⭐ নক্ষত্রের / তারকার শ্রেণিবিন্যাস
সহজ ভাষায় তারার ধরন, রঙ, তাপমাত্রা ও আকার বোঝার গাইড

আকাশে তাকালে সব তারাই দেখতে একই রকম লাগে—ছোট আলো বিন্দু। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি নক্ষত্র আলাদা! তাদের রঙ, আকার, তাপমাত্রা, উজ্জ্বলতা—সবকিছুতেই বিশাল পার্থক্য আছে। এই পার্থক্যের ভিত্তিতেই বিজ্ঞানীরা তারকার শ্রেণিবিন্যাস (Stellar Classification) করেন।
এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ভাষায় তারাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও বৈশিষ্ট্য বুঝে নেব।
🔹উনবিংশ শতাব্দীর জ্যোতির্বিদদের অবদান
১৯শ শতাব্দীতে টেলিস্কোপ, স্পেকট্রোস্কোপি এবং আলোক-সংবেদনশীল ফটোগ্রাফির উন্নতির ফলে নক্ষত্র সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ সহজ হয়। এই সময় কয়েকজন জ্যোতির্বিদ নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা, রঙ এবং স্পেকট্রামের উপর ভিত্তি করে শৃঙ্খলাবদ্ধ শ্রেণিবিন্যাস করতে শুরু করেন।
🔹 পিকারিং-এর (Edward Charles Pickering) ভূমিকা

তিনি হার্ভার্ড কলেজ অবজারভেটরির পরিচালক ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে “Harvard Computers” নামে একদল মহিলা জ্যোতির্বিদ কাজ করতেন—যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত Annie Jump Cannon ও Williamina Fleming। তাঁর নেতৃত্বে নক্ষত্রের স্পেকট্রাম বিশ্লেষণ করে Harvard Spectral Classification System তৈরি করা হয়।
🔹পগসন-এর (N. R. Pogson) অবদান

তিনি পগসন ম্যাগনিচিউড স্কেল তৈরি করেন, যা নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা মাপার আধুনিক স্কেলের ভিত্তি। এই স্কেল অনুযায়ী, ৫ ম্যাগনিচিউডের ব্যবধান মানে উজ্জ্বলতার ১০০ গুণ পার্থক্য।
🔹 ৪. হার্ভার্ড শ্রেণিবিভাগ (Harvard Classification System)
এই পদ্ধতিতে নক্ষত্রকে তাদের স্পেকট্রাল বৈশিষ্ট্য ও তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে সাতটি মূল শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
O – B – A – F – G – K – M
🌟 সূর্য এই তালিকার G শ্রেণির নক্ষত্র।
এই সিস্টেমটাই আজ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নক্ষত্র-শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি।
✨ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা
🌈 ১) রঙ অনুযায়ী তারার শ্রেণিবিন্যাস

তারার রঙ থেকে তার তাপমাত্রা বোঝা যায়। সবচেয়ে গরম তারা নীল, আর সবচেয়ে ঠান্ডা তারা লাল।
| রঙ | তাপমাত্রা | উদাহরণ |
| 🔵 নীল | সবচেয়ে গরম (৩০,০০০°C এর বেশি) | Rigel |
| 🔷 নীল-সাদা | গরম | Sirius |
| ⚪ সাদা | মধ্যম গরম | Vega |
| 🟡 হলুদ | আমাদের সূর্য | Sun |
| 🟠 কমলা | তুলনামূলক কম গরম | Arcturus |
| 🔴 লাল | সবচেয়ে ঠান্ডা (৩০০০°C এর কম) | Betelgeuse (যখন লাল দানব) |
মনে রাখার কৌশল: রঙ যত নীল, তারা তত গরম।
🔠 ২) স্পেকট্রাল শ্রেণি (O–B–A–F–G–K–M)

এটি তারার রঙ + তাপমাত্রার ভিত্তিতে সবচেয়ে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস।
প্রধান ৭টি শ্রেণি
| শ্রেণি | রঙ | বৈশিষ্ট্য |
| O | নীল | সবচেয়ে গরম, বিরল |
| B | নীল-সাদা | খুব উজ্জ্বল |
| A | সাদা | সুন্দর উজ্জ্বল আলো |
| F | সাদা–হলুদ | মধ্যম তাপ |
| G | হলুদ | আমাদের সূর্যের শ্রেণি |
| K | কমলা | ঠান্ডা, বেশি দেখা যায় |
| M | লাল | সবচেয়ে বেশি সংখ্যা , সবচেয়ে ঠান্ডা |
সহজ মনে রাখার ফর্মুলা: O B A F G K M
👉 মনে রাখুন: Oh Be A Fine Girl/Guy Kiss Me
🌞 ৩) আকার অনুযায়ী তারার শ্রেণিবিন্যাস
তারারা ছোট থেকেও খুব ছোট হতে পারে, আবার অনেক বিশালও হতে পারে।
⭐ প্রধান ধরনগুলো
১) ডোয়ার্ফ (Dwarf Star) — ছোট তারা
• যেমন: আমাদের সূর্য (G-type Yellow Dwarf)
২) জায়ান্ট (Giant Star) — বড় তারা
• গরম অবস্থায় আকার ফুলে যায়
• উদাহরণ: Aldebaran
৩) সুপারজায়ান্ট (Super giant) — বিশাল তারা
• মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিশাল নক্ষত্র
• উদাহরণ: Betelgeuse, Rigel
৪) হোয়াইট ডোয়ার্ফ (White Dwarf) — মৃতপ্রায় ছোট তারা
• সূর্যের মতো তারা শেষে এই অবস্থায় যায়
• খুব ঘন, ছোট ও উষ্ণ
🔭 ৪) জীবনচক্র অনুযায়ী তারা (Stellar Evolution)
একটি নক্ষত্রের জীবনও মানুষের মতো বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা।
জীবনের ধাপসমূহ
🌫 নেবুলা – গ্যাসের মেঘ থেকে তারার জন্ম
⭐ মেইন সিকোয়েন্স – তারার “প্রাপ্তবয়স্ক” সময়
🟠 রেড জায়ান্ট – আকার ফুলে যায়
⚪ হোয়াইট ডোয়ার্ফ – সূর্যের ভবিষ্যৎ
💥 সুপারনোভা – বিশাল তারার বিস্ফোরণ
🕳 নিউট্রন স্টার / ব্ল্যাক হোল – সুপারনোভার পর বাকি অংশ
📡 ৫) উজ্জ্বলতা অনুযায়ী বিভাজন
তারার উজ্জ্বলতা নির্ভর করে—
• তার তাপমাত্রা
• আকার
• পৃথিবী থেকে দূরত্ব
উজ্জ্বলতার দুইধরনের পরিমাপ আছে:
• Apparent magnitude (আকাশে দেখে মনে হয় যত উজ্জ্বল)
• Absolute magnitude (আসল উজ্জ্বলতা)
Sirius আকাশে উজ্জ্বল, কিন্তু আসলে অনেক তারার চেয়ে কম শক্তিশালী।
⭐ সারাংশ (সংক্ষেপে)
• তারা রঙ অনুযায়ী—নীল সবচেয়ে গরম, লাল সবচেয়ে ঠান্ডা
• স্পেকট্রাল শ্রেণি—O B A F G K M
• আকার অনুযায়ী—Dwarf → Giant → Supergiant
• জীবনচক্র—Nebula থেকে জন্ম, Supernova পর্যন্ত
• উজ্জ্বলতার দুই মান—Apparent ও Absolute magnitude
🔭 TelescopeBD – কেন এগুলো জানা জরুরি?
• জ্যোতির্বিদ্যা শেখার বেসিক হিসেবে তারার শ্রেণিবিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ
• রাতের আকাশ দেখে কোন তারা কোন শ্রেণির তা অনুমান করা সহজ হয়
• অ্যাস্ট্রো–ফটোগ্রাফি ও অবজারভেশনে সাহায্য করে
• স্কুল–কলেজের স্টুডেন্টদের বিজ্ঞান প্রজেক্টেও কাজে লাগে