News & Articles
You will get the latest news about Astronomy
সপ্তর্ষীমণ্ডলীর খোজে
2024 April 10
94 views
সপ্তর্ষিমন্ডল ইংরেজি Ursa Major বা Great Bear। দ্বিতীয় শতকের জ্যোতির্বিদ টলেমি কর্তৃক প্রণীত ৪৮টি তারামণ্ডলের এ‌টি একটি।আধুনিক কালে বর্ণিত ৮৮ টি তারামণ্ডলের তালিকায়ও এটি তৃতীয় বৃহত্তম।এই নক্ষত্রমণ্ডলটি সাতটি তারার সমন্বয়ে গঠিত।উত্তরগোলার্ধ থেকে সারা বছরই এই তারামণ্ডলকে দেখা যায়।ভারতীয় উপমহাদেশের জ্যোতির্বিদগণ সাত জন ঋষির নামে এই সাতটি তারার নামকরণ করেন।তাই এই নক্ষত্রমণ্ডলটি সপ্তর্ষি মন্ডল নামে পরিচিত হয়

সাতজন ঋষির নাম:
১.ক্রতু
২.পুলহ
৩.পুলস্ত্য
৪.অত্রি
৫.অঙ্গিরা
৬.বশিষ্ঠ
৭.মরীচি

সপ্তর্ষির তারা পরিচিতি

ছবি: সপ্তর্ষিমণ্ডলীর ৭টি প্রধান তারা

সপ্তর্ষিমণ্ডলীর ৭টি প্রধান তারাকে আমরা বলছি সপ্তর্ষি। এদের সবগুলো উজ্জ্বলতায় প্রায় সমান।তারাগুলো বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত হলেও এদের আপাত উজ্জ্বলতা প্রায় সমান।কারণ,অপেক্ষাকৃত দূরের তারাগুলো এক্ষেত্রে আসলে বেশি দীপ্তিময়। মানে অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি বেশি।
ছবি: আপাত উজ্জ্বলতা 

দূরত্ব 

প্রায় ১২৭৯.৬৬ বর্গ এলাকা জুড়ে Ursa Major দেখা যায়, যা সম্পূর্ণ আকাশের ৩.১%। ১৯৩০ সালে Euglene Delporte এর সীমানা নির্ধারন করেন।সীমানাটি ২৮ বাহুর একটি অনিয়মিত পলিগন। এটির সীমান্তে ৮টি আলাদা Constellations আছে। উত্তর ও উত্তর-পূর্বে Draco, Bootes পূর্বে, Canes Venatici পূর্ব-দক্ষিন-পূর্বে, Coma Berenices দক্ষিন-পূর্বে, Leo ও Leo Minor দক্ষিনে,Lynx দক্ষিন-পশ্চিমে এবং উত্তর-পশ্চিমে Camelopardalis অবস্থিত। International Astronomical Union ১৯২২ সালে এর সংক্ষিপ্ত নাম দেয় UMa.


ছবি: সপ্তর্ষিমণ্ডলীর তারা

অবস্থান

সপ্তর্ষিমণ্ডল সারা বছর ধ্রুবতারার চারদিকে ঘোরে।সপ্তর্ষিমণ্ডলের প্রথম দু'টি তারা ক্রতু ও পুলহ-কে যোগ করে সরলরেখা কল্পনা করলে ওই সরলরেখা ধ্রুবতারার দিকে নির্দেশ করে এবং রেখাটিকে বিপরীতে চালিত করলে সিংহ রাশিতে নির্দেশ করে।বশিষ্ঠ এর পাশে ছোটো একটি তারা দেখা যায়,নাম অরুন্ধতী।অরুন্ধতী ছিলেন ঋষি বশিষ্ঠের স্ত্রী।

নামকরণ

এ মণ্ডলীর ইংরেজি নাম Ursa major বা দি গ্রেট বিয়ার (the Great Bear)-এর অর্থ বৃহৎ ভালুকগ্রিকরা  অনেকগুলি তারা নিয়ে তৈরি বৃহদাকার ভালুক এর মতো নক্ষত্রমণ্ডলকে Ursa Major বলে শনাক্ত করেছিলেন।যেখানে ভারতীয় নক্ষত্রমন্ডলটির সবচেয়ে উজ্জ্বল সাতটি তারাই পর্যবেক্ষণ করেন যেগুলি প্রশ্নবোধক চিহ্নের আকৃতিতে অবস্থান করে তাই এমন নাম দেন।পাশ্চাত্যের  মানুষও এই সাতটি তারা পর্যবেক্ষণ করেন এবং নাম দেন The Big Dipper। তবে তারা এটিকে তারামন্ডল বলে গণনা না করে তারামন্ডলের মধ্যে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র তারাগুচ্ছ বা asterism বলেই গণ্য করেন।

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর খোজে

রাতের আকাশের তারা দেখে পথ নির্ণয় করতে পারার মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে।আর এই আনন্দ পে‌তে হ‌লে আপনাকে চিনতে হ‌বে সপ্তর্ষী মণ্ডলী।আপনি হয়তো মনে করছেন সন্ধ্যা তারা তথা শুক্র গ্রহ কে তো আমরা চিনিই।ওটা যেহেতু পশ্চিম দিকে থাকে তাই আর কিছু জানার কী দরকার?

কিন্তু হ‌্যা!সন্ধ্যাতারা সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টার পরই আপনাকে হতাশ করে দিয়ে দিগন্তের ওপারে হারিয়ে যাবে। তখন?এমন কাউকে দরকার হ‌বে যে তখনও আকাশে থাকবে।এমন অবস্থায় আপনা‌কে পথ দেখা‌তে পারে সপ্তর্ষীমণ্ডল ।কারণ এর মাধ্যমে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন সব সময় উত্তর দিকে থাকা ধ্রুবতারা

এটি হচ্ছে একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। তারামণ্ডলী হচ্ছে আকাশের একেকটি এলাকা যেখানে অনেকগুলো তারকা মিলে বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর আকৃতি তৈরি করেছে । অবশ্য প্রকৃতপক্ষে একেকটি তারামণ্ডলীর বিভিন্ন অবস্থান পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে।

যাই হোক, আর্সা ম্যাজর বা সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারকাগুলোর মিলিত চিত্র দেখতে একটি ভালুকের মত।এতে মোট তারকা আছে অন্তত ৭২০টি।এদের মধ্যে গ্রহ আছে ২১টি তারকার।সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার নাম এলিওথ (Alioth) বা এপসাইলন আরসি ম্যাজোরিস । ত‌বে আমাদের এতগুলো তারকা কাজে লাগবে না।কাজে লাগবে সাতটি তারকা। এগুলো বেশ উজ্জ্বল।আকৃতি হচ্ছে পেয়ালার মত।এজন্যেই এদেরকে আমেরিকায় বলা হয় বিগ ডিপার (Big Dipper) বা বড় পেয়ালা ।দেখতে আবার অনেকটা লাঙলের মতোও হওয়ায় ইউরোপে একে বলা হয় লাঙল (Plough)। আর,সাতটি তারকা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এবং এর মূল তারামণ্ডলীতে এগুলো অপেক্ষাকৃত সহজে দৃশ্যমান ও উজ্জ্বল হবার কারণে বাংলায় মণ্ডলীটির নামই হয়েছে এর সাতটি তারকার নামে - সপ্তর্ষীমণ্ডল । শুনে মনে হ‌তে পা‌রে এই তারামণ্ডলীতে যেন ৭ টি তারকাই আছে ।
নিচে দেখুন সম্পূর্ণ তারামণ্ডলী।


ছবি: সপ্তর্ষিমণ্ডলী

ভালুকের লেজসহ পেছন দিকে ৭টি তারকার উপর ফোকাস করুন। এরাই হলো বিগ ডিপার।


ছবি: Ursa Major & Ursa Minor

এই সাতটি তারকা খুঁজে পেলেই আপনি পেয়ে যাবেন ধ্রুব তারাকে।কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় এক জায়গায়। ওখানে বিগ ডিপারের ছবি যেমন দেওয়া আছে,এটা সব সময় একই রকম থাকে না। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে তারকাগুলো অবস্থান পরিবর্তন করে।চার ভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়।গ্রীষ্মকাল (Summer) তথা উন, জুলাই ও আগস্ট মাসে এটি থাকে উত্তর-পশ্চিম দিগন্তে। পরের ঋতু তথা শরৎকালের (Autumn বা Fall) তিনটি মাস তথা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে এটি নেমে আসে উত্তর দিগন্তের নিম্নাংশে। শীতকালের পরের তিন মাসের জন্যে এটি অবস্থান করে উত্তর-পূর্ব দিগন্তে। বসন্তকালের তিন মাস তথা মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এর অবস্থান উত্তর দিগন্তের উচ্চাংশে। শরৎকালে যেখানে ছিল তার বিপরীতে উপরের দিকে।


ছবি: North Star

বলাই বাহুল্য, প্রত্যেক ঋতুর শেষ দিকে এর আকৃতি চিত্রের চেয়ে একটু ভিন্ন হবে।কিন্তু আকৃতি যেমনই থাকুক এর চামচ বা পেয়ালার একেবারে সামনের দুটি তারকাকে যোগ করে বর্ধিত করে ৬গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যাবে ধ্রুবতারা। তারামণ্ডলীটির অবস্থান সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায় –


ছবি: তারামণ্ডলীর অবস্থান

আকাশের তারাদের বর্তমানে আমরা যে আকৃতি দেখি, সময়ের সাথে সাথে বদলে যাবে সেই চিত্র।যেমন দেখুন ১ লাখ বছর আগে বিগ ডিপারের চিত্র কেমন ছিল এখন ১ লাখ বছর পরে কেমন হবে।


ছবি: তারামণ্ডলীর অবস্থান


নিবন্ধ: ধ্রুবতারা

তথ্যসূত্র:
[১] আর্সা ম্যাজর- উইকিপিডিয়া
[২] আর্থ স্কাই