সূর্যের অন্যতম গ্রহ হল পৃথিবী।অন্যান্য গ্রহের মত পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করে সূর্যের চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে।সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণের জন্য পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট বা ১ বছর ।প্রদক্ষিণের পথ উপবৃত্তাকার হওয়ায় এবং অক্ষ (earth axis) ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে অবস্থানের কারণে পৃথিবী ও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্য থেকে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থান করে।ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যের আলো ও তাপ সমানভাবে আলোকিত ও উষ্ণ করে না এবং দিন-রাতের সময়ের ব্যাপ্তির মধ্যেও পার্থক্য সৃষ্টি হয়।সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্বের ব্যবধান এবং ব্যবধানজনিত কয়েকটি বিষয় নিন্মে তুলে ধরা হল।
সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান কোন বস্তু সাধারণত বৃত্তাকার কক্ষপথে না ঘুরে অনেকটা উপবৃত্তাকার কক্ষপথ অনুসরণ করে।অধিকাংশেরই কক্ষপথ ছড়ানো,অনেকটা ডিম্বাকৃতির।আরো সঠিক করে বললে উপবৃত্তাকার।আর এই উপবৃত্তাকার হবার কারণেই সূর্য থেকে গ্রহদের দূরত্ব নির্দিষ্ট থাকে না।তাই সূর্য থেকে এর দূরত্বের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।সকল গ্রহ এই নিয়ম মেনে চলে।
অপসূর (aphelion):
গ্রীক শব্দ apo এবং helios থেকে aphelion শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। apo অর্থ দূরে ও helios অর্থ সূর্য ।বাংলা অপসূর শব্দের ‘অপ’ অর্থ দূরে এবং ‘সূর’ অর্থ সূর্য ।অর্থাৎ সূর্যের দূরবর্তী অবস্থান।সাধারণত অপসূর (aphelion) বলতে সূর্য থেকে যেকোন গ্রহ বা গ্রহাণুর সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থানকে বুঝায়।সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণকালে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৪ জুলাই সবচেয়ে বেশি থাকে ।এ সময় পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব থাকে ১৫ কোটি ২০ লক্ষ (১৫২ মিলিয়ন) কি.মি. ।পৃথিবী থেকে সূর্যের এ দূরবর্তী অবস্থানকে অপসূর (aphelion) বলে।
অপসূর অবস্থান:
পরিক্রমণের সময় 4জুলাই পৃথিবী থেকে সূর্যের রৈখিক দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় 15 কোটি 20 লক্ষ কিমি,এই দিনটিকে অপসূর (অপ = দূরে; সূর = সূর্য) অবস্থান বলে।
অনুসূর (perihelion):
গ্রীক শব্দ peri এবং helios থেকে perihelion শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। peri অর্থ নিকটে ও helios অর্থ সূর্য । বাংলা অনুসূর শব্দের ‘অনু’ অর্থ নিকটে এবং ‘সূর’ অর্থ সূর্য । অর্থাৎ সূর্যের নিকটবর্তী অবস্থান। সাধারণত অনুসূর (perihelion) বলতে সূর্য থেকে যেকোন গ্রহ বা গ্রহাণুর সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থানকে বুঝায়।সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণকালে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩ জানুয়ারী সবচেয়ে কম থাকে।এ সময় পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব থাকে ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ (১৪৭ মিলিয়ন) কি.মি. ।পৃথিবী থেকে সূর্যের এ নিকটবর্তী অবস্থানকে অনুসূর (perihelion) বলে।
অনুসূর হল অপসূরের বিপরীত অবস্থান।অনুসূর অবস্থানকালে পৃথিবী অপসূর অবস্থান অপেক্ষা ৭% বেশি সৌরতাপ পেয়ে থাকে।
অনুসূর অবস্থান :
পরিক্রমণের সময় ও জানুয়ারি পৃথিবী থেকে সূর্যের রৈখিক দূরত্ব কমে দাঁড়ায় প্রায় 14 কোটি 70 লক্ষ কিমি। এই দিনটিকে অনুসূর (অনু = নিকট; সূর= সূর্য) অবস্থান বলে।
অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেবার সময় গ্রহরা জোরে এবং উল্টোভাবে অপসূর দিয়ে যাবার সময় ধীরে চলে।
সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকার সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব থাকে ৯ কোটি ১০ লক্ষ মাইল বা ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি.।অন্য দিকে অপসূর অবস্থানে এই দূরত্ব হচ্ছে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি. ।একেই আমরা গড় করে সাধারণত বলি ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি কিমি.।পৃথিবী থেকে সূর্যের এই গড় দূরত্বকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট ।
অনুসূর ও অপসূর কথাগুলো গ্রহদের পাশাপাশি ধূমকেতু ও গ্রহাণুদের জন্যেও প্রযোজ্য।
কোন গ্রহ থেকে সূর্যের ন্যূনতম দূরত্বকে উক্ত গ্রহের অণুসূর (Periapsis) এবং এর বিপরীতকে অপসূর (Apoapsis) বলা হয়।
বিষুব বা মহাবিষুব (equinox):
সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণকালে বছরের দুই দিন সূর্য পৃথিবীর ঠিক মাঝ বরাবর নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখার উপর লম্বভাবে অবস্থান করে।২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর এ দুই দিন সূর্য পৃথিবীর বিষুবরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় ।এ দুই দিনকে বিষুব বা মহাবিষুব (equinox) বলে । ফলে এ দুই দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয় ।
উত্তরায়ন (summer solstice):
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণকালে ২১ মার্চ-এর বিষুবীয় (equinox) অবস্থান থেকে সূর্য কিরণ ক্রমে উত্তর দিকে সরে যেতে থাকে । ২১ জুন সূর্য পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের কর্কটক্রান্তির উপর অবস্থান করে লম্বভাবে কিরণ দেয় । এজন্য ২১ জুনকে সূর্যের উত্তরায়ন (summer solstice) বলে ।এ সময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল এবং দীর্ঘ দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত বিরাজ করে। solstice শব্দটি ল্যাটিন শব্দ solstitium থেকে এসেছে । যার অর্থ ‘সূর্য স্থির দাঁড়াল’ (the sun stands still) ।সূর্য কিরণ ক্রমে উত্তর দিকে সরে ২১ জুন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের কর্কটক্রান্তির উপর স্থির দেখা যায় বলে উত্তরায়ন (summer solstice) নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে ।
দক্ষিণায়ন (winter solstice):
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণকালে ২১ জুন-এর কর্কটক্রান্তির অবস্থান থেকে সূর্য ক্রমে দক্ষিণ দিকে সরে যেতে থাকে। ছয় মাস পরে ২১ ডিসেম্বর সূর্য পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের মকরক্রান্তির উপর অবস্থান করে লম্বভাবে কিরণ দেয় ।এজন্য ২১ ডিসেম্বরকে সূর্যের দক্ষিণায়ন (winter solstice) বলে ।এ সময় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও উত্তর গোলার্ধে শীতকাল এবং দীর্ঘ দিন ও ক্ষুদ্রতম রাত বিরাজ করে।২১ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য কিরণ আবার ক্রমে উত্তর দিকে সরে যেতে থাকে। solstice শব্দ ল্যাটিন শব্দ solstitium থেকে এসেছে ।যার অর্থ ‘সূর্য স্থির দাঁড়াল’ (the sun stands still) । সূর্য কিরণ ক্রমে দক্ষিণ দিকে সরে ২২ ডিসেম্বর পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের মকরক্রান্তির উপর স্থির দেখা যায় বলে দক্ষিণায়ন (winter solstice) নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে।
Article by ধ্রুবতারা, April 23, 2024
Source:
http://www.windows2universe.org/physical_science/physics/mechanics/orbit/perihelion_aphelion.htmlউইকিপিডিয়া