১৮৭৭ সালে বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ এদুয়ার্দ স্টোফান র্মারসেইলস মানমন্দির থেকে একসাথে মোট পাঁচটি ছায়াপথ আবিস্কার করেন,এই জন্য এই ছায়াপথ পাঁচটির নাম স্টেফানস কুইটেন্ট।
ছবি:স্টেফানস কুইটেন্ট।
এর মধ্যে চারটি ছায়াপথের রং উজ্জল হলুদ এবং পঞ্চমটির রং নীল।
এই ছায়াপথগুলি পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে দেখলে মনে হয়, এগুলি একসাথে পেঁচিয়ে আছে।
এই ছায়াপথগুলি জ্যোতির্বিদদের কাছে বেশ আকর্ষণের কারন এদের মধ্যে প্রায়শই সংঘর্ষ ঘটে। এই কারনে এদেরকে Hickson কম্প্যাক্ট গ্রুপ ৯২ বলে।
১৯৭০ সালে রেডিও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায় যে এই ছায়াপথ গ্রুপের সবথেকে উজ্জ্বল সদস্য এনজিসি-৭৩২০ এর বিস্তীর্ণ লাল অঞ্চলের মধ্যে সক্রিয় নক্ষত্র গঠনের প্রমান পেয়েছেন।
ছবি:এনজিসি-৭৩২০।
সম্প্রতি এই ছায়াপথের ভিতরে আরো বেশ কিছু রহস্যময় ঘটনার সন্ধান পেয়েছেন।
যেমন-এই ছায়াপথের ভিতর থেকে একটি দৈত্যাকার শকওয়েভ-তরঙ্গ বের হচ্ছে।
এই ছায়াপথ গুলি এত কাছাকাছি যে যাতায়াতের সময় প্রায়শই নিজেদের ভিতর সংঘর্ষ ঘটায়।এই সংঘর্ষ এতটাই জোড়ালো যে প্রতি ঘন্টায় কয়েক কয়েক লক্ষ কিঃমি বেগে একটি অন্যটির মধ্যে ঢুকে পড়ে।
ছবি: ওয়েব টেলিস্কোপের MIRI এবং NIRCam ক্যামেরার সাহায্যে স্টেফানস কুইটেন্ট গ্রুপ অফ গ্যালাক্সির কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
গ্যালাক্সি NGC 7319 এবং NGC 7318b একত্রিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যা ইন্টারগ্যালাকটিক মাধ্যমে একটি ধাক্কা সৃষ্টি করছে। আমরা এই দুটি ছায়াপথের মধ্যে লাল রঙে, H2 ডাইহাইড্রোজেন অণুর নির্গমন দেখতে পাই। নীচে ছয়টি অঞ্চলের মধ্যে তিনটি দেখায় যেগুলি এই গ্যাসের গতিশীলতা এবং তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য JWST-এর MIRI যন্ত্রের সাথে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এই সংঘর্ষের কারনে কোন কোন সময় হয়তো কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়ে কোন নক্ষত্র, কখনো বা তৈরী হয় বিশাল আকারের গ্যাসীয় বলয়।
যদিও নীল রংয়ের ছায়াপথটি অন্য চারটি ছায়াপথ থেকে প্রায় ২০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
এই সংঘর্ষের ঘটনাগুলি ঘটছে এনজিসি-৭৩১৯,এনজিসি-৭৩১৮ এ এনজিসি-৭৩১৮ বি, এবং এনজিসি-৭৩১৭ এর মধ্যে। পৃথিবী থেকে এই ছায়াপথ গুলির দুরত্ব প্রায় ৩০ কোটি আলোকবর্ষ।
বিঞ্জানীদের মতে এদের মধ্যে প্রতিবার এ ধরনের সংঘর্ষের ফলে জম্ন নিয়েছে লাখ লাখ নক্ষত্র ধারণকারী শতাধিক নক্ষত্র বলয়।
আবার কখনো কখনো জন্ম নিয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির ছায়াপথ যেমন- এনজিসি-৭৩১৯ নামের নীল ছায়াপথের পুচ্ছদেশে বিজ্ঞানীরা এই রকম অনেকগুলি ছায়াপথের সন্ধান পেয়েছেন।
ছবি:হাবল টেলিস্কোপের চোখে স্টেফানস কুইটেন্ট।
বিঞ্জানীদের মতে এই ছায়াপথ গুলির মধ্যে বর্তমান সময়ের চেয়ে অতীতে এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা অনেক বেশী ঘটতো।এই ধরনের ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে কোন একদিন এই ছায়াপথ গুলি পরস্পরের মধ্যে মিশে গিয়ে একটি মাত্র ছায়াপথে রুপ নিতে পারে।
এই ছায়াপথ গুচ্ছটি পেগাসাস (পক্ষিরাজ ঘোড়া) মন্ডলে অবস্থিত।
ছবি: পেগাসাসের গ্রেট স্কোয়ার স্টেফানস কুইটেন্ট ছায়াপথ পেগাসাস নক্ষত্রমণ্ডলের সীমানার মধ্যে রয়েছে।
এখানে পাঁচটি আছে কিন্ত ২০০৯ সালে হাবল দূরবীনের তোলা ছবিতে এনজিসি-৭৩১৯ এর পাশে একটি ষষ্ঠ ছায়াপথ আবিস্কার করে এর নাম এনজিসি-৭৩২০ সি।
ছবি:এনজিসি-৭৩২০ সি।
একটি ৩২ সি:এম: দূরবীন দিয়ে এই ছায়াপথ গুলির মধ্যে এনজিসি-৭৩১৮, এনজিসি-৭২১৯, এবং এনজিসি-৭৩২০ কে দেখা যায় এই ছায়াপথ তিনটি একটি ত্রিভুজ গঠন করে।
এনজিসি-৭৩১৭ ছায়াপথটি অন্য তিনটি থেকে অনেকটা দূরে অবস্থিত এবং দূরবীনে একে খুব ঝাপসা দেখা যায়।
এনজিসি-৭৩১৯ মোটামুটিভাবে বৃত্তাকার এনজিসি-৭৩২০ সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং এর সম্প্রসারিত আকৃতির এবং পরিস্কার ভাবে দেখা যায়।
নিবন্ধ: নেবুলা মোর্শেদ।
তথ্যসুত্র: Earth Sky.