবর্ষ দূরে বিস্তৃত।এটি 1.175699962 x 1013 মাইল বা প্রায় 12 ট্রিলিয়ন মাইল।
নিকটতম তারকা প্রতিবেশী (Nearest Stellar Neighbor)
সূর্যের নিকটতম প্রতিবেশী হল প্রক্সিমা সেন্টোরি ।এটি একটি ছোট লাল বামন নক্ষত্র যা 4.243 আলোকবর্ষ দূরে।এটি আলফা সেন্টোরি মাল্টিপল-স্টার সিস্টেমের অংশ।
Table 1: Measuring Distances in Astronomy (using miles)
1 foot = 12 inches
|
1 mile = 5280 feet
|
1 AU = 92955807.5 miles
|
1 light-year = 63,239.7263 AU
|
1 parsec = 3.26 light-year
|
Table 2: Measuring Distances in Astronomy (using Kilometers)
1 kilometer = 1000 meters
|
1 AU = 149,597,871 km
|
1 light year = 63,239.7263 AU
|
1 parsec = 3.26 light-years
|
স্থানীয় তারার প্রতিবেশী (The Local Stellar Neighborhood)
স্থানীয়, আশে পাশের এলাকা কতদূর প্রসারিত তার সীমাটি ভালভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।30 আলোকবর্ষ ব্যাস একটি যুক্তিসঙ্গত সীমা।(চিত্র 3) আমাদের সৌরজগতের সমতলটি 15 আলোকবর্ষের বাইরের দিকে প্রসারিত দেখায়।তারার দিকে আঁকা লাল রেখাগুলি সূর্য থেকে বাইরের দিকে প্রসারিত এবং তারপরে উপরের দিকে বা নীচের দিকে তাদের উচ্চতাকে সেই সমতলের উপরে বা নীচে উপস্থাপন করে।
চিত্র :3
প্রতিবেশি তারকারা (Stars in the Neighborhood)
সূর্যের আশেপাশের নক্ষত্রগুলি পরিশিষ্ট 5- দ্য সানস স্টেলার নেবারহুডে পাওয়া যাবে।নিকটতম নক্ষত্র হল প্রক্সিমা সেন্টোরি।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি (The Milky Way Galaxy)
আমাদের স্থানীয় ছায়াপথকে মিল্কিওয়ে বলা হয়।এটির ব্যাস প্রায় 100,000 আলোকবর্ষ ।(চিত্র 4)-এর SUN সূর্যের অবস্থানকে নির্দেশ করে।মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অনেক ছোট সঙ্গী ছায়াপথ রয়েছে।এই ছায়াপথগুলি মিল্কিওয়েকে প্রদক্ষিণ করে।
চিত্র 4
অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি (Andromeda Galaxy)
আমাদের নিকটতম বৃহৎ গ্যালাকটিক প্রতিবেশী হল অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি।এটি 2.4 মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ।অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে মিল্কিওয়ের চেয়ে অনেক বেশি সহচর গ্যালাক্সি রয়েছে।
স্থানীয় গ্যালাক্সি গ্রুপ (The Local Galaxy Group)
অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি এবং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সহ সমস্ত সহচর গ্যালাক্সি নিয়ে স্থানীয় গ্যালাক্সি গ্রুপ গঠিত।এর ব্যাস 10 মিলিয়ন আলোকবর্ষ এবং এটি 54 টি ছায়াপথের সমন্বয়ে গঠিত ।(চিত্র 7) এ, স্থানীয় গ্যালাক্সি গ্রুপের সদস্যদের দেখানো হয়েছে।নীল ডিম্বাকৃতি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সমতলে দূরত্ব নির্দেশ করে এবং রেখাগুলি সমতলে থাকা অন্যান্য ছায়াপথের দূরত্ব এবং সেই সমতলের উপরে ও নীচের দূরত্ব নির্দেশ করে।স্থানীয় গ্যালাক্সি গ্রুপ তিনটি সর্পিল গ্যালাক্সি নিয়ে গঠিত: মিল্কিওয়ে, অ্যান্ড্রোমিডা এবং M33। এছাড়াও অনেক অনিয়মিত গ্যালাক্সি এবং উপবৃত্তাকার ছায়াপথ রয়েছে ।
চিত্র 7
কুমারী সুপার ক্লাস্টার (The Virgo Super cluster)
গ্যালাক্সির স্থানীয় গোষ্ঠী, কুমারী সুপার ক্লাস্টারের অংশ।সুপার ক্লাস্টারকে 110 মিলিয়ন আলোকবর্ষের স্থানীয় স্থান হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।এটিতে 100 টিরও বেশি গ্যালাক্সি গ্রুপ এবং ক্লাস্টার রয়েছে ।
স্থানীয় গ্যালাক্সি সুপার ক্লাস্টার (The Local Galaxy Super cluster)
গ্যালাক্সির স্থানীয় সুপারক্লাস্টার হল ল্যানিয়াকিয়া সুপারক্লাস্টার।এর ব্যাস 520 মিলিয়ন আলোকবর্ষ এবং এটি 100,000 এরও বেশি ছায়াপথ নিয়ে গঠিত ।মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি হল সুপার ক্লাস্টারের একটি অংশের অংশ যাকে বলা হয় কুমারী সুপার ক্লাস্টার।
মহাবিশ্ব (The Universe)
মহাকাশের সুদূরের দিকে তাকাতে গিয়ে আমরা একটি সমস্যায় পড়ে যাই।আমরা যতই বাইরে তাকাই,ততই পিছনের দিকে তাকাচ্ছি।মহাবিশ্ব আসলে কেমন দেখায় তার প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।আমরা গ্যালাক্সি এবং কাঠামো দেখতে সক্ষম,কিন্তু আমরা কতদূর দেখতে পারি তার একটি সীমা রয়েছে।আমরাও জানি না মহাবিশ্ব কত বড়।আমরা জানি যে আমরা যে অংশটি দেখতে পাচ্ছি মহাবিশ্ব তার চেয়ে বড়।
(চিত্র 9) মহাবিশ্বের একটি অংশ প্রতিনিধিত্ব করে।এতে গ্যালাক্সির ফিলামেন্ট এবং শূন্যতা রয়েছে যেখানে খুব কম ছায়াপথ আছে।যদিও আমরা মহাবিশ্বের কেন্দ্রে নই,আমরা আমাদের জীবনের কেন্দ্র:আমাদের পরিবার,আমাদের কার্যকলাপের মধ্যে অবস্থান।এটা স্বাভাবিক যে আমরা যখন আমাদের চারপাশের জগৎ, সৌরজগৎ বা সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্বের দিকে তাকাই,তখন আমরা এটিকে নিজেদের পরিপ্রেক্ষিতে ভাবি।
সর্বোপরি, আমরা আমাদের চোখ দিয়ে মহাবিশ্বকে উপলব্ধি করি, তাই আমরা যা দেখি তা সেই চোখ থেকে বাহ্যিক।স্বর্গের দিকে তাকানোর মধ্যে প্রচুর আনন্দ এবং উপভোগ রয়েছে।কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যা হচ্ছে একটি বিজ্ঞান এবং এর মানে হল জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসাবে আমাদের সঠিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং তারপর সেই পর্যবেক্ষণ গুলির যত্ন সহকারে পরিমাপ করতে হবে।আসুন আমরা যা পর্যবেক্ষণ করি তা কীভাবে পরিমাপ করি তা ঘনিষ্ঠভাবে দেখে নেওয়া যাক।
আপনি যা দেখেন তা সর্বদা তা নয় (What You See is Not Always What It Is)
আপনি যখন মহাকাশে তাকান তখন দেখা যাচ্ছে যে আপনি যে সমস্ত তারা,গ্রহ এবং ছায়াপথগুলি দেখছেন তার সবগুলিই একটি বিশাল গোলকের উপরে আঁকা হয়েছে।আমরা এই গোলকটিকে স্বর্গীয় গোলক হিসাবে উল্লেখ করি।এটা একটা মায়া।বস্তুগুলো পৃথিবী থেকে বিভিন্ন দূরত্বে রয়েছে।
নিজের জন্য এটি দেখতে,একটি চোখ বন্ধ করুন,সেই চোখ থেকে প্রায় 6 ইঞ্চি উপরে একটি আঙুল ধরুন এবং তারপরে সেই চোখ থেকে যতটা সম্ভব দূরে অন্য হাত থেকে একটি আঙুল ধরুন,তবে একই দিকে।উভয় আঙ্গুল একসাথে কাছাকাছি,কিন্তু বাস্তবে তারা এক ফুট দূরে আছে,এটি মহাকাশের বস্তুর জন্য একই।তারা সারিবদ্ধ হতে পারে এবং একসঙ্গে কাছাকাছি প্রদর্শিত হতে পারে,যখন বাস্তবে তারা অনেক আলোকবর্ষ দূরে থাকতে পারে।
নক্ষত্রমণ্ডল ওরিয়ন বিবেচনা করুন।মহাকাশীয় গোলকটিতে তারাগুলি প্রায় একই দূরত্বে রয়েছে বলে মনে হয় (চিত্র 16 দেখুন)।কিন্তু আমরা চিত্র 17-এ যেমনটি দেখতে পাই,নক্ষত্রগুলি সত্যিই একসাথে কাছাকাছি নয়।
সারণী 3 পৃথিবী থেকে তাদের প্রকৃত দূরত্ব দেখায়।
বামন গ্রহ
বামন গ্রহ ওভারভিউ
প্লুটো এবং অন্যান্য বামন গ্রহগুলি অনেকটা নিয়মিত গ্রহের মতো তবে এ দের বড় পার্থক্য কি?
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU), জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি বিশ্ব সংস্থা,২০০৬ সালে একটি গ্রহের সংজ্ঞা নিয়ে এসেছিল ৷ IAU অনুসারে, একটি গ্রহের তিনটি বৈশিষ্ট থাকতে হবে:
১. এর হোস্ট নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে হবে (আমাদের সৌরজগতে এটি হলো সূর্য)।
২. বেশিরভাগ বৃত্তাকার হতে হবে।
৩. এত বড় হতে হবে যে এর মাধ্যাকর্ষণ সূর্যের চারপাশে এর কক্ষপথের কাছাকাছি একই আকারের অন্য কোনও বস্তুকে সরিয়ে দেয়।
প্লুটোর মতো বামন গ্রহ
সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এমন বস্তু হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল এবং প্রায় গোলাকার কিন্তু কক্ষপথ তাদের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি।এখন পর্যন্ত, IAU শুধুমাত্র পাঁচটি বামন গ্রহকে স্বীকৃতি দিয়েছে: প্লুটো, সেরেস,মেক,হাউমিয়া এবং এরিস।
কিন্তু আইএইউ বলছে আরও অনেক বামন গ্রহ থাকতে পারে - সম্ভবত একশরও বেশি আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্লুটো: বামন গ্রহের তারা
প্লুটো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিখ্যাত বামন গ্রহ।১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবগ দ্বারা আবিষ্কৃত প্লুটোকে আমাদের সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।কিন্তু অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী কুইপার বেল্টের গভীরে অনুরূপ কৌতূহলী জগত খুঁজে পাওয়ার পরে IAU ২০০৬ সালে প্লুটোকে একটি বামন গ্রহ হিসাবে পুনঃশ্রেণীবদ্ধ করে।এই অবনমিত গ্রহের পক্ষে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল।পাঠ্যপুস্তকগুলি আপডেট করা হয়েছিল এবং ইন্টারনেট প্লুটোর সাথে রাগ থেকে বিভিন্ন আবেগের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মেম তৈরি করেছিল। ১৪ জুলাই, ২০১৫-এ, NASA-এর New Horizons মহাকাশযান প্লুটোর সিস্টেমের মধ্য দিয়ে তার ঐতিহাসিক ফ্লাইট পরিচালনা করে এবং প্লুটো ও এর চাঁদের প্রথম ক্লোজ-আপ ছবি প্রদান করে এবং অন্যান্য ডেটা সংগ্রহ করে যা সৌরজগতের বাইরের সীমান্তে এই রহস্যময় জগতের সম্পর্কে আমাদের বোঝার পরিবর্তন করেছে। বামন গ্রহ সেরেস হলো বাড়ির কাছাকাছি।সেরেস হল মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণু বেল্টের বৃহত্তম বস্তু এবং এটি অভ্যন্তরীণ সৌরজগতে অবস্থিত একমাত্র বামন গ্রহ। প্লুটোর মতো, সেরেসকেও একবার গ্রহ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল। সেরেস ছিল প্রথম বামন গ্রহ যা একটি মহাকাশযান দ্বারা পরিদর্শন করা হয়েছিল - নাসার ডন মিশনে।
প্লুটো
প্লুটো হল পাহাড়,উপত্যকা,সমভূমি,গর্ত এবং সম্ভবত হিমবাহ সহ একটি জটিল এবং রহস্যময় জায়গা।এটি দূরবর্তী কুইপার বেল্টে অবস্থিত।১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত প্লুটো দীর্ঘকাল ধরে আমাদের সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসাবে বিবেচিত হয়ছিল।কিন্তু কুইপার বেল্টের গভীরে অনুরূপ কৌতূহলোদ্দীপক বিশ্বের আবিষ্কারের পর,ক্ষুদ্র প্লুটোকে একটি বামন গ্রহ হিসাবে পুনরায় শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল।প্লুটো মাত্র ১,৪০০ মাইল চওড়া।সেই ছোট আকারের প্লুটো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থের প্রায় অর্ধেক।এটি সূর্য থেকে প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন মাইল দূরে এবং এটির একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল রয়েছে যা বেশিরভাগ নাইট্রোজেন, মিথেন এবং কার্বন মনোক্সাইড দ্বারা গঠিত।গড়ে প্লুটোর তাপমাত্রা -৩৮৭ ° ফারেনহাইট (-২৩২ ° সে), যা জীবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য খুব ঠান্ডা। প্লুটো পাঁচটি পরিচিত চাঁদ দ্বারা প্রদক্ষিণ করে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হল চারন। চ্যারন প্লুটোর আকারের প্রায় অর্ধেক এবং আমাদের সৌরজগতে যে কয়টি গ্রহটি প্রদক্ষিণ করে তার তুলনায় এটি বৃহত্তম উপগ্রহ। প্লুটো এবং চারনকে প্রায়ই "দ্বৈত গ্রহ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
প্লুটোর পৃষ্ঠ অত্যন্ত ঠান্ডা, তাই সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে মনে হয় না।এই ধরনের ঠান্ডা তাপমাত্রায় জল যাকে আমরা জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক জানি মূলত এখানে তা পাথরের মতো। প্লুটোর অভ্যন্তরটি উষ্ণতর তবে কেউ কেউ মনে করে এর গভীরে একটি মহাসাগরও থাকতে পারে।
আকার এবং দূরত্ব
৭১৫ মাইল (১,১৫১ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের, প্লুটো পৃথিবীর প্রস্থের প্রায় ১/৬ ।যদি পৃথিবী একটি নিকেলের আকার হত তবে প্লুটো একটি পপকর্ন কার্নেলের মতো বড় হবে।সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ৩.৭ বিলিয়ন মাইল (৫.৯ বিলিয়ন কিলোমিটার)।প্লুটো সূর্য থেকে ৩৯ জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক দূরে অবস্থিত।একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব।এই দূরত্ব থেকে সূর্য থেকে প্লুটোতে সূর্যের আলো যেতে লাগে ৫.৫ ঘন্টা।আপনি যদি দুপুরে প্লুটোর পৃষ্ঠে দাঁড়ান তাহলে সূর্যের উজ্জ্বলতা এখানে পৃথিবীর ১/৯০০ বা আমাদের পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে প্রায় ৩০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল হবে।পৃথিবীতে সূর্যাস্তের কাছাকাছি মুহূর্তে আলো যে অবস্থায় থাকে প্লুটোতে মধ্যাহ্নের সসয় একই উজ্জ্বল থাকে।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
সূর্যের চারপাশে প্লুটোর কক্ষপথ অন্য গ্রহগুলির তুলনায় অস্বাভাবিক। এটি উপবৃত্তাকার এবং কাত উভয়ই । প্লুটোর ২৪৮ বছর দীর্ঘ ডিম্বাকৃতি-আকৃতির কক্ষপথ যা সূর্য থেকে ৪৯.৩ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট (AU) এবং ৩০ AU এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।(এক AU হল পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যকার গড় দূরত্ব, প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল বা ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার।কিন্তু গড়ে প্লুটো, সূর্য থেকে ৩.৭ বিলিয়ন মাইল (৫.৯ বিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে বা ৩৯ AU । ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত প্লুটো পেরিহিলিয়নের কাছাকাছি ছিল যখন এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে ছিল।এই সময়ে, প্লুটো নেপচুনের চেয়ে সূর্যের কাছাকাছি ছিল।প্লুটোতে একদিন সময় লাগে ১৫৩ ঘণ্টা।এর ঘূর্ণনের সূর্যের চারপাশে এর কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে ৫৭ ডিগ্রি কাত,তাই এটি প্রায় তার দিকে ঘোরে।শুক্র এবং ইউরেনাসের মতো প্লুটোও একটি বিপরীতমুখী ঘূর্ণন প্রদর্শন করে যা পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘুরছে।
চাঁদ
প্লুটোর পাঁচটি পরিচিত চাঁদ রয়েছে: ক্যারন, নিক্স, হাইড্রা, কারবেরোস এবং স্টাইক্স।
সৌরজগতের ইতিহাসের প্রথম দিকে প্লুটো এবং অন্য একটি অনুরূপ আকারের বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এই চাঁদ সিস্টেমটি তৈরি হতে পারে। চ্যারন, প্লুটোর চাঁদগুলির মধ্যে বৃহত্তম যা প্লুটোর প্রায় অর্ধেক আকারের। আমাদের সৌরজগতে যে কয়টি গ্রহ প্রদক্ষিণ করে তার তুলনায় এটি বৃহত্তম উপগ্রহ।এটি মাত্র ১২,২০০ মাইল (১৯,৬৪০ কিলোমিটার) দূরত্বে প্লুটোকে প্রদক্ষিণ করে।তুলনা করার জন্য, আমাদের চাঁদ পৃথিবী থেকে ২০ গুণ দূরে। প্লুটো এবং চারনকে প্রায়শই একটি দ্বৈত গ্রহ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। প্লুটোর চারপাশে ক্যারনের কক্ষপথে ১৫৩ ঘন্টা সময় লাগে - একই সময়ে প্লুটোর একটি ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে। এর অর্থ হল ক্যারনের উদয় হয় না অস্ত যায় যা প্লুটোর পৃষ্ঠের একই স্থানে ঘোরাফেরা করে। চারনের একই দিক সবসময় প্লুটোর মুখোমুখি হয় এবং একটি রাজ্য যাকে বলা হয় জোয়ার-ভাটা।প্লুটোর অন্য চারটি চাঁদ অনেক ছোট যা ১০০ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) প্রশস্ত। এগুলিও অনিয়মিত আকারের, চারনের মতো গোলাকার নয়। সৌরজগতের অন্য অনেক চাঁদের মতন, এই চাঁদগুলো জোয়ারের সাথে প্লুটোতে আটকে থাকে না। তারা সবাই ঘোরে এবং প্লুটোর দিকে মুখ করে থাকে না। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত অন্যান্য পৌরাণিক ব্যক্তিত্বের জন্য প্লুটোর চাঁদের নামকরণ করা হয়েছে। চারনের নামকরণ করা হয়েছে নদীর স্টাইক্স বোটম্যানের জন্য যিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডে আত্মা নিয়ে যান (পাশাপাশি আবিস্কারক জেমস ক্রিস্টির স্ত্রী শার্লিনকে সম্মান জানান, যার ডাকনাম ছিল চার)।ছোট চাঁদ নিক্সের নামকরণ করা হয়েছে অন্ধকার এবং রাতের দেবীর জন্য, যিনি চারনের মাও। হাইড্রার নামকরণ করা হয়েছে নয় মাথাওয়ালা সাপের জন্য যেটি পাতাল রক্ষা করে। গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর তিন মাথাওয়ালা কুকুর (হ্যারি পটার উপন্যাসে ফ্লফি নামে পরিচিত) এর নামানুসারে Kerberos নামকরণ করা হয়েছে। এবং Styx এর নামকরণ করা হয়েছে পৌরাণিক নদীর জন্য যা জীবিতদের জগতকে মৃতের রাজ্য থেকে আলাদা করে।
রিং
প্লুটোর চারপাশে কোন পরিচিত বলয় নেই।
গঠন
বামন গ্রহ প্লুটো একটি গ্রুপের সদস্য যারা নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে একটি চাকতির মতো অঞ্চলে প্রদক্ষিণ করে যাকে কুইপার বেল্ট বলা হয়।এই দূরবর্তী অঞ্চলটি হাজার হাজার ক্ষুদ্র বরফের জগত দ্বারা জনবহুল, যা প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের সৌরজগতের ইতিহাসের প্রথম দিকে গঠিত হয়েছিল।এই বরফ,পাথুরে বস্তুগুলোকে কুইপার বেল্ট বস্তু, ট্রান্স নেপচুনিয়ান বস্তু বা প্লুটোয়েড বলা হয়।
প্লুটো পৃথিবীর চাঁদের ব্যাসের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এবং সম্ভবত জলের বরফের আবরণ দ্বারা বেষ্টিত একটি পাথুরে কোর রয়েছে।মিথেন এবং নাইট্রোজেন ফ্রস্টের মতো আকর্ষণীয় বরফ পৃষ্ঠকে আবৃত করে আছে।কম ঘনত্বের কারণে, প্লুটোর ভর পৃথিবীর চাঁদের প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ।
পৃষ্ঠতল
প্লুটোর পৃষ্ঠ পর্বত, উপত্যকা, সমভূমি এবং গর্ত দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।প্লুটোর তাপমাত্রা -৩৭৫ থেকে -৪০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-২২৬ থেকে -২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হিসাবে ঠান্ডা হতে পারে।প্লুটোর উচ্চতম পর্বতগুলির উচ্চতা ৬,৫০০ থেকে ৯,৮০০ ফুট (২ থেকে ৩ কিলোমিটার)।পাহাড়গুলি জলের বরফের বড় ব্লক,কখনও কখনও মিথেনের মতো হিমায়িত গ্যাসের আবরণ দ্বারা গঠিত। ৩৭০ মাইল (৬০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত দীর্ঘ খাদ এবং উপত্যকাগুলি এই দূরবর্তী বামন গ্রহের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য । ১৬২ মাইল (২৬০ কিলোমিটার) ব্যাসের মতো বড় গর্তগুলি প্লুটোর পৃষ্ঠে বিন্দু বিন্দু করে, কিছু ক্ষয় এবং ভরাটের মত দেখায়। এটি অনুমান করা যায় যে টেকটোনিক শক্তিগুলি ধীরে ধীরে প্লুটোকে পুনরুত্থিত করছে। প্লুটোতে পরিলক্ষিত সবচেয়ে বিশিষ্ট সমভূমিগুলি হিমায়িত নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে তৈরি বলে মনে হয় এবং সেখানে কোনো গর্ত নেই।
বায়ুমণ্ডল
প্লুটোর একটি পাতলা, ক্ষীণ বায়ুমণ্ডল রয়েছে যা একটি ধূমকেতুর মতো সূর্যের কাছাকাছি এলে প্রসারিত হয় এবং এটি আরও দূরে সরে যাওয়ার সাথে সাথে ভেঙে পড়ে - । এর বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান হল আণবিক নাইট্রোজেন, যদিও মিথেন এবং কার্বন মনোক্সাইডের অণুও সনাক্ত করা হয়েছে। প্লুটো যখন সূর্যের কাছাকাছি থাকে তখন এর পৃষ্ঠের বরফগুলি উচ্চতর হয় (সরাসরি কঠিন থেকে গ্যাসে পরিবর্তিত হয়) এবং অস্থায়ীভাবে একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল তৈরি করে। প্লুটোর কম মাধ্যাকর্ষণ (পৃথিবীর প্রায় ৬%) বায়ুমণ্ডলকে আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডলের তুলনায় উচ্চতায় অনেক বেশি প্রসারিত করে। প্লুটো সূর্য থেকে অনেক দূরে ভ্রমণ করায় বছরের ভিন্ন ভিন্ন অংশে অনেক ঠান্ডা হয়ে যায় এবং এই সময়ে, গ্রহের বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ অংশ জমে যেতে পারে এবং পৃষ্ঠে তুষারের মতো পড়ে যেতে পারে।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
প্লুটোর চৌম্বক ক্ষেত্র আছে কিনা তা জানা যায়নি, তবে এর ছোট আকার এবং ধীর ঘূর্ণন সামান্য বা কোনটিই নির্দেশ করে না
কিভাবে প্লুটো এর নাম পেয়েছে
প্লুটো একমাত্র বিশ্ব (এখন পর্যন্ত) একটি ১১ বছর বয়সী মেয়ে দ্বারা নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৩০ সালে, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের ভেনেটিয়া বার্নি তার দাদাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে নতুন আবিষ্কারটির নাম আন্ডারওয়ার্ল্ডের রোমান দেবতার জন্য রাখা হবে। তিনি নামটি লোয়েল অবজারভেটরিতে পাঠিয়েছিলেন এবং এটি নির্বাচিত হয়েছিল। পৌরাণিক কাহিনীতে প্লুটোর স্থানটি একটু গোলমাল হতে পারে, তাই আমরা ওয়ালা ওয়াল্লা, ওয়াশিংটনের হুইটম্যান কলেজের ক্লাসিক বিভাগের ডক্টর এলিজাবেথ ভ্যানডিভারকে এই নামের উৎপত্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বলেছিলাম: "প্লুটো হল রোমান দেবতার নাম। আন্ডারওয়ার্ল্ডের, গ্রীক হেডিসের সমতুল্য। যাইহোক, গ্রীক নাম "প্লাউটন" (যা থেকে রোমানরা তাদের নাম "প্লুটো" উৎপন্ন করেছে) মাঝে মাঝে হেডিসের বিকল্প নাম হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তবে প্লুটো অবশ্যই রোমান বানান।"
প্লুটো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
দিন: ১৫৩ ঘন্টা
বছর: ২৪৮ পৃথিবী বছর
ব্যাসার্ধ: ৭১৫ মাইল | ১,১৫১ কিলোমিটার
গ্রহের ধরন: বামন
চাঁদ: ৫ টি
উর্ট ক্লাউড কি?
উর্ট ক্লাউড কি?
প্লুটোর অনেক দূরে এবং কুইপার বেল্টের সবচেয়ে দূরবর্তী প্রান্তে উর্ট ক্লাউড অবস্থিত।আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহগুলি সমতলে প্রদক্ষিণ করার সময়,উর্ট ক্লাউডকে সূর্য, গ্রহ এবং কুইপার বেল্ট অবজেক্টের চারপাশে একটি বিশাল গোলাকার শেল বলে মনে করা হয়।এটি আমাদের সৌরজগতের চারপাশে একটি বড়,পুরু বুদবুদের মতো,বরফ ও ধূমকেতুর মতো বস্তু দিয়ে তৈরি।ওর্ট ক্লাউডের বরফের দেহগুলি পাহাড়ের মতো বড় হতে পারে - এবং কখনও কখনও আরও বড় হতে পারে।যেখানে আমাদের সূর্য একটি বিশেষভাবে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে উপস্থিত,যেমন একটি বারান্দায় আলোর চারপাশে অলস পতঙ্গের মতো নক্ষত্রের মধ্যে নীরবতা এবং অন্ধকারে তাদের কক্ষপথ বরাবর বরফযুক্ত বস্তুর একটি তাত্ত্বিক দলকে সম্মিলিতভাবে উর্ট ক্লাউড উপকূল বলা হয়।
উর্ট ক্লাউড আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চল।এমনকি উর্ট ক্লাউডের নিকটতম বস্তুগুলিও কুইপার বেল্টের বাইরের সীমানা থেকে সূর্য থেকে বহুগুণ দূরে বলে মনে করা হয়।
স্কেল এবং দূরত্ব
উর্ট ক্লাউড হল আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী অঞ্চল এবং আমাদের সূর্য থেকে পরবর্তী নক্ষত্রে সম্ভবত এক-চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত বিস্তৃত।
ওর্ট ক্লাউডের দূরত্ব উপলব্ধি করার জন্য মাইল এবং কিলোমিটারের পরিবর্তে জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট (AU) - একটি একক যা পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে দূরত্ব হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ১ AU প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল বা ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার।উর্ট ক্লাউডের ভিতরের প্রান্তটি সূর্য থেকে ২,০০০/ ৫,০০০ AU এর মধ্যে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। বাইরের প্রান্তটি সূর্য থেকে ১০,০০০ এবং ১০০,০০০ AU এর মধ্যে অবস্থিত।যদিও এই দূরত্বগুলি কল্পনা করা কঠিন হয় তবে আপনি এর পরিবর্তে আপনার হিসাবে সময় ব্যবহার করতে পারেন।
যেমন দিনে প্রায় এক মিলিয়ন মাইল গতিতে নাসার ভয়েজার ১ মহাকাশযান প্রায় ৩০০ বছর ধরে চললেও ওর্ট ক্লাউডে প্রবেশ করবে না এবং এটি সম্ভবত ৩০,০০০ বছর ধরে বাইরের প্রান্ত থেকে প্রস্থান করবে না।এমনকি আপনি যদি আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে পারেন (প্রায় ৬৭১ মিলিয়ন মাইল প্রতি ঘন্টা বা ১ বিলিয়ন কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা) তবে ওর্ট ক্লাউডে একটি ভ্রমণের জন্য আপনাকে একটি দীর্ঘ অভিযানের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।যখন আলো সূর্য থেকে ছেড়ে যায়,তখন পৃথিবীতে পৌঁছাতে ৮ মিনিটের কিছু বেশি সময় লাগে এবং নেপচুনের কক্ষপথে পৌঁছাতে প্রায় ৪.৫ ঘন্টা লাগে।নেপচুনের কক্ষপথ অতিক্রম করার মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যে সূর্যের আলো কুইপার বেল্টের বাইরের প্রান্ত অতিক্রম করে।আরও ১২ ঘন্টা পরে সূর্যের আলো হেলিওপজে পৌঁছে।যেখানে সৌর বায়ু সূর্য থেকে প্রায় এক মিলিয়ন মাইল (প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ কিলোমিটার) বেগে প্রবাহিত চার্জযুক্ত কণার একটি প্রবাহ যা আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের বিপরীতে স্মুশ করে।এই সীমানার বাইরে এটি একটি আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থান যেখানে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র কোন প্রভাব রাখে না।সূর্যের আলো এখন প্রায় ১৭ ঘন্টা ধরে সূর্য থেকে দূরে চলে গেছে।সূর্য ছেড়ে যাওয়ার পৃথিবীর এক দিনেরও কম সময়ের মধ্যে সূর্যের আলো ইতিমধ্যেই মানব-নির্মিত মহাকাশযানের চেয়ে সূর্য থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তবুও একইভাবে সূর্যালোক উর্ট ক্লাউডের অভ্যন্তরীণ প্রান্তে পৌঁছাতে আরও ১০ থেকে ২৮ দিন এবং সম্ভবত সূর্যালোক ওর্ট ক্লাউডের বাইরের প্রান্ত অতিক্রম করার দেড় বছর আগে।
গঠন
ওর্ট ক্লাউড গঠনের প্রধান ধারণা বলে যে,এই বরফের বস্তুগুলি সবসময় সূর্য থেকে এত দূরে ছিল না।গ্রহগুলি ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হওয়ার পরে,তারা যে অঞ্চলে তৈরি হয়েছিল সেখানে এখনও প্রচুর পরিমাণে অবশিষ্ট অংশ রয়েছে যাকে প্ল্যানেটসিমাল বলা হয়।গ্রহের মতো একই উপাদান থেকে গ্রহের প্রাণীরা তৈরি হয়েছে।গ্রহগুলির মাধ্যাকর্ষণ (প্রাথমিকভাবে বৃহস্পতি) গ্রহগুলিকে যে কোনও উপায়ে ছড়িয়ে দেয়।কিছু গ্রহের প্রাণীকে সৌরজগৎ থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেওয়া হয়েছিল,অন্যগুলিকে উন্মত্ত কক্ষপথে নিক্ষেপ করা হয়েছিল যেখানে তারা এখনও সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা আটকে ছিল, কিন্তু গ্যালাকটিক প্রভাবগুলিও তাদের উপর টানছে।সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ছিল আমাদের গ্যালাক্সি থেকে জোয়ারের শক্তি।সংক্ষেপে, গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ অনেক বরফের গ্রহকে সূর্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে এবং গ্যালাক্সির মাধ্যাকর্ষণ সম্ভবত তাদের সৌরজগতের সীমানাভূমিতে বসতি স্থাপন করেছে,যেখানে গ্রহগুলি তাদের আর বিরক্ত করতে পারেনি এবং এরপর তারা তৈরী হলো যাকে আমরা এখন ওর্ট ক্লাউড বলি।আবার, এটি একটি অগ্রণী ধারণা,তবে ওর্ট ক্লাউড এমন বস্তুগুলিও ক্যাপচার করতে পারে যা সৌরজগতে তৈরি হয়নি।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
উর্ট ক্লাউডের ঘূর্ণন গ্রহগুলির বিপরীত,উর্ট ক্লাউডের বস্তুগুলি সূর্যের চারপাশে একটি ভাগ করা কক্ষপথে সমতলে একই দিকে ভ্রমণ করে না পরিবর্তে,তারা দূরবর্তী,বরফের ধ্বংসাবশেষের পুরু বুদবুদ হিসাবে সূর্যের চারপাশে, নীচে,উপর এবং বিভিন্ন প্রবণতায় ভ্রমণ করতে পারে।তাই, তাদের উর্ট বেল্টের পরিবর্তে উর্ট ক্লাউড বলা হয়।ডাচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী জ্যান ওর্ট (অন্যান্য জিনিসগুলির মধ্যে) ব্যাখ্যা করার জন্য মেঘের অস্তিত্বের প্রস্তাব করেছিলেন যে দীর্ঘ-সময়ের ধূমকেতুগুলি কোথা থেকে আসে এবং কেন তারা গ্রহ, গ্রহাণু এবং কুইপার বেল্ট দ্বারা ভাগ করা কক্ষপথের সমতলের পরিবর্তে সব দিক থেকে আসে বলে মনে হয়।দীর্ঘ সময়ের ধূমকেতুর বাড়ি ওর্ট ক্লাউডে শত শত বিলিয়ন এমনকি ট্রিলিয়ন বরফের দেহ থাকতে পারে।তারপর কিছু কিছু এই বরফের জগতের কক্ষপথকে বিরক্ত করে এবং এটি আমাদের সূর্যের দিকে দীর্ঘ পতন শুরু করে।দুটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ধূমকেতু C/2012 S1 (ISON) এবং C/2013 A1 সাইডিং স্প্রিং।সূর্যের খুব কাছাকাছি চলে গেলে ISON বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।সাইডিং স্প্রিং,যা অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের দিকে না গিয়ে মঙ্গল গ্রহের খুব কাছাকাছি দিয়ে ভ্রমন করেছিল এবং এ টি প্রায় ৭৪০,০০০ বছরের মধ্যে পুনরায় ফিরে আসবে না।সর্বাধিক পরিচিত দীর্ঘ-কালের ধূমকেতুগুলির রেকর্ড করা ইতিহাসে একবারই দেখা গেছে কারণ তাদের কক্ষপথের সময়কাল অ নেক দীর্ঘ। অগণিত আরো অজানা দীর্ঘ সময়ের ধূমকেতু মানুষের চোখ দ্বারা দেখা যায়নি,কারও কারও কক্ষপথ এত দীর্ঘ যে শেষবার তারা অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের মধ্য দিয়ে গেছে,তখনও আমাদের প্রজাতির অস্তিত্ব ছিল না।অন্যরা তাদের গঠনের পর থেকে কোটি কোটি বছরে সূর্যের কাছাকাছি যেতে পারেনি।
ধূমকেতুর বাড়ি
যেহেতু ধূমকেতুর কক্ষপথগুলি অত্যন্ত দীর্ঘ,বিজ্ঞানীরা সন্দেহ করেন যে ওর্ট ক্লাউড হচ্ছে এই বেশিরভাগের ধূমকেতুগুলির উৎস। উদাহরণস্বরূপ, ধূমকেতু C/2013 A1 সাইডিং স্প্রিং,যা ২০১৪ সালে মঙ্গল গ্রহের খুব কাছাকাছি পাস করেছিল এবং এটি প্রায় ৭৪০,০০০ বছরে অভ্যন্তরীণ সৌরজগতে ফিরে আসবে না।সূর্য থেকে ওর্ট ক্লাউডের দূরত্ব এতটাই বিশাল যে এটিকে মাইল বা কিলোমিটারের সাধারণ ইউনিটে প্রকাশ করা হয় না,জ্যোতির্বিজ্ঞানের এককে বর্ণনা করার উপযোগী দূরত্ব।একটি জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট (বা AU) হল পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে দূরত্ব।প্লুটোর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ এটিকে সূর্য থেকে ৩০ AU এর কাছাকাছি এবং ৫০ AU পর্যন্ত বহন করে।উর্ট ক্লাউডের ভিতরের প্রান্তটি সূর্য থেকে ২,০০০ থেকে ৫,০০০ AU এর মধ্যে বলে মনে করা হয়।বাইরের প্রান্তটি সূর্য থেকে ১০,০০০ বা এমনকি ১০০,০০০ AU হতে পারে।এটি সূর্য এবং তার নিকটতম প্রতিবেশী নক্ষত্রের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক পথ।যদিও পর্যবেক্ষণ করা দীর্ঘ-কালের ধূমকেতুগুলি উর্ট ক্লাউডে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়,তবে দূরবর্তী ওর্ট ক্লাউডে কোনও বস্তুই পরিলক্ষিত হয়নি,এটি আপাতত একটি তাত্ত্বিক ধারণা রেখে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী ধূমকেতুর উৎপত্তির জন্য এটি সবচেয়ে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ব্যাখ্যা হিসেবে রয়েছে।
ওর্ট ক্লাউড সম্পর্কে ১০ টি জিনিস জানা দরকার
১. প্রেডিকটেড রিয়েলম - ওর্ট ক্লাউড হল সৌরজগতের অন্য সব কিছুর থেকে অনেক দূরে বরফের বস্তুর একটি পূর্বাভাসিত সংগ্রহ।এটি সৌরজগতের গ্রহ অঞ্চলে ধূমকেতুর পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যায়, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনও ওর্ট ক্লাউডে কোনো বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি।
২. দূর, অনেক দূরে - উর্ট ক্লাউড হল আমাদের সূর্যের চারপাশে অবস্থিত বরফযুক্ত বস্তুর একটি গোলাকার স্তর।এটি একটি তারা এবং সম্ভবত সূর্য থেকে প্রায় ২,০০০ এবং ১০০,০০০ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট (AU) এর মধ্যে স্থান দখল করে আছে।
৩. লং ওয়ে রাউন্ড - দীর্ঘ-কালের ধূমকেতু (যা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ২০০ বছরেরও বেশি সময় নেয়) এরা সম্ভবত উর্ট ক্লাউড থেকে আসে, যাকে কখনও কখনও "ধূমকেতুর জলাধার" হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
৪. বড় সংখ্যা – ভবিষ্যবাণী গুলি দেখায় যে ওর্ট ক্লাউডে এক ট্রিলিয়নেরও বেশি বরফের বস্তু থাকতে পারে।
৫. কাছাকাছি এবং বড় - যখন উর্ট ক্লাউড থেকে ধূমকেতুগুলি সূর্যের কাছে আসে,তখন তাদের পৃষ্ঠের বরফগুলি বাষ্প হয়ে যায় এবং প্রায়শই দুটি লেজ (একটি ধুলো,একটি গ্যাস) তৈরি করে যা শত শত বা এমনকি মিলিয়ন মাইল পর্যন্ত ( বা কিলোমিটার) দৈর্ঘের হতে পারে।ধূমকেতুর কক্ষপথ সূর্য থেকে যথেষ্ট দূরে নিয়ে গেলে এর কার্যকলাপ কমে যায় এবং কোমা ভেঙে পড়ে।
৭. আদিম - সূর্যের জন্মের আগে গঠিত ধূমকেতুতে পাওয়া কিছু অণু,তারা পৃথিবীতে বা তার চারপাশে পাওয়া তাপমাত্রা এবং চাপে টিকে থাকতে পারেনি।আদিম ধূমকেতুর অণুগুলি যে অবস্থার মধ্যে তৈরি হতে পারে তা অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানীরা আরও ভালভাবে বুঝতে পারেন যে আমাদের সৌরজগতের পরিবেশ তার জন্মের সময় কেমন ছিল,এটি কীভাবে গঠিত হয় এবং কিভাবে বিকশিত হয়েছিল সে সম্পর্কে সূত্র সরবরাহ করে।
৭. এক্সো-ধূমকেতু – জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, ধূমকেতু অন্যান্য নক্ষত্রের চারপাশে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রমাণ দেখেছেন,২০১৩ সালে ধূমকেতু আইএসওএন যখন এটি আমাদের সূর্যকে প্রদক্ষিন করছিল৷সেই ধূমকেতু গুলির রাসায়নিক গঠন অধ্যয়ন করার জন্য স্পেকট্রোমেট্রি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগতের জন্মের তুলনা করতে পারেন৷অন্যান্য গ্রহ ব্যবস্থার সিস্টেম।(একটি গ্রহ ব্যবস্থা হল গ্রহ, গ্রহাণু ইত্যাদির সংগ্রহ যা একটি নক্ষত্র বা নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে।আমাদের গ্রহ মণ্ডল সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, যা ল্যাটিন ভাষায় "Sol"।তাই আমরা আমাদের গ্রহ মণ্ডলকে সৌরজগৎ বলি।)
৮. একটি দীর্ঘ ট্রিপ - ওর্ট ক্লাউড অন্বেষণ করার জন্য এখনও কোন মিশন পাঠানো হয়নি,তবে পাঁচটি মহাকাশযান অবশেষে সেখানে পৌঁছাবে।এগুলি হল ভয়েজার ১ এবং ২, নিউ হরাইজনস এবং পাইওনিয়ার ১০ এবং ১১৷উর্ট ক্লাউড এতটাই দূরবর্তী যে পাঁচটি মহাকাশযানের শক্তির উৎসগুলি এর ভিতরের প্রান্তে পৌঁছানোর কয়েক শতাব্দী আগে শেষ হয়ে যাবে৷
৯. ঠান্ডা এবং অন্ধকার - ওর্ট ক্লাউডের হিমায়িত, ধূমকেতুর মতো দেহগুলি জীবনকে সমর্থন করতে সক্ষম নয় যেমনটি আমরা জানি।
১০. ডিপ থিঙ্কার - ওর্ট ক্লাউডের নামকরণ করা হয়েছে জান উর্ট, ডাচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী যিনি ১৯৫০ এর দশকে এর অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
ফাস্ট
ফ্যাক্ট যদিও ভয়েজার ১ প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন মাইল ভ্রমণ করে,মহাকাশযানটি ওর্ট ক্লাউডের অভ্যন্তরীণ সীমানায় পৌঁছাতে প্রায় ৩০০ বছর এবং দূরের দিক থেকে প্রস্থান করতে সম্ভবত আরও ৩০,০০০ বছর সময় নেবে।
সূত্রঃ নাসা সোলার সিষ্টেম
সূর্য
আমাদের সূর্য:
সূর্য হল আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে একটি ৪.৫ বিলিয়ন বছরের পুরনো হলুদ বামন নক্ষত্র -যা হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের একটি উষ্ণ প্রদীপ্ত বল।এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল (১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত এবং এটি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র তারা।সূর্যের শক্তি ছাড়া জীবন খুব বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। পৃথিবীতে আমাদের জীবন ধারনের আলো এবং তাপের অপরিবর্তনীয় একমাত্র উৎস।কিন্তু সূর্য একটি গতিশীল নক্ষত্র, ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় এবং মহাকাশে শক্তি প্রেরণ করে।সৌরজগতে সূর্য এবং এর প্রভাব অধ্যয়ন করার বিজ্ঞানকে বলা হয় হেলিওফিজিক্স।
সূর্য আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় বস্তু।এর ব্যাস প্রায় ৮৬৫,০০০ মাইল (১.৪ মিলিয়ন কিলোমিটার)। এর মাধ্যাকর্ষণ সৌরজগতকে একত্রে ধরে রাখে এবং বড় গ্রহ থেকে শুরু করে ছোট ছোট ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত সবকিছুকে কক্ষপথে রাখে।যদিও সূর্য আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র এবং আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য তারপর ও সূর্য তার আকারের দিক থেকে শুধুমাত্র একটি গড় নক্ষত্র।সূর্যের থেকে ১০০ গুণ পর্যন্ত বড় তারা পাওয়া গেছে এবং অনেক সৌরজগতে একাধিক তারা রয়েছে।আমাদের সূর্য অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী তারার কাজ আরও ভালভাবে বুঝতে পারেন।সূর্যের উষ্ণতম অংশ হল এর কেন্দ্র, যেখানে তাপমাত্রা ২৭ মিলিয়ন °F (১৫ মিলিয়ন °C) এর উপরে। সূর্যের যে অংশটিকে আমরা এর পৃষ্ঠ বলে থাকি - ফটোস্ফিয়ার - একটি অপেক্ষাকৃত শীতল ১০,০০০ °F (৫,৫০০ °C)। সূর্যের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে, সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল, করোনা। পৃষ্ঠ থেকে যত দূরে প্রসারিত হয় ততই গরম হয়। করোনা ৩.৫ মিলিয়ন °F (২ মিলিয়ন °C) পর্যন্ত পৌঁছায় - ফটোস্ফিয়ারের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।
নামকরণ
সূর্যকে অনেক নামে ডাকা হয়েছে। সূর্যের জন্য ল্যাটিন শব্দ হল "sol", যা সূর্য-সম্পর্কিত সমস্ত জিনিসের প্রধান বিশেষণ: সৌর।হেলিওস, প্রাচীন গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে সূর্যের দেবতা, তার নামটি সূর্য-সম্পর্কিত অনেকগুলি পদ যেমন হেলিওস্ফিয়ার এবং হেলিওসিজমোলজিতেও দেন।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
সূর্য তার চরম তাপমাত্রা এবং বিকিরণের কারণে জীবনকে আশ্রয় করতে পারেনি।তবুও পৃথিবীতে জীবন কেবল সূর্যের আলো এবং শক্তির কারণেই সম্ভব।
আকার এবং দূরত্ব
আমাদের সূর্য একটি মাঝারি আকারের তারা যার ব্যাসার্ধ প্রায় ৪৩৫,০০০ মাইল (৭০০,০০০ কিলোমিটার)।অনেক তারা অনেক বড় - কিন্তু সূর্য আমাদের বাড়ির গ্রহের চেয়ে অনেক বেশি বিশাল: সূর্যের ভরের সাথে মিলিত হতে ৩৩০,০০০ এরও বেশি পৃথিবী লাগবে এবং সূর্যের আয়তন পূরণ করতে ১.৩ মিলিয়ন পৃথিবী লাগবে।সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল (১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত।এর নিকটতম তারার প্রতিবেশী হল আলফা সেন্টোরি ট্রিপল স্টার সিস্টেম: লাল বামন তারকা প্রক্সিমা সেন্টোরি ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে এবং আলফা সেন্টোরি A এবং B - দুটি সূর্যের মতো তারা একে অপরকে প্রদক্ষিণ করছে - ৪.৩৭ আলোকবর্ষ দূরে।একটি আলোকবর্ষ হল আলো এক বছরে যা দূরত্ব অতিক্রম করে, যা প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মাইল (৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার) সমান।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে ওরিয়ন স্পার নামে একটি সর্পিল বাহুতে অবস্থিত যা ধনু রাশির বাহু থেকে বাইরের দিকে প্রসারিত।
সূর্য মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে, আমাদের সৌরজগতের গ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং অন্যান্য বস্তু নিয়ে আসে। আমাদের সৌরজগৎ প্রতি ঘন্টায় ৪৫০,০০০ মাইল (বা ৭২০,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা) গড় বেগ নিয়ে চলছে। কিন্তু এই গতিতেও সূর্যের মিল্কিওয়ের চারপাশে একটি সম্পূর্ণ ভ্রমণ করতে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন বছর সময় লাগে। সূর্য তার অক্ষের উপর ঘুরছে কারণ এটি গ্যালাক্সির চারপাশে ঘোরে। গ্রহের কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে এর ঘূর্ণনের ৭.২৫ ডিগ্রি কাত হয়ে রয়েছে। যেহেতু সূর্য কঠিন নয়, তাই বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন গতিতে ঘোরে। নিরক্ষরেখায়, সূর্য প্রতি ২৫ পৃথিবী দিনে একবার ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু তার মেরুতে, সূর্য প্রতি ৩৬ পৃথিবী দিনে একবার তার অক্ষের উপর একবার ঘোরে।
চাঁদ
তারা হিসাবে সূর্যের কোন চাঁদ নেই, তবে গ্রহ এবং তাদের চাঁদগুলি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
রিং
প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে যখন সৌরজগৎ প্রথম তৈরি হয়েছিল তখন সূর্য তার ইতিহাসের প্রথম দিকে গ্যাস এবং ধূলিকণার একটি ডিস্ক দ্বারা বেষ্টিত ছিল।সেই ধূলিকণার কিছু আজও চারপাশে রয়েছে, বেশ কয়েকটি ধূলিকণার মধ্যে যা সূর্যকে বৃত্ত করে।তারা গ্রহের কক্ষপথের সন্ধান করে, যাদের মাধ্যাকর্ষণ সূর্যের চারপাশে ধূলিকণা করে।
গঠন
সূর্য প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে সৌর নীহারিকা নামক গ্যাস এবং ধূলিকণার একটি বিশাল, ঘূর্ণায়মান মেঘে গঠিত হয়েছিল।নীহারিকাটি তার নিজস্ব অভিকর্ষের অধীনে ভেঙে পড়ার সাথে সাথে এটি দ্রুত ঘোরে এবং একটি ডিস্কে চ্যাপ্টা হয়ে যায়।নীহারিকাটির বেশিরভাগ উপাদান আমাদের সূর্য গঠনের জন্য কেন্দ্রের দিকে টানা হয়েছিল, যা আমাদের সৌরজগতের ভরের ৯৯.৮% এর জন্য দায়ী। অবশিষ্ট উপাদানের বেশিরভাগই গ্রহ এবং অন্যান্য বস্তু তৈরি করেছে যা এখন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।(বাকি অবশিষ্ট গ্যাস এবং ধুলো তরুণ সূর্যের প্রথম দিকের সৌর বায়ু দ্বারা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল)। সমস্ত নক্ষত্রের মতো, আমাদের সূর্যের ও শক্তি শেষ হয়ে যাবে,যখন এটি মারা যেতে শুরু করবে তখন সূর্য একটি লাল দৈত্য নক্ষত্রে প্রসারিত হবে, এত বড় হয়ে যাবে যে এটি বুধ এবং শুক্র এবং সম্ভবত পৃথিবীকেও গ্রাস করবে। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যবাণী করেছেন যে সূর্য তার জীবদ্দশায় অর্ধেকেরও কম সময় পেরিয়েছে এবং এটি শ্বেত বামনে পরিণত হওয়ার আগে আরও ৫ বিলিয়ন বছর বা তার বেশি স্থায়ী হবে।
গঠন
সূর্য হল হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের একটি বিশাল বল যা তার নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা একত্রিত হয়।সূর্যের বিভিন্ন অঞ্চল রয়েছে।অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে কোর, বিকিরণ অঞ্চল এবং পরিচলন অঞ্চল।বাইরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে - দৃশ্যমান পৃষ্ঠ বা ফটোস্ফিয়ার পরে রয়েছে,তারপরে ক্রোমোস্ফিয়ার, তারপরে ট্রানজিশন জোন এবং তারপরে করোনা - সূর্যের বিস্তৃত বাইরের বায়ুমণ্ডল।সুপারসনিক গতিতে যখন উপাদান করোনা থেকে বেরিয়ে যায়,তখন এটি সৌর বায়ুতে পরিণত হয়,যা সূর্যের চারপাশে একটি বিশাল চৌম্বকীয় "বুদবুদ" গঠন করে,যাকে হেলিওস্ফিয়ার বলা হয়।
হেলিওস্ফিয়ার আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলির কক্ষপথের বাইরে প্রসারিত।সুতরাং, পৃথিবী সূর্যের বায়ুমণ্ডলের মধ্যে বিদ্যমান। হেলিওস্ফিয়ারের বাইরে আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থান।কোর হল সূর্যের উষ্ণতম অংশ।এখানে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া - যেখানে হাইড্রোজেন হিলিয়াম তৈরি করতে মিশ্রিত হয় - সূর্যের তাপ এবং আলোকে শক্তি দেয়।তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৭ মিলিয়ন °ফা (১৫ মিলিয়ন °সে) এবং এটি প্রায় ৮৬,০০০ মাইল (১৩৮,০০০ কিলোমিটার) পুরু।সূর্যের কেন্দ্রের ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে প্রায় ১৫০ গ্রাম (g/cm³)।এটি সোনার ঘনত্বের (১৯.৩ গ্রাম/সেমি³) প্রায় ৮ গুণ বা সীসার ঘনত্বের (১১.৩ গ্রাম/সেমি³) ১৩ গুণ।মূল থেকে শক্তি বিকিরণের মাধ্যমে বাইরের দিকে বাহিত হয়।এই বিকিরণটি বিকিরণ অঞ্চলের চারপাশে বাউন্স করে মূল থেকে পরিচলন অঞ্চলের শীর্ষে যেতে প্রায় ১৭০,০০০ বছর সময় নেয়।বাহ্যিক দিকে সরে যাওয়া পরিচলন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩.৫ মিলিয়ন °F (২ মিলিয়ন °C) এর নিচে নেমে যায়।এখানে গরম প্লাজমার বড় বুদবুদ (আয়নিত পরমাণুর একটি স্যুপ) ফটোস্ফিয়ারের দিকে উপরের দিকে চলে যায়,যে স্তরটিকে আমরা সূর্যের পৃষ্ঠ বলে মনে করি।
পৃষ্ঠতল
সূর্যের,পৃথিবী এবং অন্যান্য পাথুরে গ্রহ এবং চাঁদের মতো শক্ত পৃষ্ঠ নেই।সূর্যের যে অংশটিকে সাধারণত এর পৃষ্ঠ বলা হয় তা হল ফটোস্ফিয়ার।ফটোস্ফিয়ার শব্দের অর্থ হল "আলোক গোলক"- যা উপযুক্ত কারণ এই স্তরটি সবচেয়ে দৃশ্যমান আলো নির্গত করে।এটা আমরা আমাদের চোখ দিয়ে পৃথিবী থেকে দেখতে পাই।(আশা করি,এটি বলার অপেক্ষা রাখে না - তবে আপনার চোখ রক্ষা না করে সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না)।যদিও আমরা একে পৃষ্ঠ বলে থাকি,ফটোস্ফিয়ার আসলে সৌর বায়ুমণ্ডলের প্রথম স্তর।এটি প্রায় ২৫০ মাইল পুরু, তাপমাত্রা প্রায় ১০,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পৌঁছে।এটি জ্বলন্ত কোরের চেয়ে অনেক বেশি শীতল তবে এটি এখনও কার্বন তৈরি করতে যথেষ্ট গরম - যেমন হীরা এবং গ্রাফাইট- কেবল গলে যায় না, তবে ফুটতে পারে।সূর্যের বেশিরভাগ বিকিরণ ফটোস্ফিয়ার থেকে মহাকাশে চলে যায়।
বায়ুমণ্ডল
ফটোস্ফিয়ারের উপরে রয়েছে ক্রোমোস্ফিয়ার, ট্রানজিশন জোন এবং করোনা।সমস্ত বিজ্ঞানীরা ট্রানজিশন জোনকে তার নিজস্ব অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করেন না- এটি কেবল পাতলা স্তর যেখানে ক্রোমোস্ফিয়ার দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং করোনায় পরিণত হয়।ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা সবই সূর্যের বায়ুমণ্ডলের অংশ।(করোনা কখনও কখনও আকস্মিকভাবে "সূর্যের বায়ুমণ্ডল" হিসাবে উল্লেখ করা হয়,তবে এটি আসলে সূর্যের উপরের বায়ুমণ্ডল)।সূর্যের বায়ুমণ্ডল হল যেখানে আমরা সূর্যের দাগ, করোনাল হোল এবং সৌর শিখার মতো বৈশিষ্ট্যগুলি দেখতে পাই।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
সূর্য চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে যা মহাকাশে প্রসারিত হয়ে আন্তঃগ্রহীয় চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে- চৌম্বক ক্ষেত্র যা আমাদের সৌরজগতকে বিস্তৃত করে।ক্ষেত্রটি সৌরজগতের মাধ্যমে সৌর বায়ু দ্বারা বাহিত হয় - বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত গ্যাসের একটি প্রবাহ যা সূর্য থেকে সমস্ত দিক থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়।সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের দ্বারা প্রভাবিত মহাকাশের বিশাল বুদবুদকে হেলিওস্ফিয়ার বলা হয়।যেহেতু সূর্য আবর্তিত হয়,তাই চৌম্বক ক্ষেত্রটি একটি বৃহৎ ঘূর্ণায়মান সর্পিল,যা পার্কার সর্পিল নামে পরিচিত।এই সর্পিলটির আকৃতি রয়েছে একটি ঘূর্ণায়মান বাগানের স্প্রিংকলার থেকে পানির প্যাটার্নের মতো। সূর্য সব সময় একইভাবে আচরণ করে না।এটি উচ্চ এবং নিম্ন কার্যকলাপের পর্যায়গুলির মধ্য দিয়ে যায়,যা সৌর চক্র তৈরি করে।প্রায় প্রতি ১১ বছরে সূর্যের ভৌগলিক মেরুগুলি তাদের চৌম্বকীয় মেরুতে পরিবর্তন করে- অর্থাৎ,উত্তর এবং দক্ষিণ চৌম্বকীয় মেরুগুলি অদলবদল করে।এই চক্রের সময়, সূর্যের আলোকমণ্ডল,ক্রোমোস্ফিয়ার এবং করোনা শান্ত ও শান্ত থেকে হিংসাত্মকভাবে সক্রিয় হয়ে যায়।সূর্যের কার্যকলাপ চক্রের উচ্চতা,যাকে সৌর সর্বোচ্চ বলা হয়,এটি সৌর ঝড়ের ক্রিয়াকলাপের সময়।সূর্যের দাগ, সোলার ফ্লেয়ার নামক অগ্ন্যুৎপাত এবং সৌর সর্বাধিকে করোনাল ভর নির্গমন সাধারণ।
সর্বশেষ সৌর চক্র - সৌর চক্র ২৫ - ডিসেম্বর ২০১৯ এ শুরু হয়েছিল যখন সৌর ন্যূনতম ঘটেছিল, সোলার সাইকেল ২৫ ভবিষ্যদ্বাণী প্যানেল অনুসারে, NASA এবং NOAA দ্বারা সহ-স্পন্সর করা বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপ। বিজ্ঞানীরা এখন আশা করছেন যে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে সূর্যের কার্যকলাপ পরবর্তী পূর্বাভাসিত সর্বোচ্চের দিকে র্যাম্প হবে।সৌর ক্রিয়াকলাপ বিপুল পরিমাণে শক্তি এবং কণা নির্গত করতে পারে,যার কিছু আমাদের এখানে পৃথিবীতে প্রভাব ফেলে।অনেকটা পৃথিবীর আবহাওয়ার মতো, মহাকাশের অবস্থা- যা মহাকাশ আবহাওয়া নামে পরিচিত- সূর্যের কার্যকলাপের সাথে সর্বদা পরিবর্তিত হয়।"মহাকাশ আবহাওয়া" স্যাটেলাইট GPS এবং রেডিও যোগাযোগের সাথে হস্তক্ষেপ করতে পারে।এটি পাওয়ার গ্রিডগুলিকেও বিকল করতে পারে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত পাইপলাইন যা তেল ও গ্যাস বহন করে।রেকর্ডে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় হল ক্যারিংটন ইভেন্ট,যা ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিচার্ড ক্যারিংটনের নামে নামকরণ করা হয়েছে যিনি ১ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৯ সালে সৌর শিখা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যা ঘটনাটিকে ট্রিগার করেছিল।বিশ্বব্যাপী টেলিগ্রাফ সিস্টেমগুলি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।স্পার্ক ডিসচার্জ টেলিগ্রাফ অপারেটরদের হতবাক করে এবং তাদের টেলিগ্রাফ পেপারে আগুন ধরিয়ে দেয়।পরের দিন ভোর হওয়ার ঠিক আগে,পৃথিবীর সমস্ত আকাশ লাল, সবুজ এবং বেগুনি অরোরাতে বিস্ফোরিত হয় - সূর্য থেকে শক্তি এবং কণা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাথে মিথস্ক্রিয়া করার ফলাফল।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,অরোরাগুলি এতই উজ্জ্বল ছিল যে দিনের আলোর মতো সহজেই সংবাদপত্র পড়া যেত। অরোরা বা নর্দার্ন লাইট কিউবা,বাহামা,জ্যামাইকা, এল সালভাদর এবং হাওয়াই পর্যন্ত দক্ষিণে দৃশ্যমান ছিল।১৩ মার্চ, ১৯৮৯-এ আরেকটি সৌর শিখা ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সৃষ্টি করেছিল যা কানাডার হাইড্রো কুইবেক জেনারেটিং স্টেশন থেকে বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চালনকে ব্যাহত করেছিল যা ৬ মিলিয়ন মানুষকে ৯ ঘন্টার জন্য অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল। ১৯৮৯ সালের ফ্লেয়ারের ফলে নিউ জার্সির পাওয়ার ট্রান্সফরমারগুলিও গলে যায়।
২০০৫ সালের ডিসেম্বরে একটি সৌর ঝড়ের এক্স-রে প্রায় ১০ মিনিটের জন্য স্যাটেলাইট-টু-গ্রাউন্ড যোগাযোগ এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) নেভিগেশন সংকেতগুলিকে ব্যাহত করেছিল। NOAA এর স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার সূর্যের সক্রিয় অঞ্চলগুলি পর্যবেক্ষণ করে এবং বিপজ্জনক মহাকাশ আবহাওয়া ইভেন্টগুলির জন্য সতর্কতা জারি করে।
দ্রুত ঘটনা
দিনের দৈর্ঘ্য: নিরক্ষরেখায় ২৫ পৃথিবী দিন এবং মেরুতে ৩৬ পৃথিবী দিন।
বছরের দৈর্ঘ্য: সূর্যের একটি "বছর" নেই। কিন্তু সূর্য প্রায় প্রতি ২৩০ মিলিয়ন পৃথিবী বছরে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে,এটির সাথে গ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং অন্যান্য বস্তু নিয়ে আসে।
তারার ধরন: G2 V, হলুদ বামন প্রধান-সিকোয়েন্স তারকা
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা: (ফটোস্ফিয়ার) ১০,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) করোনা (সৌর বায়ুমণ্ডল) তাপমাত্রা: ৩.৫ মিলিয়ন °ফা (২ মিলিয়ন °সে) পর্যন্ত ।
পৃথিবী
পৃথিবী—আমাদের বাড়ি যা—সূর্য থেকে তৃতীয় গ্রহ এবং একমাত্র জায়গা যা আমরা এখনও অবধি জানি তা হচ্ছে এখানে জীবন আছে।এটি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার পৃষ্ঠে তরল জল রয়েছে।যদিও পৃথিবী সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ,এটি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র পৃথিবী যেখানে পৃষ্ঠে তরল জল রয়েছে।কাছাকাছি শুক্রের চেয়ে সামান্য বড়,পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছের চারটি গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে বড়,যার সবকটিই শিলা ও ধাতু দিয়ে তৈরি।
পৃথিবী সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার ইংরেজি নাম গ্রীক বা রোমান পুরাণ থেকে আসেনি। নামটি পুরানো ইংরেজি এবং জার্মানিক থেকে নেওয়া হয়েছিল। এর সহজ অর্থ "ভূমি"। যদিও সূর্য থেকে তৃতীয় গ্রহের মানুষদের দ্বারা কথ্য হাজার হাজার ভাষায় আমাদের গ্রহের অনেক নাম রয়েছে।
নামকরণ
পৃথিবী নামটি কমপক্ষে ১,০০০ বছরের পুরানো।পৃথিবী ব্যতীত সমস্ত গ্রহের নামকরণ করা হয়েছিল গ্রীক এবং রোমান দেব-দেবীদের নামে। যাইহোক, পৃথিবী নামটি একটি জার্মানিক শব্দ যার সহজ অর্থ হল "ভূমি।"
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
পৃথিবীর একটি অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ তাপমাত্রা এবং রাসায়নিকের মিশ্রণ রয়েছে যা এখানে জীবনকে প্রাচুর্য করেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে,পৃথিবী অনন্য যে বেশিরভাগ অংশ তরল জলে আচ্ছাদিত।যেহেতু তাপমাত্রা তরল জলকে দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকতে দেয়।পৃথিবীর বিশাল মহাসাগরগুলি প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে জীবন শুরু করার জন্য একটি সুবিধাজনক স্থান সরবরাহ করেছিল।জলবায়ু পরিবর্তনের চলমান প্রভাবের কারণে আমাদের গ্রহের কিছু বৈশিষ্ট্য যা জীবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য দুর্দান্ত করে তোলে।
আকার এবং দূরত্ব
৩,৯৫৯ মাইল ( বা ৬,৩৭১ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের সাথে, পৃথিবী পার্থিব গ্রহগুলির মধ্যে বৃহত্তম এবং সামগ্রিকভাবে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ।সূর্য থেকে গড় দূরত্ব ৯৩ মিলিয়ন মাইল (বা ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার)।পৃথিবী সূর্য থেকে ঠিক এক জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক দূরে কারণ একটি জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব।এই ইউনিটটি সূর্য থেকে গ্রহের দূরত্ব দ্রুত তুলনা করার একটি সহজ উপায় প্রদান করে। আমাদের গ্রহে সূর্য থেকে আলো আসতে প্রায় ৮ মিনিট সময় লাগে।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, এটি প্রতি ২৩.৯ ঘন্টায় একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে।সূর্যের চারপাশে একটি ভ্রমণ সম্পূর্ণ করতে ৩৬৫.২৫ দিন সময় লাগে।দিনের সেই অতিরিক্ত চতুর্থাংশ আমাদের ক্যালেন্ডার সিস্টেমের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে,যা এক বছরকে ৩৬৫ দিন হিসাবে গণ্য করে।আমাদের বার্ষিক ক্যালেন্ডারগুলিকে সূর্যের চারপাশে আমাদের কক্ষপথের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে, প্রতি চার বছরে আমরা একটি দিন যোগ করি।সেই দিনটিকে লিপ ডে বলা হয় এবং যে বছর এটি যোগ করা হয় তাকে অধিবর্ষ বলা হয়।সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষটি ২৩.৪ ডিগ্রী কাত।এই কাত আমাদের বার্ষিক ঋতু চক্র ঘটায়।বছরের কিছু সময় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধটি দূরে হেলে পড়ে।আকাশে সূর্যের উচ্চতা থাকায় উত্তরে সৌর উত্তাপ বেশি হয় এবং সেখানে গ্রীষ্ম উৎপন্ন হয়।কম সরাসরি সৌর উত্তাপ দক্ষিণে শীত উৎপন্ন করে।ছয় মাস পর পরিস্থিতি উল্টে যায়।বসন্ত এবং শরৎ শুরু হলে, উভয় গোলার্ধ সূর্য থেকে প্রায় সমান পরিমাণে তাপ পায়।
চাঁদ
পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে একটি চাঁদ আছে।আমাদের চাঁদ রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং সবচেয়ে পরিচিত বস্তু।অনেক উপায়ে, পৃথিবীকে এত বড় বাড়ি তৈরি করার জন্য চাঁদ দায়ী।এটি আমাদের গ্রহের নড়বড়ে কে স্থিতিশীল করে,যা হাজার হাজার বছর ধরে জলবায়ুকে কম পরিবর্তনশীল করে তুলেছে।পৃথিবী কখনও কখনও অস্থায়ীভাবে প্রদক্ষিণকারী গ্রহাণু বা বড় শিলাকে হোস্ট করে।তারা সাধারণত সূর্যের চারপাশে একটি কক্ষপথে ফিরে আসার আগে কয়েক মাস বা বছর ধরে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা আটকা পড়ে।কিছু গ্রহাণু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীর সাথে দীর্ঘ "নৃত্যে" থাকবে।কিছু চাঁদ পাথরের টুকরো যা একটি গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা বন্দী হয়েছিল,কিন্তু আমাদের চাঁদ সম্ভবত বিলিয়ন বছর আগে সংঘর্ষের ফলাফল।
যখন পৃথিবী একটি তরুণ গ্রহ ছিল, তখন পাথরের একটি বড় অংশ এতে ভেঙে পড়ে,পৃথিবীর অভ্যন্তরের একটি অংশকে স্থানচ্যুত করে।ফলস্বরূপ খণ্ড গুলি একত্রিত হয়ে আমাদের চাঁদ তৈরি করেছিল। ১,০৮০ মাইল (বা ১,৭৩৮ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধ সহ,চাঁদ আমাদের সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম চাঁদ (গ্যানিমেড, টাইটান, ক্যালিস্টো এবং আইওর পরে)।চাঁদ পৃথিবী থেকে গড়ে ২৩৮,৮৫৫ মাইল (বা ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার) দূরে।তার মানে পৃথিবী এবং তার চাঁদের মধ্যে ৩০ টি পৃথিবীর আকারের গ্রহ ফিট হতে পারে।
রিং
পৃথিবীর কোন বলয় নেই।
গঠন
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে যখন সৌরজগৎ তার বর্তমান বিন্যাসে বসতি স্থাপন করেছিল,তখন পৃথিবী গঠিত হয়েছিল যখন মহাকর্ষ সূর্য থেকে তৃতীয় গ্রহে পরিণত হওয়ার জন্য ঘূর্ণায়মান গ্যাস এবং ধুলো টেনে নিয়েছিল।এর সহকর্মী স্থলজ গ্রহগুলির মতো,পৃথিবীর একটি কেন্দ্রীয় কোর, একটি পাথুরে আবরণ এবং একটি কঠিন ভূত্বক রয়েছে।
পৃথিবী চারটি প্রধান স্তর নিয়ে গঠিত, গ্রহের কেন্দ্রে একটি অভ্যন্তরীণ কোর দিয়ে শুরু করে,বাইরের কোর, ম্যান্টেল এবং ক্রাস্ট দ্বারা আবৃত।অভ্যন্তরীণ কোর হল একটি কঠিন গোলক যা লোহা এবং নিকেল ধাতু দিয়ে তৈরি প্রায় ৭৫৯ মাইল (১,২২১ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের।সেখানে তাপমাত্রা ৯,৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (বা ৫,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত। ভিতরের কোরকে ঘিরে থাকে বাইরের কোর।এই স্তরটি প্রায় ১,৪০০ মাইল ( বা ২,৩০০ কিলোমিটার) পুরু,লোহা এবং নিকেল তরল দিয়ে তৈরি।বাইরের কোর এবং ভূত্বকের মাঝখানে ম্যান্টেল,সবচেয়ে পুরু স্তর।গলিত শিলার এই গরম,সান্দ্র মিশ্রণটি প্রায় ১,৮০০ মাইল ( বা ২,৯০০ কিলোমিটার) পুরু এবং এতে ক্যারামেলের সামঞ্জস্য রয়েছে।সবচেয়ে বাইরের স্তর, পৃথিবীর ভূত্বক, ভূমিতে গড়ে প্রায় ১৯ মাইল ( বা ৩০ কিলোমিটার) গভীরে যায়।সমুদ্রের তলদেশে, ভূত্বকটি পাতলা এবং সমুদ্রতল থেকে ম্যান্টেলের শীর্ষ পর্যন্ত প্রায় ৩ মাইল ( বা ৫ কিলোমিটার) বিস্তৃত।
পৃষ্ঠতল
মঙ্গল এবং শুক্রের মতো,পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরি, পর্বত এবং উপত্যকা রয়েছে।পৃথিবীর লিথোস্ফিয়ার,যার মধ্যে ভূত্বক (মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় উভয়ই) এবং উপরের আবরণ রয়েছে যা বিশাল প্লেটে বিভক্ত এবং ক্রমাগত চলমান।
উদাহরণস্বরূপ,উত্তর আমেরিকার প্লেটটি প্রশান্ত মহাসাগরের অববাহিকায় পশ্চিমে চলে যায়,মোটামুটি আমাদের নখের বৃদ্ধির সমান হারে।ভূমিকম্প হয় যখন প্লেটগুলি একে অপরের কাছ থেকে পিষে যায়, একে অপরের উপরে উঠে যায়, পাহাড় তৈরির জন্য সংঘর্ষ হয় বা বিভক্ত হয়ে পৃথক হয়।
পৃথিবীর বৈশ্বিক মহাসাগর, যা গ্রহের পৃষ্ঠের প্রায় ৭০% জুড়ে রয়েছে, এর গড় গভীরতা প্রায় ২.৫ মাইল (বা ৪ কিলোমিটার) এবং এতে পৃথিবীর ৯৭% জল রয়েছে।পৃথিবীর প্রায় সব আগ্নেয়গিরিই এই মহাসাগরের নিচে লুকিয়ে আছে। হাওয়াইয়ের মাউনা কেয়া আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে বেস থেকে চূড়া পর্যন্ত লম্বা,তবে এর বেশিরভাগই পানির নিচে।আর্কটিক এবং আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালাও পানির নিচে রয়েছে।এটি আন্দিজ, রকিজ এবং হিমালয়ের মিলিত চেয়ে চারগুণ দীর্ঘ।
বায়ুমণ্ডল
ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি,পৃথিবীর একটি বায়ুমণ্ডল রয়েছে যা ৭৮% নাইট্রোজেন,২১% অক্সিজেন এবং ১% অন্যান্য গ্যাস যেমন আর্গন,কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নিয়ন নিয়ে গঠিত।বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু এবং স্বল্পমেয়াদী স্থানীয় আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে এবং সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকারক বিকিরণ থেকে আমাদের রক্ষা করে।এটি আমাদের উল্কাপিণ্ড থেকেও রক্ষা করে,যার বেশিরভাগই বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যায়,রাতের আকাশে উল্কা হিসাবে দেখা যায়,তারা উল্কা হিসাবে পৃষ্ঠে আঘাত করার আগে।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
আমাদের গ্রহের দ্রুত ঘূর্ণন এবং গলিত নিকেল-লোহার কোর একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্ম দেয়,যা সৌর বায়ু মহাকাশে একটি অশ্রুবিন্দু আকারে বিকৃত করে।(সৌর বায়ু হল সূর্য থেকে অবিচ্ছিন্ন চার্জযুক্ত কণার একটি প্রবাহ)।যখন সৌর বায়ু থেকে চার্জযুক্ত কণাগুলি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে আটকা পড়ে,তখন তারা আমাদের গ্রহের চৌম্বকীয় মেরুগুলির উপরে বায়ুর অণুর সাথে সংঘর্ষ করে।এই বায়ুর অণুগুলি তখন জ্বলতে শুরু করে এবং অরোরা বা উত্তর এবং দক্ষিণ আলো সৃষ্টি করে।চৌম্বক ক্ষেত্র হল কম্পাসের সূঁচ উত্তর মেরুতে নির্দেশ করে,আপনি যে দিকেই ঘুরুন না কেন।কিন্তু পৃথিবীর চৌম্বকীয় মেরুত্ব পরিবর্তন হতে পারে,চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক উল্টাতে পারে।ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড বিজ্ঞানীদের বলে যে গড়ে প্রতি ৪০০,০০০ বছরে একটি চৌম্বকীয় বিপরীত ঘটনা ঘটে,তবে সময়টি খুব অনিয়মিত।যতদূর আমরা জানি,এই ধরনের চৌম্বকীয় উলটাপালটা পৃথিবীতে জীবনের কোনো ক্ষতি করে না এবং অন্তত আরও হাজার বছরের জন্য একটি বিপরীত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।কিন্তু যখন এটি ঘটে, তখন কম্পাসের সূঁচগুলি কয়েক শতাব্দী ধরে বিভিন্ন দিকে নির্দেশ করতে পারে যখন সুইচ তৈরি করা হচ্ছে এবং সুইচ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, তারা উত্তরের পরিবর্তে দক্ষিণ দিকে নির্দেশ করবে।
৮ টি জিনিস জানা দরকার আমাদের হোম প্ল্যানেট সম্পর্কে
১. পরিমাপ করা - যদি সূর্য একটি সাধারণ সামনের দরজার মতো লম্বা হয়, তাহলে পৃথিবীর আকার একটি নিকেলের মতো হবে।
২. আমরা যেখানে আছি - পৃথিবী হল একটি পাথুরে গ্রহ যেখানে পাহাড়, গিরিখাত, সমভূমি এবং আরও অনেক কিছুর একটি কঠিন এবং গতিশীল পৃষ্ঠ রয়েছে৷ আমাদের গ্রহের অধিকাংশই জলে ঢাকা।
৩. সহজে শ্বাস নিন - পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল হল ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, ২১ শতাংশ অক্সিজেন এবং ১ শতাংশ অন্যান্য উপাদান - শ্বাস নেওয়া এবং বেঁচে থাকার জন্য নিখুঁত ভারসাম্য।
৪. আমাদের মহাজাগতিক সঙ্গী - পৃথিবীতে একটি চাঁদ আছে।
৫. রিং বিহীন - পৃথিবীর কোন রিং নেই।
৬. অরবিটাল সায়েন্স - অনেক প্রদক্ষিণকারী মহাকাশযান একটি সম্পূর্ণ সিস্টেম হিসাবে উপরে থেকে পৃথিবীকে অধ্যয়ন করে — বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর, হিমবাহ এবং কঠিন পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করে।
৭. হোম, সুইট হোম - পৃথিবী হল জীবনের জন্য উপযুক্ত জায়গা যেমন আমরা জানি।
৮. প্রতিরক্ষামূলক ঢাল - আমাদের বায়ুমণ্ডল আমাদেরকে আগত উল্কাপিণ্ড থেকে রক্ষা করে, যার বেশিরভাগই ভূপৃষ্ঠে আঘাত করার আগেই বায়ুমণ্ডলে ভেঙ্গে যায়।
গ্রহ শুক্র
শুক্র
শুক্র হল সূর্য থেকে দ্বিতীয় গ্রহ এবং আমাদের নিকটতম গ্রহ প্রতিবেশী। এটি আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ এবং কখনও কখনও এটিকে পৃথিবীর যমজ বলা হয়।
ভূমিকা
গঠন ও আকারে পৃথিবীর অনুরূপ এবং শুক্র বেশিরভাগ গ্রহ থেকে ধীরে ধীরে বিপরীত দিকে ঘোরে। এর পুরু বায়ুমণ্ডল একটি পলাতক গ্রিনহাউসের প্রভাবে তাপকে আটকে রাখে যা এটিকে আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রহে পরিণত করে যার পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সীসা গলানোর জন্য যথেষ্ট গরম। মেঘের নীচে আগ্নেয়গিরির ঝলক এবং বিকৃত পর্বতগুলি দেখা যায় । প্রাচীন রোমান দেবী ভেনাসের প্রেম এবং সৌন্দর্যের জন্য নামকরণ করা হয়েছে। যিনি প্রাচীন গ্রীকদের কাছে অ্যাফ্রোডাইট নামে পরিচিত ছিলেন। শুক্রের বেশিরভাগ বৈশিষ্ট্য মহিলাদের জন্য নামকরণ করা হয়েছে।
শুক্র কিভাবে এর নাম পেয়েছে
প্রাচীন রোমানরা সহজেই আকাশে সাতটি উজ্জ্বল বস্তু দেখতে পেত: সূর্য, চাঁদ এবং পাঁচটি উজ্জ্বল গ্রহ (বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি)। তারা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতার নামে বস্তুর নামকরণ করেছিল। সূর্য এবং চাঁদের পরে তৃতীয় উজ্জ্বল বস্তু ভেনাস, প্রেম ও সৌন্দর্যের রোমান দেবীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। এটি একমাত্র গ্রহ যা একজন মহিলা দেবতার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
শুক্রের পৃষ্ঠ থেকে ত্রিশ মাইল উপরে (প্রায় 50 কিলোমিটার) তাপমাত্রা 86 থেকে 158 ফারেনহাইট (30 থেকে 70 সেলসিয়াস) পর্যন্ত। এই তাপমাত্রার পরিসীমা পার্থিব জীবনকে মিটমাট করতে পারে। যেমন "এক্সট্রিমোফাইল" জীবাণু। এবং সেই উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ আমরা পৃথিবীর পৃষ্ঠে যা পাই তার অনুরূপ। শুক্রের মেঘের শীর্ষে, গ্রহের চারপাশে 224 mph (360 kph) গতির বাতাস দ্বারা চাবুক করা হয়েছে। আমরা অন্য রূপান্তর দেখতে পাই এবং অবিরাম অন্ধকার রেখা প্রদর্শিত হয়। বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে অক্ষম কেন এই রেখাগুলি একগুঁয়েভাবে অক্ষত থাকে, এমনকি হারিকেন-শক্তির বাতাসের মধ্যেও। তাদের অতিবেগুনী বিকিরণ শোষণ করার অদ্ভুত অভ্যাসও রয়েছে। সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যাগুলি হচ্ছে সূক্ষ্ম কণা, বরফের স্ফটিক বা এমনকি আয়রন ক্লোরাইড নামক একটি রাসায়নিক যৌগকে কেন্দ্র করে এমন হচ্ছে। যদিও এটির সম্ভাবনা অনেক কম, বিজ্ঞানীরা যারা অ্যাস্ট্রোবায়োলজি অধ্যয়ন করেন তাদের দ্বারা বিবেচনা করা আরেকটি সম্ভাবনা হল এই রেখাগুলি মাইক্রোবায়াল জীবন, শুক্র-শৈলী দ্বারা গঠিত হতে পারে। অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্টরা উল্লেখ করেছেন যে শুক্রের বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান সালফার পরমাণুর রিং-আকৃতির সংযোগগুলি জীবাণুকে এক ধরণের আবরণ সরবরাহ করতে পারে যা তাদের সালফিউরিক অ্যাসিড থেকে রক্ষা করবে। এই সহজ রাসায়নিক ক্লোকগুলি সম্ভাব্য ক্ষতিকারক অতিবেগুনী আলোকে শোষণ করবে এবং এটি দৃশ্যমান আলো হিসাবে পুনরায় বিকিরণ করবে। কিছু রাশিয়ান ভেনেরা প্রোব, প্রকৃতপক্ষে শুক্রের নীচের বায়ুমণ্ডলে প্রায় এক মাইক্রন দৈর্ঘ্যের কণা সনাক্ত করেছে - প্রায় পৃথিবীর একটি ব্যাকটেরিয়ামের আকারের সমান। এই ফলাফলগুলির কোনটিই শুক্রের মেঘে জীবনের অস্তিত্বের জন্য জোরালো প্রমাণ দেয় না। কিন্তু তারা যে প্রশ্নগুলি উত্থাপন করে, শুক্রের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মহাসাগর এর হিংসাত্মক আগ্নেয়গিরির পৃষ্ঠ এবং এর নারকীয় ইতিহাস আমাদের মেজাজ ভগ্নী গ্রহের তদন্তের জন্য একটি মিশনেকে অনুপ্রানিত করে যার মাধ্যমে আমরা অজানাকে জানতে পারি ।
আকার এবং দূরত্ব
শুক্র 67 মিলিয়ন মাইল (108 মিলিয়ন কিলোমিটার) বা 0.72 জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিটের গড় দূরত্ব থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের দূরত্তের একক (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। এই দূরত্ব থেকে, সূর্য থেকে শুক্র গ্রহে সূর্যালোক যেতে সময় লাগে প্রায় ছয় মিনিট। শুক্রের কাছে পৃথিবীর কাছাকাছি একটি দৃষ্টিকোণ বিষয়। গ্রহটি প্রায় পৃথিবীর মতোই বড় - 7,521 মাইল (12,104 কিলোমিটার) জুড়ে এবং পৃথিবী 7,926 মাইল (12,756 কিলোমিটার) জুড়ে। পৃথিবী থেকে শুক্র আমাদের নিজস্ব চাঁদের পরে রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। প্রাচীনরা তাই তাদের সংস্কৃতিতে এটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিল এমনকি ভেবেছিল এটি দুটি বস্তু: একটি সকালের তারা এবং একটি সন্ধ্যার তারা। এখানেই দৃষ্টিকোণের কৌশলটি আসে। যেহেতু শুক্রের কক্ষপথ আমাদের চেয়ে সূর্যের কাছাকাছি, তাই আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে - কখনই একে অপরের থেকে দূরে সরে যায় না। প্রাচীন মিশরীয় এবং গ্রীকরা শুক্রকে দুটি ছদ্মবেশে দেখেছিল: বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রথমে একটি কক্ষপথে (সকালে দেখা যায়), তারপর অন্যটি (আপনার "সন্ধ্যা" শুক্র)। শুক্র, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে প্রায় 38 মিলিয়ন মাইল (প্রায় 61 মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দুটি গ্রহ দূরে দূরে থাকে । বুধ সবচেয়ে ভিতরের গ্রহ, কিন্তু শুক্রের চেয়ে পৃথিবীর সান্নিধ্যে বেশি সময় ব্যয় করে।
দৃষ্টিভঙ্গির আরও একটি কৌশল: শুক্র বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপের মাধ্যমে কীভাবে দেখায়?
অনেক মাস ধরে নজর রাখুন এবং আপনি লক্ষ্য করবেন যে শুক্রেরও পর্যায় রয়েছে ঠিক আমাদের চাঁদের মতো - পূর্ণ, অর্ধেক, চতুর্থাংশ ইত্যাদি। সম্পূর্ণ চক্র, তবে নতুন থেকে পূর্ণ হতে 584 দিন সময় নেয়। যেখানে আমাদের চাঁদের সময় লাগে মাত্র এক মাস (৩০ দিন)। এবং এই দৃষ্টিকোণটি ছিল,গ্যালিলিও তার টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথম শুক্রের পর্যায়গুলি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, যা সৌরজগতের কোপারনিকান সূর্যকেন্দ্রিক প্রকৃতির মূল বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রদান করেছিল।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
শুক্র গ্রহে একটি দিন কাটানো বেশ বিভ্রান্তিকর অভিজ্ঞতা হবে - অর্থাৎ, যদি আপনার মহাকাশযান বা স্পেসস্যুট আপনাকে 900 ডিগ্রি ফারেনহাইট (475 সেলসিয়াস) তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করতে পারে। এবং আপনার "দিন" 243 পৃথিবী দিন দীর্ঘ হবে - এমনকি শুক্র বছরের (সূর্যের চারপাশে একটি ট্রিপ) থেকেও দীর্ঘ, যার জন্য মাত্র 225 পৃথিবী দিন লাগে। অন্যটির হচ্ছে গ্রহটির অত্যন্ত ধীর ঘূর্ণনের কারণে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত হতে 117 পৃথিবী দিন সময় লাগবে এবং সূর্য পশ্চিমে উদিত হবে এবং পূর্বে অস্ত যাবে, কারণ শুক্র পৃথিবীর তুলনায় পিছনে ঘুরবে। আপনি যখন অপেক্ষা করছেন, তখন লাগামহীন তাপমাত্রা থেকে কোনো মৌসুমি স্বস্তি আশা করবেন না। পৃথিবীর স্পিন অক্ষ প্রায় 23 ডিগ্রী কাত, আমরা গ্রীষ্ম অনুভব করি যখন আমাদের গ্রহের অংশ (আমাদের গোলার্ধ) সূর্যের রশ্মি আরও সরাসরি গ্রহণ করে – সেই কাত হওয়ার ফলে। শীতকালে, কাত মানে সূর্যের রশ্মি কম পতিত হয়। শুক্রে এমন ভাগ্য নেই,এর খুব সামান্য কাত মাত্র 3 ডিগ্রি, যা লক্ষণীয় ঋতু পরিবর্তন করার জন্য খুব কম।
চাঁদ
শুক্রের কোন চাঁদ নেই।
রিং
শুক্রের কোন বলয় নেই।
গঠন
প্রাণের সন্ধানকারী নক্ষত্রের মধ্যে বিজ্ঞানীদের জন্য একটি সমালোচনামূলক প্রশ্ন: বাসযোগ্য গ্রহগুলি কীভাবে তাদের শুরু করে?
প্রথম দিকের শুক্র এবং পৃথিবীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ মিল ছিল এবং তাদের ভাগ্য খুব আলাদা। গ্রহের গঠন অধ্যয়নকারী বিজ্ঞানীদের জন্য এক ধরণের পরীক্ষামূলক ঘটনা প্রদান করে যে একই আকার, অনুরূপ অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং উভয়ই গ্রহে শুরুর দিকে সমুদ্র বিদ্যমান ছিল তবুও একটি এখন নরক, অপরটি প্রচুর জীবন আয়োজক একমাত্র পরিচিত বিশ্ব আমাদের পৃথিবী। এই গ্রহ দুটিকে প্রায় বিপরীত পথে ধাবিত করে এমন কারণগুলি শুরু হয়েছিল, সম্ভবত গ্যাস এবং ধূলিকণার ঘূর্ণায়মান ডিস্ক থেকে যা থেকে গ্রহের জন্ম হয়েছিল। কোনোভাবে 4.6 বিলিয়ন বছর আগে আমাদের সূর্যের চারপাশের সেই ডিস্কটি সংগৃহীত, শীতল হয়ে আজকে আমরা পরিচিত গ্রহে বসতি স্থাপন করেছি। শুক্রের গঠনের ইতিহাস সম্পর্কে আরও ভাল জ্ঞান আমাদের পৃথিবী এবং অন্যান্য নক্ষত্রের চারপাশে পাথুরে গ্রহগুলিকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
যদি আমরা শুক্র এবং পৃথিবীকে অর্ধেক করে, মেরু থেকে মেরুতে টুকরো টুকরো করতে পারি এবং তাদের পাশাপাশি রাখতে পারি, তাহলে তারা দেখতে অসাধারণভাবে একই রকম হবে। প্রতিটি গ্রহের একটি লোহার কোর থাকে যা একটি গরম-পাথরের আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। সবচেয়ে পাতলা চামড়াটি পাথুরে বাহ্যিক ভূত্বক গঠন করে। উভয় গ্রহেই এই পাতলা ত্বকের আকার পরিবর্তন হয় এবং কখনও কখনও তাপ এবং নীচে গভীর চাপের ভাটা এবং প্রবাহের প্রতিক্রিয়া হিসাবে আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়। পৃথিবীতে কয়েক হাজার এবং মিলিয়ন বছর ধরে মহাদেশের ধীর গতির পৃষ্ঠকে নতুন আকার দেয় । এই প্রক্রিয়া যা "প্লেট টেকটোনিক্স" নামে পরিচিত। শুক্র গ্রহের ইতিহাসের প্রথম দিকে অনুরূপ কিছু ঘটে থাকতে পারে। আজ এই প্রক্রিয়ার একটি মূল উপাদান কাজ করতে পারে যা সাবডাকশন বা একটি মহাদেশীয় "প্লেট" অন্যটির নীচে স্লাইডিং করছে যা আগ্নেয়গিরিকেও ট্রিগার করতে পারে। সাবডাকশন, প্লেট টেকটোনিক্স তৈরির প্রথম ধাপ বলে মনে করা হয়। নাসার ম্যাগেলান মহাকাশযান, যা 1994 সালে শুক্রে পাঁচ বছরের মিশন পরিচালনা করে, তখন রাডার ব্যবহার করে ব্রয়লিং পৃষ্ঠের ম্যাপ তৈরী করেছিল। ম্যাগেলান চরম আগ্নেয়গিরির একটি ভূমি দেখেছিল – যেটি তুলনামূলকভাবে তরুণ পৃষ্ঠ ।
পৃষ্ঠতল
সোভিয়েত ইউনিয়ন 1961 এবং 1984 এর মধ্যে ভেনাস প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে ভেনাসে একাধিক প্রোব পাঠিয়েছিল (ভেনারা শুক্রের জন্য রাশিয়ান মিশন)। দশটি প্রোব ভূপৃষ্ঠে নিয়ে এসেছে এবং কয়েকটি অবতরণের পর সংক্ষিপ্তভাবে কাজ করেছে। দীর্ঘতম বেঁচে থাকা দুই ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল। সবচেয়ে ছোট 23 মিনিট। ল্যান্ডার ভাজার তোলা ছবিতে দেখ যায় একটি অনুর্বর, আবছা এবং পাথুরে ল্যান্ডস্কেপ এবং একটি আকাশ দেখায় যা সম্ভবত সালফার হলুদের ছায়া দ্বারা আচ্ছাদিত। আগ্নেয়গিরি এবং টেকটোনিক শক্তি শুক্রের প্রাথমিক পৃষ্ঠের বেশিরভাগ চিহ্ন মুছে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে। নতুন কম্পিউটার মডেলগুলি ইঙ্গিত করে যে বর্তমান অবস্থা একটি বর্ধিত সময়ের মধ্যে টুকরো টুকরো হয়ে থাকতে পারে। কিছু পুরানো পৃষ্ঠের সাথে মিশ্রিত হয়ে বর্তমান ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যগুলির গড় বয়স 150 মিলিয়ন বছরের মতো তরুণ হতে পারে । শুক্রের উপত্যকা এবং উচ্চ পর্বত রয়েছে যেখানে হাজার হাজার আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এর পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যগুলি - বাস্তব এবং পৌরাণিক উভয় মহিলাদের জন্যই সর্বাধিক নামকরণ করা হয়েছে - এর মধ্যে রয়েছে ইশতার টেরা, উত্তর মেরুর কাছে অস্ট্রেলিয়ার আকারের চারপাশে একটি পাথুরে উচ্চভূমি এলাকা এবং আরও বড় দক্ষিণ-আমেরিকা-আকারের একটি অঞ্চল যা আফ্রোডাইট টেরা নামে বিস্তৃত। বিষুবরেখায় একটি পর্বত রয়েছে যার উচ্চতা 36,000 ফুট (11 কিলোমিটার) যা মাউন্ট এভারেস্ট থেকে বেশি। উল্লেখযোগ্য ভাবে পৃথিবী ব্যতীত, শুক্র এখন পর্যন্ত যে কোনও পাথুরে গ্রহের থেকে সবচেয়ে কম প্রভাব ফেলেছে। শুক্র ল্যান্ডস্কেপের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
• লুইস এবং ক্লার্কের নেটিভ আমেরিকান গাইডের জন্য Sacajawea নামে একটি আগ্নেয়গিরির গর্ত।
• শিকারের রোমান দেবী ডায়ানা নামে একটি গভীর গিরিখাত।
• "প্যানকেক" গম্বুজ সমতল শীর্ষ এবং খাড়া দিক সহ 38 মাইল (62 কিলোমিটার) এর মতো প্রশস্ত, সম্ভবত অত্যন্ত সান্দ্র লাভা এক্সট্রুশন দ্বারা গঠিত।
• "টিক" গম্বুজ বিকিরণকারী স্পার্স সহ অদ্ভুত আগ্নেয়গিরি যা উপর থেকে তাদের রক্ত খাওয়ানো নামের মতো দেখায়।
• Tesserae শৈলশিরা এবং খাঁজগুলির জটিল নিদর্শন সহ ভূখণ্ড যা ঝলসানি তাপমাত্রায় শিলাকে কিছু উপায়ে শুক্রের একটি পাতলা এবং শক্তিশালী চকোলেট স্তরের নীচে চিনাবাদামের মাখনের মতো ।
বায়ুমণ্ডল
শুক্রের বায়ুমণ্ডল চরমগুলির মধ্যে একটি। সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ পৃষ্ঠ সূর্য ছাড়াও, শুক্র সবচেয়ে ভিতরের গ্রহ চারব্রোইল্ড বুধের চেয়েও বেশি গরম। বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড - গ্যাস যা শুক্র এবং পৃথিবীতে গ্রিনহাউস প্রভাব বিদ্যমান – সাথে সালফিউরিক অ্যাসিডের মেঘ। এবং পৃষ্ঠে, গরম ও উচ্চ-চাপের কার্বন ডাই অক্সাইড একটি ক্ষয়কারী ফ্যাশনের মত আচরণ করে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলে উচ্চতর তাপমাত্রা এবং চাপ কমতে শুরু করে।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
যদিও শুক্র পৃথিবীর আকারে সমান এবং একই আকারের আয়রন কোর রয়েছে তবুও অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহটির নিজস্ব কোন চৌম্বক ক্ষেত্র নেই। পরিবর্তে, শুক্রে একটি প্ররোচিত চৌম্বক ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত। এই দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রটি সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র এবং গ্রহের বাইরের বায়ুমণ্ডলের মিথস্ক্রিয়া দ্বারা তৈরি হয়। সূর্যের অতিবেগুনী আলো শুক্রের বাইরের বায়ুমণ্ডলের গ্যাসকে উত্তেজিত করে,এই বৈদ্যুতিকভাবে উত্তেজিত গ্যাসগুলিকে আয়ন বলা হয় এবং এইভাবে এই অঞ্চলটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলা হয় (পৃথিবীরও একটি আয়নোস্ফিয়ার রয়েছে)। সৌর বায়ু - সূর্য থেকে অবিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণাগুলির প্রতি ঘন্টায় এক মিলিয়ন মাইল ঝড় - এটি সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রকে বহন করে। যখন সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র শুক্রের বৈদ্যুতিকভাবে উত্তেজিত আয়নোস্ফিয়ারের সাথে যোগাযোগ করে, তখন এটি সেখানে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে বা প্ররোচিত করে। এই প্ররোচিত চৌম্বক ক্ষেত্রটি গ্রহটিকে আবৃত করে এবং এটি একটি বর্ধিত টিয়ারড্রপ বা ধূমকেতুর লেজের মতো আকার ধারণ করে, যেমন সৌর বায়ু শুক্রের পাশ দিয়ে এবং সৌরজগতের বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়।
গ্রহ বুধ
বুধ
বুধ আমাদের সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। বুধ পৃথিবীর চাঁদের চেয়ে সামান্য বড়। বুধের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীকে দেখার সময় সূর্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি বড় দেখাবে এবং সূর্যের আলো সাত গুণ বেশি উজ্জ্বল হবে।
ভূমিকা
বুধের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অত্যন্ত গরম এবং ঠান্ডা উভয়ই। যেহেতু গ্রহটি সূর্যের খুব কাছাকাছি, দিনের তাপমাত্রা ৮০০ ° ফারেনহাইট (৪৩০ ° সে) এর উচ্চে পৌঁছাতে পারে। রাতে সেই তাপ ধরে রাখার জন্য বায়ুমণ্ডল না থাকলে, তাপমাত্রা -২৯০ ° ফারেনহাইট (-১৮০ ° সে) পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। সূর্যের সান্নিধ্যে থাকা সত্ত্বেও বুধ আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রহ নয় - এই শিরোনামটি কাছাকাছি শুক্রের অন্তর্গত এর ঘন বায়ুমণ্ডলের জন্য। কিন্তু বুধ হল দ্রুততম গ্রহ, প্রতি ৮৮ পৃথিবী দিনে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে।
নামকরণ
প্রাচীন রোমান দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততার জন্য বুধের নামকরণ করা হয়েছে।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
আমরা জানি বুধের পরিবেশ জীবনের জন্য উপযোগী নয়। তাপমাত্রা এবং সৌর বিকিরণ যা এই গ্রহটিকে চিহ্নিত করে তা সম্ভবত উদায়ি জীবের জন্য খুব বেশি খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
আকার এবং দূরত্ব
১,৫১৬ মাইল (২,৪৪০ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধ নিয়ে, বুধ পৃথিবীর প্রস্থের ১/৩ এর একটু বেশি। পৃথিবী যদি একটি নিকেলের আকার হত তবে বুধ ব্লুবেরির মতো বড় হবে। সূর্য থেকে গড় দূরত্ব ৩৬ মিলিয়ন মাইল (৫৮ মিলিয়ন কিলোমিটার) এবং বুধ সূর্য থেকে ০.৪ জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক দূরে অবস্থিত। একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। এই দূরত্ব থেকে, সূর্য থেকে বুধ গ্রহে সূর্যালোক যেতে লাগে ৩.২ মিনিট।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
বুধের অত্যন্ত উদ্ভট ডিম-আকৃতির কক্ষপথটি গ্রহটি সূর্য থেকে ২৯ মিলিয়ন মাইল (৪৭ মিলিয়ন কিলোমিটার) এবং ৪৩ মিলিয়ন মাইল (৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করে। এটি প্রতি ৮৮ দিনে সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আ সে এবং প্রায় ২৯ মাইল (৪৭ কিলোমিটার) প্রতি সেকেন্ডে মহাকাশে ভ্রমণ করে। বুধ তার অক্ষের উপর ধীরে ধীরে ঘোরে এবং প্রতি ৫৯ পৃথিবীর দিনে একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। কিন্তু যখন বুধ সূর্যের চারপাশে তার উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে চলে এবং এটি যখন সূর্যের সবচেয়ে কাছেথাকে তখন প্রতিটি ঘূর্ণনে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সাথে থাকে না যেমনটি অন্যান্য গ্রহে ঘটে। সকালে সূর্য পৃষ্ঠের কিছু অংশ থেকে সংক্ষিপ্তভাবে উদিত হয় এবং অস্ত যায় এবং আবার উদিত হয়। একই জিনিস সূর্যাস্তের সময় পৃষ্ঠের অন্যান্য অংশের বিপরীতে ঘটে।বুধের একটি সৌর দিন (একটি পূর্ণ দিন-রাত্রি চক্র) ১৭৬ পৃথিবী দিনের সমান যা বুধে মাত্র দুই বছরেরও বেশি সময়। বুধের ঘূর্ণনের অক্ষ সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে মাত্র ২ ডিগ্রি কাত। এর মানে এটি প্রায় পুরোপুরি সোজাভাবে ঘোরে এবং তাই অন্য অনেক গ্রহের মতো ঋতু অনুভব করে না।
চাঁদ
বুধের চাঁদ নেই।
রিং
বুধের কোন রিং নেই।
গঠন
বুধ প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল যখন মাধ্যাকর্ষণ ঘূর্ণায়মান গ্যাস এবং ধূলিকণাকে একত্রিত করে সূর্যের কাছাকাছি এই ছোট গ্রহটি তৈরি করেছিল। অন্যান্য স্থলজ গ্রহগুলির মতো, বুধের একটি কেন্দ্রীয় কোর আ ছে ।একটি পাথুরে আবরণ এবং একটি শক্ত ভূত্বক রয়েছে। গঠনের দিক থেকে বুধ পৃথিবীর পরে দ্বিতীয় ঘনত্বের গ্রহ। এটির একটি বড় ধাতব কোর রয়েছে যার ব্যাসার্ধ প্রায় ১,২৮৯ মাইল (২,০৭৪ কিলোমিটার) যা গ্রহের ব্যাসার্ধের প্রায় ৮৫%। প্রমাণ আছে যে এটি আংশিকভাবে গলিত বা তরল। বুধের বাইরের শেল, পৃথিবীর বাইরের শেল (যাকে ম্যান্টেল এবং ক্রাস্ট বলা হয়) এর সাথে তুলনীয়, এটি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) পুরু।
পৃষ্ঠতল
বুধের পৃষ্ঠটি পৃথিবীর চাঁদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, উল্কা এবং ধূমকেতুর সাথে সংঘর্ষের ফলে অনেকগুলি গর্ত দ্বারা ক্ষত বিক্ষত। বুধ গ্রহের গর্ত এবং বৈশিষ্ট্যগুলি বিখ্যাত শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ বা লেখকদের নামে নামকরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে শিশু লেখক ড. সিউস এবং নৃত্যের পথপ্রদর্শক অ্যালভিন আইলি রয়েছে। ক্যালোরিস (৯৬০ মাইল বা ১,৫৫০ কিলোমিটার ব্যাস) এবং রাচম্যানিনফ (১৯০ মাইল বা ৩০৬ কিলোমিটার ব্যাস) সহ খুব বড় অববাহিকা গুলি সৌরজগতের ইতিহাসের প্রথম দিকে গ্রহের পৃষ্ঠে গ্রহাণুর প্রভাব দ্বারা তৈরি হয়েছিল। যদিও সেখানে মসৃণ ভূখণ্ডের বিশাল এলাকা ও ক্লিফও রয়েছে । এ দের মধ্যে কিছু শত শত মাইল লম্বা এবং এক মাইল পর্যন্ত উঁচু। বুধ গ্রহের, গঠনের পর থেকে কোটি কোটি বছর ধরে গ্রহের অভ্যন্তর শীতল এবং সংকুচিত হওয়ার সাথে সাথে তারা উত্থিত ও হয়েছিল। বুধের পৃষ্ঠের বেশিরভাগ অংশই মানুষের চোখে ধূসর-বাদামী রং এর দেখাবে। উজ্জ্বল রেখা গুলিকে "ক্রেটার রশ্মি" বলা হয়। একটি গ্রহাণু বা ধূমকেতু পৃষ্ঠে আঘাত করলে এগুলি গঠিত হয়। এই ধরনের প্রভাবে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় তা ভূমিতে একটি বড় গর্তের তৈরী করে এবং আঘাতের বিন্দুর নীচে বিশাল পরিমাণ পাথরকেও চূর্ণ করে। এই চূর্ণ পদার্থের কিছু গর্ত থেকে অনেক দূরে নিক্ষিপ্ত হয় এবং তারপর ভূপৃষ্ঠে পড়ে রশ্মি তৈরি করে। চূর্ণ পাথরের সূক্ষ্ম কণাগুলি বড় টুকরোগুলির চেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয়, তাই রশ্মিগুলি আরও উজ্জ্বল দেখায়। মহাকাশের পরিবেশ -ধুলোর প্রভাব এবং সৌর-বায়ু কণা - সময়ের সাথে সাথে রশ্মিগুলিকে অন্ধকার করে তোলে। বুধের তাপমাত্রা চরম, দিনের বেলায় পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পৌঁছাতে পারে। যেহেতু গ্রহটির সেই তাপ ধরে রাখার মতো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, তাই ভূপৃষ্ঠের রাতের তাপমাত্রা মাইনাস ২৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (মাইনাস ১৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এ নেমে যেতে পারে। বুধের উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে গভীর গর্তের অভ্যন্তরে জলের বরফ থাকতে পারে, তবে তা কেবল স্থায়ী ছায়াযুক্ত অঞ্চলে। এই ছায়াগুলিতে, সূর্যালোকের উচ্চ তাপমাত্রা থাকা সত্ত্বেও জলের বরফ সংরক্ষণ করার জন্য এটি যথেষ্ট ঠান্ডা হতে পারে।
বায়ুমণ্ডল
বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তে, বুধের একটি পাতলা এক্সোস্ফিয়ার রয়েছে যা সৌর বায়ু এবং স্ট্রাইক উল্কা দ্বারা পৃষ্ঠে বিস্ফোরিত পরমাণু দ্বারা গঠিত। বুধের এক্সোস্ফিয়ার বেশিরভাগ অক্সিজেন, সোডিয়াম, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং পটাসিয়াম দ্বারা গঠিত।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
বুধের চৌম্বক ক্ষেত্র গ্রহের বিষুবরেখার সাপেক্ষে অফসেট। যদিও ভূপৃষ্ঠে বুধের চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি পৃথিবীর মাত্র ১%। সৌর বায়ু চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে কখনও কখনও তীব্র চৌম্বকীয় টর্নেডো তৈরি করে যা দ্রুত, উষ্ণ সৌর বায়ুর প্লাজমাকে গ্রহের পৃষ্ঠে নীচে নিয়ে আ সে । যখন আয়নগুলি পৃষ্ঠে আঘাত করে, তখন তারা নিরপেক্ষভাবে চার্জযুক্ত পরমাণুগুলিকে ছিটকে দেয় এবং সেগুলিকে আকাশে উচ্চ লুপে পাঠায়।
গ্রহ নেপচুন
ভূমিকা
অন্ধকার, ঠান্ডা এবং সুপারসনিক বায়ু দ্বারা প্রবাহিত, বরফের দৈত্য নেপচুন আমাদের সৌরজগতের অষ্টম এবং সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ। পৃথিবী থেকে সূর্য থেকে ৩০ গুণেরও বেশি দূরে। নেপচুনই আমাদের সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যা খালি চোখে দেখা যায় না। ২০১১ সালে নেপচুন, ১৮৪৬ সালে আবিষ্কারের পর থেকে তার প্রথম ১৬৫-বছরের কক্ষপথ সম্পন্ন করে। গ্রহের সমৃদ্ধ নীল রঙটি তার বায়ুমণ্ডলে মিথেন থেকে আসে যা লাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে কিন্তু নীলকে আবার মহাকাশে প্রতিফলিত হতে দেয়। নেপচুন সূর্য থেকে এতটাই দূরে যে বড় নীল গ্রহের উচ্চ দুপুর আমাদের কাছে আবছা গোধূলির মতো মনে হবে। আমরা এখানে আমাদের হোম গ্রহে যে উষ্ণ আলো দেখি তা নেপচুনের সূর্যালোকের চেয়ে প্রায় ৯০০ গুণ উজ্জ্বল।
নামকরণ
বরফের দানব নেপচুন ছিল গাণিতিক গণনার মাধ্যমে আ বিস্কৃত প্রথম গ্রহ। ইউরেনাসের কক্ষপথে গোলযোগের উপর ভিত্তি করে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী আরবাইন লে ভেরিয়ারের দ্বারা পাঠানো ভবিষ্যদ্বাণী ব্যবহার করে, জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহান গ্যালে ১৮৪৬ সালে প্রথম এই গ্রহটি পর্যবেক্ষন ও আবিষ্কার করেন। লে ভেরিয়ারের পরামর্শ অনুসারে গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে সমুদ্রের রোমান দেবতার নামে Le Verrier দ্বারা প্রস্তাবিত সমুদ্রের রোমান দেবতার নামানুসারে গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
আমরা জানি নেপচুনের পরিবেশ জীবনের জন্য উপযোগী নয়। তাপমাত্রা, চাপ এবং উপাদানগুলি যা এই গ্রহটিকে চিহ্নিত করে তা সম্ভবত খুব চরম এবং উদ্বায়ী প্রাণীদের জন্য মানিয়ে নেওয়ার জন্য অণুকূল।
আকার এবং দূরত্ব
১৫,২৯৯.৪ মাইল (২৪,৬২২ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধ সহ, নেপচুন পৃথিবীর চেয়ে প্রায় চারগুণ প্রশস্ত। পৃথিবী যদি নিকেলের আকার হয়, নেপচুন বেসবলের মতো বড় হবে। সূর্য থেকে গড় দূরত্ব ২.৮ বিলিয়ন মাইল (৪.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার) যা নেপচুন সূর্য থেকে ৩০ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট দূরে অবস্থিত। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক (সংক্ষেপে AU) হল, সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। এই দূরত্ব থেকে সূর্য থেকে নেপচুনে যেতে সূর্যের আলোর ৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
নেপচুনে একদিন সময় লাগে প্রায় ১৬ ঘন্টা (নেপচুন একবার ঘুরতে বা ঘুরতে যে সময় নেয়) এবং নেপচুন প্রায় ১৬৫ পৃথিবী বছরে (৬০,১৯০ পৃথিবী দিন) সূর্যের চারপাশে একটি সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে (নেপচুনিয়ান সময়ে এক বছর)। কখনও কখনও নেপচুন সূর্য থেকে বামন গ্রহ প্লুটোর থেকেও দূরে থাকে। প্লুটোর অত্যন্ত উদ্ভট, ডিম্বাকৃতির কক্ষপথ এটিকে প্রতি ২৪৮ পৃথিবী বছরে ২০ বছরের জন্য নেপচুনের কক্ষপথের ভিতরে নিয়ে আসে। এই অবস্থানটি যেখানে প্লুটো নেপচুনের চেয়ে সূর্যের কাছাকাছি থাকে। এটি সম্প্রতি ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ঘটেছিল। প্লুটো কখনই নেপচুনের সাথে বিধ্বস্ত হতে পারে না যদিও নেপচুন সূর্যের চারপাশে প্রতি তিনটি ঘূর্ননের জন্য, প্লুটো দুটি ঘূর্নন সম্পন্ন করে। এই পুনরাবৃত্তি প্যাটার্ন দুটি গ্রহের কাছাকাছি আসায় বাধা দেয়। নেপচুনের ঘূর্ণনের অক্ষ সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে ২৮ ডিগ্রি কাত যা মঙ্গল এবং পৃথিবীর অক্ষীয় কাতগুলির অনুরূপ। এর মানে নেপচুন ঋতু অনুভব করে ঠিক যেমন আমরা পৃথিবীতে করি। যাইহোক যেহেতু এর বছর অনেক দীর্ঘ তাই চারটি ঋতুর প্রতিটি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে।
চাঁদ
নেপচুনের ১৪ টি পরিচিত চাঁদ রয়েছে। নেপচুনের বৃহত্তম চাঁদ ট্রাইটন ১০ অক্টোবর, ১৮৪৬-এ উইলিয়াম ল্যাসেল দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল । জোহান গটফ্রিড গ্যাল গ্রহটি আবিষ্কার করার মাত্র ১৭ দিন পরে। যেহেতু নেপচুনের নামকরণ করা হয়েছে সমুদ্রের রোমান দেবতার নামানুসারে তাই এর চাঁদের নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক পুরাণে বিভিন্ন কম সামুদ্রিক দেবতা এবং নিম্ফদের জন্য। ট্রাইটন হল সৌরজগতের একমাত্র বৃহৎ চাঁদ যেটি তার গ্রহকে গ্রহের ঘূর্ণন (একটি বিপরীতমুখী কক্ষপথ) এর বিপরীত দিকে প্রদক্ষিণ করে। যা ইঙ্গিত করে যে এটি একটি স্বাধীন বস্তু ছিল যা নেপচুন দখল করেছে। ট্রাইটন অত্যন্ত ঠান্ডা, পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাইনাস ৩৯১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (মাইনাস ২৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তবুও ট্রাইটনে এই গভীর জমাট বাধা বরফ থাকা সত্ত্বেও ভয়েজার ২.৫ মাইল (৮ কিলোমিটার) এরও বেশি উপরে বরফের উপাদান ছড়ানো গিজার আবিষ্কার করেছে। ট্রাইটনের পাতলা বায়ুমণ্ডল ভয়েজার দ্বারাও আবিষ্কৃত হয়েছে, পৃথিবী থেকে বেশ কয়েকবার সনাক্ত করা হয়েছে এবং দিন দিন উষ্ণতর হচ্ছে কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না এর কারন।
রিং
নেপচুনের অন্তত পাঁচটি প্রধান বলয় এবং চারটি বিশিষ্ট রিং আর্ক রয়েছে যা আমরা এখন পর্যন্ত জানি। গ্রহের কাছাকাছি থেকে শুরু করে এবং বাইরের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রধান বলয়গুলির নাম গ্যালে, লেভারিয়ার, ল্যাসেল, আরাগো এবং অ্যাডামস। রিং গুলি তুলনামূলকভাবে তরুণ এবং স্বল্পস্থায়ী বলে মনে করা হয়। নেপচুনের রিং সিস্টেমেও আর্কস নামক ধূলিকণার অদ্ভুত ঝাঁক রয়েছে। Liberté (Liberty), Egalité (Equality), Fraternité (ভ্রাতৃত্ব)এবং সাহস নামের চার বিশিষ্ট আর্কস অ্যাডামসের বাইরের বলয়ে রয়েছে। আর্কগুলি অদ্ভুত কারণ গতির নিয়মগুলি ভবিষ্যদ্বাণী করে যে তারা একসাথে আটকে থাকার পরিবর্তে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়বে। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন গ্যালাটিয়ার মহাকর্ষীয় প্রভাব বলয় থেকে ঠিক ভিতরের দিকে একটি চাঁদ এই আর্কগুলিকে স্থিতিশীল করে।
গঠন
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে যখন সৌরজগতের বাকি অংশ গঠিত হয়েছিল তখন নেপচুন আকৃতি নিয়েছিল যখন মাধ্যাকর্ষণ এই বরফের দৈত্যে পরিণত হতে ঘূর্ণায়মান গ্যাস এবং ধূলিকণাকে টেনে নিয়েছিল। তার প্রতিবেশী ইউরেনাসের মতো নেপচুন সম্ভবত সূর্যের কাছাকাছি গঠিত হয়েছিল এবং প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে বাইরের সৌরজগতে চলে গিয়েছিল।
নেপচুন হল বাইরের সৌরজগতের দুটি বরফ দৈত্যের একটি (অন্যটি ইউরেনাস)। গ্রহের ভরের বেশিরভাগ (৮০% বা তার বেশি) একটি ছোট পাথুরে কোরের উপরে "বরফযুক্ত" পদার্থ - জল, মিথেন এবং অ্যামোনিয়া - এর একটি গরম ঘন তরল দিয়ে তৈরি। দৈত্যাকার গ্রহগুলির মধ্যে নেপচুন সবচেয়ে ঘন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন নেপচুনের ঠাণ্ডা মেঘের নীচে সুপার গরম জলের একটি মহাসাগর থাকতে পারে। এটি ফুটে যায় না কারণ অবিশ্বাস্যভাবে উচ্চ চাপ এটিকে ভিতরে আটকে রাখে।
পৃষ্ঠতল
নেপচুনের কোন শক্ত পৃষ্ঠ নেই। এর বায়ুমণ্ডলের (বেশিরভাগই হাইড্রোজেন, হিলিয়াম এবং মিথেন দিয়ে গঠিত) বিশাল গভীরতা প্রসারিত হয় এবং ধীরে ধীরে পৃথিবীর সমান ভর নিয়ে একটি ভারী কেন্দ্রে কঠিন জল এবং অন্যান্য গলিত বরফের সাথে মিশে যায়।
বায়ুমণ্ডল
নেপচুনের বায়ুমণ্ডল বেশিরভাগ হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি এবং সামান্য মিথেন রয়েছে। এই ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় মিথেনের কারণে নেপচুনের প্রতিবেশী ইউরেনাস একটি নীল-সবুজ রঙের, কিন্তু নেপচুন আরও উজ্জ্বল নীল, তাই সেখানে একটি অজানা উপাদান থাকতে পারে যা আরও তীব্র রঙের কারণ । নেপচুন হল আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বাতাসযুক্ত পৃথিবী। সূর্য থেকে তার অনেক দূরত্ব এবং কম শক্তির ইনপুট সত্ত্বেও, নেপচুনের বাতাস বৃহস্পতির চেয়ে তিনগুণ এবং পৃথিবীর চেয়ে নয় গুণ শক্তিশালী হতে পারে। এই বাতাসগুলি গ্রহ জুড়ে হিমায়িত মিথেনের মেঘগুলিকে ১,২০০ মাইল প্রতি ঘন্টা (ঘন্টা প্রতি ২,০০০ কিলোমিটার) গতিতে প্রবাহিত হয়। এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বাতাস প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২৫০ মাইল (ঘন্টা প্রতি ৪০০ কিলোমিটার) প্রবাহিত হয় । ১৯৮৯ সালে নেপচুনের দক্ষিণ গোলার্ধে "গ্রেট ডার্ক স্পট" নামে পরিচিত একটি বড়, ডিম্বাকৃতির ঝড় যেটি সমগ্র পৃথিবীকে ধারণ করার জন্য যথেষ্ট বড় ছিল। সেই ঝড়টি তখন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে, তবে গ্রহের বিভিন্ন অংশে নতুন নতুন ঝড় উপস্থিত রয়েছে।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
নেপচুনের চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রধান অক্ষটি গ্রহের ঘূর্ণন অক্ষের তুলনায় প্রায় ৪৭ ডিগ্রি বেশি। ইউরেনাসের মতো, এর চৌম্বকীয় অক্ষ ঘূর্ণনের অক্ষ থেকে প্রায় ৬০ ডিগ্রী হেলে আছে । নেপচুনের চুম্বকমণ্ডল প্রতিটি ঘূর্ণনের সময় এই ভুল বিন্যাসের কারণে বন্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। নেপচুনের চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ২৭ গুণ বেশি শক্তিশালী।
সংক্ষিপ্ত বর্ননা
দিন ১৬ ঘন্টা
বছর ১৬৫ পৃথিবী বছর
ব্যাসার্ধ ১৫,২৯৯.৪ মাইল (২৪,৬২২ কিলোমিটার)
গ্রহের ধরন আইস জায়ান্ট
চাঁদ ১৪
গ্রহ বৃহস্পতি
ভূমিকা
বৃহস্পতি হল সূর্য থেকে পঞ্চম গ্রহ এবং এখন পর্যন্ত সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ এবং অন্যান্য সমস্ত গ্রহের মিলিত তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
বৃহস্পতির ডোরাকাটা এবং ঘূর্ণিগুলি আসলে ঠান্ডা, অ্যামোনিয়া এবং জলের বাতাসের মেঘ যা হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের বায়ুমণ্ডলে ভাসমান। বৃহস্পতির আইকনিক গ্রেট রেড স্পট হল পৃথিবীর চেয়ে বড় একটি বিশাল ঝড় যা কয়েকশ বছর ধরে চলছে। প্রাচীন রোমান দেবতাদের রাজার জন্য জুপিটার নামকরণ করা হয়েছে।
নামকরণ
বৃহস্পতি সবচেয়ে বড় গ্রহ এবং প্রাচীন রোমান দেবতাদের রাজা থেকে এর নাম পেয়েছে।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
যেমনটি আমরা জানি, বৃহস্পতির পরিবেশ সম্ভবত জীবনের জন্য উপযোগী নয়। তাপমাত্রা, চাপ এবং অন্যান্য উপাদানগুলি যা এই গ্রহটিকে চিহ্নিত করে তা সম্ভবত খুব চরম এবং উদ্বায়ী প্রাণীদের জন্য মানিয়ে নেওয়ার জন্য । যদিও বৃহস্পতি গ্রহ জীবিত কোন কিছুকে ধরে রাখার জন্য একটি অসম্ভাব্য জায়গা, তবে এটির কয়েকটি চাঁদের ক্ষেত্রে এ কথা সত্য নয়। ইউরোপা, আমাদের সৌরজগতের অন্য কোথাও প্রাণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাময় স্থানগুলির মধ্যে একটি। এর বরফের ভূত্বকের ঠিক নীচে একটি বিশাল সমুদ্রের প্রমাণ রয়েছে, যেখানে জীবন সম্ভবত সমর্থন করা যেতে পারে।
আকার এবং দূরত্ব
৪৩,৪৪০.৭ মাইল (৬৯,৯১১ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের বৃহস্পতি, পৃথিবীর চেয়ে ১১ গুণ প্রশস্ত। পৃথিবী যদি একটি নিকেলের আকার হত তবে বৃহস্পতি বাস্কেটবলের মতো বড় হবে। সূর্য থেকে গড় ৪৮৪ মিলিয়ন মাইল (৭৭৮ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে বা সূর্য থেকে ৫.২ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট দূরে অবস্থিত। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। এই দূরত্ব থেকে, সূর্য থেকে বৃহস্পতিতে সূর্যালোক যেতে ৪৩ মিনিট সময় নেয়।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
সৌরজগতে বৃহস্পতির দিন সবচেয়ে ছোট। বৃহস্পতিতে একদিন সময় লাগে মাত্র ১০ ঘন্টা (বৃহস্পতিকে একবার ঘুরতে বা ঘুরতে যে সময় লাগে) এবং বৃহস্পতি প্রায় ১২ পৃথিবী বছরে (৪,৩৩৩ পৃথিবী দিন) সূর্যের চারপাশে একটি সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে (জোভিয়ান সময়ে এক বছর)। এর বিষুবরেখা সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথের সাপেক্ষে মাত্র ৩ ডিগ্রী হেলে আছে। এর মানে হল বৃহস্পতি প্রায় সোজাভাবে ঘোরে এবং অন্যান্য গ্রহের মতো চরম ঋতু নেই।
চাঁদ
চারটি বড় চাঁদ এবং অনেক ছোট চাঁদ নিয়ে, বৃহস্পতি এক ধরণের ক্ষুদ্র সৌরজগৎ গঠন করে। বৃহস্পতির ৯৫ টি চাঁদ রয়েছে যা আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন দ্বারা স্বীকৃত। চারটি বৃহত্তম চাঁদ - আইও, ইউরোপা, গ্যানিমিড এবং ক্যালিস্টো । ১৬১০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি টেলিস্কোপের একটি প্রাথমিক সংস্করণ ব্যবহার করে প্রথম বৃহস্পতি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এই চারটি চাঁদ আজ গ্যালিলিয়ান উপগ্রহ হিসাবে পরিচিত এবং তারা আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি। আইও হল সৌরজগতের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। গ্যানিমিড সৌরজগতের বৃহত্তম চাঁদ (এমনকি বুধ গ্রহের চেয়েও বড়)। ক্যালিস্টোর খুব কম ছোট গর্ত বর্তমান পৃষ্ঠের কার্যকলাপের একটি ছোট ডিগ্রী নির্দেশ করে। ইউরোপের হিমায়িত ভূত্বকের নীচে জীবনের উপাদান সহ একটি তরল-জলের মহাসাগর থাকতে পারে। ইউরোপা হল ২০২৪ সালে নাসার ইউরোপা ক্লিপার মিশনের লক্ষ্য।
রিং ০
১৯৭৯ সালে NASA এর ভয়েজার ১ মহাকাশযান দ্বারা বৃহস্পতির একটি আশ্চর্যজনক বলয় আবিষ্কৃত হয়েছিল। রিংগুলি ছোট অন্ধকার কণার সমন্বয়ে গঠিত এবং সূর্য দ্বারা ব্যাকলাইট ছাড়া তাদের দেখা কঠিন। গ্যালিলিও মহাকাশযান থেকে পাওয়া তথ্য ইঙ্গিত করে যে বৃহস্পতির রিং সিস্টেমটি ধূলিকণা দ্বারা গঠিত হতে পারে যখন আন্তঃগ্রহীয় উল্কাগুলি বিশাল গ্রহের ক্ষুদ্রতম অভ্যন্তরীণ চাঁদগুলিতে আঘাত করে।
গঠন
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সৌরজগতের বাকি অংশের সাথে বৃহস্পতি আকার নেয়। মাধ্যাকর্ষণ ঘূর্ণায়মান গ্যাস এবং ধূলিকণাকে একসাথে টেনে নিয়ে এই গ্যাস দৈত্য গঠন করে। সূর্যের গঠনের পরে বৃহস্পতি অবশিষ্ট ভরের বেশিরভাগই নিয়েছিল এবং সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুগুলির সম্মিলিত উপাদান সাথে শেষ হয়। প্রকৃতপক্ষে, বৃহস্পতির একটি নক্ষত্রের মতো একই উপাদান রয়েছে, তবে এটি জ্বলতে পারেনি এবং যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়নি। প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে, বৃহস্পতি বাইরের সৌরজগতে তার বর্তমান অবস্থানে বসতি স্থাপন করেছিল যেখানে এটি সূর্য থেকে পঞ্চম গ্রহ।
বৃহস্পতির গঠন সূর্যের অনুরূপ - বেশিরভাগ হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম। বায়ুমণ্ডলের গভীরে চাপ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং হাইড্রোজেন গ্যাসকে সংকুচিত করে তরলে পরিণত হয়। এটি বৃহস্পতিকে সৌরজগতের বৃহত্তম মহাসাগর দেয় - জলের পরিবর্তে হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি একটি মহাসাগর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, গ্রহের কেন্দ্রের অর্ধেক গভীরতায় চাপ এত বেশি হয়ে যায় যে ইলেকট্রনগুলি হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে ছিটকে পড়ে তরলটিকে ধাতুর মতো বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহিত করে। বৃহস্পতির দ্রুত ঘূর্ণন এই অঞ্চলে বৈদ্যুতিক স্রোত চালাতে পারে বলে মনে করা হয় এবং গ্রহের শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে আরও গভীরে শক্ত উপাদানের কোন কেন্দ্রীয় কেন্দ্র রয়েছে কিনা বা এটি একটি ঘন অতি-গরম ঘন স্যুপের ন্যায় হতে পারে। সেখানে তাপমাত্রা ৯০,০৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত হতে পারে, যা বেশিরভাগ লোহা এবং সিলিকেট খনিজ দিয়ে তৈরি (কোয়ার্টজের অনুরূপ)।
পৃষ্ঠতল
একটি গ্যাস দৈত্য হিসাবে বৃহস্পতির কোন পৃষ্ঠ নেই। গ্রহটি বেশিরভাগ গ্যাস তরল ঘূর্ণায়মান। যদিও কোন মহাকাশযানের বৃহস্পতিতে অবতরণ করার জায়গা নাই এমনকি এটি অক্ষত অবস্থায় উড়তেও সক্ষম হবে না। গ্রহের গভীরে থাকা চরম চাপ এবং তাপমাত্রা মহাকাশযানকে চূর্ণ, গলে এবং বাষ্পীভূত করে দিবে।
বায়ুমণ্ডল
বৃহস্পতির চেহারা রঙিন মেঘের ব্যান্ড এবং দাগের একটি ট্যাপেস্ট্রি। গ্যাস গ্রহটির সম্ভবত তার "আকাশে" তিনটি স্বতন্ত্র মেঘের স্তর রয়েছে যা একসাথে প্রায় ৪৪ মাইল (৭১ কিলোমিটার) বিস্তৃত। উপরের মেঘটি সম্ভবত অ্যামোনিয়া বরফ দিয়ে তৈরি আর মাঝের স্তরটি সম্ভবত অ্যামোনিয়াম হাইড্রোসালফাইড স্ফটিক দিয়ে তৈরি। সবচেয়ে ভিতরের স্তরটি জলের বরফ এবং বাষ্প দিয়ে তৈরি হতে পারে। আপনি বৃহস্পতি জুড়ে যে উজ্জ্বল রঙগুলি দেখতে পাচ্ছেন তা হতে পারে গ্রহের উষ্ণ অভ্যন্তর থেকে উঠতে থাকা সালফার এবং ফসফরাসযুক্ত গ্যাসের প্লাম। বৃহস্পতির দ্রুত ঘূর্ণন, প্রতি ১০ ঘন্টায় একবার নিজ অক্ষের উপর ঘুরে শক্তিশালী জেট স্ট্রিম তৈরি করে এবং মেঘগুলিকে দীর্ঘ প্রসারিত উজ্জ্বল অঞ্চলে বিভক্ত করে। তাদের ধীর করার জন্য কোন শক্ত পৃষ্ঠ না থাকায়, বৃহস্পতির দাগ বহু বছর ধরে চলতে পারে। বৃহস্পতি এক ডজনেরও বেশি ঝড়ো বাতাস দ্বারা প্রবাহিত হয়। কিছু নিরক্ষরেখায় ৩৩৫ মাইল প্রতি ঘন্টা (৫৩৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা) পর্যন্ত পৌঁছায়। দ্য গ্রেট রেড স্পট, পৃথিবীর চেয়ে দ্বিগুণ প্রশস্ত একটি ঘূর্ণায়মান মেঘ । অতি সম্প্রতি তিনটি ছোট ডিম্বাকৃতির মেঘ একত্রিত হয়ে লিটল রেড স্পট তৈরি করেছে, যা তার বড় চাচাতো ভাইয়ের আকারের প্রায় অর্ধেক। ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত নাসার জুনো প্রোবের ফলাফলগুলি সেই মেঘের নীচে কী ঘটছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রদান করে। জুনো থেকে পাওয়া ডেটা দেখায় যে বৃহস্পতির ঘূর্ণি ঝড়গুলি উপরে উষ্ণতর ঘন বায়ুমণ্ডলীয় এবং নীচের দিকে ঠান্ডা। অ্যান্টিসাইক্লোন, যা বিপরীত দিকে ঘোরে উপরের দিকে ঠান্ডা কিন্তু নীচে উষ্ণ। অনুসন্ধানগুলি আরও ইঙ্গিত করে যে এই ঝড়গুলি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি লম্বা, কিছু মেঘের শীর্ষের নীচে ৬০ মাইল (১০০ কিলোমিটার) এবং গ্রেট রেড স্পট সহ অন্যান্যগুলি ২০০ মাইল (৩৫০ কিলোমিটার) প্রসারিত। এই আশ্চর্যজনক আবিষ্কারটি দেখায় যে ঘূর্ণিগুলি সেই অঞ্চলগুলিকে ঢেকে রাখে যেখানে জল ঘনীভূত হয় এবং মেঘ তৈরি হয়। গভীরতার নীচে যেখানে সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ করে। গ্রেট রেড স্পটের উচ্চতা এবং আকারের অর্থ হল ঝড়ের মধ্যে বায়ুমণ্ডলীয় ভরের ঘনত্ব সম্ভাব্যভাবে বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র অধ্যয়নকারী যন্ত্র দ্বারা সনাক্ত করা যেতে পারে। বৃহস্পতির সবচেয়ে বিখ্যাত স্থানের উপর দুটি কাছকাছি জুনো ফ্লাইবাই ঝড়ের মাধ্যাকর্ষণ এবং এর গভীরতার অনুসন্ধান করার সুযোগ দিয়েছে। তাদের মাধ্যাকর্ষণ তথ্যের সাহায্যে, জুনো দল গ্রেট রেড স্পটের সীমা মেঘের নীচে প্রায় ৩০০ মাইল (৫০০ কিলোমিটার) গভীরতা পর্যন্ত বিসতৃত। ঘূর্ণিঝড় এবং অ্যান্টিসাইক্লোন ছাড়াও বৃহস্পতি তার স্বতন্ত্র বেল্ট এবং অঞ্চলগুলির জন্য পরিচিত - মেঘের সাদা এবং লালচে ব্যান্ড যা গ্রহের চারপাশে আবৃত থাকে। প্রবল পূর্ব-পশ্চিম বাতাস বিপরীত দিকে চলে যাওয়া ব্যান্ডগুলিকে আলাদা করে। জুনো পূর্বে আবিষ্কার করেছিলেন যে এই বায়ু বা জেট স্ট্রিমগুলি প্রায় ২০০০ মাইল (প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার) গভীরতায় পৌঁছায়। গবেষকরা এখনও জেট স্ট্রিমগুলি কীভাবে তৈরি হয় তার রহস্য সমাধান করার চেষ্টা করছেন। একাধিক পাসের সময় জুনো দ্বারা সংগৃহীত ডেটা একটি সম্ভাব্য সূত্র প্রকাশ করে যে * বায়ুমণ্ডলের অ্যামোনিয়া গ্যাস পর্যবেক্ষণ করা জেট স্ট্রিমগুলির সাথে উল্লেখযোগ্য ভাবে উপরে এবং নীচে ভ্রমণ করে। জুনোর ডেটা আরও দেখায় যে বেল্ট এবং অঞ্চলগুলি বৃহস্পতির জলের মেঘের নীচে প্রায় ৪০ মাইল (৬৫ কিলোমিটার) মধ্য দিয়ে যায়। অগভীর গভীরতায় বৃহস্পতির বেল্টগুলি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির তুলনায় মাইক্রোওয়েভ আলোতে বেশি উজ্জ্বল। কিন্তু গভীর স্তরে, জলের মেঘের নীচে বিপরীত যা আমাদের মহাসাগরের সাথে মিল প্রকাশ করে। জুনো পূর্বে বৃহস্পতির উভয় মেরুতে বিশাল মেরু ঘূর্ণিঝড়ের বহুভুজ বিন্যাস আবিষ্কার করেছিল। আটটি উত্তরে একটি অষ্টভুজাকার প্যাটার্নে এবং পাঁচটি দক্ষিণে একটি পঞ্চভুজ প্যাটার্নে সাজানো। সময়ের সাথে সাথে, মিশন বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেছেন যে এই বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনাগুলি অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক এবং একই স্থানে অবশিষ্ট রয়েছে। জুনোর ডেটা এও নির্দেশ করে যে পৃথিবীর হারিকেনের মতো এই ঘূর্ণিঝড়গুলি মেরুমুখী হতে চায় কিন্তু প্রতিটি মেরুর কেন্দ্রে অবস্থিত ঘূর্ণিঝড়গুলি তাদের পিছনে ঠেলে দেয়।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
জোভিয়ান ম্যাগনেটোস্ফিয়ার হল বৃহস্পতির শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত স্থানের অঞ্চল। এটি সূর্যের দিকে ৬০০,০০০ থেকে ২ মিলিয়ন মাইল (১ থেকে ৩ মিলিয়ন কিলোমিটার) বেলুন (বৃহস্পতির ব্যাসের ৭ থেকে ২১ গুণ) এবং বৃহস্পতির পিছনে ৬০০ মিলিয়ন মাইল (১ বিলিয়ন কিলোমিটার) এরও বেশি বিস্তৃত একটি ট্যাডপোল আকৃতির লেজে পরিণত হয়, যতদূর শনির কক্ষপথ। বৃহস্পতির বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর তুলনায় ১৬ থেকে ৫৪ গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি গ্রহের সাথে ঘোরে এবং বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণাগুলিকে পরিষ্কার করে। গ্রহের কাছাকাছি চৌম্বক ক্ষেত্রটি চার্জযুক্ত কণার ঝাঁক আটকে দেয় এবং তাদের খুব উচ্চ শক্তিতে ত্বরান্বিত করে তীব্র বিকিরণ তৈরি করে যা সবচেয়ে ভিতরের চাঁদগুলিতে উল্কাপাত করে এবং মহাকাশযানের ক্ষতি করতে পারে। বৃহস্পতির চৌম্বক ক্ষেত্রও গ্রহের মেরুতে সৌরজগতের সবচেয়ে দর্শনীয় কিছু অরোরা সৃষ্টি করে।
সংক্ষিপ্ত বর্ননা
নাম -রোমান দেবতাদের রাজা
আবিষ্কার -প্রাচীন সংস্কৃতির পরিচিত
প্ল্যানেট টাইপ-গ্যাস জায়ান্ট
চন্দ্র- হ্যাঁ
রিং -হ্যাঁ
ব্যাস-৮৮,৮৪৬ মাইল (১৪২,৯৮৪ কিলোমিটার)
দিনের দৈর্ঘ্য -৯.৯৩ ঘন্টা
বছরের দৈর্ঘ্য -১১.৮৬ পৃথিবী বছর
সূর্য থেকে দূরত্ব ৫.১ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট (পৃথিবী= ১)
ভলিউম -১,৩২১ (পৃথিবী=১)
ভর -৩১৮ (পৃথিবী=১)
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা* -১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-১১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)
গ্রহ ইউরেনাস
গ্রহ ইউরেনাস ওভারভিউ
ইউরেনাস আমাদের সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাস সহ সূর্য থেকে সপ্তম গ্রহ। ইউরেনাস খুব ঠান্ডা এবং বাতাসযুক্ত। বরফের দৈত্যটি ১৩ টি অস্পষ্ট বলয় এবং ২৭ টি ছোট চাঁদ দ্বারা বেষ্টিত এবং এটি তার কক্ষপথের সমতল থেকে প্রায় ৯০-ডিগ্রি কোণে ঘোরে। এই অনন্য কাত ইউরেনাসকে ঘূর্ণায়মান বলের মতো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে পাশের দিকে ঘুরতে দেখায়। টেলিস্কোপের সাহায্যে পাওয়া প্রথম গ্রহ ইউরেনাস ১৭৮১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল আবিষ্কার করেছিলেন। যদিও তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন এটি একটি ধূমকেতু বা একটি তারকা। দুই বছর পর জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহান এলার্ট বোডের পর্যবেক্ষণের কারণে বস্তুটি একটি নতুন গ্রহ হিসেবে সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছিল।
নামকরণ
উইলিয়াম হার্শেল তার আবিষ্কারের নাম জর্জিয়াম সিডাস রাজা তৃতীয় জর্জের নামে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। পরিবর্তে, গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছিল ইউরেনাস, আকাশের গ্রীক দেবতা, জোহান বোডের পরামর্শ অনুসারে।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
আমরা জানি ইউরেনাসের পরিবেশ জীবনের জন্য উপযোগী নয়। তাপমাত্রা, চাপ এবং উপাদানগুলি যা এই গ্রহটিকে চিহ্নিত করে তা সম্ভবত খুব চরম এবং উদ্বায়ী প্রাণীদের জন্য মানিয়ে নেওয়ার জন্য।
আকার এবং দূরত্ব
১৫,৭৫৯.২ মাইল (২৫,৩৬২ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের সাথে, ইউরেনাস পৃথিবীর চেয়ে ৪ গুণ প্রশস্ত। পৃথিবী যদি একটি নিকেলের আকার হত তবে ইউরেনাস একটি সফটবলের মতো বড় হবে। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ১.৮ বিলিয়ন মাইল (২.৯ বিলিয়ন কিলোমিটার) এবং ইউরেনাস সূর্য থেকে ১৯.৮ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট দূরে অবস্থিত। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। এই দূরত্ব থেকে সূর্যের আলো ইউরেনাসে যেতে লাগে ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
ইউরেনাসে একদিন সময় লাগে প্রায় ১৭ ঘন্টা (ইউরেনাস একবার ঘুরতে বা ঘুরতে যে সময় লাগে)। এবং ইউরেনাস প্রায় ৮৪ পৃথিবী বছরে (৩০,৬৮৭ পৃথিবী দিন) সূর্যের চারপাশে (ইউরেনীয় সময় এক বছর) একটি সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে। ইউরেনাসই একমাত্র গ্রহ যার নিরক্ষরেখা তার কক্ষপথের প্রায় সমকোণে ৯৭.৭৭ ডিগ্রির কাত। সম্ভবত অনেক আগে পৃথিবীর আকারের বস্তুর সাথে সংঘর্ষের ফলাফল । এই অনন্য কাত সৌরজগতের সবচেয়ে চরম ঋতু ঘটায়। প্রতিটি ইউরেনীয় বছরের প্রায় এক চতুর্থাংশের জন্য সূর্য প্রতিটি মেরুতে সরাসরি আলো দেয় এবং গ্রহের বাকি অর্ধেককে ২১ বছরের দীর্ঘ অন্ধকার শীতে নিমজ্জিত করে। ইউরেনাস হল দুটি গ্রহের মধ্যে একটি যা পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘোরে বেশিরভাগ গ্রহ (শুক্র অন্যটি) বিপরীত দিকে ঘোরে।
চাঁদ
ইউরেনাসের ২৭ টি পরিচিত চাঁদ রয়েছে। যদিও অন্যান্য গ্রহের প্রদক্ষিণকারী বেশিরভাগ উপগ্রহের নাম গ্রীক বা রোমান পুরাণ থেকে নেওয়া হয়েছে তবে ইউরেনাসের চাঁদগুলি উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এবং আলেকজান্ডার পোপের কাজের চরিত্রগুলির জন্য নামকরণের ক্ষেত্রে অনন্য। ইউরেনাসের ভিতরের সমস্ত চাঁদ মোটামুটি অর্ধেক জলের বরফ এবং অর্ধেক পাথর বলে মনে হয়। বাইরের চাঁদের গঠন অজানা রয়ে গেছে, তবে তারা সম্ভবত গ্রহাণু বন্দী।
রিং
ইউরেনাসে দুই সেট রিং আছে। নয়টি রিংয়ের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে বেশিরভাগ সরু, গাঢ় ধূসর রিং থাকে। দুটি বাইরের বলয় রয়েছে: ভেতরেরটি সৌরজগতের অন্য কোথাও ধূলিকণার মতো লালচে এবং বাইরের বলয়টি শনির রিংয়ের মতো নীল। গ্রহ থেকে দূরত্ব বাড়ানোর জন্য বলয়কে বলা হয় জেটা, ৬, ৫, ৪, আলফা, বিটা, ইটা, গামা, ডেল্টা, ল্যাম্বডা, এপসিলন, নু এবং মু। কিছু বড় রিং সূক্ষ্ম ধুলোর বেল্ট দ্বারা বেষ্টিত।
গঠন
ইউরেনাস যখন রূপ নেয় তখন সৌরজগতের বাকি অংশগুলি প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল - যখন মাধ্যাকর্ষণ এই বরফের দৈত্যে পরিণত হতে ঘূর্ণায়মান গ্যাস এবং ধূলিকণাকে টেনে নিয়েছিল। তার প্রতিবেশী নেপচুনের মতো, ইউরেনাস সম্ভবত সূর্যের কাছাকাছি গঠিত হয়েছিল এবং প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে বাইরের সৌরজগতে চলে গিয়েছিল এবং এটি সূর্য থেকে সপ্তম গ্রহ।
ইউরেনাস বাইরের সৌরজগতের দুটি বরফ দৈত্যের একটি (অন্যটি নেপচুন)। গ্রহের ভরের বেশিরভাগ (৮০% বা তার বেশি) একটি ছোট পাথুরে কোরের উপরে "বরফযুক্ত" পদার্থ - জল, মিথেন এবং অ্যামোনিয়া - এর একটি গরম ঘন তরল দিয়ে তৈরি। মূলের কাছাকাছি, এটি ৯,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪,৯৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়। ইউরেনাস তার প্রতিবেশী নেপচুনের চেয়ে ব্যাসের দিক থেকে কিছুটা বড়, তবুও ভরে ছোট। এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ঘন গ্রহ, শনি সব থেকে কম ঘন। বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস থেকে ইউরেনাস তার নীল-সবুজ রঙ পায়। সূর্যালোক বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যায় এবং ইউরেনাসের মেঘের শীর্ষে প্রতিফলিত হয়। মিথেন গ্যাস আলোর লাল অংশ শোষণ করে, ফলে নীল-সবুজ রঙ হয়।
পৃষ্ঠতল
বরফের দৈত্য হিসাবে, ইউরেনাসের সত্যিকারের কোন পৃষ্ঠ নেই। গ্রহটি বেশিরভাগই ঘূর্ণায়মান তরল। যদিও কোন মহাকাশযান ইউরেনাসে অবতরণ করার কোন স্থান পাবে না এবং এটি তার বায়ুমণ্ডল দিয়ে উড়তে সক্ষম হবে না। চরম চাপ এবং তাপমাত্রা একটি ধাতব মহাকাশযানকে ধ্বংস করবে।
বায়ুমণ্ডল
ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডল বেশিরভাগ হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম, অল্প পরিমাণে মিথেন এবং জল এবং অ্যামোনিয়ার চিহ্ন রয়েছে। মিথেন ইউরেনাসকে নীল রঙ দেয়। যদিও ভয়েজার ২, ১৯৮৬ সালে তার ফ্লাইবাই চলাকালীন শুধুমাত্র কয়েকটি বিচ্ছিন্ন মেঘ, একটি গ্রেট ডার্ক স্পট এবং একটি ছোট অন্ধকার স্পট দেখেছিল - আরও সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণগুলি প্রকাশ করে যে ইউরেনাস দ্রুত পরিবর্তনশীল উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য সহ বিষুব এর কাছে যাওয়ার সাথে সাথে গতিশীল মেঘ প্রদর্শন করে। ইউরেনাস গ্রহের বায়ুমণ্ডল যার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪৯K (-২২৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কিছু জায়গায় এটি নেপচুনের চেয়েও ঠান্ডা। ইউরেনাসে বাতাসের গতি প্রতি ঘন্টায় ৫৬০ মাইল (ঘন্টা প্রতি ৯০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। নিরক্ষরেখায় বায়ু বিপরীতমুখী হয় এবং গ্রহের ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু মেরুর কাছাকাছি বাতাসগুলি ইউরেনাসের ঘূর্ণনের সাথে প্রবাহিত হয়ে উপরের দিকে চলে যায়।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
ইউরেনাসের একটি অস্বাভাবিক, অনিয়মিত আকারের চুম্বকমণ্ডল রয়েছে। চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি সাধারণত একটি গ্রহের ঘূর্ণনের সাথে সারিবদ্ধভাবে থাকে, তবে ইউরেনাসের চৌম্বক ক্ষেত্রটি টিপ করা । চৌম্বক অক্ষটি গ্রহের ঘূর্ণনের অক্ষ থেকে প্রায় ৬০ ডিগ্রি কাত এবং গ্রহের কেন্দ্র থেকে এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা অফসেট । গ্রহের একমুখী চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে ইউরেনাসের অরোরা মেরুগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় (যেমন তারা পৃথিবী, বৃহস্পতি এবং শনিতে রয়েছে)। সূর্যের বিপরীতে ইউরেনাসের পিছনের ম্যাগনেটোস্ফিয়ার লেজ লক্ষ লক্ষ মাইল পর্যন্ত মহাকাশে প্রসারিত। এর চৌম্বক ক্ষেত্র রেখাগুলি ইউরেনাসের পার্শ্ববর্তী ঘূর্ণনের দ্বারা একটি দীর্ঘ কর্ক স্ক্রু আকারে পেঁচানো।
সংক্ষিপ্ত বর্ননা
দিন ১৭ ঘন্টা ১৪ মিনিট
বছর ৮৪ পৃথিবী বছর
ব্যাসার্ধ ১৫,৭৫৯.২ মাইল ( ২৫,৩৬২ কিলোমিটার)
গ্রহের ধরন আইস জায়ান্ট
চাঁদ ২৭ টি
মঙ্গল গ্রহ
ভূমিকা
মঙ্গল,সূর্য থেকে চতুর্থ গ্রহ এবং একটি ধূলিময়, ঠান্ডা, এবং পৃথিবীর মরুভূমির ন্যায় একটি খুব পাতলা বায়ুমণ্ডলযুক্ত স্থান। এই গতিশীল গ্রহে ঋতু, মেরু বরফের ছিদ্র, বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরি, গিরিখাত এবং আবহাওয়া রয়েছে।
মঙ্গল হল আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে অন্বেষণ করা গ্রহগুলির মধ্যে একটি এবং এটিই একমাত্র গ্রহ যেখানে আমরা ভিনগ্রহের পৃষ্ঠে ঘোরাঘুরি করার জন্য রোভার পাঠিয়েছি। NASA মিশনগুলি প্রচুর প্রমাণ পেয়েছে যে বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহ অনেক বেশি আর্দ্র, উষ্ণ এবং একটি ঘন বায়ুমণ্ডল ছিল।
নামকরণ
প্রাচীন রোমানরা তাদের যুদ্ধের দেবতার জন্য মঙ্গল গ্রহের নামকরণ করেছিল কারণ এর লালচে রঙ রক্তের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অন্যান্য সভ্যতারাও এই বৈশিষ্ট্যের জন্য গ্রহটির নামকরণ করেছিল - উদাহরণস্বরূপ, মিশরীয়রা এটিকে "হার দেশার" বলে অভিহিত করেছিল, যার অর্থ "লাল"। আজও, এটিকে প্রায়শই "লাল গ্রহ" বলা হয় কারণ মঙ্গলগ্রহের ময়লাতে থাকা লোহার খনিজগুলি অক্সিডাইজ করে বা মরিচা ধরে যার ফলে পৃষ্ঠটি লাল দেখায়।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহে বর্তমানে সমৃদ্ধ জীবন্ত জিনিস খুঁজে পাওয়ার আশা করেন না। পরিবর্তে তারা জীবনের লক্ষণগুলি খুঁজছেন যা অনেক আগে থেকেই ছিল যখন মঙ্গল গ্রহ উষ্ণ ছিল এবং জলে আচ্ছাদিত ছিল।
আকার এবং দূরত্ব
২,১০৬ মাইল (৩,৩৯০ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধ সহ, মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর আকারের প্রায় অর্ধেক। পৃথিবী যদি একটি নিকেলের আকার হত তবে মঙ্গল গ্রহটি রাস্পবেরির মতো বড় হবে। ১৪২ মিলিয়ন মাইল (২২৮ মিলিয়ন কিলোমিটার) গড় দূরত্ব থেকে মঙ্গল সূর্য থেকে ১.৫ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট দূরে অবস্থিত।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের দূরত্তের একক (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। এই দূরত্ব থেকে, সূর্য থেকে মঙ্গল গ্রহে যেতে সূর্যালোক সময়লাগে ১৩ মিনিট।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
মঙ্গল গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এবং এটি প্রতি ২৪.৬ ঘন্টায় একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে, যা পৃথিবীর একদিনের (২৩.৯ ঘন্টা) অনুরূপ। মঙ্গলগ্রহের দিনগুলিকে সোলস বলা হয় - "সৌর দিবস" এর সংক্ষিপ্ত। মঙ্গল গ্রহে একটি বছর ৬৬৯.৬ সোল স্থায়ী হয়, যা পৃথিবীর ৬৮৭ দিনের সমান। মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণনের অক্ষ সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে ২৫ ডিগ্রি কাত। এটি পৃথিবীর সাথে আরেকটি মিল, যার অক্ষীয় কাত ২৩.৪ ডিগ্রি। পৃথিবীর মতো, মঙ্গল গ্রহেরও স্বতন্ত্র ঋতু রয়েছে, তবে তা পৃথিবীর ঋতুগুলির চেয়ে বেশি সময় ধরে থাকে কারণ মঙ্গল সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে বেশি সময় নেয় (কারণ এটি আরও দূরে)। যখন পৃথিবীতে ঋতুগুলি সারা বছর ধরে সমানভাবে বিস্তৃত থাকে, ৩ মাস (বা বছরের এক চতুর্থাংশ) স্থায়ী হয়, সেখানে মঙ্গলের ঋতুগুলি সূর্যের চারদিকে মঙ্গলের উপবৃত্তাকার, ডিম আকৃতির কক্ষপথের কারণে দৈর্ঘ্যে পরিবর্তিত হয়। উত্তর গোলার্ধে বসন্ত (দক্ষিণে শরৎ) হল দীর্ঘতম ঋতু ১৯৪ সল। উত্তর গোলার্ধে শরৎ (দক্ষিণে বসন্ত) ১৪২ দিনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। উত্তর শীত/দক্ষিণ গ্রীষ্ম হল ১৫৪ সল এবং উত্তর গ্রীষ্ম/দক্ষিণ শীতকাল হল ১৭৮ সল।
চাঁদ
মঙ্গলের দুটি ছোট চাঁদ আছে ফোবস এবং ডেইমোস, যেগুলি গ্রহাণু বন্দী হতে পারে। এগুলি আলু-আকৃতির কারণ তাদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য খুব কম ভর রয়েছে যাতে সেগুলি গোলাকার হয়। যুদ্ধের গ্রীক দেবতা অ্যারেসের রথ টানা ঘোড়াগুলি থেকে চাঁদগুলি তাদের নাম পেয়েছে। ফোবোস, সবচেয়ে ভিতরের এবং বৃহত্তর চাঁদ। এটির পৃষ্ঠ গভীর খাঁজ সহ প্রচন্ডভাবে গর্তযুক্ত। এটি ধীরে ধীরে মঙ্গল গ্রহের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং প্রায় 50 মিলিয়ন বছর পর মঙ্গলের বুকে বিধ্বস্ত হবে বা ভেঙে পড়বে। ডেইমোস ফোবোসের চেয়ে প্রায় অর্ধেক বড় এবং মঙ্গল গ্রহ থেকে আড়াই গুণ দূরে প্রদক্ষিণ করে। অদ্ভুত আকৃতির ডিমোস আলগা ময়লা দ্বারা আবৃত থাকে যা প্রায়শই এর পৃষ্ঠের গর্তগুলিকে ভরাট করে এবং এটিকে পকমার্ক করা ফোবোসের চেয়ে মসৃণ দেখায়।
রিং
মঙ্গলের কোন রিং নেই।
যাইহোক যখন ৫০ মিলিয়ন বছর পর ফোবস মঙ্গল গ্রহে বিধ্বস্ত হবে বা ভেঙ্গে পড়বে তখন এটি লাল গ্রহের চারপাশে একটি ধূলিময় বলয় তৈরি করতে পারে।
গঠন
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে যখন সৌরজগৎ তার বর্তমান বিন্যাসে বসতি স্থাপন করেছিল, তখন মঙ্গল তৈরি হয়েছিল যখন মহাকর্ষ সূর্য থেকে চতুর্থ গ্রহে পরিণত হতে গ্যাস এবং ধূলিকণাকে টেনে নিয়েছিল। মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর আকারের প্রায় অর্ধেক এবং অন্যান্য স্থলজ গ্রহগুলির মতো এটির একটি কেন্দ্রীয় কোর আছে যার একটি পাথুরে আবরণ এবং একটি শক্ত ভূত্বক রয়েছে।
মঙ্গল গ্রহের কেন্দ্র ৯৩০ থেকে ১,৩০০ মাইল (১,৫০০ থেকে ২,১০০ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের মধ্যে একটি ঘন কোর রয়েছে। এটি লোহা, নিকেল এবং সালফার দিয়ে তৈরি। কেন্দ্রটির চারপাশে ৭৭০ থেকে ১,১৭০ মাইল (১,২৪০ থেকে ১,৮৮০ কিলোমিটার) পুরু একটি পাথুরে আবরণ রয়েছে এবং তার উপরে লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম দিয়ে তৈরি একটি ভূত্বক। এই ভূত্বকটি ৬ থেকে ৩০ মাইল (১০ থেকে ৫০ কিলোমিটার) পর্যন্ত গভীর।
পৃষ্ঠতল
লাল গ্রহ আসলে অনেক রঙের। পৃষ্ঠে আমরা বাদামী, সোনালী এবং ট্যানের মতো রং দেখতে পাই। মঙ্গলকে লালচে দেখা যাওয়ার কারণ হল পাথরে লোহার অক্সিডাইজেশন - বা মরিচা ধরার কারণে। রেগোলিথ (মঙ্গলের "মাটি") এবং মঙ্গলের ধূলিকণা বায়ুমণ্ডলে উঠে যায় এবং দূর থেকে গ্রহটিকে বেশিরভাগ লাল দেখায়। মজার ব্যাপার হল মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক হলেও এর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল পৃথিবীর শুষ্ক ভূমির সমান। এর আগ্নেয়গিরি, ইমপ্যাক্ট ক্রেটার, ক্রাস্টাল মুভমেন্ট এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা যেমন ধূলিঝড় বহু বছর ধরে মঙ্গল গ্রহের ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করেছে, যা সৌরজগতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টপোগ্রাফিক বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে। ভ্যালেস মেরিনারিস নামক একটি বড় ক্যানিয়ন সিস্টেমটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত প্রসারিত করার জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ - ৩,০০০ মাইলেরও বেশি (৪,৮০০ কিলোমিটার)। মঙ্গলের গিরিখাতটি এর প্রশস্ততম অংশে ২০০ মাইল (৩২০ কিলোমিটার) এবং গভীরে ৪.৩ মাইল (৭ কিলোমিটার)। এটি পৃথিবীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আকারের প্রায় ১০ গুণ। অলিম্পাস মনস সৌরজগতের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি এবং মঙ্গলগ্রহ এর আবাসস্থল। এটি পৃথিবীর মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে তিনগুণ লম্বা যার ভিত্তি নিউ মেক্সিকো রাজ্যের আকার। মঙ্গল গ্রহের একটি জলময় অতীত ছিল বলে মনে হয়, প্রাচীন নদী উপত্যকা নেটওয়ার্ক, ডেল্টা এবং লেকবেড, সেইসাথে পৃষ্ঠে পাথর এবং খনিজ পদার্থ যা শুধুমাত্র তরল জলে তৈরি হতে পারে। কিছু বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে যে মঙ্গল প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে বিশাল বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল। আজ মঙ্গলে জল আছে, কিন্তু মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল এতটাই পাতলা যে তরল জল পৃষ্ঠে দীর্ঘকাল ধরে রাখতে পারে না। মঙ্গল গ্রহের মেরু অঞ্চলের ঠিক পৃষ্ঠের নীচে নোনা জল - বরফের আকারে পাওয়া যায় যা ঋতু অনুসারে কিছু পাহাড়ি ও গর্তের দেয়ালের নিচে প্রবাহিত হয়।
বায়ুমণ্ডল
মঙ্গলের একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল রয়েছে যা বেশিরভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং আর্গন গ্যাস দ্বারা গঠিত। আমাদের চোখে, আমরা পৃথিবীতে যে পরিচিত নীল রঙ দেখি তার পরিবর্তে ঝুলন্ত ধূলিকণার কারণে আকাশ ধূসর এবং লাল হয়ে থাকে। মঙ্গলের বিক্ষিপ্ত বায়ুমণ্ডল উল্কাপিণ্ড, গ্রহাণু এবং ধূমকেতুর মতো বস্তুর প্রভাব থেকে খুব বেশি সুরক্ষা দেয় না। মঙ্গলের তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা প্রায় -২২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত কম হতে পারে। আর বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা হওয়ায় সূর্যের তাপ সহজেই এই গ্রহ থেকে বেরিয়ে যায়। আপনি যদি দুপুরে নিরক্ষরেখায় মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে দাঁড়াতেন, তাহলে মনে হবে আপনার পায়ে বসন্ত (৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং আপনার মাথায় শীতকাল (৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস)। মাঝে মাঝে, মঙ্গল গ্রহের বাতাস যথেষ্ট শক্তিশালী ধূলিঝড় তৈরি করে যা গ্রহের বেশিরভাগ অংশকে ঢেকে দেয়। এই ধরনের ঝড়ের পরে, সমস্ত ধুলো স্থির হওয়ার জন্য কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
মঙ্গল গ্রহের আজ কোন বৈশ্বিক চৌম্বক ক্ষেত্র নেই, তবে দক্ষিণ গোলার্ধের মঙ্গল ভূত্বকের এলাকাগুলি অত্যন্ত চুম্বকীয় যা ৪ বিলিয়ন বছর আগে থেকে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের চিহ্ন নির্দেশ করে।
সংক্ষিপ্ত বর্ননা
দিন ২৪.৬ ঘন্টা
বছর ৬৬৯.৬ সল |
৬৮৭ পৃথিবী দিন
ব্যাসার্ধ ২,১০৬ মাইল | ৩,৩৯০ কিলোমিটার
গ্রহের ধরন পার্থিব
চাঁদ ২
শনি গ্রহ
ভূমিকা
শনি হল সূর্য থেকে ষষ্ঠ গ্রহ এবং আমাদের সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ।সহকর্মী গ্যাস দৈত্য বৃহস্পতির মতো,শনি হল একটি বিশাল বল যা বেশিরভাগ হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি।শনিই একমাত্র গ্রহ নয় যেখানে রিং রয়েছে, তবে শনির মতো দর্শনীয় বা জটিল নয়। শনিরও কয়েক ডজন চাঁদ রয়েছে। শনি গ্রহটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং এখনও অনেক রহস্য ধারণ করে।
নামকরণ
পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহটি মানুষের চোখ দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে।শনি প্রাচীন কাল থেকেই পরিচিত। গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে কৃষি ও সম্পদের রোমান দেবতার জন্য, যিনি বৃহস্পতির পিতাও ছিলেন।
জীবনের জন্য সম্ভাব্য
শনির পরিবেশ জীবনের জন্য অনুকূল নয় যেমনটি আমরা জানি।তাপমাত্রা,চাপ এবং অন্যান্য উপাদানগুলি যা এই গ্রহটিকে চিহ্নিত করে তা সম্ভবত খুব চরম এবং উদ্বায়ী প্রাণীদের জন্য মানিয়ে নেওয়ার জন্য।যদিও শনি গ্রহটি জীবিত জিনিসগুলিকে ধরে রাখার জন্য একটি অসম্ভাব্য জায়গা, তবে এর অনেকগুলি চাঁদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য নয়। এনসেলাডাস এবং টাইটানের মতো উপগ্রহ, অভ্যন্তরীণ মহাসাগরের আবাসস্থল, সম্ভবত জীবনকে সমর্থন করতে পারে।
আকার এবং দূরত্ব
৩৬,১৮৩.৭ মাইল (৫৮,২৩২ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধ সহ শনি পৃথিবীর চেয়ে ৯ গুণ প্রশস্ত। যদি পৃথিবী একটি নিকেলের আকার হত তবে শনি গ্রহটি ভলিবলের মতো বড় হবে। গড়ে ৮৮৬ মিলিয়ন মাইল (১.৪ বিলিয়ন কিলোমিটার) দূরত্ব নিয়ে, শনি সূর্য থেকে ৯.৫ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট দূরে অবস্থিত। একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একক (সংক্ষেপে AU) হল সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। এই দূরত্ব থেকে সূর্য থেকে শনি গ্রহে যেতে সূর্যালোক লাগে ৮০ মিনিট।
কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
সৌরজগতে শনি গ্রহের দ্বিতীয় সবচেয়ে ছোট দিন রয়েছে। শনির একদিন সময় লাগে মাত্র ১০.৭ ঘন্টা (শনি গ্রহ একবার ঘুরতে বা ঘুরতে যে সময় নেয়) এবং শনি প্রায় ২৯.৪ পৃথিবী বছরে (১০,৭৫৬ পৃথিবী দিন) সূর্যের চারপাশে একটি সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করে (শনির সময় এক বছর)। সূর্যের চারপাশে এর কক্ষপথের সাপেক্ষে এর অক্ষটি ২৬.৭৩ ডিগ্রী হেলে আ ছে, যা পৃথিবীর ২৩.৫-ডিগ্রী কাতের অনুরূপ। এর মানে হল, পৃথিবীর মতো শনিও ঋতু অনুভব করে।
চাঁদ
শনি হল এক বিস্তৃত কৌতূহলী এবং অনন্য জগতের আবাসস্থল। টাইটানের কুয়াশাচ্ছন্ন পৃষ্ঠ থেকে ক্রেটার-ধাঁধাঁযুক্ত ফোবি পর্যন্ত বিসৃত। শনির প্রতিটি চাঁদ, শনি গ্রহকে ঘিরে গল্পের আরেকটি অংশ। ৮ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত, শনির কক্ষপথে ১৪৬ টি চাঁদ আ বিস্কার হয়েছে এবং ক্রমাগত তাদের আবিষ্কার এবং আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন (AU) দ্বারা আনুষ্ঠানিক নামকরণের নিশ্চিতকরণের জন্য অপেক্ষা করছে।
রিং
শনির বলয়গুলিকে ধূমকেতু, গ্রহাণু বা ছিন্নভিন্ন চাঁদের টুকরো বলে মনে করা হয় যা গ্রহে পৌঁছানোর আগেই ভেঙে যায় এবং শনির শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা ছিন্ন হয়ে যায়। এগুলি কোটি কোটি ছোট ছোট বরফ এবং ধূলিকণার মতো অন্যান্য উপাদানের প্রলেপ দিয়ে তৈরি। রিং কণাগুলি বেশিরভাগই ছোট ধুলোর আকারের বরফের দানা থেকে শুরু করে ঘরের মতো বড় টুকরো। কয়েকটি কণা পাহাড়ের মতো বড়। আপনি যদি শনির মেঘের চূড়া থেকে দেখেন তবে রিংগুলি বেশিরভাগ সাদা দেখাবে এবং মজার বিষয় হল প্রতিটি রিং গ্রহের চারপাশে আলাদা গতিতে প্রদক্ষিণ করে। শনির বলয় ব্যবস্থা গ্রহ থেকে ১৭৫,০০০ মাইল (২৮২,০০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত বিস্তৃত। তবুও মূল বলয়গুলিতে উল্লম্ব উচ্চতা সাধারণত প্রায় ৩০ ফুট (১০ মিটার) হয়। বর্ণানুক্রমিকভাবে তাদের আবিষ্কৃত ক্রমানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। রিংগুলি একে অপরের তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি। ২,৯২০ মাইল (৪,৭০০ কিলোমিটার) প্রস্থের ব্যবধান নিয়ে ক্যাসিনি যা রিং A এবং B কে আলাদা করে। প্রধান রিংগুলি হল A, B, এবং C. D, E, F, এবং G রিংগুলি ক্ষীণ এবং সম্প্রতি আবিষ্কৃত। শনি থেকে শুরু করে এবং বাইরের দিকে অগ্রসর হয়ে সেখানে ডি রিং, সি রিং, বি রিং, ক্যাসিনি ডিভিশন, এ রিং, এফ রিং, জি রিং এবং শেষ পর্যন্ত ই রিং রয়েছে। আরও অনেক দূরে শনির চাঁদ ফোবি-এর কক্ষপথে খুব ক্ষীণ ফোবি বলয় রয়েছে।
গঠন
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে যখন মাধ্যাকর্ষণ ঘূর্ণায়মান গ্যাস এবং ধূলিকণাকে এই গ্যাস দৈত্যে পরিণত করার জন্য টেনে নিয়েছিল তখন সৌরজগতের বাকি অংশগুলি যখন তৈরি হয়েছিল তখন শনি গ্রহের আকার নেয়। প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে শনি বাইরের সৌরজগতে তার বর্তমান অবস্থানে স্থায়ী হয়েছিল, যেখানে এটি সূর্য থেকে অবস্থানের দিক থেকে ষষ্ঠ গ্রহ। বৃহস্পতির মতো, শনি বেশিরভাগই হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি, দুটি একই প্রধান উপাদান যা সূর্যকে তৈরি করে।
বৃহস্পতির মতো, শনিও বেশিরভাগ হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি। শনির কেন্দ্রে লোহা এবং নিকেলের মতো ধাতুগুলির একটি ঘন কেন্দ্র রয়েছে যা পাথুরে উপাদান এবং অন্যান্য যৌগগুলি তীব্র চাপ এবং তাপের দ্বারা দৃঢ় হয়। এটি তরল হাইড্রোজেনের একটি স্তরের ভিতরে তরল ধাতব হাইড্রোজেন দ্বারা আবৃত - বৃহস্পতির কেন্দ্রের মতো কিন্তু যথেষ্ট ছোট। এটা কল্পনা করা কঠিন, কিন্তু শনি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার গড় ঘনত্ব পানির চেয়ে কম। দৈত্যাকার গ্যাস গ্রহটি বাথটাবে ভাসতে পারে যদি এমন একটি বিশাল জিনিস থাকে।
পৃষ্ঠতল
একটি গ্যাস দৈত্য হিসাবে শনি গ্রহের কোন পৃষ্ঠ নেই। গ্রহটি বেশিরভাগ গ্যাস এবং তরল এর গভীরে ঘুরছে। যদিও একটি মহাকাশযানের শনি গ্রহে অবতরণ করার জায়গা থাকবে না, তবে এটি অবাধে উড়তেও সক্ষম হবে না। গ্রহের গভীরে চরম চাপ এবং তাপমাত্রা গ্রহে উড়তে চাওয়া যেকোনো মহাকাশযানকে চূর্ণ করবে, গলে যাবে এবং বাষ্পীভূত করবে।
বায়ুমণ্ডল
শনি গ্রহ মেঘে আবৃত থাকে যা ক্ষীণ ডোরা, জেট স্ট্রিম এবং ঝড়ের মতো দেখা যায়। গ্রহটি হলুদ, বাদামী এবং ধূসর রঙের বিভিন্ন শেডের। নিরক্ষীয় অঞ্চলে উপরের বায়ুমণ্ডলে বাতাসের বেগ ১,৬০০ ফুট প্রতি সেকেন্ডে (৫০০ মিটার প্রতি সেকেন্ডে) পৌঁছায়। বিপরীতে, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেন-ফোর্স বাতাসের বেগ প্রায় ৩৬০ ফুট প্রতি সেকেন্ডে (১১০ মিটার প্রতি সেকেন্ড) বেগে চলে। এবং চাপ - আপনি যখন গভীর পানির নিচে ডুব দেন তখন আপনি একই ধরনের চাপ অনুভব করেন - এটি এত শক্তিশালী যে এটি গ্যাসকে তরলে পরিণত করে। শনির উত্তর মেরুতে একটি আকর্ষণীয় বায়ুমণ্ডলীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে - একটি ছয়-পার্শ্বযুক্ত জেট স্ট্রিম। এই ষড়ভুজ-আকৃতির প্যাটার্নটি প্রথম ভয়েজার মহাকাশযানের ছবিতে লক্ষ্য করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে ক্যাসিনি মহাকাশযান দ্বারা এটি আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। প্রায় ২০,০০০ মাইল (৩০,০০০ কিলোমিটার) জুড়ে বিস্তৃত। ষড়ভুজটি কেন্দ্রে একটি বিশাল, ঘূর্ণনশীল ঝড় সহ ২০০-মাইল-প্রতি-ঘণ্টা বাতাসের (প্রায় ৩২২ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা) একটি তরঙ্গায়িত জেট প্রবাহ রয়েছে। সৌরজগতের অন্য কোথাও এর মতো আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য নেই।
ম্যাগনেটোস্ফিয়ার
শনির চৌম্বক ক্ষেত্র বৃহস্পতির চেয়ে ছোট কিন্তু এখনও পৃথিবীর তুলনায় ৫৭৮ গুণ শক্তিশালী। শনি, বলয় এবং অনেক উপগ্রহ সম্পূর্ণরূপে শনির বিশাল চুম্বকমণ্ডলের মধ্যে অবস্থিত। মহাকাশের সেই অঞ্চল যেখানে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কণার আচরণ সৌর বায়ুর চেয়ে শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। চৌম্বকীয় ক্ষেত্র রেখা বরাবর একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে চার্জযুক্ত কণা সর্পিল হলে অরোরা ঘটে । পৃথিবীতে, এই চার্জযুক্ত কণাগুলি সৌর বায়ু থেকে আসে। ক্যাসিনি আমাদের দেখিয়েছিল যে শনির কিছু অরোরা বৃহস্পতির মতো এবং সৌর বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয় না। পরিবর্তে, এই অরোরা শনির চাঁদ থেকে নির্গত কণা এবং শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের দ্রুত ঘূর্ণন হারের সংমিশ্রণের কারণে ঘটে। কিন্তু এই "নন-সোলার-অরিজিনেটিং" অরোরা এখনও পুরোপুরি বোঝা যায় নি।
সংক্ষিপ্ত বর্ননা
দিন: ১০.৭ ঘন্টা
বছর: ২৯ পৃথিবী বছর
ব্যাসার্ধ: ৩৬,১৮৩.৭ মাইল বা ৫৮,২৩২ কিলোমিটার
গ্রহের ধরন: গ্যাস দৈত্য
চাঁদ: শনির ১৪৭ টি চাঁদ রয়েছে
কুইপার বেল্ট (Kuiper Belt)
কুইপার বেল্ট নেপচুনের কক্ষপথের বাইরেও বিস্তৃত বরফময় দেহগুলির একটি ডোনাট আকৃতির অঞ্চল। এটি প্লুটো এবং অ্যারোকোথের আবাসস্থল যা নাসার নিউ হরাইজনস মহাকাশযান পরিদর্শন করেছে। কুইপার বেল্টে আরও লক্ষ লক্ষ অন্যান্য বরফ জগত থাকতে পারে যা আমাদের সৌরজগতের গঠন থেকে অবশিষ্ট ছিল।
বিজ্ঞানীরা এই পৃথিবীকে কুইপার বেল্ট অবজেক্ট (KBOs), বা ট্রান্স-নেপচুনিয়ান অবজেক্ট (TNOs) বলে। ট্রান্স-নেপচুনিয়ান অবজেক্ট হল আমাদের সৌরজগতের এমন বস্তু যা নেপচুনের বাইরে একটি কক্ষপথ রয়েছে।
গ্রহাণু বেল্টের মতো, কুইপার বেল্ট হল সৌরজগতের প্রাথমিক ইতিহাস থেকে অবশিষ্ট একটি অঞ্চল। গ্রহাণু বেল্টের মতো, এটিও একটি বিশাল আকৃতি পেয়েছে, যদিও এটি একটি পাতলা বেল্টের চেয়ে একটু পুরু ডিস্ক (ডোনাটের) মতো।
কুইপার বেল্টকে উর্ট ক্লাউডের সাথে মিলিয়ে ফেলা উচিত নয়। উর্ট ক্লাউড এবং কুইপার বেল্ট উভয়কেই ধূমকেতুর উৎস বলে মনে করা হয়। কুইপার বেল্ট সত্যিই মহাকাশের একটি সীমান্ত - এটি এমন একটি জায়গা যা আমরা এখন অন্বেষণ করতে শুরু করেছি এবং আমাদের জানাশুনা এখনও বিকশিত হচ্ছে ৷
সূত্রঃ নাসা সোলার সিষ্টেম
কিভাবে সৌরজগত গঠিত হয়?
৫ বিলিয়ন বছর আগে, মহাকাশে কিছু আলোড়ন সৃষ্টি করছিল যার কারনে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের একটি বিশাল মেঘ ভেঙে পড়েছিল,এরপর গ্যাসটি ভরের কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয় এবং একসাথে মিশে যায় যতক্ষণ না এটি একটি নক্ষত্র হিসাবে বিস্ফোরিত হয় যা আমরা এখন সূর্য হিসাবে জানি।
সূর্য যেমন তৈরি হচ্ছিল গ্রহ গুলোও তেমন ছিল। আমাদের নক্ষত্রের জন্মের আগে বড় একটি সুপারনোভা মারা গিয়েছিল যা গ্যাস এবং ধুলোর মেঘ দিয়ে পরিপুর্ন ছিল।এই ধ্বংসাবশেষ ধীরে ধীরে একটি প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক তৈরি করে যা একটি বিশাল সমতল বলয় যাতে শত শত শিলা এবং বরফের গলদ থাকে যা প্ল্যানেটসিমাল নামে পরিচিত।
ছবিঃ একটি প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক দ্বারা বেষ্টিত একটি তরুণ তারা শিল্পীর তুলিতে আকা ৷ আমাদের সৌরজগত তার শৈশবকালে এইরকম দেখাতে ।
গ্রহগুলি সৌরজগতের বিল্ডিং ব্লক ছিল। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর একত্রে মিশে যাওয়ার পরে, এই দেহগুলি গ্রহগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে শুরু করে যেমনটি আমরা আজকে জানি। সূর্যের কাছাকাছি, জলের মতো উদ্বায়ী রাসায়নিকের জন্য তাপমাত্রা খুব বেশি ছিল ।প্রাথমিক প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কে অল্প পরিমাণে পাথুরে কঠিন পদার্থ ছিল, তাই সূর্যের সবচেয়ে কাছের চারটি গ্রহ তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল।
যাইহোক, পৃথিবী থেকে ৭৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে যা এখন গ্রহাণু বেল্টের বাইরের প্রান্ত সেখানে তাপমাত্রা যথেষ্ট ঠান্ডা ছিল এবং গ্যাসগুলি পাথুরে কোরের চারপাশে ঘন বায়ুমণ্ডল তৈরি করে যা পরবর্তিতে গ্যাস জায়ান্ট বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন তৈরি করে। এতে কেবল গ্রহগুলি তৈরি হয়নি বেশ কয়েকটি চাঁদও তৈরি করেছিল। যদিও অনেক চাঁদ তার প্রাক্তন গ্রহ দ্বারা মার্ধাকার্ষনে বন্দী হয়েছিল, তবে কিছু চাদ ছিল যা ঐ গ্রহের জন্য অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক হয়েছিল।
ছবিঃ সৌরজগতের শিল্পীর ছাপ, মঙ্গল এবং বৃহস্পতির কক্ষপথের মধ্যে আঁকা গ্রহাণু বেল্টের সাথে।
শিশু পৃথিবী যখন অন্য একটি তরুণ গ্রহের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন ধ্বংসাবশেষের একটি বিশাল স্তূপ পিছনে ছিল,যা কয়েকশ মিলিয়ন বছর পরে এটি আমাদের গ্রহের একমাত্র উপগ্রহ চাদ তৈরি করতে একত্রিত হয়েছিল।৪ বিলিয়ন বছর আগে গ্রহ এবং চাঁদ গঠিত হয়েছিল,কিন্তু সৌরজগত এখনও তার বর্তমান অবস্থা থেকে খুব একটা আলাদা দেখায় না।
আজকে আমরা যে আটটি গ্রহ সম্পর্কে জানি তার চেয়ে সম্ভবত আরও অনেক গ্রহ ছিল এবং তারা একসাথে অনেক কাছাকাছি থাকত।সময়ের সাথে সাথে বাইরের গ্রহগুলি সূর্য থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে শুরু করে এবং একসময় সৌরজগতের মহাকর্ষীয় শক্তির ভারসাম্যের বাইরে চলে যায়।
ছবিঃ চাঁদের গর্তগুলি মহাবিশ্বের প্রথম দিকে যে সংঘর্ষ হয়েছিল তার প্রমাণ।
ফলাফল হল যে,প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে বেশ কিছু প্রারম্ভিক গ্রহ গভীর মহাকাশে হারিয়ে যায় এবং অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ অন্যান্য গ্রহগুলির উপর পতিত হয়েছিল।ঐ সময়কাল এখনও লেট হেভি বোম্বার মেন্ট নামে পরিচিত, যার দাগ এখনো রেখে গেছে যা আমরা এখনও চাঁদ, মঙ্গল এবং অন্যান্য পাথুরে গ্রহের বুকে দেখতে পাই। পৃথিবীতে এই ধরনের গর্তগুলি আগ্নেয়গিরির ক্রিয়া দ্বারা লুকানো হয়েছে বা বায়ুমণ্ডলের কারনে মুছে গেছে।সেই বোমাবর্ষণ থেকে আমাদের গ্রহে যে উল্লেখযোগ্য অবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে তা হল পিছনে ফেলে আসা উপাদানগুলির অ্যারে।
পৃথিবীর গঠনের সময় সোনা এবং তামার মতো ধাতুগুলি মূল অংশে ডুবে গিয়েছিল, তাই আমরা আজ ভূত্বকের মধ্যে যে আমানত গুলি পাই তা অবশ্যই কোন না কোন গ্রহাণু এবং ধূমকেতু থেকে পৌঁছেছিল।
সম্ভবত আমাদের গ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল জল। প্রারম্ভিক সৌরজগতে পানি অনেক বেশি গরম ছিল এবং শেষের দিকে ভারী উল্কাপাতের সময় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল।
ছবিঃ ৭ এপ্রিল ২০১০ -এ ক্যাসিনি মহাকাশযান দ্বারা তোলা শনির গর্ত-ঢাকা চাঁদ জানুসের একটি চিত্র। ক্রেডিট: NASA/JPL/স্পেস সায়েন্স ইনস্টিটিউট
যখন ধূমকেতুগুলি প্রাথমিক গ্রহগুলির পৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল, তখন জল তাৎক্ষণিকভাবে বাষ্প হয়ে ফুটে ওঠেনি বরং সমুদ্র তৈরি করেছিল।কয়েক মিলিয়ন বছর পরে গ্রহগুলি তাদের কক্ষপথে বসতি স্থাপন করেছিল এবং বৃদ্ধি ও বিবর্তিত হতে শুরু করেছিল। আগ্নেয়গিরি তাদের উপরিভাগকে আকৃতি দেয় যখন গভীর ভিতরে গলিত কোরগুলি ঠান্ডা হতে শুরু করে।
ক্ষুদ্রতর স্থলজ গ্রহের কোরগুলো শক্ত হয় ধাতব কোরগুলির প্রবাহ ছাড়াই, তাই তাদের প্রতিরক্ষামূলক চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি বিবর্ণ হয়ে যায় ফলে তাদের বায়ুমণ্ডলকে সৌর বায়ু থেকে রক্ষা করতে পারেনি।সময়ের সাথে সাথে, প্রতিটি গ্রহের মধ্যে এই ধরনের পার্থক্য অতিরঞ্জিত হয়ে ওঠে, যার ফলে আমরা আজ সৌরজগতে যে গ্রহগুলি দেখতে পাই তার পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায় এবং প্রক্রিয়ার শেষ থেকে অনেক দূরে ধূমকেতু এবং গ্রহাণুগুলি এখনও গ্রহগুলিকে আঘাত করে এবং সূর্য ধীরে ধীরে প্রসারিত এবং উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। আরও কয়েক বিলিয়ন বছরের মধ্যে সৌরজগৎ আবার নিজেকে বদলে ফেলবে।
সূত্রঃ নাসা সোলার সিষ্টেম
সৌরজগতের ওভারভিউ (Solar system overview)
আমাদের সৌরজগত একটি তারা, আটটি গ্রহ, পাঁচটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত বামন গ্রহ, অন্তত ২৯০ টি চাঁদ, ১.৩ মিলিয়নেরও বেশি গ্রহাণু এবং প্রায় ৩,৯০০ টি ধূমকেতু নিয়ে গঠিত ।আমাদের সৌরজগৎ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি বাইরের সর্পিল বাহুতে অবস্থিত যাকে ওরিয়ন আর্ম বা ওরিয়ন স্পুর বলা হয়।
আমাদের সৌরজগৎ গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রায় ৫১৫,০০০ mph (৮২৮,০০০ kph) বেগে প্রদক্ষিণ করে।গ্যালাকটিক কেন্দ্রের চারপাশে একটি কক্ষপথ সম্পূর্ণ করতে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন বছর সময় লাগে ।আমরা একে সৌরজগত বলি কারণ এটি আমাদের নক্ষত্র সূর্য এবং মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা আবদ্ধ (বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন; বামন গ্রহ প্লুটো, সেরেস, মেকমেক, হাউমিয়া এবং এরিস - শত শত চাঁদ সহ এবং লক্ষ লক্ষ গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং উল্কা ) সবকিছু নিয়ে গঠিত ।
আমরা জানি যে আমাদের সৌরজগতের একমাত্র একটি গ্রহ রয়েছে যা জীবনকে সমর্থন করে। এখন পর্যন্ত আমরা শুধুমাত্র পৃথিবীতে জীবন সম্পর্কে জানি, কিন্তু আমরা অন্যান্য বিশ্বের জীবন খুঁজে চলেছি।
সূত্রঃ নাসা সোলার সিষ্টেম
তারকার শ্রেণিবিন্যাস
রাতের আকাশে ঝিকিমিকি তারকারাজির দিকে তাকালে কত বিচিত্র রূপই না চোখে পড়ে!প্রতিটি তারকা ভিন্ন।কিছু বড়, কিছু ছোট,কিছু গরম,কিছু ঠাণ্ডা কিছু নীল বা হলুদ বা লাল।মানুষ তারকারাজি নিয়ে গবেষণা করছে বহুকাল ধরে।
উনবিংশ শতাব্দীতে কয়েকজন জ্যোর্তিবিদ নক্ষত্রের শ্রেনী বিভক্তিতে শৃঙ্খলা আনার চেস্টা করেন এদের মধ্যে পিকারিং ও পগসন এর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য।বর্তমানে হাভার্ডের শ্রেনী বিভাগ সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত।
জ্যোতির্বিজ্ঞানিরা তারকারাজিকে ভালো করে চিনতে আবিষ্কার করেছেন তারকার শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি।পৃথিবী পরিমণ্ডলের রাসায়নিক মৌলসমূহের সহজ পাঠের জন্য আছে পর্যায় সারণি,উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য আছে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী বা পদ্ধতি।তেমনি তারকারাজির শ্রেণিবিন্যাসের জন্য আছে কতগুলো পদ্ধতি।তারকারাজির এই শ্রেণিবিন্যাস সহজেই একটি তারকার বৈশিষ্ট্য বুঝতে সাহায্য করে।আমরা আজকে জানবো সে সম্পর্কে।
এখানে পাঁচটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তার আগে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক তারা বা তারকা কাকে বলে ?
তারকা নিজস্ব আলো তৈরিতে সক্ষম এবং প্লাজমা পদার্থে গড়া এই বস্তুদের আকৃতি মহাকর্ষের কল্যাণে উপগোলকের (spheroid) মতো।আমাদের সবচেয়ে নিকটের তারকা সূর্য। তারপরে সবচেয়ে নিকটবর্তী হলো প্রক্সিমা সেন্টোরি।
পদ্ধতি-০১: তাপমাত্রা
চিত্র-১: তারার রং দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস
প্রথমত, শুধুমাত্র রং দেখেই তারকার শ্রেণিবিন্যাস করা সম্ভব।তাপমাত্রা নির্ধারণে তারকার রং নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে দশ রঙের তারকা আমাদের চোখে পড়ে।প্রতিটি রঙের সাথে যুক্ত থাকে তাপমাত্রার পরিসীমা।
O শ্রেণির তারকার বর্ণ নীল বা অতিবেগুনী।
B শ্রেণির তারকার বর্ণ নীল সাদা,
A শ্রেণির তারকার বর্ণ সাদা,
F শ্রেণির তারকার বর্ণ হলুদ সাদা,
G শ্রেণির তারকার বর্ণ হলুদ,
K শ্রেণির তারকার বর্ণ কমলা
এবং M শ্রেণির তারকার বর্ণ লাল।
অন্যান্য তিনটি শ্রেণি অবলোহিত।
L শ্রেণির তারকার বর্ণ দৃশ্যমান আলোতে খুব গাঢ় লাল দেখায়।এসব তারকা ক্ষার ধাতু এবং ধাতুর হাইড্রাইডের বর্ণালি দেখায়।
T শ্রেণির তারকা L শ্রেণির তুলনায় শীতল।
Y শ্রেণির তারকা সবচেয়ে শীতল। এরা বাদামি বামন তারকা এবং L, T থেকে আলাদা।
উদাহরণস্বরূপ, রাতের আকাশে তাকালেই সহজে চোখে পড়ে অরায়ন তারামণ্ডলীর বেটেলজিউস তারকাটি।এটি M শ্রেণির তারকা। কারণ বর্ণ লাল।
চিত্র-২: বর্ণ ও সংখ্যা দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস
দ্বিতীয়ত, বর্ণ ও সংখ্যা দিয়ে ২ নং চিত্রে একদিকে O থেকে Y পর্যন্ত তারকার রঙ অন্যদিকে ০-৯ পর্যন্ত প্রতিটি রঙের মধ্যে ১০ টি তাপমাত্রার ব্যান্ড দেখানো হয়েছে। O থেকে Y পর্যন্ত এবং ০-৯ পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যায়ক্রমে কমে যায়।নির্দিষ্ট বর্ণের পরে নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা রেখে সহজে তাপমাত্রা হিসেব করা যায়। 0 হচ্ছে সবচেয়ে গরম এবং ৯ সবচেয়ে শীতল।
উদাহরণস্বরূপ, A0, A5 এর চেয়ে বেশি গরম, যা A9 এর চেয়ে গরম,যা F0 এর তুলনায় গরম। উপরে আলোচিত বেটেলজিউস M1 শ্রেণীর একটি তারকা।
পদ্ধতি-০২: আকার
চিত্র ৩: তারকার আকার থেকে শ্রেণিবিন্যাস
তারকার আকার নির্দেশক একটি রোমান সংখ্যা তাপমাত্রার পরে যোগ করে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।
0 বা Ia+ একটি হাইপারজায়ান্ট (hypergiant) তারকা নির্দেশক।
Ia, Iab এবং Ib সুপারজায়ান্ট তারকার (যথাক্রমে উজ্জ্বল, মাঝারি, অনুজ্জ্বল) প্রতিনিধিত্ব করে।
II উজ্জ্বল দৈত্য,
III দৈত্য,
IV উপ-দৈত্য,
V প্রধান ক্রমের নক্ষত্র (এটি একটি তারকার জীবনের অংশ যেখানে তারকাটির সর্বাধিক সময় ব্যয় হয়)
এবং VI উপ-বামন।
D একটি একটি সাদা বামন তারকা নির্দেশক।
উদাহরণ: DA7 (সাদা বামন), F5Ia + (হলুদ হাইপারজায়ান্ট), G2V (প্রধান পরম্পরার হলুদ তারকা)। আমাদের সূর্য G2V এবং বেটেলজিউস M1la বা উজ্জ্বল সুপারজায়ান্ট।
পদ্ধতি-০৩: তারকার বর্ণালি
চিত্র ৪: বর্ণালি দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস
১. তারকার আলোকে প্রিজমে ব্যবহার করে আলাদা করা যায়।প্রিজমের ভেতর দিয়ে টর্চ লাইট অতিক্রম করালে কতগুলো বর্ণের একটি পরিসীমা পাওয়া যাবে,যা বর্ণালি নামে পরিচিত।
তারকার আলো এমন বর্ণালি তৈরি করে।প্রত্যেকটি তারকার বর্ণালি ভিন্ন ভিন্ন।প্রতিটি তারকার বর্ণালির মধ্যে অন্ধকার লাইন থাকে, যা শোষণ লাইন নামে পরিচিত।এই শোষণ লাইন থেকে তারকার রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
২. তারকার বর্ণালিটি একটি ডেটাবেজের সাথে তুলনা করা হয়। একটি ভাল জ্যোতির্বিজ্ঞান ডেটাবেজ প্রতিটি তারকার টাইপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাধারণ বর্ণালি দেবে।সেই বর্ণালি ডেটাবেজ দেখে সহজেই তারকার শ্রেণিবিভাগ করা যায়।
পদ্ধতি-০৪: ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয়
চিত্র ৫: ধাতুর উপস্থিতির সাহায্যে শ্রেণিবিন্যাস
১. তারকায় ধাতুর (হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছাড়া অন্য উপাদান) অনুপাত নির্ধারণ
কোনো তারকার মধ্যে ১% এরও বেশি ধাতু থাকলে তাকে ধাতু সমৃদ্ধ তারকা বলা হয়।এসব তারকাকে পপুলেশন-১ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।
আবার কোনো তারকার মধ্যে ১% ধাতু থাকলে তাকে ধাতু-দরিদ্র তারকা বলা হয়।এসব তারকাকে পপুলেশন-২ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।মহাবিশ্বের আদিকালে পপুলেশন-২ জাতের তারকারাজি গঠিত হয়েছিলো, কারণ তখন ধাতুর পরিমাণ কম ছিলো।
২. কিছু তারকা তাত্ত্বিকভাবে ধাতুহীন, কিন্তু এদের খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।এদেরকে পপুলেশন-৩ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এই তারকারাজি বিগ ব্যাংয়ের পরেই সৃষ্টি হয় বলে মনে করা হয়।যখন একমাত্র উপাদান হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছিল। অন্য কোনো ধাতুর উপস্থিতি ছিল না।
পদ্ধতি-০৫: উজ্জ্বলতার পরিবর্তন
উজ্জলতা অনুসারে নক্ষত্র গুলিকে বিভিন্ন শ্রেনীতে ভাগ করা হয়।অতি উজ্জল নক্ষত্র কে প্রথম শ্রেনীর নক্ষত্র বলা হয়।আর মাঝামাঝি উজ্জলতার নক্ষত্র গুলিকে দ্বিতীয়, তৃতীয়,ইত্যাদি শ্রেনীতে শ্রেনীবদ্ধ করা হয়।
নক্ষত্রের শ্রেনী ও উজ্জলতা সামন্তরিক ধারা অনুসারে গঠিত না হয়ে সমানুপাতিক ধারা অনুসারে গঠিত হয়।কাজেই দেখা যায় যে প্রত্যেক পর্যবেক্ষক এর শ্রেনী বিভাগ অনুযায়ী প্রত্যেকের অনুপাতই ২.৫ এর নিকটবর্তী।
তখন পগসন প্রস্তাব করেন এই অনুপাত ২.৫১২ নেয়া হোক, তাহলে প্রথম (১ম) শ্রেনীর নক্ষত্র ষষ্ঠ (৬) শ্রেনীর নক্ষত্র অপেক্ষা (২.৫১২) ৬ = ১০০ গুন বেশী উজ্জল হবে।
বর্তমানে এই অনুসারেই নক্ষত্রের শ্রেনী বিভাগ করা হয়।একটি নক্ষত্র অন্যটির চেয়ে ১ম শ্রেনীর বেশী উজ্জল বলতে আমরা বুঝি প্রথমটি দ্বিতীয়টি অপেক্ষা ২.৫১২ গুন বেশী উজ্জল।এর ফলে পূর্নসংখ্যা দ্বারা শ্রেনী সংখ্যা প্রকাশ করা যায় না দশমিকে প্রকাশ করতে হয়।
১. তারকার উজ্জ্বলতা পরিবর্তনশীল কি না নির্ধারণ করা।সব না হলেও কিছু কিছু তারকা এই ধর্ম প্রদর্শন করে।এই উজ্জ্বলতার পরিবর্তন নানা কারণে হতে পারে।সেটা ভিন্ন আলোচনা।
২. কোনো তারকা বাইনারি তারকা কি না তা নির্ধারণ করা।দুটি তারকা একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরলে তারা বাইনারি বা জোড়া তারা।
রাতের আকাশে সর্বাধিক উজ্জ্বল তারকা সিরিয়াস বা লুব্ধক। সিরিয়াস ও সিগনাস X-1 এই তারকা দুটি বাইনারি তারকা। আমরা খালি চোখে সিগনাস X-1 দেখতে পাই না। কারণ এই তারকাটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়ে গেছে।
যুক্ত নক্ষত্র: যুক্ত নক্ষত্র এদের ভিতর অধিকাংশই দুটি নক্ষত্র এর সমন্বয়ে গঠিত,এদেরকে বাইনারী স্টার বলে।
👉 যুগল নক্ষত্র।
এদের মধ্যে কিছু আছে তিন চারটির অধিক নক্ষত্র যুক্ত এদেরকে বলে মাল্টিপল বাইনারি। এই যুক্ত নক্ষত্র কোন কোনটি একই রকম দেখতে,কিছু আবার ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের।
যেমন নক্ষত্র দুটির আয়তন, ভিতরের দুরত্ব, অবস্হান, কোন,পরিক্রমন কাল এমনকি রং পর্যন্ত ভিন্ন হয়।
কিছু কিছু জোড়া নক্ষত্র আছে যারা একে অন্যকে আবর্তন করতে সময় নেয় মাত্র কয়েক ঘন্টা।
এই রকমের কিছু নক্ষত্র দুরবীনের সাহায্যে বিভক্ত করা যায়। আবার কিছু বিভক্ত করতে বর্নালী বিশ্লেষনের প্রয়োজন হয়। এদের গতিবেগ থেকে কক্ষপথ নির্নয় করা যায়। কিছু নক্ষত্রকে খালি চোখেই বিভক্ত দেখা যায়।
👉 এই পরিকল্পিত সেক্সটুপল স্টার সিস্টেম TYC 7037-89-1 এর কনফিগারেশন দেখায়। অভ্যন্তরীণ চতুর্ভুজ দুটি বাইনারি, A এবং C দ্বারা গঠিত, যা প্রতি চার বছর বা তার পরে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে। একটি বাইরের বাইনারি, B, প্রায় প্রতি 2,000 বছরে চতুর্গুণকে প্রদক্ষিণ করে। তিনটি জোড়াই ইক্লিপসিং বাইনারি।
জোড়া নক্ষত্র ব্যাতিত অনান্য যুক্ত নক্ষত্র বিভিন্ন প্রকার জোড়া নক্ষত্রের সমাবেশে গঠিত হতে পারে।
হয়তো এদের কোন অংশ দৃশ্যযুক্ত ও অনান্য অংশ প্রকৃত যুক্ত। আবার সমস্ত অংশই দৃশ্যযুক্ত বা প্রকৃতযুক্ত হতে পারে।
কোন জোড়া নক্ষত্রের এর একটি হয়তো বর্নালীযুক্ত হতে পারে,এ ক্ষেত্রে ঐ নক্ষত্রটি তিনটি নক্ষত্রের সমম্বয়ে গঠিত। আবার কোনটার দুটিই বর্নালী যুক্ত এক্ষেত্রে ঐ নক্ষত্রটি চারটি নক্ষত্রের সমম্বয়ে গঠিত।
আকাশে যত নক্ষত্র আছে তার বেশীর ভাগই জোড়া নক্ষত্র।জ্যের্তিবিদদের কাছে এই নক্ষত্রদের গুরত্ব অনেক। এই রকম কিছু জোড়া নক্ষত্র হলো লুদ্ধক, (Sirius), বিষ্মু (Castor),সুনীতি ইত্যাদি।
সূত্র
উইকিহাউ ও উইকিপিডিয়া।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ কী?
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা একটি ছায়াপথ । আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র সূর্য, এই ছায়াপথের অংশ। অর্থাৎ আমরা এই ছায়াপথে বাস করি। সূর্য এবং তার সৌরজগতের অবস্থান এই ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৭০০০ আলোকবর্ষ দূরে। আকাশগঙ্গা ছায়াপথ কালপুরুষ বাহুতে অবস্থিত । এটি একটি দন্ডযুক্ত সর্পিলাকার ছায়াপথ, যা স্থানীয় ছায়াপথ সমষ্টির একটি সদস্য। আকাশগঙ্গার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক উপগ্রহ ছায়াপথ এবং নিকটস্থ ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডাও এই সমষ্টির সদস্য। স্থানীয় সমষ্টি আবার কন্যা মহাছায়াপথ স্তবকের অংশ।কন্যা ছায়াপথ স্তবক আবার ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবকের মধ্যস্থ অনেকগুলি মহাছায়াপথ স্তবকের একটি। আকাশগঙ্গার কেন্দ্র রেডিও তরঙ্গের একটি প্রবল উৎস এবং একটি অতি ভার বিশিষ্ট কৃষ্ণগহ্বর, যার নাম ধনু এ*।
রাতের মেঘমুক্ত আকাশে তাকালে সাদা মেঘের মত একটা অস্পষ্ট ঝাপসা দাগ দেখা যায় যা উত্তর থেকে দক্ষিন দিকে চলে গিয়েছে। এর নাম ছায়াপথ। এর ইংরেজি নাম Milky-way Galaxy এবং বাংলায় আকাশগঙ্গা ছায়াপথ বলা হয়। আমাদের সূর্য-গ্রহ-উপগ্রহ এই ছায়াপথের ভেতর অবস্থান করছে। কিন্তু আমাদের অবস্থান এবং দৃষ্টিশক্তির চেয়ে বিশাল হওয়ায় সম্পূর্ণ ছায়াপথটি আমরা দেখতে পাইনা।
খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ থেকে ৩২২ যখন অ্যারিস্টটল তার Meteorologica-তে আনাক্সাগোরাস (Anaxagoras) আর ডেমোক্রিটাস (Democritus) নামে দুটি গ্রিক ফিলোসফার সম্পর্কে বলেন।তিনিই সর্বপ্রথম আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি গ্যালাক্সির খোঁজ করেন।এই দুই গ্রিক ফিলোসফার অনুসারে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দূরে অবস্থিত অসংখ্য তারার এক সমষ্টি । কিন্তু অ্যারিস্টটলের এই দাবির অনেক পরে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও গ্যালিলি গ্যালাক্সি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে সক্ষম হন।তিনি নিজের টেলিস্কোপ এর সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান করেন।তিনি বলেন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি একটি Sparial Dish বা থালার মতো দেখতে যেটি লক্ষ্য কোটি একক নক্ষত্র নিয়ে গঠিত।মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মধ্যে যে নক্ষত্রটি সবথেকে পুরানো অনুমান করা হয় তার বয়স ১৩.৭ গিগা ইয়ার মানে কিছু এই রকম ১৩৭০০০০০০০০ কোটি।অনুমান করা হয় এই Galaxy Big Bang -এর দ্বারা গঠিত হয়েছিল।আর আমাদের সূর্য এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ছোট্ট একটি নক্ষত্র যাকে পরিক্রমণ করছে আমাদের পৃথিবী।
১৯২০ সাল পর্যন্ত Astronomers-রা মনে করতেন যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি পুরো ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একটি গ্যালাক্সি যেখানে সমস্ত নক্ষত্র অবস্থান করছে।কিন্তু ১৯২০-র পর এডুইন হাবল (Edwin Hubble) 2.5 m (100 in) Hooker Telescope-এর সাহায্য নিয়ে বলেন যে এই পুরো ব্রহ্মাণ্ডে একটি গ্যালাক্সি নয় বরং লক্ষ-কোটি গ্যালাক্সির অস্তিত্ব আছে।আর এইসব গ্যালাক্সির মধ্যেই একটি হল আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো?
আমাদের সৌরমন্ডল এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির গ্যালাক্টিক সেন্টার থেকে ২৬০০০ লাইট ইয়ার দূরে অবস্থিত আর গ্যালাক্টিক সেন্টারের সাপেক্ষে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে প্রতি ঘন্টায় ৫ লাখ ১৪ হাজার মাইল স্পীডে ঘুরতে থাকে ।এত দ্রুত স্পিডে পরিক্রমণ করার শর্তেও আমাদের সৌরমন্ডল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে একবার ঘুরে আসতে ২৩০ মিলিয়ন বছর সময় নিয়ে নেয় ।
সংস্কৃততে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে আকাশগঙ্গা নাম দেওয়া হয়েছে যাকে আমরা ইংরেজিতে Ganges of The Heaven নামও জেনে থাকি ।
আমরা রাতের আকাশে খালি চোখে যত নক্ষত্র দেখতে পাই তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নক্ষত্রই আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্তর্গত।যার মাত্র ০.০০০০০২৫ শতাংশই আমরা দেখতে পাই।এইসব বড় বড় নক্ষত্রের সাথে গ্যাস, Dust এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন পদার্থ মিলেমিশে একটি গ্রাভিটেশান পুলের দ্বারা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছে।পুরো ব্রহ্মাণ্ডে কয়েক লক্ষ কোটি গ্যালাক্সি অস্তিত্ব আছে যার মধ্যে মিল্কিওয়ে একটি গ্যালাক্সি।
এই বিশাল গ্যালাক্সিতে যে নক্ষত্রগুলি পরিক্রমণ করছে তারা যদি এই গ্যালাক্সির বাইরে যেতে চায় তাহলে গ্যালাক্সিতে আগে থেকে ঘুরতে থাকা অব্জেক্ট গুলি যেগুলি প্রায় ৬ লক্ষ মাইল P/h গতিতে ঘুরছে তার থেকেও ১০ লক্ষ P/h গতিতে বেশি ঘুরতে হবে।বৈজ্ঞানিকরা আজ পর্যন্ত প্রায় ১৮ টি এমন নীল নক্ষত্রকে চিহ্নিত করেছেন যারা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে চলে গেছে কিন্তু বৈজ্ঞানিকেরা এটা জানতে পারিনি যে এইসব নক্ষত্রগুলি এত শক্তি কোথা থেকে এবং কিভাবে পেয়েছে।মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি নিজে ১৬৮ মাইল পার সেকেন্ডের গতিতে ঘুরছে।এটা থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এখন আপনি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন মানে আমাদের পৃথিবী এক ঘণ্টা পরে সেই জায়গা থেকে ৬ লক্ষ মাইল দূরে চলে যাবেন।
বৈজ্ঞানিকেরা মিল্কিওয়ে আর অ্যান্ড্রোমেডার মত ৫০ টি আরো এইরকম গ্যালাক্সিকে লোকাল গ্রুপের অংশ মনে করেন।এইসব গ্যালাক্সি একটি সাময়িক মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে একসাথে টিকে আছে।আমাদের সৌরমন্ডল সম্পূর্ণ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে পরিক্রমণ করছে প্রতি ঘন্টা প্রায় ৫ লক্ষ ১৪ হাজার মাইলস স্পিডে ।এই স্পিডে যদি কোন অব্জেক্ট পৃথিবীতে একবার প্রদক্ষিণ করে তাহলে ওই অব্জেক্টের পৃথিবীরকে একবার ঘুরে আসতে মাত্র ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড সময় লাগবে ।আর এই স্পিডেই আমাদের সৌরমন্ডল পুরো গ্যালাক্সিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর লাগিয়ে দেয়।আর যখন আমাদের সৌরমণ্ডল একবার এই গ্যালাক্সিকে পরিক্রমণ করে তখন তাকে বলা হয় One Galactic Year।আমাদের সৌরমণ্ডল তার জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২০ বার মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে পরিক্রমণ করতে পেরেছে ।
বৈজ্ঞানিকদের মত অনুসারে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একদম কেন্দ্রে একটি শক্তিশালী মধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করছে যাকে ব্ল্যাকহোল বলা হয়ে থাকে।এই ব্ল্যাক হোল কে বৈজ্ঞানিকেরা Sagittarius A* নাম দিয়েছেন। বৈজ্ঞানিকেরা অনুমান করছেন যে আগামী ৪ বিলিয়ান বছরের মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এবং প্রতিবেশী গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডার মধ্যে একটি ভয়ানক ধাক্কা লাগবে।যেটা প্রায় ৫.৫ বিলিয়ান বছর পর্যন্ত চলতে পারে।মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া তথ্যগুলি খুবই সামান্য বলে মনে করা হয় কারণ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে এখনো অনেক বাকি আছে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি পৃথিবী হতে যেমন দেখায়
পৃথিবী আকাশগঙ্গা ছায়াপথের একটি অংশে অবস্থিত। এই ছায়াপথটি রাতের বেলা পরিষ্কার আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিস্তৃত হালকা সাদা মেঘের মত দেখায়। খুব হালকা দেখায় বলে, শহর থেকে বা খুব বেশি উজ্জ্বল আলো আছে এমন স্থান থেকে আকাশগঙ্গা দেখা যায় না।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ভর এবং আকৃতি
আকাশগঙ্গার ব্যাস আনুমানিকভাবে ১,০০,০০০ আলোকবর্ষ বা ৯×১০১৭ কিলোমিটার (৩০ কিলোপারসেক) এবং এর পুরুত্ব প্রায় ১,০০০ আলোকবর্ষ (০.৩ কিলোপারসেক)।ধারণা করা হয় এই ছায়াপথে কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ বিলিয়ন পর্যন্ত নক্ষত্র রয়েছে।এটি স্থানীয় ছায়াপথ সমষ্টির মধ্যে ভরের সাপক্ষে দ্বিতীয়।সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আগের ধারণা থেকে আকাশগঙ্গার ভর অনেক বেশি, এর ভর আমাদের নিকটবর্তী সবচেয়ে বড় ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা এর কাছাকাছি।আগে ধারণা করা হত এর ঘূর্ণন গতি প্রায় ২২০ কিমি/সেকেন্ড, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী তা প্রায় ২৫৪ কিমি/সেকেন্ড। ২০১৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গার সর্বমোট ভর হিসাব করেছেন প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন সৌর ভর, যা ১,২৯,০০০ আলোকবর্ষের ব্যাসার্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ।এই মান আগের ধারণার প্রায় দ্বিগুণ।আকাশগঙ্গার সকল তারার সর্বমোট আনুমানিক ভর ৪.৬×১০১০ সৌরভর।এছাড়াও রয়েছে আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস,যা ভরের দিক দিয়ে ৯০% হাইড্রোজেন এবং ১০% হিলিয়াম।মোট হাইড্রোজেনের দুই-তৃতীয়াংশ পারমাণাবিক এবং এক-তৃতীয়াংশ আণবিক।আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাসের ভরের ১% আন্তঃনাক্ষত্রিক ধুলিকণার কারণে হয়েছে। আকাশগঙ্গার ভরের ৯০% তমোপদার্থের কারণে হয়েছে।তমোপদার্থ এক পদার্থের এক অজানা ও অদৃশ্য রূপ যা সাধারণ পদার্থের সঙ্গে শুধুমাত্র মহাকর্ষের মাধ্যমেই আন্তক্রিয়া করে থাকে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বয়স
আকাশগঙ্গার বয়স নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ।এই ছায়াপথের সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্র হল HE 1523-0901, যার বয়স প্রায় ১৩.২ বিলিয়ন বছর, প্রায় মহাবিশ্বের বয়সের সমান।ধারণা করা হয়, আকাশগঙ্গার সুচনা হয়েছে প্রায় ৬.৫ থেকে ১০.১ বিলিয়ন বছর আগে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির গঠন
আকাশগঙ্গার কেন্দ্র একটি দণ্ডাকার অংশ যা গ্যাস,ধুলি এবং তারা দ্বারা গঠিত একটি চাকতির ন্যায় অংশের দ্বারা বেষ্টিত।আকাশগঙ্গার বিভিন্ন স্থানে ভরের বণ্টন হাবল শ্রেণিবিন্যাসের Sbc শ্রেণীর সঙ্গে তুলনীয়। শিথিলভাবে বেষ্টিত সর্পিলাকার বাহুবিশিষ্ট সর্পিল ছায়াপথেরা এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথম আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ দণ্ডাকার গঠনের কথা বলেন ১৯৬০-এর দশকে এবং পরবর্তীকালে ২০০৫-এ স্পিৎজার মহাকাশ দূরবীক্ষণের পর্যবেক্ষণ তাঁদের এই ধারণাকে সমর্থন করে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থ অঞ্চল
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ অঞ্চলের অন্তর্বর্তী অংশ তুলনামূলকভাবে অধিক ঘন এবং এই অংশে মূলত প্রাচীন তারা রয়েছে।কেন্দ্র থেকে প্রায় কয়েক কিলোপারসেক (প্রায় ১০,০০০ আলোকবর্ষ) ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত এই প্রায় গোলাকার অংশকে স্ফীতাংশ বলা হয়ে থাকে।বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে আকাশগঙ্গার কেন্দ্র প্রকৃতপক্ষে পূর্বে দুই ছায়াপথের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে সৃষ্টি হওয়া প্রকৃত স্ফীতাংশ নয়।বরং এর কেন্দ্রস্থ দন্ডাকার গঠন একটি ছদ্ম-স্ফীতাংশ তৈরী করেছে ।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ অঞ্চল রেডিও তরঙ্গের একটি প্রবল উৎস, যাকে বিজ্ঞানীরা ধনু এ* নামে চিহ্নিত করেছেন।এই কেন্দ্রস্থ অঞ্চলের নিকটস্থ পদার্থের গতি বিবেচনা করে দেখা গিয়েছে যে আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে একটি অত্যধিক ভারবিশিষ্ট বস্তু রয়েছে।ভরের এরূপ বণ্টনের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব যদি ধরে নেওয়া হয় যে এই বস্তুটি একটি অতিভারবিশিষ্ট কৃষ্ণগহ্বর।এটির প্রস্তাবিত ভর সূর্যের ভরের ৪.১ থেকে ৪.৫ মিলিয়ন গুণ ।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ দণ্ডাকার অঞ্চলের প্রকৃতি বিতর্কের মধ্যে রয়েছে, যদিও এই অংশের অনুমেয় অর্ধ-দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ kpc এবং পৃথিবী থেকে ছায়াপথের কেন্দ্রের দিকে তাকালে এটি দৃষ্টিপথের সঙ্গে ১০-৫০ কোণ করে রয়েছে।এই দণ্ডাকার অঞ্চলটিকে ঘিরে একটি বলয়াকার গঠন রয়েছে যা "৫ kpc বলয়" নামে পরিচিত।এই বলয়ের মধ্যে ছায়াপথের অধিকাংশ আণবিক হাইড্রোজেন রয়েছে এবং আকাশগঙ্গার অধিকতর তারা এই অঞ্চলেই উৎপন্ন হয়ে থাকে।অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথ থেকে দেখলে এই অঞ্চলটিকে উজ্জ্বলতম দেখাবে।
২০১০-এ ফার্মি,গামা-রশ্মি মহাকাশ দূরবীক্ষণের থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে উত্তর ও দক্ষিণে দুটি বৃহদাকার উচ্চ শক্তি বিকিরণের বুদবুদ ন্যায় গঠন লক্ষ করা গিয়েছে।এগুলির প্রত্যেকের ব্যাস প্রায় ৭.৭ কিলোপারসেক।দক্ষিণ গোলার্ধে রাত্রির আকাশে এগুলি সারস তারামণ্ডলী থেকে কন্যা তারামণ্ডলী পর্যন্ত বিস্তৃত।পরবর্তীকালে পার্কেস দূরবীক্ষণের মাধ্যমে এই গঠনগুলিতে সমাবর্তিত বিকিরণ দেখা গিয়েছে।তারার জন্মের কারণে উৎপন্ন চৌম্বকীয় বহিঃপ্রবাহ হিসেবে এগুলিকে ব্যাখ্যা করা হয় ।
তথ্যসূত্র:
https://en.wikipedia.org/wiki/Gaia_(spacecraft)
https://www.esa.int/Our_Activities/Space_Science/Gaia
নীহারিকা
নীহারিকা কি?
রাতের আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় অসংখ্য তারার সমাহার। এদের মধ্যে বেশির ভাগই তারা বা নক্ষত্র। তবে কিছু জায়গায় রয়েছে ঘনীভূত মহাজাগতিক মেঘ। মহাকাশের মেঘের এই চমকপ্রদ রহস্যের নামই হলো নীহারিকা বা নেবুলা (Nebula)। যাতে তারা এবং সৌরজগৎ গঠিত হওয়ার উপাদানগুলি থাকে।
‘নেবুলা‘ একটি ল্যাটিন শব্দ এবং এর আভিধানিক অর্থ ‘কুয়াশা বা মেঘ‘, আর বাংলায় একে বলা হয় ‘নীহারিকা’। নীহারিকা বা নেবুলা হলো ধুলা, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও আয়নিত গ্যাসের আন্তঃমহাকাশীয় মেঘ। আসলে যেকোনো মহাকাশীয় বস্তুর ছড়িয়ে যাওয়া অবস্থাকেই নীহারিকা বলা যায়। বস্তু বলতে তা একটি নক্ষত্র, এমনকি একটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিও হতে পারে। আর এই নীহারিকা হলো নক্ষত্রের জন্মস্থান। এখানে মহাকর্ষের টানে গ্যাসীয় কণাগুলো একত্রিত হয়ে ধীরে ধীরে নক্ষত্র গঠন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সিগুলির আসল ধর্ম জানতেন না, তখন অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে অ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকাও বলা হতো। প্রযুক্তির উন্নতিতে আজ আমরা জানতে পেরেছি তা নীহারিকা নয়, গ্যালাক্সি।
মহাকাশের অপার সৌন্দর্যের আধার নীহারিকার গাঠনিক উপাদান কী কী?
নীহারিকা সাধারণত ০.১ আলোকবর্ষ (আলো এক বছর সময়ে যত পথ অতিক্রম করে তাকে ১ আলোকবর্ষ বলে। ১ আলোকবর্ষ = 9460000000000 কিলোমিটার) থেকে শুরু করে অনেক বৃহৎ এলাকা জুড়ে অবস্থান করে। যেমন: এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ছোটো নীহারিকা NGC 7027 মাত্র ০.১ আলোকবর্ষ ও আবিষ্কৃত সর্ববৃহৎ ট্যারান্টুলা নেবুলা প্রায় ১৮৬২ আলোকবর্ষ জুড়ে অবস্থিত। দূরত্বের কারণে পৃথিবী থেকে এদের ছোটো দেখা গেলেও মূলত নীহারিকা অনেক বড়ো! নীহারিকা প্রধানত গ্যাস, ধুলা ও প্লাজমা দ্বারা গঠিত।অধিকাংশ নীহারিকাতেই ৯০% হাইড্রোজেন, ৯% হিলিয়াম, এছাড়া বাকি ১% হিসেবে রয়েছে কার্বন, নাইট্রোজেন, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম। নীহারিকাগুলো মূলত আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যস্থান বা interstellar medium (ISM) -এ অবস্থিত। অর্থাৎ দুটি নক্ষত্রের মধ্যে বিদ্যমান ফাঁকা জায়গায়।
নীহারিকার জন্ম কিন্তু খুব সাদাসিধেভাবে হয় না, অনেক সময় প্রয়োজন হয় এদের সৃষ্টির জন্য। আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে থাকে অনেক গ্যাস ও ধুলা। কোনোভাবে মহাকর্ষ টানের মাধ্যমে যখন সেগুলো কাছাকাছি আসে তখন কাছাকাছি আসা সেসব গ্যাসের সম্মিলিত আকর্ষণ আরও শক্তিশালী হয়। ফলে সেগুলো আরও বেশি পরিমাণ পদার্থকে আকর্ষণ করতে থাকে এবং সংকুচিত করতে থাকে। এভাবে পদার্থ যতো কাছাকাছি আসে, আকর্ষণ ততই বাড়ে, এভাবে বাড়তে বাড়তে অনেক বিশাল পরিমাণ গ্যাসীয় অঞ্চলের সৃষ্টি হয় যাকে নীহারিকা বলে৷ অনেক নীহারিকার সৃষ্টি হয় নক্ষত্র থেকে। জীবনকালের শেষে দিকে কিছু ভারী নক্ষত্রের জীবন শেষ হয় বিশাল এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে। এ ধরনের নক্ষত্রকে বলে সুপারনোভা। সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে তারার বাইরের অংশ ধুলো, গ্যাস মিশ্রিত বিপুল পরিমাণ শক্তি অবমুক্ত করে। আর বিস্ফোরণের ফলে যে শক্তি নির্গত হয়, তা আশেপাশের গ্যাসগুলোতে আয়নিত করে, তখন পুরো এলাকাটিকে উজ্জ্বল দেখায়। এভাবে সুপারনোভার ধ্বংসস্তুপ থেকে জন্ম হয় এই নীহারিকার। নীহারিকার গ্যাস ও ধুলাই মহাকর্ষীয় টানে সংকুচিত হয়ে নক্ষত্রের জন্ম দেয়। আবার সেই নক্ষত্রই মৃত্যুর সময় নীহারিকা সৃষ্টি করে, আবার সেই নীহারিকা থেকেও আবার সৃষ্টি হয় নক্ষত্র। এভাবেই নীহারিকার জগতে চলতে থাকে ভাঙা-গড়ার খেলা। শেষ পর্যন্ত বলা যায়, আন্তঃনাক্ষত্রিক উপাদানগুলো যখন মহাকর্ষীয় সংবন্ধন (Gravitational Collapse)-এর মধ্য দিয়ে যায়, তখন নীহারিকা গঠিত হয়।
পর্যবেক্ষণ ইতিহাস
সর্বপ্রথম ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত গ্রিক জ্যোতির্বিদ ক্লডিয়াস টলেমি তাঁর বিখ্যাত Almagest ‘আলমাজেস্ট’ গ্রন্থে নীহারিকার কথা লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে, তিনি পাঁচটি আবছায়া তারা দেখতে পেয়েছেন। তিনি এটাও লিখেছিলেন যে, সপ্তর্ষি (Ursa Major) এবং সিংহ (Leo) নক্ষত্রমণ্ডলীর মাঝখানে তারা বিহীন একটি মেঘাচ্ছন্ন এলাকা দেখেছেন। সেখান থেকেই নীহারিকার জ্ঞানের জন্ম। অবশ্য সর্বপ্রথম সত্যিকারের নীহারিকার কথা উল্লেখ করেন পার্সিয়ান (বর্তমান ইরান) জ্যোতির্বিদ আব্দুর রহমান আল-সুফী তার Book of Fixed Stars (كتاب صور الكواكب) বইয়ে। তিনি অ্যান্ড্রোমিডা ছায়াপথের কাছেই একটা মেঘাচ্ছন্ন অঞ্চল দেখতে পান। ২৬ নভেম্বর ১৬১০ সালে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস-ক্লদ ফ্যাবরি টেলিস্কোপ দ্বারা প্রথম ‘কালপুরুষ (Orion)’ নীহারিকা আবিষ্কার করেন। এরপর আরও অনেক জ্যোতির্বিদ বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন নীহারিকা আবিষ্কার করেন।
নীহারিকা কত প্রকার ?
নীহারিকা অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। কিছু নীহারিকা নিজস্ব আলো দেয়, কিছু নীহারিকাকে অন্ধকার দেখায়, আবার কিছু গোলাকৃতি। কীভাবে আলো বিকিরণ করে সেই অনুসারে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নীহারিকাকে শ্রেণিবদ্ধ করেন। পাঁচটি প্রাথমিক প্রকার রয়েছে: শোষণ/অন্ধকার, প্রতিফলন, নির্গমন, সুপারনোভা অবশিষ্টাংশ এবং গ্রহ।এদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
১) এইচ টু অঞ্চল (H2 regions)
নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে হাইড্রোজেন নিয়ে কিছু একটু হবে। এসলেই তাই। ‘এইচ টু’ অঞ্চলের নীহারিকাগুলো বেশিরভাগই আয়নিত হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত। এগুলো বিভিন্ন আকার-আকৃতির হয়ে থাকে। কখনো নীহারিকাগুলো একসাথে অবস্থান করে আবার কখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে। এই অঞ্চলের নীহারিকাগুলো থেকে সবসময় নতুন নক্ষত্র তৈরি হতে থাকে। তাই এদের ‘নক্ষত্র সৃষ্টির অঞ্চল’ও বলা হয়। সময়ের সাথে সাথে যখন নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে তখন এই অঞ্চলের গ্যাসগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং সৃষ্টি করে সাতবোন বা প্লাইয়েডসের (Pleiades) মতো বিভিন্ন স্টার ক্লাস্টারের। ঈগল নেবুলার ‘পিলারস্ অভ ক্রিয়েশন’ অংশটিও ‘এইচ টু’ অঞ্চলে অবস্থিত!
২) অস্থিরমতি নীহারিকা : প্ল্যানেটারি নেবুলা (Planetary nebula)
প্রথম দিকের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে, প্রথম কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেখেছিলেন যে এই নীহারিকাগুলির একটি "গ্রহের মতো" গোলাকার আকৃতি ছিল, যা "প্ল্যানেটারি নেবুলা" নামের জন্ম দেয়। এ নীহারিকা মূলত গোলাকার গ্যাসের শেল দ্বারা গঠিত। এদের এই গোলাকার আকৃতির জন্যে নীহারিকাগুলোকে বৃহৎ গ্রহের মতো দেখায়৷ তাই এদের এরকম নামকরণ করা হয়েছে৷ যখন কোনো মধ্যম ভরের নক্ষত্রের জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে তা বিস্ফোরিত হয়ে তার পৃষ্ঠের অংশ বাইরে নিক্ষিপ্ত করে, তখন সেসব অংশই গোলাকার শেলের আকৃতি হয়ে এমন নীহারিকার সৃষ্টি করে। নক্ষত্রটির আকার কমে যাওয়ায় এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন। আর তখন তা থেকে অতিবেগুনী রশ্মি নির্গত হতে থাকে। এ রশ্মি পরবর্তীতে নীহারিকার গ্যাসকে আয়নিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে প্ল্যানেটারি নেবুলাও আলো বিকিরণ করতে শুরু করে, কিন্তু তা পুরোপুরি এমিশন (নিচে এমিশন নেবুলা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে) নেবুলার মতো হতে পারে না। কারণ, এমিশন নেবুলার তুলনায় প্ল্যানেটারির ঘনত্ব থাকে অনেক কম। আর নেবুলাটির কেন্দ্রে থাকা নক্ষত্রটির আলোতেই নেবুলাটি আলোকিত হয়। প্ল্যানেটারি নেবুলার কিছু উদাহরণ হলো: রিং নেবুলা, হেলিক্স নেবুলা। এছাড়া ভবিশ্যতে আরেকটি উদাহরণ হবে আমাদের সূর্য,এটি মধ্যম ভরের নক্ষত্র। এটি যখন ভবিষ্যতে বিস্ফোরিত হবে তখন তা খুব সুন্দর একটি প্ল্যানেটারি নেবুলার সৃষ্টি করবে৷ প্ল্যানেটারি নেবুলা গুলো বেশ দ্রুত গতিতে প্রসারিত হতে থাকে। এদের গড় তাপমাত্রা থাকে ১০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু কেন্দ্রের নক্ষত্রের তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি, ২৫,০০০ থেকে ২ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
Famous Planetary Nebulae:
Ring Nebula (M57), Dumbbell Nebula (M27), Cat's Eye Nebula (NGC 6543), Helix Nebula (NGC 7293), and Eskimo Nebula (NGC 2392).
৩) সুপারনোভা অবশিষ্টাংশ : সুপারনোভা রেমন্যান্ট (Supernova remnant)
যেসব নক্ষত্রের ভর সাধারণত সূর্যের ৮ থেকে ১৫ গুণ বা তারচেয়েও বেশি সেগুলো তাদের জীবদ্দশার শেষের দিকে এক তীব্র বিস্ফোরণ ঘটায়, এতে প্রচণ্ড শকওয়েভ সৃষ্টি হয় এবং এর পৃষ্ঠের গ্যাসীয় উপাদান সমূহকে তীব্র বেগে শূন্যে নিক্ষিপ্ত করে। এসব উপাদানসমূহ পরবর্তীতে সমন্বিতভাবে নেবুলার রূপ লাভ করে। এদেরকে supernova remnant (SNR) বলা হয়। এসব গ্যাসীয় উপাদানগুলো কেন্দ্রে থাকা উচ্চভরের ও উচ্চতাপমাত্রার নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত হতে থাকে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ: ক্র্যাব নেবুলা, যার কেন্দ্রে রয়েছে ক্র্যাব পালসার। সুপারনোভা অবশিষ্টাংশগুলি আমাদের গ্যালাক্সি সম্পর্কে আমাদের বোঝার গঠনে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
Famous Supernova Remnants:
Crab Nebula (M1), SN 1987A, SN 1572, and Witch's Broom Nebula (NGC 6960).
৪) শোষণ বা ডার্ক নেবুলা
নামের সাথে এই নীহারিকাগু লোর মিল বলতে গেলে পুরোটাই। যেন বিশাল আকারের কালো মেঘ ! এ নীহারিকা অনেক ঘন আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ দ্বারা গঠিত৷ এই মেঘ এতোটাই ঘন হয় যে, এদের নিকটবর্তী পেছনের বা পাশের নক্ষত্র থেকে বিকিরিত আলো এ ঘন মেঘ ভেদ করে আসতে পারে না, বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে এদেরকে অন্ধকার দেখায়। তাই এদের নাম ডার্ক বা অন্ধকার নীহারিকা।
এতে থাকে হাইড্রোজেন অণু, হিলিয়াম পরমাণু, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া। এদেরকে সাধারণভাবে অন্যান্য নীহারিকার মতো দেখায় না। এদেরকে বোঝা যায়, কোনো আলোকিত অঞ্চলের মাঝে অন্ধকারময় স্থানরূপে। এদের সাধারণত এমিশন ও রিফ্লেকশন নেবুলার সাথে অবস্থান করতে দেখা যায়। সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ হলো ‘হর্সহেড নেবুলা’, যা ওরিয়ন নেবুলার কাছে অবস্থিত। একে ওরিয়ন নেবুলার কাছে অন্ধকারময় দেখায়, যা একটি ঘোড়ার মাথা আকৃতির৷ তাই একে হর্সহেড নেবুলা নামকরণ করা হয়েছে৷ এদের গড় তাপমাত্রা থাকে খুবই কম, মাত্র ১০ থেকে ১০০ কেলভিন।
Famous Absorption/Dark Nebulae:
Horsehead Nebula (Barnard 33), LDN 1768, LDN1774, LDN 483, and Lupus 4.
এছাড়াও নীহারিকার আরও অনেক প্রকারের উপবিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো:
৫) ডিফিউজ নেবুলা (Diffuse nebula)
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই নীহারিকার কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই, অর্থাৎ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে। মহাশূন্যের বেশিরভাগ নীহারিকাই এই প্রকারভেদের মধ্যে পড়ে। ডিফিউজ নেবুলাগুলোকে দেখতে মনে হয় মহাকাশে ছড়িয়ে পড়া কোনো গ্যাসীয় পদার্থ। এদের সীমা নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয় না। ডিফিউজ বা বিস্তীর্ণ নীহারিকাগুলো প্রচুর পরিমাণে অবলোহিত আলো (IR) নির্গত করে যা তাদের নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত দৃশ্যমান করতে সাহায্য করে; কিন্তু পুরোটা নয়। সাধারণত এমিশন নেবুলা, রিফ্লেকশন নেবুলা এবং ডার্ক নেবুলাগুলো ডিফিউজ নেবুলার অংশ।
৬) নির্গমন নীহারিকা : এমিশন নেবুলা (Emission nebula)
এমিশন নেবুলা মূলত আয়নিত গ্যাসীয় কণা দ্বারা গঠিত, যা মূলত বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো বিকিরণ করে৷ এই আয়নিত গ্যাস বলতে মূলত হাইড্রোজেন গ্যাস। তবে অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদানও থাকে। এখানকার হাইড্রোজেন গ্যাস আয়নিত হওয়ার প্রধান উৎস মূলত এর নিকটবর্তী উত্তপ্ত নক্ষত্রসমূহ৷ কারণ এদের নিকটবর্তী উত্তপ্ত নক্ষত্রগুলো থেকে বিকিরিত অতিবেগুনি রশ্মি এ নীহারিকার হাইড্রোজেন গ্যাসকে আয়নিত করে ফেলে এবং এই আয়নিত হাইড্রোজেন গ্যাসীয় কণা আলোক বিকিরণ করে। আলো বিকিরণ করে বিধায় এদের বলা হয় Emission Nebula বা বিকিরণ নীহারিকা।
মহাকাশের এ ধরনের নীহারিকার অঞ্চলগুলোকে মূলত নক্ষত্রের আদর্শ জন্মস্থান বলা চলে৷ কারণ এখানকার গ্যাস, ধুলা এতো পরিমাণে থাকে যে গ্র্যাভিটির টানে সেগুলো কেন্দ্রীভূত হয়ে খুব সহজেই নক্ষত্রের জন্ম দিতে পারে। আর যে ধূলিময় অংশ থাকে তা গ্রহের জন্ম দিতে পারে, যা সে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে৷ ওরিয়ন নেবুলা, ঈগল নেবুলা এ ধরনের নীহারিকার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ওরিয়ন নেবুলা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির নক্ষত্রের জন্মের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অঞ্চল। ওরিয়ন নেবুলার কমলা রঙের জন্যে দায়ী হাইড্রোজেন, লাল রঙের জন্যে দায়ী সালফার, সবুজ রঙের জন্যে দায়ী অক্সিজেন। মহাকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নেবুলা হলো এই এমিশন নেবুলাগুলো৷ এদেরকে বেশ খালি চোখেই দেখা যায়, তবে ছোটো টেলিস্কোপেও এদের বেশ স্পষ্ট দেখায়। এদের গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ কেলভিন পর্যন্ত৷
Famous Emission Nebulae:
Orion Nebula (M42), Omega Nebula (M17), North American Nebula (NGC 7000), Witch's Broom Nebula (NGC 6960), Lagoon Nebula (M8 (NGC 6523)), Carina Nebula (NGC 3372), Monkey Hear Nebula (NGC 2174), and NGC 2313.
৭) প্রতিফলন নীহারিকা : রিফ্লেকশন নেবুলা (Reflection nebula)
এ ধরনের নীহারিকাগুলো মূলত আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধুলার মেঘ দ্বারা গঠিত। এদেরকে রিফ্লেকশন বা প্রতিফলন নীহারিকা বলার কারণ, এদের নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে বিকিরিত আলো এদের গ্যাসীয় উপাদানগুলো খুব উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত করে। কিন্তু সেসব নক্ষত্র থেকে বিকিরিত আলোকশক্তি ততোটা শক্তিশালী হয় না যাতে এ নীহারিকার গ্যাসগুলোকে আয়নিত করে বিকিরণ নীহারিকার সৃষ্টি করবে। এদেরকে ঠিক ততোটাই উজ্জ্বল দেখায়; নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে আসা যতটা আলো এরা বিক্ষেপণ করে। এদেরকে সাধারণত নীল রঙের দেখায়, কারণ নীল রং খুব সহজেই বেশি পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয়। ট্রিফিড নেবুলা এ ধরনের নীহারিকার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এদের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় ১০,০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
Famous Reflection Nebulae:
Pleiades (M45), M78, IC 4603, 4604, and 4605, Witch Head Nebula (IC 2118), Trifid Nebula (M20), and IC 2631
৮) প্রোটো-প্ল্যানেটারি নেবুলা (Proto planetary nebula)
কোনো প্রধান ধারার নক্ষত্র যখন ক্রম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্বেত বামনে পরিণত হয়, তখন সেই অন্তর্বর্তী সময়ে এই জাতীয় নীহারিকার সৃষ্টি হয়। যখন কোনো নক্ষত্র তার জীবনকাল শেষ করে, তখন নক্ষত্র প্রচুর পরিমাণ ভর হারায়। এর ফলে নক্ষত্রের বাইরের হাইড্রোজেনের খোলস হালকা হয়ে যায়। একসময় এই নক্ষত্র হাইড্রোজেনের খোলস মুক্ত হয়ে নগ্ন হয়ে যায়। এই অবস্থায় নক্ষত্রকে ঘিরে হাইড্রোজেনের হালকা কুয়াশা থেকে যায়। নক্ষত্রের এই দশাতে দূর থেকে কুয়াশাঘন আবরণের ভিতর দিয়ে নক্ষত্রকে রঙিন দেখায়। নক্ষত্রের দশাকেই প্রোটোপ্ল্যানেটারি নেবুলা বা প্রাক্-গ্রহান্বিত নীহারিকা বলা হয়।
৯) বাইপোলার নেবুলা (Bipolar nebula)
মূলত প্ল্যানেটারি নেবুলার একটি উপ-বিভাগ হলো বাইপোলার নেবুলা। যদি কোনো প্ল্যানেটারি নেবুলার আকৃতি বাইপোলার বা দ্বিপদী আকৃতির হয় তবে তাকে বলে বাইপোলার নেবুলা। এই নীহারিকাগুলো দুইপাশে প্রজাপতির ডানার মতো ছড়িয়ে থাকে। প্ল্যানেটারি নেবুলার প্রায় ১০-২০% হলো বাইপোলার নেবুলা। যদিও বাইপোলার নেবুলা সৃষ্টির প্রকৃত কারণ জানা যায়নি, তবে মূলত পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি নক্ষত্র যখন তাদের বাইরের লেয়ারের বিস্ফোরণের মাধ্যমে একসাথে নীহারিকায় পরিণত হয় তখনই বাইপোলার নেবুলা সৃষ্টি হয়। বাইপোলার নেবুলার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘বাটারফ্লাই নেবুলা’ বা ‘প্রজাপতি নীহারিকা’।
১০) পালসার উইন্ড নেবুলা (Pulsar wind nebula)
পালসার উইন্ড নেবুলা সাধারণত সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর এর ভেতর থেকে উৎপন্ন হয়। একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর পর বিভিন্ন দশা শেষ করে তৈরি হয় এই পালসার উইন্ড নেবুলা। মূলত সুপারনোভা রেমন্যান্টের মধ্যে অবস্থান করে এই নীহারিকাগুলো উজ্জ্বলতা প্রদর্শন করে। এই নীহারিকাগুলোকে অনেক সময় পুরোনো পালসারের পাশে খুঁজে পাওয়া যায়। মহাবিশ্বে খুব কম সংখ্যক ‘পালসার উইন্ড নেবুলা’ রয়েছে। সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো: ক্র্যাব নেবুলা।
এছাড়াও মহাকাশের গ্যালাক্সি গুলো জুড়ে রয়েছে আরো অনেক ধরণের নীহারিকা। যাদের কথা বললে শেষ হবে না। এই রহস্য ঘেরা আকর্ষণ আমাদের ভাবিয়েছে প্রাচীন যুগ থেকে আজকের দিন অবধি। এখনো হয়ত কেউ নতুন নীহারিকার সন্ধানে মহাকাশের দিকে টেলিস্কোপ কাঁত করে রেখেছে। আমাদের প্রযুক্তি আরো যত উন্নত হবে মহাবিশ্বের রহস্য গুলো তত তারাতারি উৎঘাটিত হবে। নীহারিকা নিয়ে হয়ত জ্যোতির্বিজ্ঞানে আরো নতুন দ্বার উন্মচিত হবে। নক্ষত্রে ঠাঁসা, নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত সুবিশাল মহাকাশের সৌন্দর্যরাজিতে নীহারিকার অবস্থান একদমই অনন্য।
নীহারিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য:
১. মহাবিশ্বের সবচেয়ে ছোটো নীহারিকা হলো ‘এনজিসি ৭০২৭ (NGC 7027)’ যার ব্যাস মাত্র ০.১ আলোকবর্ষ।
২. আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম স্থান ‘বুমেরাং নীহারিকা (PGC 3074547)’ অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা -২৭২.১৫° সেলসিয়াস যা পরমশূন্য তাপমাত্রার চেয়ে মাত্র ১ ডিগ্রি বেশি।
৩. পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের নীহারিকা হলো ‘হেলিক্স নীহারিকা’ যা পৃথিবী থেকে ৬৯৪.৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
৪. ১৯২০ সালের আগ পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরবর্তী ছায়াপথগুলোকেও নীহারিকা হিসেবে মনে করতেন।
৫. এখন থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পর আমাদের সূর্যও নীহারিকায় পরিণত হবে।
তথ্যসুত্র:
Wikipedia
Spacecenter.org
Britannica
Bangachi
গ্যালাক্সি
গ্যালাক্সি বলতে কি বুঝায়?
এনজিসি ৪৪১৪, কোমা বেরেনিসেস তারামণ্ডলের অন্তর্গত একটি সর্পিল ছায়াপথ। এটির ব্যাস প্রায় ৫৫,০০০ আলোকবর্ষ এবং পৃথিবী থেকে এটি প্রায় ৬ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ হলো মহাকর্ষীয় শক্তি দ্বারা আবদ্ধ একটি অতি বৃহৎ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা যা তারা, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাসমা এবং প্রচুর পরিমাণে অদৃশ্য বস্তু দ্বারা গঠিত। একটি আদর্শ ছায়াপথে ১০ মিলিয়ন থেকে এক ট্রিলিয়ন পর্যন্ত তারা থাকে যারা সবাই একটি সাধারণ মহাকর্ষীয় কেন্দ্রের চারদিকে ঘূর্ণায়মান। বিচ্ছিন্ন তারা ছাড়াও ছায়াপথে বহুতারা ব্যবস্থা, তারা স্তবক এবং বিভিন্ন ধরনের নীহারিকা থাকে। অধিকাংশ ছায়াপথের ব্যাস কয়েকশ আলোকবর্ষ থেকে শুরু করে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং ছায়াপথ সমূহের মধ্যবর্তী দূরত্ব মিলিয়ন আলোকবর্ষের ও হয়ে থাকে। ছায়াপথের শতকরা ৯০ ভাগ ভরের জন্য দায়ী করা হয় অদৃশ্য বস্তুকে, যদিও এদের অস্তিত্ব এবং গঠন সম্পর্কে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। ছায়াপথের অভ্যন্তরে অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আন্তঃছায়াপথীয় স্থান হালকা প্লাসমা দ্বারা পূর্ণ। আমাদের পর্যবেক্ষণ সীমার মধ্যে একশ বিলিয়নেরও বেশি ছায়াপথ রয়েছে। আমাদের পৃথিবী ছায়াপথ নামক গ্যালাক্সিতে অবস্থিত।
গ্যালাক্সির প্রকারভেদ, গ্যালাক্সি কত প্রকার?
গ্যালাক্সি মুলত তিন ধরনের
১। সর্পিল ছায়াপথ(spiral galaxy) ,
২। উপবৃত্তাকার ছায়াপথ(elliptical galaxy)
৩। ও অনিয়মিত আকৃতির ছায়াপথ(irregular shaped galaxy) !
এছাড়াও আকৃতি অনুসারে প্রতিটি বিভাগকে তার ভর, ব্যাস এবং আলোকসজ্জার বিন্যাস অনুসারে আরও উপশ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে।
১। সর্পিল ছায়াপথ
o নিয়মিত
o বাধা সর্পিল
o মধ্যবর্তী সর্পিল
২। উপবৃত্তাকার ছায়াপথ
o বর্গাকার উপবৃত্তাকার
o discoidal উপবৃত্তাকার
৩। অনিয়মিত ছায়াপথ
ছায়াপথের প্রকারভেদ সম্পর্কে প্রথম বর্ণনা করেন এডউইন হাবল !
সর্পিল ছায়াপথ ( spiral galaxy)
আমরা যে ছায়াপথ গুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারি তার প্রায় ৬০% হল সর্পিল ছায়াপথ। এর নামকরণ করা হয়েছে এদের আকৃতি ও চেহারার জন্য । এরা তারা, গ্যাস এবং ধুলো দিয়ে তৈরী একটি সর্পিল ডিস্ক যার কেন্দ্রেটি স্ফীতি থাকে এবং বাহু বাইরের দিকে প্রসারিত। একটি সর্পিল গ্যালাক্সির বাহুতে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস এবং ধূলিকণা রয়েছে, যা তাদের নতুন তারা গঠনের জন্য একটি আদর্শ অবস্থান তৈরি করে। আমাদের মিল্কিওয়ের মতো সর্পিল ছায়াপথ গুলি উপবৃত্তাকার ছায়াপথ গুলির তুলনায় অনেক বেশি সংজ্ঞায়িত শরীরের আকৃতি রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সমস্ত গ্যালাকটিক ভর, গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াসের চারপাশে সুশৃঙ্খলভাবে ঘোরে।
গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াসের ব্যাস বেশ কয়েকটি আলোকবর্ষ পর্যন্ত পারে এবং এটি প্রধানত বৃহদায়তন নক্ষত্রের একটি ঘন ক্লাস্টার দ্বারা গঠিত, তাই এর কেন্দ্রীয় অংশে সর্বাধিক উজ্জলতা বিদ্যমান।যাইহোক, আমরা যদি কেন্দ্রের দিকে আরও গভীর ভাবে তাকাই তবে আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁজে পাই, বিশাল নক্ষত্রগুলি সাধারণত পদার্থের অনেক ঘন বিন্দুর চারপাশে ঘোরে । একটি ব্ল্যাক হোল, যা সমস্ত মহাকর্ষীয় শক্তিকে বন্ধ করে দেয় যা সমগ্র গ্যালাক্সিতে আধিপত্য বিস্তার করে।
উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের ছায়াপথ ধনু নামক একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল দ্বারা প্রভাবিত।
গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে আরও বাইরে গিয়ে আমরা খুঁজে পাই ডিস্ক, সর্পিল ছায়াপথের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকে তারা, গ্রহ এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিকণা ।
মহাকর্ষ কেন্দ্রের চারপাশে ক্লাস্টার গুলির ঘূর্ণন এটিকে এর সুপরিচিত সর্পিল আকৃতি প্রদান করে এবং বেশ কয়েকটি উদ্ভট বাহু তৈরি করে।
আমাদের গ্যালাক্সি উদাহরণ স্বরূপ, ২ টি পরিচিত প্রধান বাহু নিয়ে গঠিত: শিল্ড সেন্টোর, পার্সিয়াস এবং নিম্ন ঘনত্বের বিভিন্ন শাখা দ্বারা: ওরিয়ন, ধনু এবং নরমা।
সর্পিল ছায়াপথগুলিকে S01 থেকে S07 পর্যন্ত শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে তাদের বাহুর বিকেন্দ্রতার ডিগ্রী অনুসারে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রের সাপেক্ষে বাহুগুলি যত বেশি খোলা, র্যাঙ্কিংয়ে তাদের স্থান তত বেশি।
Famous Spiral Galaxies:
Pinwheel Galaxy (M101 (NGC 5457), Sunflower Galaxy (M63 (NGC 5055), Triangulum Galaxy (M33 (NGC 598), and Whirlpool Galaxy (M51a (NGC 5194)
উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি (Elliptical galaxy)
আমরা যে ছায়াপথ গুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারি তার প্রায় ১০% হল উপবৃত্তাকার ছায়াপথ। এগুলি সাধারণত প্রাচীন নক্ষত্র বা কম ভরের তারা নিয়ে গঠিত। উপবৃত্তাকার ছায়াপথ গুলি ক্লাস্টারের কেন্দ্রের কাছে থাকে। উপবৃত্তাকার ছায়াপথ গুলি তাদের তারার মধ্যে সামান্য ধুলো বা গ্যাস ধারণ করে যাতে এখানে কোন নতুন তারা তৈরি না হয়।
উপবৃত্তাকার ধরণের ছায়াপথ আমাদের মহাবিশ্বে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এগুলি বিশাল সর্পিল ছায়াপথের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী হতে পারে, যেহেতু বৃহত্তম উপবৃত্তাকার ছায়াপথ গুলি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ছোট গ্যালাক্সি গুলির একাধিক সংঘর্ষের ফলাফল।এই কারণে, উপবৃত্তাকার ছায়াপথগুলি উপবৃত্তের মতো একটি সমতল, ডিম্বাকৃতি আকৃতি দেখায় (তাই তাদের নাম), এ দের মধ্যে কোন সুশৃঙ্খল আচরণ লক্ষ্য করা যায় না।
এই ছায়াপথ গুলিতে, নক্ষত্র, গ্রহ, প্ল্যানেটয়েড, ধূলিকণার মেঘ এবং গ্রহাণু গুলি আপাত মহাকর্ষীয় প্যাটার্ন অনুসরণ না করে (যেমন সর্পিল ছায়াপথগুলির সাথে ঘটে) একটি বিশৃঙ্খল উপায়ে প্রদক্ষিণ করে ।
উপবৃত্তাকার ছায়াপথ গুলিকে চিহ্নিত করা হয় বেশিরভাগ পুরানো এবং বৃহদায়তন নক্ষত্র দ্বারা গঠিত এবং তারার ধূলিকণা যথেষ্ট কম ঘনত্ব উপস্থাপন করে, তাই অনুমান করা হয় যে তাদের নতুন তারার জন্মের হার খুবই কম, প্রায় শূন্য।
Famous Elliptical Galaxies:
M49, M59, M60 (NGC 4649), M87 (NGC 4486), IC 1101, and Maffei 1.
অনিয়মিত ছায়াপথ (irregular shaped galaxy)
আমরা যে ছায়াপথগুলি দেখতে পাই তার প্রায় ১০% অনিয়মিত ছায়াপথ। নাম অনুসারে, তাদের একটি স্বতন্ত্র আকৃতি বা ফর্ম নেই। অনিয়মিত ছায়াপথগুলি একসময় সর্পিল বা উপবৃত্তাকার ছিল, কিন্তু তারা কোন অদৃশ্য কারনে বিরক্ত হয়েছিল, যার ফলে তারা কিছুটা "বিকৃত" চেহারা নেয়। অনিয়মিত ছায়াপথ গুলি সাধারণত তুলনামূলকভাবে ছোট হয়, মিল্কিওয়ের আকারের প্রায় এক-দশমাংশ।
অনিয়মিত ছায়াপথগুলি আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্য একটি রহস্য এবং একটি শ্রেণীবিভাগের মধ্যে পড়ে কারণ তারা হাবল ক্রমানুসারে অন্যান্য শ্রেণীবিভাগের সাথে ভালভাবে ফিট করে না।
এই ধরনের অনিয়মিত ছায়াপথগুলি তাদের পদার্থের বণ্টনে একটি সংজ্ঞায়িত কাঠামো উপস্থাপন করে না বলে মনে হয় ।এরা উপবৃত্তাকার নয় এবং সর্পিল নয়। গ্যালাক্সির সমস্ত পদার্থ কেবল মহাকাশের কেন্দ্রে স্তূপ করা হয়, কিন্তু এরা একটি নির্দিষ্ট মহাকর্ষীয় বিন্দুর চারপাশে ঘোরে না বা তারা কোনও আপাত ব্যবস্থা বা আদেশ মেনে চলে না। তাদের সাধারণত সম্পূর্ণ অনিয়মিত আকার থাকে, যেমন মহাকাশে আলোকিত দাগ।
তারা বিভিন্ন উপাদান দ্বারা গঠিত হয় যেমন: গ্রহাণু, প্রচুর পরিমাণে গ্যাস এবং ধূলিকণা দিয়ে এবং বেশিরভাগ অংশে এরা তরুণ এবং ছোট তারা হয় ।
Famous Irregular Galaxies:
IC 3583, NGC 2337, UGC 4459, PGC 18431, and PGC 16389
ব্যারেড স্পাইরাল গ্যালাক্সি
একটি বাধা সর্পিল ছায়াপথ হল এক ধরনের সর্পিল ছায়াপথ। যা এটিকে আলাদা করে তা হল উজ্জ্বল তারা যা কেন্দ্র বরাবর একটি রেখা তৈরি করে এবং সর্পিল গ্যালাক্সির বাহুতে প্রসারিত হয়। সর্পিল ছায়াপথের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি বাধা সর্পিল ছায়াপথ। এরা বাহুগুলি এবং তারা গঠনের কার্যকলাপের হটস্পট হয় ।
Famous Barred Spiral Galaxies:
Andromeda Galaxy (M31), Milky Way, NGC 1300, IC 5201, and NGC 7640.
বিভিন্ন ধরনের ছায়াপথকে তাদের আকৃতি অনুযায়ী গ্রাফ করার জন্য হাবল ক্রম
পৃথিবীর নিকটবর্তী কয়েকটি ছায়াপথের নাম
১। আকাশগঙ্গা (পৃথিবীর নিজস্ব ছায়াপথ) : দূরত্ব ০.২৭ লাখ আলোকবর্ষ।
২। স্যাজিটারিয়াস ড্রফ স্ফিরোইডাল গ্যালাক্সি : দূরত্ব ০.৮১ লাখ আলোকবর্ষ।
৩। আরসা মেজর ২ ড্রফ : দূরত্ব ০.৯৮ লাখ আলোকবর্ষ।
৪। লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড (এলএমসি) : দূরত্ব ১.৬৩ লাখ আলোকবর্ষ।
৫। বুটেস ১ : দূরত্ব ১.৯৭ লাখ আলোকবর্ষ।
৬। স্মল ম্যাজেলানিক ক্লাউড (এসএমসি, এনজিসি ২৯২) : দূরত্ব ২.০৬ লাখ আলোকবর্ষ।
৭। আরসা মাইনর ড্রফ : দূরত্ব ২.০৬ লাখ আলোকবর্ষ।
৮। ড্রাকো ড্রফ (ডিডিও ২০৮) : দূরত্ব ২.৫৮ লাখ আলোকবর্ষ।
৯। এনজিসি ২৪১৯ : দূরত্ব ২.৭৫ লাখ আলোকবর্ষ।
১০। সেক্সটেনস ড্রফ এসপিএস : দূরত্ব ২.৮১ লাখ আলোকবর্ষ।
১১। স্কাল্পচার ড্রফ (ই৩৫১-জি৩০) : দূরত্ব ২.৮৭ লাখ আলোকবর্ষ।
১২। আরসা মেজর ১ ড্রফ (ইউএমএ ১ ডিএসপিএস) : দূরত্ব ৩.৩০ লাখ আলোকবর্ষ।
১৩। কারিনা ড্রফ (ই২০৬-জি২২০) : দূরত্ব ৩.৩০ লাখ আলোকবর্ষ।
১৪। ফরনেক্স ড্রফ (ই৩৫৬-জি০৪) : দূরত্ব ৪.৬০ লাখ আলোকবর্ষ।
১৫। লিও ২ ড্রফ (লিও বি, ডিডিও ৯৩) : দূরত্ব ৭.০১ লাখ আলোকবর্ষ।
১৬। লিও ১ ড্রফ (ডিডিও ৭৪, ইউজিসি ৫৪৭০) : দূরত্ব ৮.২০ লাখ আলোকবর্ষ।
১৭। লিও টি ড্রফ : দূরত্ব ১৩.৭০ লাখ আলোকবর্ষ।
১৮। ফোনিক্স ড্রফ গ্যালাক্সি (পি ৬৮৩০) : দূরত্ব ১৪.৪০ লাখ আলোকবর্ষ।
১৯।বারনার্ডস গ্যালাক্সি (এনজিসি ৬৮২২) : দূরত্ব ১৬.৩০ লাখ আলোকবর্ষ।
২০।এমজিসি১ : দূরত্ব ২০.০০ লাখ আলোকবর্ষ।
স্টার ক্লাস্টার কি? (What are star clusters)
স্টার ক্লাস্টার হল স্ব-মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা একত্রিত তারার বৃহৎ গোষ্ঠী বা দল যা একসাথে দেখা যায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নক্ষত্রের মধ্যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণের ধরন অনুসারে তাদের শ্রেণীবদ্ধ করেন।
দুটি প্রধান প্রকার রয়েছে:
১। গ্লোবুলার স্টার ক্লাস্টার (Globular star cluster)
২। এবং ওপেন স্টার ক্লাস্টার (Open star clusters)
খালি চোখে দৃশ্যমান স্টার ক্লাস্টারগুলির মধ্যে রয়েছে প্লিয়েডস, হাইডেস এবং ৪৭ টিউকানা।
গ্লোবুলার ক্লাস্টার (Globular star cluster)
গ্লোবুলার ক্লাস্টার হল মোটামুটিভাবে ১০ হাজার থেকে কয়েক মিলিয়ন নক্ষত্রের গোলাকার একটি তারার দল যা ১০ থেকে ৩০ আলোকবর্ষ জুড়ে এ দের অবস্থান। এরা সাধারণত খুব পুরানো নক্ষত্র নিয়ে গঠিত - যা মহাবিশ্বের থেকে মাত্র কয়েকশ মিলিয়ন বছর ছোট - যেগুলি বেশিরভাগই হলুদ এবং লাল এবং যার ভর দুটি সৌর ভরের চেয়ে কম।
আমাদের গ্যালাক্সিতে প্রায় ১৫০ টি গ্লোবুলার ক্লাস্টার রয়েছে,যার মধ্যে কিছু ছোট গ্যালাক্সির কোর রয়েছে যা পূর্বে মিল্কিওয়ের আকর্ষনের দ্বারা তাদের বাইরের প্রান্তে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যেমনটি গ্লোবুলার ক্লাস্টার M79 এর ক্ষেত্রে হয়েছে বলে মনে করা হয়। কিছু ছায়াপথ আকাশগঙ্গার তুলনায় গ্লোবুলার ক্লাষ্টারে অনেক বেশি সমৃদ্ধ, যেমন বিশাল উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি M87-এ এক হাজারের বেশি তারা রয়েছে।
কয়েকটি উজ্জ্বল গ্লাবুলার ক্লাস্টার খালি চোখে দৃশ্যমান । যেমন সবচেয়ে উজ্জ্বল, ওমেগা সেন্টোরি যা প্রাচীনকালে পরিলক্ষিত হয়েছিল এবং টেলিস্কোপিক যুগের আগে একটি তারকা হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে উজ্জ্বল গ্লাবুলার ক্লাস্টার হল হারকিউলিসের নক্ষত্রমন্ডলে M13
Famous Globular Clusters:
Great Globular Cluster of Hercules (M13), M5, M3, M92 Omega Centauri, M13, 47 Tuc, and M22.
খোলা ক্লাস্টার (Open star clusters)
খোলা ক্লাস্টার গুলি গ্লোবুলার ক্লাস্টার থেকে খুব আলাদা। গোলাকারভাবে ভাবে অবস্থান করা গ্লোবুলার গুলির বিপরীতে, তারা গ্যালাকটিক সমতলে সীমাবদ্ধ এবং প্রায় সবসময় সর্পিল বাহুগুলির মধ্যে পাওয়া যায়। এগুলি সাধারণত অল্প বয়স্ক যা কয়েক মিলিয়ন বছর পর্যন্ত বয়সী, কয়েক বিলিয়ন বছরের মতো পুরানো কিছু বিরল ব্যতিক্রম হল, যেমন মেসিয়ার 67 (সবচেয়ে কাছের এবং সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষণ করা পুরানো খোলা ক্লাস্টার)।
খোলা ক্লাস্টারগুলিতে সাধারণত কয়েকশ সদস্য থাকে এবং ৩০ আলোকবর্ষ জুড়ে একটি এলাকায় অবস্থিত। গ্লোবুলার ক্লাস্টার গুলির তুলনায় অনেক কম ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায়, তারা খুব কম শক্তভাবে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে দৈত্যাকার আণবিক মেঘ এবং অন্যান্য ক্লাস্টার গুলির মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা ব্যাহত হয়।
সবচেয়ে পরিচিত উন্মুক্ত ক্লাস্টার হল বৃষ রাশির প্লিয়েডস এবং হাইডস। উন্মুক্ত ক্লাস্টার গুলি প্রায়শই উষ্ণ তরুণ নীল তারাদের দ্বারা প্রভাবিত হয় ।কারণ যদিও এই ধরনের নক্ষত্র গুলি নাক্ষত্রিক পরিভাষায় স্বল্পস্থায়ী হয়, তবে মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর স্থায়ী হয়। এই নক্ষত্রগুলি মারা যাওয়ার আগে খোলা ক্লাস্টারগুলি ছড়িয়ে পড়ে।
Famous Open Star Clusters:
Pleiades (M45), Wild Duck Cluster (M11), Beehive Cluster (M44), Double Cluster (Caldwell 14), h Persei (NGC 869), and NGC 884.
তথ্যসূত্র: wikipedia,Online
টেলিস্কোপের প্রকারভেদ
Telescope গুলোকে সাধারণত দুইভাগে ভাগ করা যায়-
1. Optical Telescope
2. Non-optical Telescope
Optical Telescope
যেসব Telescope এর মধ্যে mirror বা lens ব্যবহার করা হয় তাদেরকে optical telescope বলে।এরা বহুদূর থেকে শুধুমাত্র visible light কে collect করতে পারে।
Optical telescope দুই ধরনের-
1. Refracting Telescope
2. Reflecting Telescope
এবার আমরা Optical telescope এর দুটি প্রকারভেদ নিয়ে জানবো-
i) Refracting Telescope প্রতিসারক
এই ধরনের telescope গুলোর মধ্যে convex lens বা উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয় যেটা বহুদূর থেকে আসা আলোকে focus করতে পারে। Convex lens হচ্ছে এক ধরনের transparent glass যেটার মাঝের অংশ মোটা এবং দুই প্রান্তের অংশ সরু থাকে
এই ধরনের telescope গুলোতে দুটো convex lens একটা লম্বা টিউবের দুই মাথায় লাগানো থাকে। টিউবের সামনে যেটি লাগানো থাকে তাকে objective lens বলে এবং আলো সেখান দিয়ে টিউবের ভেতরে ঢোকে। দ্বিতীয় convex lens এর আকার ছোট হয় যাকে eyepiece lens বলে এবং এই eyepiece lens, objective lens থেকে একটা নির্দিষ্ট দুরত্বে রাখা হয়ে থেকে।
Objective lens টি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আলোকে focus করে, এই দুরত্বকে focal length বলে। Objective lens এর আকার যত বড় হয় সেখান দিয়ে বহুদূর থেকে আসা আলো তত বেশি পরিমান ঢোকবে ফলে সেই বস্তুকে সহজেই telescope দিয়ে observe করা যাবে।
যে image টি objective lens ধারণ করে সেটিকে Eyepiece lens বড় করে দেখায়।
ii) Reflecting Telescope প্রতিফলক
Refracting Telescope বা প্রতিসারক টেলিস্কোপের মতো সোজা একটা চোঙের ভিতরের উত্তল-অবতল লেন্সের মধ্যে দিয়ে সামনে তাকানোর বদলে লেন্সের জায়গায় আয়না বসিয়ে উল্টোদিকে বসে সর্বপ্রথম আকাশ পর্যবেক্ষণ করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন।
তিনিই প্রথম ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অবতল আয়না বসিয়ে দূরবীক্ষণ বানানোর কাজটি করে ইতিহাস সৃষ্টি করে যান। এই পদ্ধতিতে দৃশ্যমান বস্তু আরো স্পষ্ট দেখা যায়। নিউটনের এজাতীয় দূরবীক্ষণকে প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র (Reflecting Telescope) বলে।
এই telescope এর মধ্যে একটা curved mirror যা আলো collect এবং focus করার জন্য ব্যবহার করা হয়। একটা ছোট জায়গার মধ্যে এই curved mirror টি অনেক বেশি পরিমান আলোকে focus করতে পারে। Mirror যত বড় হয়, telescope এর মধ্যে তত বেশি পরিমান আলো ঢোকতে পারে। বর্তমানে বেশিরভাগ optical telescope গুলো Reflecting telescope.
Catadioptric Telescopes:
এটি মুলত refractors telescope এবং reflectors telescope এই দুইটার সংমিশ্রনে তৈরী।
প্রথম এই ধরনের দূরবীনটি জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী বার্নার্ড শ্মিট দ্বারা ১৯৩০ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এটি টেলিস্কোপের সামনে একটি গ্লাস রিট্রেক্টর প্লেট সহ টেলিস্কোপের পিছনে একটি প্রাথমিক মিরর ব্যবহার করেছিল, যা গোলাকার বিচ্ছিন্নতা অপসারণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। মূল টেলিস্কোপে, ফটোগ্রাফিক ফিল্মটি মূল ফোকাসে স্থাপন করা হয়েছিল। কোন সেকেন্ডের আয়না বা আইপিস ছিল না। ১৯৬০-এর দশকে শ্মিট-ক্যাসসগ্রেন ডিজাইন নামে মূল নকশাটির উন্নতি সংস্করন হল সবচেয়ে জনপ্রিয় ধরনের টেলিস্কোপ। এটির একটি দ্বিতীয় আয়না রয়েছে যা প্রাথমিক মিরর থেকে একটি আইফিস পর্যন্ত একটি গর্তের মধ্য দিয়ে হালকা বাউন্ড করে।
রুশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডি মাকসুতভের ক্যাটেদিয়েট্রিক টেলিস্কোপের দ্বিতীয় শৈলী আবিষ্কার করেছিলেন।
ডাচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, Bouwers, ১৯৪১ সালে একটি Maksutov নকশা তৈরি করেন।) মাকসুতভ টেলিস্কোপ Schmidt তুলনায় আরো গোলাকার সংশোধনকারী লেন্স ব্যবহার করা হয়। অন্যথায়, নকশা বেশ অনুরূপ। আজকের মডেলগুলি মাকসুতভ-ক্যাশগ্রেন নামে পরিচিত।
Refracting Telescope (প্রতিসরণ টেলিস্কোপ) এবংReflecting telescope.(প্রতিফলিত টেলিস্কোপ) মধ্যে পার্থক্য
একটি প্রতিসরণকারী টেলিস্কোপ এবং একটি প্রতিফলিত টেলিস্কোপের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
প্রতিসরণকারী টেলিস্কোপ প্রতিফলিত টেলিস্কোপ
এটি একটি অপটিক্যাল টেলিস্কোপ যাতে একটি লেন্স সংযুক্ত করে ছবি তৈরি করা হয়। এই লেন্সকে বলা হয় অবজেক্টিভ লেন্স। এই টেলিস্কোপটি বাঁকা আয়নার সংমিশ্রণ নিয়ে গঠিত যা আলোর রশ্মি প্রতিফলিত করে এবং একটি চিত্র তৈরি করে।
এতে ব্যাস ছোট, যার আলো সংগ্রহের ক্ষমতা কম। এটিতে একটি বড় আয়না রয়েছে যার আলো সংগ্রহ করার উচ্চ ক্ষমতা রয়েছে।
এটি ওজনে হালকা এবং সহজেই যেকোনো জায়গায় বহন করা যায়। এটি ভারী এবং পুরু।
ফটোগ্রাফিতে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানে বেশি ব্যবহৃত হয়।
এটি একটি বন্ধ নল যা এটিকে ধুলো এবং আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করে। এটি একটি খোলা নল যার কারণে ধুলো, মাটি, আর্দ্রতা ইত্যাদি সমস্যা হয়।
এতে বর্ণবিকৃতির সমস্যা রয়েছে। এতে বর্ণবিকৃতির কোনো সমস্যা নেই।
Non-optical Telescope
যেসব telescope বহুদূর থেকে আসা বিভিন্ন electromagnetic radiation কে collect করতে পারে তাদেরকে Non-optical telescope বলে। কয়েক ধরনের Non-optical telescope রয়েছে নিচে এ দের নিয়ে আ লোচনা করা হলো, এর মধ্যে Radio telescope অন্যতম।
Radio Telescope
যেসব telescope গুলো মহাকাশের বিভিন্ন object থেকে বের হওয়া radio wave কে detect করতে পারে তাদেরকে radio telescope বলে। বেশিরভাগ radio telescope গুলোর একটা curved এবং reflecting surface থাকে, যার ব্যাস 305 m পর্যন্ত হয়। এই surface টি মহাকাশ থেকে আসা radiowave কে collect এবং focus করে। তবে Radio telescope এর সাইজ যত বড় হয়, সেটি তত বেশি radio wave কে collect এবং focus করতে পারে।
Other Non Optical Telescope
আ রো কিছু telescope আছে যারা infrared radiation কে detect করতে পারে। IR এর wave length আমাদের চোখে দেখা visible light এর wave length থেকে বড়,কিন্তু radio wave থেকে ছোট। আরো কিছু ধরনের টেলিস্কোপ রয়েছে যারা ছোট ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রেডিয়েশন গুলোকে detect করতে পারে যেমন X-ray, ultraviolet radiation, gamma ray ইত্যাদি।
নিচে একটা ক্র্যাব নেবুলার ভিন্ন ভিন্ন electromagnetic radiation এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন visual ছবি দেখানো হলো। এই ছবি গুলো telescope এর মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে-
Advanced Telescope
বর্তমানে বেশিরভাগ telescope গুলো বিভিন্ন কম্পিউটার সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকে যাতে সেসব টেলিস্কোপে ধরা পড়া space object গুলোকে আরো স্পষ্ট দেখা যায়। Telescope যখন সামান্য নড়াচড়া করে তখন telescope থেকে পাওয়া ছবিগুলো অনেকাংশে ঝাপসা হয়ে যায়। তাই সেসব ছবিকে সংশোধন করার জন্য কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়। কিছু টেলিস্কোপে লেজার ব্যবহার করা হয় পৃথিবীর বাইরের পরিবেশকে monitoring করার জন্য। একারণে টেলিস্কোপের সাথে যুক্ত থাকা mirror এর আকারও পরিবর্তন হয়ে যায় যদি পৃথিবীর বাইরের atmosphere সামান্য পরিমাণ চেইঞ্জ হয়।
ধরন: -
এক্স-রে টেলিস্কোপ X ray Telescope: অতিবেগুনি রশ্মির থেকে সংক্ষিপ্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে।
আল্ট্রাভায়োলেট টেলিস্কোপ Ultraviolate Telescope: দৃশ্যমান আলোর চেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহৃত হয়।
অপটিক্যাল টেলিস্কোপ Optical Telescope: দৃশ্যমান আলো ব্যবহার করে থাকে।
ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ Inftaed Telescope: দৃশ্যমান আলোর চেয়ে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে থাকে।
সাবমিলিমেট্রো টেলিস্কোপ: মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো ব্যবহার করে যেগুলো ইনফ্রারেড আলোর চেয়েও দীর্ঘ।
রেডিও টেলিস্কোপ Radio Telescope: যা আরও দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে।
এছাড়াও আরও ২ ধরনের টেলিস্কোপ রয়েছে। সেগুলো হলো:
একনলা দুরবিন: মহাকাশ দেখার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
হাবল টেলিস্কোপ - Hubble Telescope
জার্মান বিজ্ঞানী হারমান ওবার্থ (Hermann Oberth), ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম, মহাকাশে একটা রকেট দিয়ে টেলিস্কোপ প্রেরণের প্রস্তাব করেন । এরই ধারাবাহিকতায় নাসার বিজ্ঞানীরা একটা বিশাল স্কুল বাসের সমান টেলিস্কোপ বানালেন, যার নাম ছিলো হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, সংক্ষেপে HST. তাঁদের উদ্দেশ্য ছিলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডল পেরিয়ে মহাকাশে এই টেলিস্কোপটাকে স্থাপন করা।
হাবল টেলিস্কোপের নামকরণ করা হয় বিজ্ঞানী এ্যাডউইন পি. হাব্ল-এর (১৮৮৯-১৯৫৩) নামানুসারে। তিনিই প্রথম মহাজাগতিক বস্তুসমূহের blue shift এবং red shift দেখিয়ে প্রমাণ করেন যে, এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এবং প্রতিটি গ্যালাক্সি একটা আরেকটা থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে। এই প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই পরে মহাবিষ্ফোরণ তত্ত্বের সূচনা হয়।
১৯৯০ সালে একটা রকেটে করে হাবলের টেলিস্কোপটা বায়ুমন্ডলের বাইরে পাঠানো হয়। হাবল টেলিস্কোপ স্থাপনের জায়গাটা বায়ুমণ্ডলের বাইরে হলেও সেটা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের আয়ত্বের ভিতরে একটা নিরাপদ অঞ্চলে রয়েছে, যার উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫৯৬ কিলোমিটার উঁচু। সেখানে যেহেতু বাতাস নেই, তাই সেটির সাথে কোনো কিছু ঘর্ষণের চান্স নেই। তাই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরে, কিন্তু মাধ্যাকর্ষণের আয়ত্বের ভিতরে শূণ্যে ভেসে থাকে টেলিস্কোপটি। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় পৃথিবী থেকে।
হাবল একটা প্রতিফলন টেলিস্কোপ (Reflecting Telescope), আয়নার প্রতিফলনে সে দূরবর্তি বস্তুর তথ্য নিতে পারে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে এতে জোড়া হয় চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপ। চন্দ্র এর ক্ষমতা এতটাই ছিলো যে,দেড় মাইল দূর থেকে ওটা দিয়ে দেড় ইঞ্চির কোনো লেখা পড়া যেতো!
হাবল টেলিস্কোপ যেহেতু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাইরে বসানো হয়নি, তাই এটি ঠিক চাঁদের মতোই পৃথিবী যেদিকে যায় (বার্ষিক গতি), পৃথিবীর সাথে সাথে সেদিকে যায়। তবে যেতে যেতে পৃথিবীকে চক্কর খায় বা পাক খায় (আহ্নিক গতি), যাতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূমিতে পড়ে না গিয়ে নিজের অবস্থানে টিকে থাকতে পারে। প্রতি ৯৭ মিনিটে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ঘন্টায় ২৮,০০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে। এর যাবতীয় শক্তির প্রয়োজন সে সূর্যের আলো থেকে মেটায়। সৌরবিদ্যুৎ বানানোর জন্য এর মধ্যে ২৫ ফুট লম্বা দুটো সৌরপ্যানেল রয়েছে। বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে ৬টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি, যেগুলো একত্রে ২০টা গাড়ির বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করতে পারে!
হাবল টেলিস্কোপ আল্ট্রাভায়োলেট থেকে ইনফ্রারেড পর্যন্ত (১১৫-২৫০০ ন্যানোমিটারে) আলোর সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দেখতে সক্ষম। এই বিশাল ক্ষমতা নিয়ে হাবল যা পর্যবেক্ষণ করে তার প্রেক্ষিতে প্রতি সপ্তাহে ১২০ গিগাবাইট তথ্য সে পৃথিবীতে পাঠায়। এতো এতো তথ্য সংরক্ষণে এই টেলিস্কোপে ম্যাগনেটো-অপটিক্যাল ডিস্ক ব্যবহৃত হয়।
নিচে হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা মহাকাশের একটা নেবুলার ছবি দেখানো হলো-
হাবল টেলিস্কোপ তার তোলা প্রথম ছবি পাঠায় ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে, সেটা ছিল স্টার ক্লাস্টার NGC 3532’র একটা দৃশ্য। এখন পর্যন্ত এই টেলিস্কোপ লক্ষাধিক ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। আর সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে মহাবিশ্বের বয়স, জানা গেছে ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণশক্তি সম্বন্ধে। হাবলের চোখ দিয়ে বিজ্ঞানীরা একেকটা গ্যালাক্সির বিভিন্ন অবস্থা সম্বন্ধে জেনেছেন। হাবল টেলিস্কোপই প্রথম আবিষ্কার করে মহা শক্তিশালী গামা রে বার্স্ট বা গামারশ্মির বিষ্ফোরণ। এছাড়া এটি মহাকাশে গ্যাসের কিছু কুন্ডলি এমনভাবে আবিষ্কার করেছে, যেন তারা কিছু একটার ফাঁদে আটকা পড়েছে, যেটি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এটি বৃহস্পতি’র উপগ্রহ ইউরোপার বাতাসে অক্সিজেনের উপস্থিতি সনাক্ত করেছে। এডউইন হাবল প্রমাণিত সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের মাত্রা আবিষ্কার করেছে হাবল টেলিস্কোপ।
এই টেলিস্কোপটি নাসা পাঠালেও পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো বিজ্ঞানী হাবলকে ব্যবহারের অনুমতি চাইতে পারেন। অভিজ্ঞদের একটা প্যানেল তখন সেখান থেকে যোগ্যতম লোক বাছাই করে সেদিকে হাবলকে ঘুরিয়ে সেখানকার ছবি তুলে পাঠান সেই বিজ্ঞানীকে বা সেই বিজ্ঞান মহলকে। প্রতিবছর এরকম বহু আবেদন জমা পড়ে, তবে সেখান থেকে বছরে প্রায় ১,০০০ আবেদন যাচাই করে মাত্র ২০০ আবেদন মঞ্জুর করা হয়, আর সেই আবেদন অনুযায়ী কাজ করতে হাবলকে মোটামুটি ২০,০০০ একক পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
নিষ্ক্রমণকারী Space Shuttle Atlantis থেকে দৃশ্যমান হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র
General information
NSSDC ID
১৯৯০-০৩৭বি
সংস্থা নাসা / ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা / মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট
উৎক্ষেপণ তারিখ ২৪শে এপ্রিল, ১৯৯০, সকাল ৮:৩৩:৫১ পূদিস
উৎক্ষেপণ বাহন Space Shuttle Discovery (STS-31)
মিশনের আয়ুষ্কাল ৩১ বছর, ৮ মাস ও ২৭ দিন অতিক্রান্ত
Deorbited due ~2013–2021
ভর ১১,১১০ কেজি (২৪,৪৯০ পা)
দৈর্ঘ্য ১৩.২ মি (৪৩ ফু)
কক্ষপথের ধরণ প্রায়-বৃত্তাকার নিম্ন ভূ-কক্ষপথ
কক্ষপথের উচ্চতা ৫৫৯ কিমি (৩৪৭ মা)
কক্ষপথের পর্যায়কাল ৯৬–৯৭ মিনিট (দৈনিক ১৪-১৫টি আবর্তন)
কক্ষপথের বেগ ৭,৫০০ মি/সে (২৫,০০০ ফুট/সে)
মাধ্যাকর্ষণগত বেগ ৮.১৬৯ মি/সে২ (২৬.৮০ ফুট/সে২)
অবস্থান নিম্ন ভূ-কক্ষপথ
টেলিস্কোপের ধরণ রিচি-ক্রেতিয়াঁপ্রতিফলক
তরঙ্গদৈর্ঘ্য
দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনি, প্রায়-অবলোহিত
ব্যাস ২.৪ মি (৭ ফু ১০ ইঞ্চি)
Collecting area ৪.৫ মি২ (৪৮ ফু২)
অধিশ্রয়ণ দৈর্ঘ্য
৫৭.৬ মি (১৮৯ ফু)
যন্ত্রসমূহ
NICMOS
infrared camera/spectrometer
ACS
optical survey camera
(partially failed)
WFC3
wide field optical camera
COS
ultraviolet spectrograph
STIS
optical spectrometer/camera
সূক্ষ্ম নির্দেশনা সুবেদী গ্রাহক
three fine guidance sensors
ওয়েবসাইট hubble.nasa.gov
hubblesite.org
spacetelescope.org
হাবলের দেখভাল আর ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে নাসা’র গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, আর স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইন্সটিটিউট (STScl)।
Very Large Telescope
ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) হল একটি টেলিস্কোপ সুবিধা যা উত্তর চিলির আতাকামা মরুভূমিতে সেরো প্যারানালের ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরি দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি চারটি পৃথক টেলিস্কোপ নিয়ে গঠিত, প্রতিটিতে একটি প্রাথমিক আয়না ৮.২ মিটার জুড়ে রয়েছে,যা সাধারণত আলাদাভাবে ব্যবহার করা হয় তবে খুব উচ্চ কৌণিক রেজোলিউশন অর্জনের জন্য একসাথে ব্যবহার করা যেতে পারে। চারটি পৃথক অপটিক্যাল টেলিস্কোপ অন্তু, কুয়েন, মেলিপাল এবং ইয়েপুন নামে পরিচিত,যেগুলো মাপুচে ভাষায় জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বস্তুর জন্য শব্দ। টেলিস্কোপগুলি ১.৮ মিটার অ্যাপারচারের চারটি চলমান অক্সিলিয়ারি টেলিস্কোপ (ATs) দ্বারা পরিপূরক একটি অ্যারে তৈরি করে।
Very Large Telescope
The four Unit Telescopes that form the VLT together with the four Auxiliary Telescopes
Alternative names VLT
Part of Paranal Observatory
Location(s) Antofagasta Region, Chile
Coordinates 24°37′38″S 70°24′15″W / 24.62733°S 70.40417°WCoordinates: 24°37′38″S 70°24′15″W / 24.62733°S 70.40417°W
Organization European Southern Observatory
Altitude 2,635 m (8,645 ft)
Observing time 340 nights per year
Wavelength
300 nm – 20 μm (N-UV, visible light, NIR, SWIR, MWIR, and LWIR)
First light
1998 (for the first Unit Telescope)
Telescope style astronomical observatory
Diameter • 4 x 8.2-metre Unit Telescopes (UT)
• 4 x 1.8-metre moveable Auxiliary Telescopes (AT)
Angular resolution
0.002 arcsecond
Focal length
120 m (393 ft 8 in)
Website www.eso.org/vlt
ভিএলটি দৃশ্যমান এবং ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে। প্রতিটি পৃথক টেলিস্কোপ খালি চোখে শনাক্ত করার চেয়ে প্রায় চার বিলিয়ন গুণ বেশি ক্ষীণ বস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং যখন সমস্ত টেলিস্কোপ একত্রিত হয় তখন সুবিধাটি প্রায় ০.০০২ আর্ক-সেকেন্ডের কৌণিক রেজোলিউশন অর্জন করতে পারে। একক টেলিস্কোপ মোডে অপারেশন কৌণিক রেজোলিউশন প্রায় ০.০৫ আর্ক-সেকেন্ড।
ভিএলটি হল জ্যোতির্বিদ্যার জন্য সবচেয়ে উৎপাদনশীল স্থল-ভিত্তিক সুবিধা,শুধুমাত্র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করা সুবিধাগুলির মধ্যে আরও বৈজ্ঞানিক কাগজপত্র তৈরি করে। ভিএলটি ব্যবহার করে সম্পাদিত অগ্রণী পর্যবেক্ষণগুলির মধ্যে একটি এক্সোপ্ল্যানেটের প্রথম প্রত্যক্ষ চিত্র, মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো পৃথক নক্ষত্রের ট্র্যাকিং এবং সবচেয়ে দূরবর্তী গামা-রে বিস্ফোরণের পরের আলোর পর্যবেক্ষণ।
James Webb Space Telescope-
মানবসভ্যতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, বিজ্ঞানের বিস্ময় এই দূরবীক্ষণটি সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কিছু কথা।
কিংবদন্তী মহাকাশ দূরবীন 'হাবল' এর উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি হয়েছে 'জেমস ওয়েব'। ১৯৯৬ সালে দূরবীনটির জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বিকাশ ও দূরবীনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। এই প্রজেক্টে হাত মিলিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আমেরিকা ও ইউরোপের মোট ২০ টি দেশ। নির্মাণের দায়িত্ব নরথ্রপ গ্রুমান ও বল এরোস্পেস কোম্পানির।
২০১৯ এর অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী প্রজেক্টটিতে খরচ হয়ে গেছে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০২১ এর শেষদিকে একে মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
উদ্দেশ্যঃ
দৃশ্যমান ও অবলোহিত আলো বিকিরণকারী মহাজাগতিক বস্তুসমূহ পর্যবেক্ষণ। ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদিম অবস্থা থেকে শুরু করে নীহারিকার অভ্যন্তরে নতুন নক্ষত্রের জন্মপ্রক্রিয়া এমনকি বহুদূরবর্তী ভীনগ্রহের বায়ুমণ্ডলের উপাদান বিশ্লেষণ (যা থেকে বহির্জাগতিক প্রাণের খোঁজ মেলারও আশা রয়েছে)- এইসবকিছুতেই অত্যন্ত দক্ষ হবে জেমস ওয়েব।
প্রযুক্তিঃ
কী আশ্চর্য পর্যায়ের প্রযুক্তি এই দূরবীনে ব্যবহার হচ্ছে তা লিখে শেষ করাই কঠিন। আমি অতি সংক্ষেপে অতি সরলীকৃতভাবে কিছু বলছি।
১) সৌর আচ্ছাদনঃ সূর্যের আলো ও তাপ থেকে বাঁচার জন্য ওয়েবের রয়েছে ৫ টি সৌর আচ্ছাদন স্তর যার একেকটি মানুষের চুলের সমান পুরু। এটাকে ১২ বার ভাঁজ করে রাখা আছে (নাহলে রকেটে আঁটবে না) যাকে মহাকাশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলার ব্যবস্থাও রয়েছে। এই ভাঁজ করা বা খোলার প্রযুক্তি অত্যন্ত জটিল।
২) আয়নাঃ ওয়েবের আয়না হাবলের থেকে আকারে অনেক বড়। ব্যাস ৬.৫ মিটার। এটিকেও মুক্ত অবস্থায় রাখলে রকেটে আঁটবে না। তাই এটি আসলে ১৮ টি ষড়ভুজ অংশকে যুক্ত করে তৈরি যাদের সূক্ষ্ম মোটরের সাহায্যে ভাঁজ করা বা খোলা যায়।
একটি মিরর সেগমেন্টঃ
রঙটা সোনালী কেন বলুন তো? হ্যাঁ, ওটা আসলেই একটা সোনার স্তর।
এর ১৮ টি ষড়ভুজকে রোবটিক্সের সাহায্যে জোড়া হয়েছে।
গোটা দূরবীনকে কতখানি সূক্ষ্ম হতে হবে সেটা বলতে গেলে আলাদা একটা ডকুমেন্টারি চাই। প্রজেক্টটি কতটা শক্ত সেটা বোঝাতে শুধু এটুকু বললেই হয়ঃ হাবলের উৎক্ষেপণের পরেই দেখা গেছিল তার সিঙ্গল মিররে অতিসূক্ষ্ম একটা সমস্যার কারণে ছবি অপরিস্কার আসছে। তার জন্য নাসা-কে একটা ঐতিহাসিক মানব অভিযান চালাতে হয় মহাকাশেই সেটাকে সারাই করার জন্য! এবারে ওয়েবের কথা ভাবুনঃ এরকম অস্বাভাবিক জটিল যন্ত্রটিকে মহাকাশে এতটা দূরত্বে পাঠানো হবে যে সেখানে গিয়ে সারাইয়ের কোন সুযোগ নেই। একটা ক্ষুদ্রতম গণ্ডগোল মানেই ২০ টি দেশের হাজার হাজার বিজ্ঞানীর ২৫ বছরের পরিশ্রম আর ১০০০ কোটি ডলার এক নিমেষে পণ্ড!
মিররের টেস্টিং চলছে
সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় ওয়েবের মিরর
মহাকাশে অবস্থানঃ সূর্য-পৃথিবী L2 point এর কাছে।
উৎক্ষেপণ ও স্থাপনের পরিকল্পনাঃ
সবশেষে দুটি সুন্দর ভিডিও রইল এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং কীভাবে উৎক্ষেপণের পর একে স্থাপন ও চালু করা হবেঃ (জটিলতাটা খুব ভালভাবে অনুভব করা যাবে এটা থেকে যেটা এই উত্তরে প্রায় কিছুই বোঝাতে পারিনি)
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মূলত ইনফ্রারেড রশ্মি ডিটেক্ট করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হইছে।এই মহাবিশ্বের যত দূরে দৃষ্টি রাখা সম্ভব হবে আমরা ততই মহাবিশ্বের অতীতকে দেখতে পাবো।১৩ বিলিয়ন লাইট ইয়ার দূরের কোনো ডিস্ট্যান্ট গ্যালাক্সি থেকে আশা আলো আমাদেরকে ১৩ বিলিয়ন বছর আগের গ্যালাক্সি সম্পর্কে ধারনা দিবে।
ইনফ্রারেড রশ্মি ডিটেক্ট করার কারন, বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করছেন, এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে এবং দূরের গ্যালাক্সি গুলো প্রতিনিয়ত আমাদের থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে। ওই দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আসা আলোও ভিজিবল ওয়েব লেনথ থেকে রেড শিফটিং এর কারনে (আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়া) ইনফ্রারেড এ রূপান্তরিত হয়ে আমাদের কাছে পৌছাচ্ছে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এর সবচেয়ে বড় দুইটা অংশের একটা ছয় মিটার ব্যাসের হলুদ প্লেট যা দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আসা ইনফ্রারেড রশ্মি ক্যাপ্চার করবে।আরেকটা হচ্ছে প্রায় টেনিস কোর্টের সাইজের ৫ স্তরের হিট শিল্ড যা সূর্য এবং পৃথিবীর দিক বরাবর বিস্তৃত করে রাখা হবে যাতে করে সূর্য, পৃথিবী ও চাদ থেকে আগত তাপ মেইন টেলিস্কোপের অংশে পৌঁছাতে না পারে, কারন, দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আসা, খুবই দূর্বল হিট সিগনাল ক্যাপচার কারার জন্যে টেলিস্কোপ ইনস্ট্রুমেন্ট এর তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ রাখতে হবে! মানে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের একপাশে পানি সিদ্ধ হয়ে যাবে আর ঠিক অপর পাশে বাতাসও ফ্রিজ হয়ে যাবে।
প্রায় টেনিস কোর্টের মতন বড় হিট শিল্ড কোনোভাবেই একটা রকেটের ভিতর দিয়ে পাঠানো সম্ভব না তাই পৃথিবীকে গোল বলা ধুরন্ধর নাশার বিজ্ঞানীরা কাগজ ভাজ করার খুবই প্রাচীন জাপানিজ টেকনিক অরিগ্যামিরর সাহায্য নিয়েছে এবং এই বড় হিট শিল্ড আর টেলিস্কোপের অংশকে ভাজ করে মহাকাশে পাঠায় দিচ্ছে।জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ল্যাগরেন্জ পয়েন্ট ২ তে পৌছানোর পর প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তার এই ভাজ করা হিটশিল্ড খুলবে।এই প্রক্রিয়ায় প্রায় তিনশটারও বেশী ফ্যাক্টর আছে যার কারনে পুরো মিশনই ফেইলড হয়ে যেতে পারে!২০১৮ তে ফইনাল টেস্টিং এর সময় এরকম দূর্ঘটনা ঘটে যার কারনে মিশন শিডিউল প্রায় দুই বছর পিছিয়ে যায়।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এখন ল্যাগরেন্জ পয়েন্ট ২ এর জন্য যাত্রা করতেছে।যেহেতু তার শুধু একদিকেই থ্রাস্টার আছে তাই কোনো কারনে ওভার থ্রাস্টিং হয়ে গেলে সে আর ল্যাগরেন্জ পয়েন্ট ২ তে নিজের স্পিড কমাতে পারবে না আর এই ভয়ংকর শূন্য মহাবিশ্বে চিরতরের জন্যে হারিয়ে যাবে!
অরিগ্যামি নিয়ে নাসায় আরো অনেক প্রজেক্ট এর কাজ শুরু করা হচ্ছে।আমরা যখন খুব তীব্র আলোর সামনে কোনো ছবি তুলি যেমন কড়কড়া সূর্য আলোর দিকে মুখ করে একটা চড়ুই পাখি , তখন পুরো ছবিটাতেই তীব্র আলো বাদে অন্য কিছুর ডিটেইলস পাওয়া যায় না।বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান প্রশ্ন আমরা এই অতল অন্ধকারে কি একা নাকি আমাদের আরো ভাই ব্রাদার আছে।লাইফ সাসটেইনেবল প্ল্যানেট পর্যবেক্ষন করতে গেলে ওই গ্রহ যে নক্ষত্রের চারপাশ দিয়ে ঘুরতেছে সেই নক্ষত্রের তীব্র আলোর কারনে গ্রহের স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায় না।তাই মহাকাশে পাঠানো টেলিস্কোপের সামনে ছাতা ধরে রাখার জন্য অরিগ্যামি স্ট্রাকচার তৈরি করা হচ্ছে যা ওই টেলিস্কোপের সামনে থেকে নক্ষত্র থেকে আসা আলো ব্লক করবে আর আমরা আমাদের ভাই ব্রাদারদের খুজে পাবো!
টেলিস্কোপ আবিস্কারের ইতিহাস?
টেলিস্কোপ আবিষ্কারের ইতিহাস খুব বেশি দূরের নয়।কারন প্রথম প্রতিবিম্বিত দুরবিন তৈরীর কয়েক দশকের মধ্যে এটি আবিষ্কার হয়েছিল।বিংশ শতকে, ১৯৩০-এর দশকে রেডিও টেলিস্কোপ এবং ১৯৬০-এর দশকে ইনফ্রারেড টেলিস্কোপসহ অনেক নতুন ধরনের টেলিস্কোপ আবিষ্কৃত হয়েছিল।
টেলিস্কোপ আবিষ্কারের ইতিহাসের কথা বলতে গেলে যার নামটি না নিলে না হয় তিনি হচ্ছেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে আল হাইথাম। তাকে আধুনিক আলোকবিদ্যার জনক বলা হয়।
আল-হাইথাম আলোকবিদ্যা নিয়ে বেশ কিছু যুগান্তকারী কাজ করেন।তিনি একটি বই লেখেন,নাম ‘কিতাব আল মানাযির’ যা পরবর্তীতে ইংরেজি ভাষায় ‘The Book of Optics’ নামে অনূদিত হয়।এ বইয়ে তিনি সর্প্রথম প্রাচীন গ্রীক ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেন।ধারণাটি ছিল এমন, আলো চোখের মধ্যে থেকে আসে এবং বস্তুতে প্রতিফলিত হয়ে আবার চোখে ফিরে আসে ।
চোখ কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে এ বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।চোখের ব্যবচ্ছেদের ব্যবহার করে এবং পূর্ববর্তী জ্ঞানীদের রেখে যাওয়া কাজের সহায়তায় নিয়ে,আলো কীভাবে চোখে প্রবেশ করে,ফোকাস হয় এবং আবার চোখের পেছন দিকে অভিক্ষিপ্ত হয় সে ব্যাপারে বিস্তারিত ধারণা দেন।এ বইটি দ্বারা পরবর্তীকালে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা প্রভাবিত হন এবং তার কাজের গুরুত্ব বুঝতে পারে।ফলে বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে চশমা, ক্যামেরা, দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা টেলিস্কোপের প্রতি আগ্রহী হন এবং এদের নিয়ে কাজ করে উন্নতি সাধন করেন।
আল হাইথামের পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত টেলিস্কোপ নিয়ে কাজের তেমন কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে টেলিস্কোপের ইতিহাসে এরপরে দৃশ্যপটে একই সাথে হাজির হন তিনজন ব্যক্তি।
তারা হলেন:
> নেদারল্যান্ডের চশমা প্রস্তুতকারক হ্যান্স লিপার্সি,
> জাকারিয়াস জেনসন
> এবং জ্যাকব মিটাস।
১৪০০-এর দশকে ইউরোপ জুড়ে গ্লাস ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।এই লেন্সগুলি এত শক্তিশালী ছিল না,পালিশ করা হয়নি এবং পরিষ্কার ছিল না।তাদের ত্রুটির কারণে জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণের জন্য উপযোগী ছিল না।তারপরে ১৬০০ এর দশকের গোড়ার দিকে লেন্স নির্মাতারা লেন্স কাটা এবং পালিশ করার ক্ষমতা প্রসারিত করে।
এই সময়েই চশমা নির্মাতা হ্যান্স লিপারশে লেন্স নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন।
হ্যান্স লিপার্সি ১৬০৮ সালে একটি অল্প ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিস্কোপ তৈরি করতে সক্ষম হন।তার এ টেলিস্কোপটি দিয়ে দূরের বস্তুকে তিন গুণ বিবর্ধিত করে দেখা যেত ।তখনকার সময়ের মানুষ এ ধরনের প্রযুক্তির সাথে অপরিচিত ছিল বলে এটা সহজেই জনসাধারণের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হলো এবং ধীরে ধীরে লোকমুখে হ্যান্স লিপার্সির আবিষ্কারের কথা সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ল।
গ্যালিলিও দ্বারা নির্মিত টেলিস্কোপ
এদিকে ইতালীর বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলির কানে এই খবর যায়।হ্যান্স লিপার্সির টেলিস্কোপ আবিষ্কারের এক বছর পর ১৬০৯ সালে হ্যান্স লিপার্সির টেলিস্কোপের উপর ভিত্তি করে আরো উন্নত একটি টেলিস্কোপ নির্মাণ করেন।
এই টেলিস্কোপটি দিয়ে দূরের বস্তুকে ৩০ গুণ বিবর্ধিত করে দেখা যেত।এ ব্যাপারে তিনি তার এক প্রবন্ধে লেখেন, আজ থেকে প্রায় দশ মাস আগে আমার কাছে একটি সংবাদ এসে পৌঁছায়।সংবাদটি ছিল,এক ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা সম্পর্কে। তিনি নাকি এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যা দিয়ে দূরের বস্তুদের কাছের বস্তুর মতোই স্পষ্ট দেখা যায়।এ খবর পাওয়া মাত্রই কীভাবে এমন একটি যন্ত্র নির্মাণ করতে পারি সে ব্যাপারে ভাবতে লাগলাম।
টেলিস্কোপের উন্নতি সাধনের পর গ্যালিলিও বিশ্ববাসীর সামনে তা তুলে ধরলেন।এটি দিয়ে তিনি আকাশ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন।তবে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে গ্যালিলিওই প্রথম ব্যক্তি যিনি দূরের গ্রহ-নক্ষত্রদের আলোক বিন্দু হিসেবে নয়,বরং তাদের প্রকৃত রূপ দেখতে পেরেছিলেন।গ্যালিলিও তাঁর নিজের টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণে মেতে রইলেন।
১৩ মার্চ, ১৬১০ সালে গ্যালিলিও টেলিস্কোপ দিয়ে দূরের জ্যোতিষ্কদের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে একটি বই প্রকাশ করেন। নাম Sidereus Nuncius, যার বাংলা করলে এরকম, নক্ষত্র থেকে সংবাদ বাহক । এ বইয়ে তিনি তার চন্দ্র বিষয়ক বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেন।পর্যবেক্ষণের সময় তিনি চাঁদের পৃষ্ঠে অনেক খাদ লক্ষ্য করেন।পৃথিবী পৃষ্ঠের মতো চাঁদের পৃষ্ঠেও পাহাড়-পর্বত, উপত্যকা,নদী,জলাশয় প্রভৃতি আছে বলে তিনি অভিমত ব্যাক্ত করেন।চাঁদের পৃষ্ঠে তিনি কতগুলো ছোট-বড় দাগ দেখেছিলেন।তবে তিনি এগুলোকে চাঁদের সমুদ্র ভেবে ভুল করেছিলেন।
গ্যালিলিওর জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের ব্যাপারটি হলো,তিনি তার টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে একসময় সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণের জন্য পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান।সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি সম্পর্কে তখন জানা ছিল না।
১৬১০ সালের শেষের দিকে পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়।এ সময় গ্যালিলিও সর্বপ্রথম সূর্যের পৃষ্ঠে কতগুলো কালো দাগ দেখতে পান।কিন্তু কোনো এক অদ্ভুৎ কারণে ১৬১২ সালের মে মাসের আগে তিনি এ কথা প্রচার করেননি।কিন্তু গ্যালিলিওর দূর্ভাগ্য,ততদিনে জার্মানীর শাইনার,ইংল্যন্ডের টমাস হ্যারিয়ট আর নেদারল্যান্ডের জন ফ্যাব্রিসিয়াস প্রত্যেকেই আলাদাভাবে সূর্যপৃষ্ঠের কালো দাগগুলো আবিষ্কার করে ফেলেন।এগুলোকে আমরা সৌরকলঙ্ক নামে চিনি।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, বৃহস্পতির উপগ্রহ আবিষ্কার করা।তিনি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বৃহষ্পতির মোট চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান।এর মাধ্যমেই তখনকার সময়ে প্রচলিত ধারণা ‘গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি কেবল পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে।
খালি চোখে দেখা যায় না এমন অনেক নক্ষত্র গ্যালিলিও তার সদ্য আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে লাগলেন। সে সময় কৃত্তিকা মণ্ডলের মাত্র ৬ টি নক্ষত্র দেখা যেত। কিন্তু গ্যালিলিও তার জীবদ্দশাতে এই নক্ষত্রমণ্ডলে ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন।
পর্যবেক্ষণ দ্বারা তিনি দেখান, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি আসলে অগণিত নক্ষত্রের সমষ্টি।বেশ কিছু বিষমতারা, নক্ষত্রমণ্ডল এবং নীহারিকা আবিষ্কার করেন।পৃথিবী থেকে যে সকল নক্ষত্রের আপাত উজ্জ্বলতার মান পরিবর্তন হয় তাদের ভেরিয়েবল স্টার বা বিষম তারা বলে।হাইড্রোজেন গ্যাস,প্লাজমা ও ধূলিকণার সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের আন্তনাক্ষত্রিক মেঘকে নীহারিকা বলে।
নিউটন দ্বারা নির্মিত টেলিস্কোপ
প্রথম দিকের টেলিস্কোপে লেন্স ব্যবহার করা হতো।লেন্স ব্যবহারের কারণে,প্রচুর প্রতিসরণ হয়েছিল যার কারণে ছবিটি ঝাপসা দেখাচ্ছিল।এই সমস্যাটিকে ক্রোম্যাটিক অ্যাবারেশন বলা হত।তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিউটন তার টেলিস্কোপে লেন্সের পরিবর্তে আয়না ব্যবহার করেন এবং ১৬৬৮ সালে প্রথম প্রতিফলিত টেলিস্কোপ প্রস্তুত করা হয়েছিল, যা আজ নিউটনিয়ান রিফ্লেক্টর নামে পরিচিত।
টেলিস্কোপ কি?
শুরুর দিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা অবশ্য আকাশ পর্যবেক্ষণের মধ্যেই স্বীমাবদ্ধ ছিল।মহাজাগতিক বস্তু গুলো আমাদের থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থান করে।এত দূরের বস্তু সেখানে গিয়ে দেখা সম্ভব নয়,তাই দূরের বস্তু গুলোকে যদি চোখের সামনে নিয়ে আসা যায়,তাহলে কেমন হয় ?
টেলিস্কোপ মূলত এই কাজটাই করেছে।দূরের মহাজাগতিক বস্তু গুলোকে কাছে নিয়ে এসেছে।টেলিস্কোপ ছাড়া জ্যোতির্বিজ্ঞান কোনো ভাবেই আজকের এ অবস্থানে আসতে পারতো না।
টেলিস্কোপের আবির্ভাবের ফলে আমরা মহাকাশের অনেক রহস্যর সমাধান করতে পেরেছি। আজ আমাদের কাছে মহাকাশের অনেক তথ্য রয়েছে যা টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পরেই সামনে এসেছে। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানে টেলিস্কোপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
টেলিস্কোপ কি? (What Is Telescope)
Image
টেলিস্কোপ হল দূরবর্তী বস্তু দেখার জন্য ব্যবহৃত একটি যন্ত্র। এটি একটি টিউবের আকারে এবং বিশেষ ধরনের লেন্স ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই লেন্সগুলির সাহায্যে টেলিস্কোপ আমাদের দূরবর্তী বস্তুগুলি পরিষ্কার এবং বড় আকারে দেখায় টেলিস্কোপকে বাংলা ভাষায় টেলিস্কোপ বা দূরবীন বলা হয়।
মূলত টেলিস্কোপ হচ্ছে একটি অপটিক্যাল যন্ত্র যা লেন্স বা বাঁকানো আয়না।এই লেন্স ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিকিরণের প্রতিবিম্বের মাধ্যমে দূরবর্তী বস্তুগুলো পর্যবেক্ষণ করতে এটি ব্যবহার করা হয়।বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে দূরবর্তী বস্তুগুলোকে প্রশস্ত করে তোলা এর মূল কাজ।
টেলিস্কোপ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ টেলি ‘দূর’ ও স্কোপেইন ‘দেখতে’ হতে এসেছে। টেলিস্কোপের আসল অর্থ ‘দূরদর্শন’।
দূরবীক্ষণ যন্ত্র তথা দুরবিন (টেলিস্কোপ) এমন এক যন্ত্র, যা দূরবর্তী বস্তু থেকে নির্গত বিকিরণ সংগ্রহ, পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ কার্যে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশের অক্ষাংশ
বাংলাদেশ বা এর পাশ্ববর্তী অঞ্চল থেকে তারা চিনতে এবং বিষুব লম্ব সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিষুব রেখা থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। ফলে এর অক্ষাংশ হল ২৩ ডিগ্রি উত্তর। ঠিক এই জায়গা দিয়েই দুটি ক্রান্তীয় রেখার একটি কর্কটক্রান্তি (Tropic of cancer) রেখা চলে গেছে পূর্ব- পশ্চিমে।
পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে।
পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ মেরু থাকলেও পূর্ব পশ্চিম মেরু নেই কেন?
পৃথিবী প্রতি ঘন্টায় ১৬৭০ কি.মি. বেগে (সেকেন্ডে ৪৬৫ মি. বা ১০৭০ মাইল /ঘণ্টা) নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরছে।এই ঘুর্নণের দিক হচ্ছে পশ্চিম থেকে পূবে। আর এই ঘূর্নণের দিকই নির্ধারণ করেছে কোন দিক মেরু হবে। এই ঘুর্ণন বেগ -শুধুমাত্র বিষুব অঞ্চলের জন্য কার্যকর, যা দুই মেরুর ঠিক মাঝে অবস্থিত। বিষুব অঞ্চল থেকে যতই মেরুর দিকে যাওয়া হবে ততই এই বেগ হ্রাস পেতে থাকবে।
বিষুব রেখা থেকে মেরুর দিকে গেলে ঘূর্নণের হ্রাসপ্রাপ্ত মান বের করতে হলে স্বাভাবিক মানের সাথে অক্ষাংশের cos এর মান গুণ করতে হবে।
পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝে অবস্থিত বিষুব অঞ্চল
এখন ধরুন আপনি ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের বেগ কত জানতে চাচ্ছেন।তাহলে এই বেগ হবে 1670 * Cos 45 Km/h= 1670*.707 = 1180 Km/h।
এই মান কমতে কমতে মেরুতে গিয়ে জিরো হয়। কারণ মেরুতে অক্ষাংশ হল ৯০ ডিগ্রি। Cos 90 = 0 বলে গুনফল হয় জিরো।
এটাতো গাণিতিক মত। তবে গণিত কখোনই অসত্য কথা বলে না। মেরুতে বেগ কেন জিরো এটা একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি। হ্যাঁ, আমরা টপিকের মধ্যেই আছি। একটু পর বোঝা যাবে।
গ্রামে আগেকার দিকে মাঠের মাঝখানে একটি খুঁটি গেঁড়ে খুঁটির সাথে গরুকে বেঁধে খুঁটির চারপাশে চক্রাকারে ঘোরানো হত। এতে করে ধান গাছে অল্প যে কিছু ধান থেকে যেত তা গরুর পায়ের চাপে ঝরে পড়ে নিচে জমা হত।
আমরা যদি একটু চিন্তা করি, দেখা যাবে যে রশির প্রান্ত বিন্দুতে ঘূর্নণ বেগ সর্বোচ্চ। খুঁটির দিকে কাছাকাছি হলে ক্রমেই বেগ কমতে থাকবে। কারণ যে সময়ে বাইরের প্রান্ত বিন্দু এক চক্কর দেবে ঠিক সেই সময়েই ভেতরের যে কোন বিন্দুও এক চক্কর দিয়ে দেবে। কিন্তু ভেতরের যে কোন বিন্দু চক্কর দিতে অনেক কম পথ যেতে হবে তাই সময় একই লাগায় ভেতরের বিন্দুর বেগ কম হতে হবে।
কল্পনায় এবার পৃথিবীকে একবার পশ্চিম থেকে পূবে চক্কর দেওয়ান। অথবা একটি আপেল/ কমলা হাতে নিয়ে একইভাবে ঘোরান। দেখবেন প্রান্তবিন্দুর দিকে ক্রমান্বয়ে বেগ কম এবং একেবারে মেরুতে জিরো।
এবার মূল আলচনায় ফিরে আসি।
আসলে এই ঘূর্ণনের সাথেই মেরুর ব্যাপার জড়িত।
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করায় এর দুই আবর্তন অক্ষ উত্তরে ও দক্ষিণে অবস্থিত। আসলে এই অক্ষটি হচ্ছে কেন্দ্র দিয়ে দুই মেরুর সংযোজক সরলরেখা। দুই মেরু বিন্দু পৃথিবীর আবর্তন অক্ষের দুই প্রান্ত বিন্দু। ফলে এই বিন্দু দুইটি আসলে বিশেষ দুটি বিন্দু যেমন বিশেষ বিন্দু আর কোথাও নেই।
পৃথিবী যদি উত্তর থেকে দক্ষিণে বা দক্ষিণ থেকে উত্তরে আবর্তন করত তবে পূবে ও পশ্চিমে এই রকম বিশেষ দুটি বিন্দু সৃষ্টি হত।
আবার, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু যথাক্রমে পৃথিবীর সর্ব উত্তর ও সর্ব দক্ষিণের বিন্দু। বিন্দুগুলো প্রকৃত/আক্ষরিক অর্থেই প্রান্তিক। কিন্তু একটু চিন্তা করুন পূর্ব বা পশ্চিমে কি এমন কোন প্রান্তিক অবস্থান আছে যাকে আমরা সবচেয়ে পূর্ব বা সবচেয়ে পশ্চিম বলবো?
ম্যাপে আমরা যেটাকে পূর্ব / পশ্চিম বলি সেটা শুধুই আপেক্ষিক। বেশিরভাগ ম্যাপেই আমেরিকাকে পশ্চিমে ও ওশোনিয়াকে পূর্বে দেখানো হয়। তাই বলে বলা যাবে না যে আমেরিকাই সবচেয়ে পূর্বের জায়গা।
পৃথিবীর ম্যাপকে একটু ভিন্নভাবে দেখানো হল। তাহলে আমেরিকা আসলে আমাদের থেকে পূর্ব দিকে নাকি পশ্চিম দিকে?
ইলাস্ট্রেটেড অক্সফোর্ড ডিকশনারির পেছনে একটি ওয়ার্ল্ড ম্যাপ আছে। তাতে আমেরিকাকে দেখানো হয়েছে রাশিয়ার ডানে - মানে পূবে- একেবারে পৃষ্টার ডান পাশে। দেখানো যেতেই পারে। তার মানে এই নয় যে আমেরিকাই এখন পূবে চলে গেছে। ঐ ম্যাপে আফ্রিকা ও ইউরোপ একেবারে বাঁয়ে- মানে পশ্চিমে। কিন্তু কোনটাই পরম পশ্চিম বা পরম পূর্ব নয়।
ধরুন, আপনি পূর্ব-পশ্চিমের কোন অবস্থান থেকে (মানে কোন একটি দ্রাঘিমাংশ বিন্দু থেকে) পূবে যাচ্ছেন। যতই পূবে যান না কেন পশ্চিম সব সময় আপনার পেছনেই থাকবে।
যেমন,আপনি বাংলাদেশ থেকে পূবে যেতে থাকলে ক্রমে মায়ানমার, চীন, তাইওয়ান, জাপান, প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে আমেরিকায় পৌঁছে যাবেন। আরো যেতে থাকলে মেক্সিকো, কিউবা, মরক্কো, আলজেরিয়া, মধ্য প্রাচ্য, পাকিস্তান, ভারত হয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবেন। নাক বরাবর যদি হাঁটতে থাকেন, সব সময়ই কিন্তু আপনার পেছনে পশ্চিম থাকবে।
কিন্তু এবার আপনি যদি বলেন, না আ মি পূর্ব-পশ্চিমে পরিধি পাড়ি না দিয়ে আমি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পাড়ি দেব।
এই অভিযানে আপনাকে স্বাগতম। এবারে আপনি উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করলেন। তাহলে ভারত, ভুটান, চীন, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়া পাড়ি দিয়ে আপনি চলে যাবেন সুমেরুতে, মানে উত্তর মেরুতে।
ধরুন ঠিক এই মুহূর্তে আপনি সুমেরু (উত্তর মেরু) থেকে আরেক পা বাড়ালেন । একটু আগে আপনার পেছনে ছিলো দক্ষিণ। এবার? পেছনে উত্তর আর সামনে দক্ষিণ।
হায়! হায়! আপনিতো ঘোরেননি, কিন্তু দিক যে পাল্টে গেলো!
যাক, কিছু মনে না করে আপনি যখন আরো এগিয়ে আমেরিকা মহাদেশের উপর দিয়ে চলে বাংলাদেশের প্রতিপাদ স্থান চিলি পার হয়ে দক্ষিণ মেরু ক্রস করলেন, আরেকটি ধাক্কা! সামনে এতক্ষণ দক্ষিণ ছিল, তা আবার ঘুরে উত্তর হয়ে গেলো।
এটাই হলো উত্তর ও দক্ষিণ বিন্দুর বিশেষত্ব। কিন্তু পূর্ব বা পশ্চিমের কোন বিন্দুর এমন কোন বিশেষত্ব নেই, কোন প্রান্তিক বিন্দু নেই, তাই মেরুও নেই।
সূত্রঃ
১। image.gsfc.nasa.gov/poetry/ask/a10840.html
পৃথিবীর আবর্তন বেগ?
এক কথায় বললে বলতে হয়, পৃথিবীর আবর্তন বেগ ঘণ্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। তবে এই মান সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আসুন নিচে বিস্তারিত আ লোচনা করা যাক।
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরছে,পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে চলছে। এই আবর্তনের কারণেই ক্রমান্বয়ে রাত দিন হয় এবং সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ঘটে।পশ্চিম থেকে পূবে এই আবর্তনের জন্যেই উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দুটি মেরুর উদ্ভব ঘটেছে।
পৃথিবীর আবর্তন বেগ কিন্তু সর্বত্র সমান নয়। বিষুব অঞ্চল তথা দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে এই বেগ সর্বোচ্চ। অন্য দিকে, বিষুব অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে নিকটবর্তী হতে থাকলে বেগ কমতে থাকে। ঠিক মেরুবিন্দুতে বেগ শুন্য।
এটা বোঝার জন্যে মনে করুন, আপনি একটি সুতার প্রান্তবিন্দুতে একটি বল বেঁধে সুতাসহ বলটিকে চারপাশে ঘোরাচ্ছেন। তাহলে দেখবেন সুতার একেবারে প্রান্তবিন্দুতে বেগ সর্বোচ্চ। সুতার কোন বিন্দু আপনার হাতের যত নিকটে হবে তত বেগ হবে কম। ঐ ঘূর্ণন পথের কেন্দ্রবিন্দুতে বেগ হবে জিরো। কারণ সেটি ঘুরছেই না।
কল্পনায়,পৃথিবীকে একবার পশ্চিম থেকে পূবে চক্কর দেওয়ান অথবা একটি টেনিস বল বা কমলা হাতে নিয়ে একইভাবে ঘোরান। দেখবেন প্রান্তবিন্দুর দিকে ক্রমান্বয়ে বেগ কম এবং একেবারে মেরুতে জিরো।
অবশ্য, এখানে আমরা রৈখিক বেগের কথা বলেছি। ঘূর্ণায়মান বস্তুর জন্যে আরেকটি বেগ হল কৌণিক বেগ। সেটি কিন্তু প্রতিটি বিন্দুতে একই হবে। কারণ, প্রতিটি বিন্দুই সমান সময়ে সমান পথ তথা ৩৬০ ডিগ্রি অতিক্রম করবে।
এখন,আসুন নিজেরাই বের করে ফেলি পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত।
আমরা জানি সমবেগের জন্য সূত্র হল S = vt।
এখানে, S = অতিক্রান্ত দূরত্ব,
v = বেগ এবং
t = সময়
তাহলে বেগের সূত্র হবে,
বেগ বের করতে হলে আমাদের অতিক্রান্ত দূরত্ব (S) ও এই দূরত্ব পাড়ি দিতে অতিবাহিত সময় (t) জানতে হবে।
আমরা জানি,পৃথিবী প্রায় ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তন সম্পন্ন করে। আর বিষুব রেখা বরাবর এর পরিধি হল ৪০,০৭৫ কিমি.। এই পথই আমরা (আসলে আমরা না,যারা বিষুব অঞ্চলে বাস করে) পৃথিবীর বুকে বসে পাড়ি দেই ২৪ ঘণ্টায়।
তাহলে, বিষুব অঞ্চলে আবর্তন বেগ = (৪০০৭৫ ÷২৪) কিমি. /ঘণ্টা।
অর্থ্যাৎ ঘন্টায় প্রায় ১৬৭০ কি. মি। মাইলের হিসাবে এই বেগ হল ঘণ্টায় ১০৭০। এসআই এককে হিসেব করলে হবে সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার।
এই বেগ কিন্তু বিষুব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকলে পৃথিবীর আবর্তন অক্ষের দূরত্ব কাছে চলে আসবে। ফলে ঐ বিন্দুর সাপেক্ষে পরিধি তথা ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রান্ত পথ আরো কম হবে।
[উপরের চিত্রটি দেখুন]
বিষুব অঞ্চল ছাড়া অন্য অঞ্চলে বেগ বের করার জন্য আমাদেরকে মূল বেগের সাথে ঐ স্থানের অক্ষাংশের cos এর মান গুণ করতে হবে।
তাহলে, ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হবে
v = 1670 × cos 45 km/h
= 1670 × 0.707
= 1180 km/h।
অর্থ্যাৎ ঘণ্টায় ১১৮০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৩২৮ মিটার।
আমাদের ঢাকায় পৃথিবীর আবর্তব বেগ কত হবে?
ঢাকার অক্ষাংশ হল 23.7 ডিগ্রি উত্তর।
তাহলে, বেগ, v = 1670 × (cos 23.7) = 1529 km/h
অর্থ্যাৎ, ঘণ্টায় ১৫২৯ কিমি. বা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪২৪ মিটার।
পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত?
এক কথায় বললে বলতে হয়, পৃথিবীর আবর্তন বেগ ঘণ্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। তবে এই মান সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আসুন নিচে বিস্তারিত আ লোচনা করা যাক।
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরছে
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে চলছে। এই আবর্তনের কারণেই ক্রমান্বয়ে রাত দিন হয় এবং সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ঘটে।পশ্চিম থেকে পূবে এই আবর্তনের জন্যেই উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দুটি মেরুর উদ্ভব ঘটেছে।
পৃথিবীর আবর্তন বেগ কিন্তু সর্বত্র সমান নয়। বিষুব অঞ্চল তথা দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে এই বেগ সর্বোচ্চ। অন্য দিকে, বিষুব অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে নিকটবর্তী হতে থাকলে বেগ কমতে থাকে। ঠিক মেরুবিন্দুতে বেগ শুন্য।
এটা বোঝার জন্যে
মনে করুন, আপনি একটি সুতার প্রান্তবিন্দুতে একটি বল বেঁধে সুতাসহ বলটিকে চারপাশে ঘোরাচ্ছেন। তাহলে দেখবেন সুতার একেবারে প্রান্তবিন্দুতে বেগ সর্বোচ্চ। সুতার কোন বিন্দু আপনার হাতের যত নিকটে হবে তত বেগ হবে কম। ঐ ঘূর্ণন পথের কেন্দ্রবিন্দুতে বেগ হবে জিরো। কারণ সেটি ঘুরছেই না।
কল্পনায়,পৃথিবীকে একবার পশ্চিম থেকে পূবে চক্কর দেওয়ান অথবা একটি টেনিস বল বা কমলা হাতে নিয়ে একইভাবে ঘোরান। দেখবেন প্রান্তবিন্দুর দিকে ক্রমান্বয়ে বেগ কম এবং একেবারে মেরুতে জিরো।
অবশ্য, এখানে আমরা রৈখিক বেগের কথা বলেছি। ঘূর্ণায়মান বস্তুর জন্যে আরেকটি বেগ হল কৌণিক বেগ। সেটি কিন্তু প্রতিটি বিন্দুতে একই হবে। কারণ, প্রতিটি বিন্দুই সমান সময়ে সমান পথ তথা ৩৬০ ডিগ্রি অতিক্রম করবে।
এখন,আসুন নিজেরাই বের করে ফেলি পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত।
আমরা জানি সমবেগের জন্য সূত্র হল S = vt।
এখানে, S = অতিক্রান্ত দূরত্ব,
v = বেগ এবং
t = সময়
তাহলে বেগের সূত্র হবে,
বেগ বের করতে হলে আমাদের অতিক্রান্ত দূরত্ব (S) ও এই দূরত্ব পাড়ি দিতে অতিবাহিত সময় (t) জানতে হবে।
আমরা জানি,পৃথিবী প্রায় ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তন সম্পন্ন করে। আর বিষুব রেখা বরাবর এর পরিধি হল ৪০,০৭৫ কিমি.। এই পথই আমরা (আসলে আমরা না,যারা বিষুব অঞ্চলে বাস করে) পৃথিবীর বুকে বসে পাড়ি দেই ২৪ ঘণ্টায়।
তাহলে, বিষুব অঞ্চলে আবর্তন বেগ = (৪০০৭৫ ÷২৪) কিমি. /ঘণ্টা।
অর্থ্যাৎ ঘন্টায় প্রায় ১৬৭০ কি. মি। মাইলের হিসাবে এই বেগ হল ঘণ্টায় ১০৭০। এসআই এককে হিসেব করলে হবে সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার।
এই বেগ কিন্তু বিষুব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকলে পৃথিবীর আবর্তন অক্ষের দূরত্ব কাছে চলে আসবে। ফলে ঐ বিন্দুর সাপেক্ষে পরিধি তথা ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রান্ত পথ আরো কম হবে। [উপরের চিত্রটি দেখুন]
বিষুব অঞ্চল ছাড়া অন্য অঞ্চলে বেগ বের করার জন্য আমাদেরকে মূল বেগের সাথে ঐ স্থানের অক্ষাংশের cos এর মান গুণ করতে হবে।
তাহলে, ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হবে
v = 1670 × cos 45 km/h
= 1670 × 0.707
= 1180 km/h।
অর্থ্যাৎ ঘণ্টায় ১১৮০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৩২৮ মিটার।
আমাদের ঢাকায় পৃথিবীর আবর্তব বেগ কত হবে?
ঢাকার অক্ষাংশ হল 23.7 ডিগ্রি উত্তর।
তাহলে, বেগ, v = 1670 × (cos 23.7) = 1529 km/h
অর্থ্যাৎ, ঘণ্টায় ১৫২৯ কিমি. বা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪২৪ মিটার।
অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমারেখা কি
রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে আপনাকে আগে পৃথিবীর মানচিত্র এবং অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার বিষয়ে ভালো ধারনা থাকতে হবে ।
অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমার সাহায্যে পৃথিবীর যে কোনো স্থানের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা যায়।এই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ব্যবহার করে কোনো স্থান যেমন সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব তেমনই সেই স্থানের আবহাওয়া গত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও জানা সম্ভব ।
এখানে অক্ষাংশ কী, অক্ষাংশের বৈশিষ্ট্য, কাজ ও অক্ষাংশ নির্ণয় পদ্ধতি নিয়ে আ লোচনা করা উল্লেখ হলো।
অক্ষাংশ কী (What is Latitude)?
অক্ষাংশ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো latitude (ল্যাটিচুড)। সহজ কথায়, নিরক্ষরেখা বা বিষুব রেখা হতে উত্তর বা দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সে স্থানের অক্ষাংশ বলে ।
ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থান থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত যদি কোন সরলরেখা টানা হয় তাহলে ঐ রেখাটি নিরক্ষীয় তলের সাথে যে কোণ সৃষ্টি করবে তা হবে ঐ স্থানের অক্ষাংশ।
নিরক্ষরেখার অক্ষাংশকে ধরা হয় শূন্য ডিগ্রি (০°), এখান থেকে সুমেরু ও কুমেরু অক্ষাংশ যথাক্রমে ৯০° উত্তর ও ৯০° দক্ষিণ।
সমাক্ষরেখা গুলো নিরক্ষরেখার সমান্তরাল বলে একই সমাক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের অক্ষাংশ একই। অক্ষাংশকে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ড একক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে ভূকেন্দ্রকে ছেদ করে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে মেরুরেখা বা অক্ষ বলে। মেরুরেখা বা অক্ষ ইংরেজি হলো axis।
অক্ষের উত্তর প্রান্তবিন্দুকে উত্তরমেরু বা সুমেরু (north pole) এবং দক্ষিণ প্রান্তবিন্দুকে দক্ষিণমেরু বা কুমেরু (south pole) বলে।মেরুদ্বয় হতে সমান দূরত্বে পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে, এই রেখাকে বলা হয় নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা (equator)।
নিরক্ষরেখা উত্তর-দক্ষিণে পৃথিবীকে সমান দুটি ভাগে ভাগ করেছে। উত্তর ভাগের নাম উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ ভাগের নাম দক্ষিণ গোলার্ধ।
পৃথিবীর কৌণিক মাপ ৩৬০° এবং কিলোমিটার হিসেবে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার। সুতরাং ১° অক্ষাংশ পরিমিত স্থান প্রায় ১১১.১ কিলোমিটার হয়।
সাধারণভাবে অক্ষরেখাগুলো পরস্পরের সমান্তরাল বলে অক্ষরেখাগুলোর প্রত্যেকটি একে অপরের থেকে প্রায় ১১১.১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। তবে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু দিকে ক্রমশ কিছুটা চাপা বলে সেখানে ১° অক্ষাংশের রৈখিক ব্যবধান ১১১ কিলোমিটার ধরা হয়। প্রতি ডিগ্রি অক্ষাংশকে ৬০ মিনিট এবং প্রতি মিনিট অক্ষাংশকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করা হয়। প্রতি মিনিট অক্ষাংশ গড়ে ১,৮৫৩ মিটারের সমান এবং প্রতি সেকেন্ডে অক্ষাংশ গড়ে প্রায় ৩১ মিটারের সমান।
অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Latitude)
• অক্ষরেখাগুলো পরস্পরের সমান্তরাল হওয়ায় যে কোন দুটো অক্ষরেখার মধ্যবর্তী দূরত্ব সব সময় সমান হয়।
• প্রতিটি অক্ষরেখা নিরক্ষরেখার সমান্তরালভাবে অবস্থিত, এজন্য একই অক্ষরেখায় অবস্থিত যে কোন স্থান হতে নিরক্ষরেখার দূরত্ব সব সময় সমান।
• অক্ষরেখাগুলোর পরিধি নিরক্ষরেখা হতে মেরুবিন্দুদ্বয়ের দিকে ক্রমশ ছোট হতে হতে শেষে বিন্দুতে পরিণত হয়। এ কারণে অক্ষরেখাগুলোর পরিধি সর্বত্র সমান নয়।
• নিরক্ষরেখা নিজেও একটি অক্ষরেখা, পৃথিবীর ঠিক মধ্যস্থান ঘিরে আছে বলে নিরক্ষরেখার পরিধি সর্ববৃহৎ। অনুরূপভাবে মেরু অঞ্চলে পরিধি সর্বনিম্ন।
• অক্ষরেখা গুলো পূর্ব-পশ্চিমে পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। তাই অক্ষরেখা গুলোর সবখানে একই সময়ে সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত হয় না।
• একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য এবং জলবায়ু প্রায় একই রকম হয়।
অক্ষাংশের কাজ (Functions of Latitude)
• অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়। একই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা বিশিষ্ট স্থান ভূপৃষ্ঠে কেবল একটিই হতে পারে।
• অক্ষাংশ দ্বারা তাপমাত্রার পরিমাপ জানা যায়। নিরক্ষরেখা হতে ক্রমশ উত্তর ও দক্ষিণে তাপ হ্রাস পায়। একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের তাপমাত্রা সাধারণত একই হয়।
• অকূল সমুদ্রে বিপদাপন্ন জাহাজ বেতারের সাহয্যে তার অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানিয়ে দিলে সহজেই তার সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু অক্ষরেখা
• নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা: ০° ধরা হয়;
• কর্কটক্রান্তি রেখা: উত্তর গোলার্ধের ২৩.৫° উত্তর অক্ষরেখা;
• মকরক্রান্তি রেখা: দক্ষিণ গোলার্ধের ২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষরেখা;
• সুমেরু বৃত্ত: উত্তর গোলার্ধের ৬৬.৫° উত্তর অক্ষরেখা;
• কুমেরু বৃত্ত: দক্ষিণ গোলার্ধের ৬৬.৫° দক্ষিণ অক্ষরেখা।
নিরক্ষরেখা হতে উত্তর বা দক্ষিণে কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সে স্থানের অক্ষাংশ বলে
অক্ষাংশ নির্ণয় পদ্ধতি
সাধারণত ৫ টি পদ্ধতিতে অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। যথা-
• ১. ধ্রুবতারার সাহায্যে
• ২. হ্যাডলির অকট্যান্ট নক্ষত্রের সাহায্যে
• ৩. সূর্যের উন্নতির সাহায্যে
• ৪. সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে
• ৫. খুঁটির সাহায্যে
১. ধ্রুবতারার সাহায্যে
উত্তর গোলার্ধের যে কোন স্থান হতে প্রতি রাতে উত্তর আকাশে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ধ্রুবতারা দেখা যায়।
তবে এ গোলার্ধের সব জায়গা হতে ধ্রুবতারা আকাশে দিগন্ত হতে সমান উচ্চতায় দেখা যায় না। স্থানভেদে এ উচ্চতার পার্থক্য হয়। বিষুবরেখা হতে ধ্রুবতারাটি ঠিক দিগন্তরেখায় অবস্থান করে। নিরক্ষরেখায় ধ্রুবতারার উন্নতি ০° ধরা হয়।
তবে নিরক্ষরেখা হতে সুমেরুর দিকে প্রতি ১° অগ্রসর হলে ধ্রুবতারার উন্নতিও ১° করে বেড়ে যায়। সুমেরুতে ধ্রুবতারাকে ঠিক মাথার ওপর দেখা যায়। তাই সুমেরুতে ধ্রুবতারার উন্নতি ৯০° ধরা হয়। অর্থাৎ নিরক্ষরেখা যতই উত্তরে যাওয়া যায় অক্ষাংশ ততই বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং, উত্তর গোলার্ধের কোন স্থানের অক্ষাংশ ধ্রুবতারার উন্নতির সমান হয়। এ ক্ষেত্রে ধ্রুবতারার উন্নতি জানতে পারলে অতি সহজে অক্ষাংশ নিরূপণ করা যায়। তবে এ পদ্ধতি দিনের বেলা বা দক্ষিণ গোলার্ধের জন্য প্রযোজ্য নয়।
২. হ্যাডলির অকট্যান্ট নক্ষত্রের সাহয্যে
দক্ষিণ গোলার্ধ ধ্রুবতারা দেখা যায় না। তবে কুমেরুবিন্দু বরাবর দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে হ্যাডলির অকট্যান্ট নামে একটি নক্ষত্র দেখা যায়। দক্ষিণ গোলার্ধের কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করার সময় এ নক্ষত্রের সাহায্য নেয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
৩. সূর্যের উন্নতির সাহায্যে
উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের বেলায় সূর্যের উন্নতির সাহায্যে যে কোন স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি সূত্র ব্যবহার করা হয়।
সূত্র:
অক্ষাংশ = ৯০°- মধ্যাহ্নে সূর্যের উন্নতি ± বিষুবলম্ব।
সূর্যের বিষুবলম্ব বলতে সূর্য যে দিন যে অক্ষাংশের ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয় তাকে বোঝায়। পৃথিবীর বার্ষিক গতি জন্য সূর্যের আপাত পরিক্রমণ পথ বিষুবরেখা হতে ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ বা কর্কটক্রান্তি রেখা (tropic of cancer) ও ২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ বা মকরক্রান্তি রেখা (tropic of capricorn)। এ কারণেই সূর্যের বিষুবলম্ব ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত হয়। ২১ মার্চ হতে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সূর্যের বিষুবলম্ব উত্তরে এবং ২৩ সেপ্টেম্বর হতে ২১ মার্চ পর্যন্ত সূর্যের বিষুবলম্ব দক্ষিণে হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২১ জুন তারিখে কর্কটক্রান্তির ওপর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়।
সুতরাং ২১ শে জুন তারিখে সূর্যের বিষুবলম্ব ২৩.৫° উত্তরে। এভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর বিষুব লম্ব ০° এবং ২১ ডিসেম্বর তারিখের বিষুবলম্ব ২৩.৫° দক্ষিণ।
এক্ষেত্রে স্থানটি যদি উত্তর গোলার্ধে হয়, তবে উত্তরবাচক বিষুবলম্ব যোগ করতে হবে এবং দক্ষিণবাচক বিষুবলম্ব বিয়োগ করতে হবে। + চিহ্ন দ্বারা এটি বোঝান হয়েছে।
এ সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে কোনদিন মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতি ৪০° থাকলে এবং সেদিনের বিষুবলম্ব ২০° উত্তর হলে সে স্থানের অক্ষাংশ ৯০°-৪০°+২০° = ৭০° উত্তর হবে। এভাবে দক্ষিণ গোলার্ধের কোন স্থানের অক্ষাংশও নিরূপণ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সূর্যের উন্নতির সাথে উত্তর বিষুবলম্ব বিয়োগ ও দক্ষিণ বিষুবলম্ব যোগ করতে
হবে।
৪. সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে
সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যে সূর্যের উন্নতি কোণ নির্ণয় করে অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। যে যন্ত্রের সাহায্যে সূর্যের উন্নতি পরিমাপ করা হয়, তাকে সেক্সট্যান্ট যন্ত্র বলা হয়। সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সহায়তায় উত্তর গোলার্ধে মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতির কোণ নির্ণয় করে অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি সূত্র ব্যবহার করা হয়।
সূত্র: অক্ষাংশ = ৯০°- মধ্যাহ্ন সূর্যের উন্নতি ± বিষুবলম্ব
এ যন্ত্রে একটি দূরবীক্ষণ লাগানো থাকে। যন্ত্রটিকে প্রথমে উত্তরমুখী করে ভূমিতলের সাথে আনুভূমিক করে এটিকে ধীর গতিতে ওপরমুখী তোলা হয়, যেন এ যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ধ্রুবতারাকে দেখা যায়।
৫. খুঁটির সাহায্যে
উত্তর গোলার্ধের কোন সমতল স্থানের ওপর একটি খুঁটি পুঁতে সে স্থানের অক্ষাংশ নিরূপণ করা যায়।
যেমন: উত্তর গোলার্ধের একটি সমতল স্থানের ওপর খ ছ নামক একটি খুঁটি লম্বভাবে পোঁতা হলো। এবার তার বাম দিকে অল্প দূরত্বে আর একটি খুঁটি গ চ লম্বভাবে পোঁতা হলো। এ ক্ষেত্রে একটা মাপ থাকবে, যেন খুঁটিদ্বয়ের বাম পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মাথা বরাবর একটি কল্পিত সরলরেখাকে উত্তর দিকে বাড়িয়ে দিলে তার শেষ প্রান্তে ধ্রুব নক্ষত্র দেখা যায়।
দ্রাঘিমাংশ
অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমার সাহায্যে পৃথিবীর কোনো স্থানের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা যায়। এই অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ব্যবহার করে কোনো স্থান যেমন সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব, তেমনই আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও জানা সম্ভব হয়। এখানে দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
দ্রাঘিমারেখা কি (Longitude)
গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখা হতে পূর্ব বা পশ্চিমে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সে স্থানের দ্রাঘিমা বা দ্রাঘিমাংশ বলে।
নিরক্ষরেখার উপর এ কৌণিক দূরত্বের মাপ নেয়া হয়। পূর্ব দিকের কৌণিক দূরত্বকে পূর্ব দ্রাঘিমা এবং পশ্চিম দিকের কৌণিক দূরত্বকে পশ্চিম দ্রাঘিমা বলে।
গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখার দ্রাঘিমা ০° ধরা হয়। এখান থেকে এক ডিগ্রি অন্তর পশ্চিমে ১৮০টি ও পূর্বে ১৮০টি দ্রাঘিমারেখা কল্পনা করা হয়।
নিরক্ষরেখা ও মূলমধ্যরেখা যেখানে পরস্পরকে লম্বভাবে ছেদ করে সেখানে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা উভয়েই ০°। এ স্থানটি গিনি উপসাগরে অবস্থিত। পৃথিবী সর্বত্র পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। এ কারণে পূর্বে অবস্থিত স্থানগুলোর সময় বেশি হতে দেখা যায়।
দ্রাঘিমার কারণে সময়ের পার্থক্য হয়ে থাকে।
সমাক্ষরেখা হতে পূর্ব বা পশ্চিমের অবস্থান জানার জন্য ভূপৃষ্ঠে দুই মেরুকে সংযুক্ত করে উত্তর-দক্ষিণে অনেকগুলো রেখা কল্পনা করা হয়,রেখাগুলো বিষুবরেখাকে লম্বভাবে ছেদ করেছে। রেখাগুলোকে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ডে বিভক্ত করা হয়েছে।এ রেখাগুলোকে দ্রাঘিমারেখা বলে।
দ্রাঘিমারেখা পৃথিবীর পরিধির অর্ধেকের সমান এবং একে অর্ধবৃত্ত বলে।
দ্রাঘিমারেখা গুলোর মধ্যে যে রেখাটি লন্ডনের গ্রিনিচ শহরের জ্যোর্তিবিদ্যা সম্পর্কিত মানমন্দিরের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে তাকে মূলমধ্যরেখা বলে। মূল মধ্যরেখার ইংরেজি হলো Prime Meridian। এ মূল মধ্যরেখা হতে পূর্ব বা পশ্চিমে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সে স্থানের দ্রাঘিমা বলে। গ্রিনিচের দ্রাঘিমা ০° ধরে পৃথিবীর পরিধিকে মূল মধ্যরেখার এক ডিগ্রি অন্তর অন্তর পূর্বে ১৮০টি এবং পশ্চিমে ১৮০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হওয়ায় ১৮০° পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা ও ১৮০° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা প্রকৃত পক্ষে একই দ্রাঘিমারেখা হিসেবে বিবেচিত।
মূল মধ্যরেখা বা প্রাইম মেরিডিয়ান (Prime meridian)
অক্ষাংশের মত প্রতি ডিগ্রি দ্রাঘিমাকে মিনিট এবং সেকেন্ডে ভাগ করা হয়। দ্রাঘিমারেখা গুলো পরস্পর সমান, তবে সমান্তরাল নয়। দুই দ্রাঘিমা রেখার মধ্যবর্তী ব্যবধান নিক্ষরেখা হতে উত্তর-দক্ষিণে ক্রমশ কম হতে থাকে এবং ৯০° উত্তর অক্ষাংশে ও ৯০° দক্ষিণ অক্ষাংশে পৌঁছে একেবারে মেরু বিন্দুতে মিশেছে।
নিরক্ষরেখার উপর ১° দ্রাঘিমার রৈখিক দূরত্ব প্রায় ১১১.২৬ কিলোমিটার, ৩০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে ৯৬.৪৪ কিলোমিটার, ৬০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে ৫৬ কিলোমিটার এবং ৮০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে ১৯.৩৮ কিলোমিটার।
দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Longitude)
• দ্রাঘিমারেখা গুলোর পরিধি সর্বত্র সমান।
• দ্রাঘিমারেখা গুলো পরস্পর সমান্তরাল নয়।
• সর্বাধিক দ্রাঘিমারেখার মান ১৮০°।
• দ্রাঘিমারেখা গুলোর মান মূলমধ্য রেখার পূর্ব ও পশ্চিম বাড়ে।
• প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা প্রতিটি অক্ষরেখাকে লম্বালম্বিভাবে ছেদ করেছে।
দ্রাঘিমা নির্ণয়
১. সময়ের পার্থক্য অনুসারে
প্রতি ৪ মিনিট সময়ের জন্য দ্রাঘিমার পার্থক্য ১°। কোন একটি স্থানের সময় ও দ্রাঘিমা জানা থাকলে সে স্থানের সাথে অন্য স্থানের সময়ের পার্থক্য নিয়ে স্থানটির দ্রাঘিমা নির্ণয় করা যায়।
২. গ্রিনিচের সময় দ্বারা
গ্রিনিচের দ্রাঘিমা ০° কল্পনা করা হয়েছে। সুতরাং গ্রিনিচের সময় অনুসারে অন্য স্থানটির দ্রাঘিমা নির্ণয় করা হয়। গ্রিনিচের পূর্ব দিকে অবস্থিত দেশগুলোর সময় গ্রিনিচের চেয়ে এগিয়ে থাকে এবং গ্রিনিচের পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলোর সময় গ্রিনিচের সময়ের থেকে কম হয়। গ্রিনিচে যখন বেলা ১২টা তখন অন্য কোন স্থানে যদি সন্ধ্যা ৬টা হয় তবে প্রমাণিত হবে যে, ঐ স্থানটি গ্রিনিচের পূর্বে এবং দ্রাঘিমা হবে (১৫ × ৬ = ৯০°) বা ৯০° পূর্ব। আবার গ্রিনিচে যখন বেলা ১২টা তখন কোন স্থানের সময় যদি সকাল ৫টা হয় তাহলে বোঝা যাবে স্থানটি গ্রিনিচের পশ্চিমে অবস্থিত। স্থানটির সময়ের পার্থক্য ৭ ঘণ্টা হওয়ায় দ্রাঘিমা হবে ১৫ × ৭ = ১০৫° পশ্চিম।
দ্রাঘিমা রেখার কাজ
অবস্থান নির্ণয়
দ্রাঘিমার মাধ্যমে (অক্ষাংশের সাহায্যে) ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান সঠিকভাবে জানা যায়। যেমন- কোন স্থানের অক্ষাংশ ২৫° উত্তর ও দ্রাঘিমা ৩৫° পূর্ব বলা হলে বোঝা যাবে যে, ঐ স্থানটি ২৫° উত্তর সমাক্ষরেখা ও ৩৫° পূর্ব দ্রাঘিমার সংযোগস্থলে অবস্থিত।
স্থানীয় সময় নির্ধারণ
একই দ্রাঘিমায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সময় একই। এ ছাড়া দ্রাঘিমান্তর থেকে দুটি দেশের সময়ের পার্থক্য জানা যায়।
বিপদাপন্ন জাহাজকে সাহায্যে প্রদান
অকূল সমুদ্রে বিপদাপন্ন জাহাজ বেতারের সাহয্যে তার অবস্থানগত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা জানালে সহজেই তার অবস্থান জেনে সাহায্য পাঠানো যায়।